আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অর্থনীতিতে চরম অস্থিরতা

ভালবাসি আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি, সূচক নিম্নমুখী কমে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দেউলিয়া পুঁজিবাজার, প্রবৃদ্ধি নেই রাজস্ব ও রপ্তানি আয়ে, মূল্যস্ফীতির রেকর্ড, ব্যাংকঋণে চলছে সরকার বি. দ্র. : লেখাটা অনেক বড় তবে অর্থনীতির পুরো চিত্র পাওয়া যাবে দেশের অর্থনীতিতে চরম অস্থিরতা চলছে। সরকারের আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি। অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকও নিম্নমুখী। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমে গেছে। বাধ্য হয়ে ব্যাংক থেকে দফায় দফায় টাকা ধার নিয়ে দেশ চালাতে হচ্ছে সরকারকে।

আর ব্যাংক সে অর্থ জোগান দিতে ছাপাচ্ছে নতুন টাকা। ফলে মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি গ্রাস করছে পুরো অর্থব্যবস্থাকে। অন্যদিকে দেউলিয়া হয়ে গেছে পুঁজিবাজার। প্রবৃদ্ধি নেই রপ্তানি ও রাজস্ব আয়ে। এতে সর্বগ্রাসী প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের জীবনমানে।

তারা সঞ্চয় করা অর্থ খরচ করে জীবন বাঁচাচ্ছেন। এভাবে দীর্ঘদিনের সঞ্চয়পত্রগুলো ভেঙে ফেলার ফলে সরকারের কোষাগারে জমে থাকা টাকায়ও টান পড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারের হাতে এখন তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো টাকাও নেই। তাই নানামুখী চাপ সামলাতে সরকারকে প্রতিদিন প্রায় ১৩৩ কোটি টাকা ধার করতে হচ্ছে ব্যাংক থেকে। এরই মধ্যে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে তার ঋণের লক্ষ্যমাত্রার ৯৯ শতাংশই পূরণ করে ফেলেছে।

আর এ ঋণের বেশিরভাগই নেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আমানত রাখে না বা তার নিজস্ব কোনো অর্থও নেই। তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ধার নেয়ার মানেই হচ্ছে নতুন করে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে সরবরাহ করা। সরকারকে ঋণ দেয়ার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার টাকা ছাপানোর কাজটি বেশ জোরেশোরে চালাচ্ছে। একদিকে বাজেট সহায়তায় কোনো বিদেশি সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে না।

এদিকে রপ্তানি ও রাজস্ব আদায়ের অবস্থাও বেশ নাজুক। এ খাতেও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে না, অন্যদিকে আমদানি বাড়ছে হু হু করে। আমদানি প্রবৃদ্ধি ৪০ শতাংশের ঘরে থাকলেও প্রকৃত আমদানি ব্যয় কত হচ্ছে তা অজানা রয়ে যাচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে আমদানির নামে ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বাড়ছে।

১ বছরেই বৈধ চ্যানেলে ৭ থেকে ৮ টাকা এবং কার্ব মার্কেটে ১০ টাকা বেড়েছে ডলারের দাম। ২০১০ সালের জুনে যে ডলার কিনতে ব্যয় হতো ৬৯ টাকা সেই ডলার এখন কিনতে হচ্ছে ৭৬ টাকায়। কার্ব মার্কেটে তা ৮০ টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হিস্ট্রিক্যাল কারেন্সি এক্সচেঞ্জ রেটসের রেকর্ডভিত্তিক ওয়েবসাইট ওনাডা ডটকমের অনুযায়ী, দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশের টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে ১২ দশমিক ৩৮ শতাংশ, ভারতীয় মুদ্রার ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং পাকিস্তানে মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়বাজারে ভারত ও পাকিস্তান অনেক অস্থির সময় পার করেছে।

তবে তারা পরিস্থিতি সামলে নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সামলাতে পারেনি, তাই এখানে ভোক্তাদের চরম মূল্য দিচ্ছে। সম্প্রতি দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও নেমে এসেছে এক হাজার কোটি ডলারের নিচে, যা দিয়ে বড়জোর সোয়া দুই মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। কিন্তু নিরাপদ সীমা হিসেবে বিবেচিত একটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকার প্রয়োজন ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো অর্থের। রিজার্ভ ঘাটতির ফলে মূল্যস্ফীতি এখন আকাশ ছুঁয়েছে।

সেপ্টেম্বরে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৯৭ শতাংশের ঘরে। আর্থিক ঝুঁকি মোকাবেলায় কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না থাকায় বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ দ্বিতীয় স্থানে। প্রথম অবস্থানে পাকিস্তান। অর্থনীতির মাপকাঠিতে ৭ মাত্রার নিচের মূল্যস্ফীতিকে স্বাভাবিক এবং সহনীয় বলা হয়। ৭ মাত্রার মূল্যস্ফীতিকে অর্থনীতির জন্য সতর্ক সঙ্কেত এবং এর ওপরের মাত্রার মূল্যস্ফীতিকে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি হিসেবে দেখা হয়।

আর ৯ মাত্রার মূল্যস্ফীতিকে মহাসতর্ক সঙ্কেত বলা হয়। বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি বর্তমানে ১২ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি প্রায় ১২ শতাংশের (১১ দশমিক ৯৭) কোটা স্পর্শ করেছে। আগস্টে এটি ছিল ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ। গত বছর সেপ্টেম্বরে এ হার ছিল ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ।

বিবিএসের তথ্যমতে, গত এক দশকে দেশ মূল্যস্ফীতির এ হার নিয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ের রেকর্ড স্পর্শ করেছে। দেশের অর্থনীতির আরেক খাত শেয়ারবাজারের বর্তমানে ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর প্রায় সবাই নিঃস্ব। এর মধ্যেই অর্থমন্ত্রী বিনা দ্বিধায় বলেছেন, আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অর্থনীতি এখন বেশ ভালো। অর্থমন্ত্রীর এ কথার সঙ্গে তীব্রভাবে দ্বিমত পোষণ করেছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা। তারা বলেছেন, অর্থনীতি এখন স্পষ্টত সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে।

তাদের বক্তব্য, বর্তমানে অর্থনীতির যে হাল তাকে এক কথায় বলা যেতে পারে, সরকার পুরোটাই ধার-কর্যের ওপর চলছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৯ নভেম্বর পর্যন্ত সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়েছে ১৮ হাজার ৮৫৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রা হিসাবে ৯৯ শতাংশের বেশি। চলতি অর্থবছর এ খাতে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়েছে ১০ হাজার ৭৪২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

আর বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ ৮ হাজার ১১৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) সরকার ঋণ নিয়েছে ১৪ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। যা এ অর্থবছরের মোট লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮০ শতাংশ। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে ৭ হাজার ৮৮৭ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আর বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে আরো ৭ হাজার ১৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, গত সোয়া চার মাসে সরকার যে হারে ব্যাংক ঋণ নিয়েছে তাতে অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সূত্র জানায়, ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক একাধিকবার পরামর্শ দিয়েছে সরকারকে। যেসব চিঠিতে আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্যতা চাপের মুখে পড়ার কারণ উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৫টি পরামর্শ দেয়। এগুলো হচ্ছেথ মুদ্রানীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাজস্বনীতি গ্রহণ, ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ প্রক্ষেপিত মাত্রায় রাখা, জ্বালানি তেলের মূল্য ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করা এবং রপ্তানি আয়ের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করা। জানা গেছে, বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের জোগান দিচ্ছে নতুন নোট ছেপে।

অবস্থাটাও এত শোচনীয় যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন নোট ছাপিয়েও কুলাতে পারছে না। ৬ মাস আগেও বাংলাদেশ ব্যাংকের ভোল্টে পর্যাপ্ত নতুন টাকা থাকত। কিন্তু এখন চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন। গাজীপুরের টাকশাল থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নতুন টাকা আসা মাত্রই শেষ হয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, অতীতে সরকারকে কখনো ব্যাংক থেকে এত বেশি ঋণ নিতে দেখা যায়নি।

এখানে সরকারের অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্ব প্রকাশ পাচ্ছে বলে মতপ্রকাশ করেছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মহিত বলেছেন, এ সঙ্কট বেশিদিন থাকবে না। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। ধীরে ধীরে ঋণের পরিমাণ কমে আসবে। তবে কীভাবে কমবে তার কোনো ব্যাখ্যা তিনি করেননি।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, হয়তো তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ঋণের বোঝা কিছুটা কমানো হবে। সূত্র জানিয়েছে, বিদেশ থেকে সার্বভৌম (সভরেন) ঋণ নেয়ার বিষয়ও ভাবতে হচ্ছে সরকারকে। এ ঋণ নিতে এরই মধ্যে একটি বিদেশি কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে কথাবার্তা বলা হচ্ছে। এর আগে বাংলাদেশ কখনই এ জাতীয় বাণিজ্যিক ঋণ নেয়নি। অর্থনীতিবিদদের মতে, বিদেশ থেকে সার্বভৌম (সভরেন) ঋণ নিয়েও যে দেশের অর্থনীতি সামাল দেয়া যাবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই।

তারা বলছেন, অনেক উন্নত দেশ এ প্রক্রিয়ায় নিজেদেও বেসামাল অর্থনীতি সামাল দিতে পারেনি। ইউরোপজুড়ে মন্দা তার একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এ জাতীয় ঋণের মধ্যে ঢুকলে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে তা দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। এরই মধ্যে গ্রিস, ইটালি এবং স্পেন এ ধরনের ঋণ দিয়ে ডুবে গেছে। আরো কয়েকটা দেশ ডুবে যাওয়ার পথে।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে বিদেশি ঋণসহায়তা হিসেবে প্রাপ্তি ধরা হয়েছে মোট ২৫০ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু অর্থবছরের তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পাওয়া গেছে মাত্র ২৪ কোটি ৬২ লাখ ডলার। এ হিসাবে বলা যায় বিদেশি সাহায্য আসছে না। গত অর্থবছর একই সময়ে সহায়তা এসেছিল ৩১ কোটি ৫৯ ডলার। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ২৪ কোটি ৬২ লাখ ডলারের বিদেশি সাহায্য দেশে এসেছে।

এর মধ্যে ১৭ কোটি ১৮ লাখ ডলারই চলে গেছে বিভিন্ন সময়ে নেয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধে। সেই হিসাবে সরকারের হাতে নিট বৈদেশিক সাহায্য রয়েছে ৭ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। গত ২০১০-১১ অর্থবছরে একই সময়ে মোট ৩১ কোটি ৫৯ লাখ ডলারের বিদেশি সাহায্য এসেছিল। এর মধ্যে আগের ঋণ ও সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছিল ১৪ কোটি ২৯ লাখ ডলার। ফলে সরকারের কাছে মোট সাহায্য ছিল ১৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

এদিকে আগামী দিনগুলোতে বিদেশি সাহায্য বৃদ্ধির কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে সূত্র। সরকার মনে করেছিল বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা খাতে ১০০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে। অন্যদিকে এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটির (বাড়তি ঋণসহায়তা) আওতায় আইএমএফের কাছ থেকে পাওয়া যাবে আরো ১০০ কোটি ডলার। কিন্তু পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় এ দুটি সংস্থা থেকে চলতি অর্থবছরে ঋণ পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বাজেটে ধারণা দেয়া হয়েছিল এ দুটি সংস্থা থেকে ৬০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়া যাবে।

এখন এ ঋণ না পাওয়া গেলে তা অভ্যন্তরীণ খাত থেকেই সংগ্রহ করতে হবে। আর সেটি করতে হবে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিয়েই। কারণ সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার যে টার্গেট ধরা হয়েছিল তা পূরণ হচ্ছে না। সূত্র জানায়, মূল্যস্ফীতির ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ এখন সঞ্চয়ই করতে পারছে না। উল্টো হাতে থাকা সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে দিচ্ছে।

অর্থবছরে তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সঞ্চয়পত্রে নিট বিক্রি কমে গেছে এক-তৃতীয়াংশ। তিন মাসে প্রকৃত সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৪৯৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। গত বছর একই সময় এ সঞ্চয়পত্রই বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৪৩৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি রয়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার নির্ধারিত রয়েছে সাড়ে ১১ শতাংশ।

ফলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা মানুষের প্রকৃত আয় ১ শতাংশ করে কমে যাবে। এ কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের হারও কমে গেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, গত বছর (২০১০-১১ অর্থবছর) জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১৫ হাজার ৬৯০ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ২০ শতাংশ। এবার তিন মাসে রাজস্ব আদায় ১৮ হাজার ৭৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা হলেও প্রবৃদ্ধি কমে গেছে।

এবার প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশ। ফলে চলতি অর্থবছরে এনবিআর অংশে রাজস্ব আদায়ের (৯১ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা) যে টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে তা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে নেমে গেছে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ৯ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার বা ৭৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। আমদানি ব্যয় বাড়লে রিজার্ভ আরো কমবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে।

গত তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ৫৬ ভাগ। এ সময়ে রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৬ হাজার ১৬৩ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। গত বছর একই সময়ে যা ছিল ৫ হাজার ২৯ কোটি ডলার। রপ্তানি বাড়লেও ঠিকমতো রপ্তানি আয় দেশে আসছে না। ধারণা করা হচ্ছে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী বিদেশে অর্থ রেখে আসছেন, যা রিজার্ভ কমে যাওয়ার পেছনে অনেক বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

গত অর্থবছরে আমদানি ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৪০ ভাগের ওপরে। মূলত রেন্টাল পাওয়ারের জন্য যন্ত্রপাতি আমদানির কারণে এ ব্যয় বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বেশি দেখিয়ে এখানে মুদ্রা পাচারের মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। কেউ কেউ বলছেন, তা না হলে আমদানি প্রবৃদ্ধি এত বেশি হওয়ার কথা নয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে আমদানি প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশের ঘরে থাকলেও আগামীতে তা আবারো বেড়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আশঙ্কা করা হচ্ছে, এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বিনিময় হার ও রিজার্ভের ওপর। জুলাই-সেপ্টেম্বর জ্বালানি তেল আমদানির জন্য এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ বেড়েছে ১০৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। আর এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ১০২ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের লেনদেনের ভারসাম্য সারণীর তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সময়ে পণ্য বাণিজ্যে মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এ সময়ে বাংলাদেশ ৮০১ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে।

গত অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ১৪৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ওই তিন মাসে ৬৫০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল। ২০১০-১১ অর্থবছরের পুরো সময়ে মোট বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৭৩২ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থনীতির স্বস্তির জায়গা ক্রমেই কমে যাচ্ছে, বাড়ছে শঙ্কা। সরকারের অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা প্রায় ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

সরকারের ব্যাংকঋণ বেড়ে যাওয়ায় বর্তমান অর্থনীতি একটি অস্থির সময় পার করছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিদ্যুৎ-গ্যাসের সংযোগ দিতে না পারায় নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে না। কর্মসংস্থানও বাড়ছে না। লোডশেডিং আর গ্যাসের স্বল্প চাপে নগরজীবন একেবারে দিশাহারা। অথচ সাত মাসে তিনবার দাম বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের।

বছরে কয়েকবার বাড়ানো হয়েছে গ্যাস-বিদ্যুতের দামও। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি এখন নিত্যদিনের ঘটনা। অবিরাম মূল্যবৃদ্ধি জীবনযাত্রার ব্যয়কে আরো ভারী ও অসহনীয় করে তুলছে। এর মধ্যে আরেকটি এশীয় অর্থনৈতিক সঙ্কটের পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। ইউরোপের অর্থনৈতিক সঙ্কটে ইতোমধ্যে পোশাক রপ্তানি কমতে শুরু করেছে।

এর প্রভাব আরো ব্যাপক হলে হাজার হাজার পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে আরো বাড়বে কর্মহীনের মিছিল। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শেয়ারবাজারের বিপর্যয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দেশের জন্য বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার করে বাজারে নিয়ে আসার কারণে একদিকে যেমন মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দেয়া হচ্ছে, অন্যদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার ফলে বেসরকারি খাত ঋণ বঞ্চিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নেয়ার মানে হচ্ছে নতুন টাকা ছাপানো। আর ১০০ কোটি রিজার্ভ মানি ছাড়লে বাজারে এসে তা ৪০০ কোটি টাকা হয়ে যায়। এতে চাহিদা বেড়ে যায়, মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে। যার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হয় না। এতে সার্বিক অর্থনীতি ভারসাম্যহীন হয়ে যায়।

সরকারের ব্যয় মেটানোর জন্য সাধারণত ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানো হয়, নতুন টাকা ছাপানো হয় না। নতুন টাকা ছাপানো শুভ লক্ষণ নয়। এটি সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, বর্তমান অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়। অর্থনীতি এখন নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে।

প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক আয়, বৈদেশিক সাহায্য এবং বৈদেশিক ঋণ কমে গেছে। এর প্রভাবে বিনিয়োগ হচ্ছে না, কমে গেছে কর্মসংস্থান। বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। শেয়ারবাজার ধসে মানুষ নিঃস্ব হয়ে গেছে। দেশের অর্থনীতি নাজুক ও চ্যালেঞ্জের : মির্জ্জা আজিজ বর্ষীয়ান অর্থনীতিবিদ ও সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, দেশের অর্থনীতি বেশ নাজুক এবং ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।

বর্তমানে অর্থনীতির সব সূচকই নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। সহসায় এ থেকে উত্তরণের কোনো লক্ষণ নেই। ফলে ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের প্রভাব পড়বে। মির্জ্জা আজিজের মতে, অর্থনীতির এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে হলে সরকারকে অজনপ্রিয় এবং কঠোর কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তেলের দাম বাড়ানো এ রকমই একটা পদক্ষেপ।

তবে দাম বাড়ানোর সময়টা সঠিক হয়নি। তার মতে, সরকার তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে এতদিন তেলের দাম বাড়ায়নি। শেষ পর্যন্ত তিন মাসের ব্যবধানে তিনবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছে। অজনপ্রিয় সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দামবাড়াতে হবে। যেসব খাতে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে সেখান থেকে কোনো কোনো খাতের ভর্তুকি তুলে নিতে হবে এবং কিছু কিছু খাতের ভর্তুকি কমাতে হবে।

তিনি বলেন, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম যখন ব্যারেল দেড়শ ডলারে উঠেছিল তখনই সরকারের উচিত ছিল দাম বাড়ানো। তাহলে সরকারকে এতটা সমালোচনায় পড়তে হতো না। সরকার তখন তা না করে তেলের দাম যখন ব্যারেল ৯০ ডলারে নেমে এসেছে তখন দাম বাড়িয়েছে। আর এখন ভারত-পাকিস্তান তেলের দাম কমিয়েছে। মির্জ্জা আজিজ বলেন, বর্তমান মূল্যস্ফীতি ১১ দশমিক ৯৭ শতাংশ।

এর মানে হচ্ছে মূল্যস্ফীতি মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির জন্য মোটেই ভালো লক্ষণ নয়। গত ২০০৯-১০ এবং ২০১০-১১ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ছিল যথাক্রমে ৭ দশমিক ৩ এবং ৯ দশমিক ১ শতাংশ। এটাও স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ছিল। তিনি আরো বলেন, ২০০৫ থেকে ২০১০ সালের আগস্ট পর্যন্ত ডলারের মূল্য স্থিতিশীল ছিল।

এ সময় ডলার ৬৯ টাকার কাছাকাছি ছিল। কিন্তু তার থেকে ডলারের মূল্য ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। এ বছরের সেপ্টেম্বরে যা গিয়ে দাঁড়ায় ৭৫ টাকা ২০ পয়সায়। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের অস্বাভাবিক আচরণে বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হয়ে গেছেন। লাখ লাখ মানুষ তার পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন।

তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অর্থনীতি তার স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলেছে। তাদের অনেকের জীবনযাত্রার মান ক্রয় ক্ষমতার নিচে চলে গেছে। যা অর্থনীতির নেতিবাচক দিক। ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর বিএসসির সাধারণ সূচক উঠেছিল ৮ হাজার ৯১২ পয়েন্ট, যা কোনোভাবেই স্বাভাবিক ছিল না। আবার সে সূচক যেভাবে পড়েছে তাকেও স্বাভাবিক বলা যাবে না।

নভেম্বর মাসের ১৬ তারিখ এ সূচক এসে নেমে এসেছে ৪ হাজার ৬৪৯ পয়েন্টে। অন্যদিকে প্রতিনিয়তই ব্যাংক ঋণের সুদ বেড়ে চলেছে। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঋণের সুদ ছিল ১১ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১১ সালের আগস্টে এসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এটা হচ্ছে সাধারণ ঋণের অবস্থা।

তবে শিল্প ও ব্যবসায়-বাণিজ্যে ব্যাংক ঋণের এ সুদের হার ১৭ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশ বলেও কেউ কেউ বলছেন। ঋণের এ ঊর্ধ্বগতি সুদের হারই প্রমাণ করে দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়। তিনি বলেন, অধিক সুদের হারের ফলে শিল্প বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। আর বিনিয়োগ না হওয়ায় নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না। পুরনো কর্মক্ষেত্রও কমে যাচ্ছে।

এতে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। মির্জ্জা আজিজ বলেন, চলতি অর্থবছর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। এরই মধ্যে সরকার তা পূরণ করেছে। অর্থবছরের ৯ নভেম্বর পর্যন্ত সরকার দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিয়েছে ১৮ হাজার ৮৫৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়েছে ১০ হাজার ৭৪২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

আর বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নেয়া হয়েছে ৮ হাজার ১১৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। সরকার এত টাকা ঋণ নেয়ায় বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে গেছে। অন্যদিকে সরকার নতুন টাকা ছাপানোর ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে। বৈদেশিক সাহায্য বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার প্রতিশ্রুত বৈদেশিক সাহায্য পাচ্ছে না। অন্যদিকে নতুন করেও বৈদেশিক সাহায্য পাওয়ার ব্যাপারে কোনো প্রতিশ্রুতি নেই।

আবার দুর্নীতির অভিযোগের কারণে বিভিন্ন ঋণ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ কমে গেছে। এতে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মির্জ্জা আজিজ বলেন, প্রবাসী আয় ইতিবাচক থাকবে। তবে প্রবৃদ্ধি কমে যাবে।

এটা ৬ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে তিনি মনে করেন। এদিকে রপ্তানি আয় কমে গেলেও ভালো অবস্থানে আছে। তবে আতঙ্কের মাত্রা কমাতে পারলে বেশি খারাপ হবে না। মির্জ্জা আজিজ বলেন, সরকার জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশ নির্ধারণ করলেও অর্থনীতির নানা সঙ্কটের কারণে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না। তার মতে চলতি অর্থবছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে থাকবে।

যা গত অর্থবছরের তুলনায় খারাপ হবে। তাই এ বর্তমান অর্থনীতিকে তিনি সরাসরি ভয়াবহ না বলে বলেছেন, বর্তমান অর্থনীতি নেতিবাচকের দিকে যাচ্ছে। যা হতাশাব্যঞ্জক। অর্থনীতিকে ভালো বা খারাপ বলা যাবে না : আকবর আলি স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ ও সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান বলেছেন, দেশের বর্তমান অর্থনীতিক অবস্থাকে ভালো বা খারাপ বলা যাবে না। এখানে একটা মিশ্র অবস্থা বিরাজ করছে।

অর্থনীতির বেশকিছু সূচক যেমন নেতিবাচক অবস্থানে রয়েছে তেমনি কিছু সূচক মোটামুটি ভালো অবস্থানে আছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে আমদানি ব্যয় বেড়েছে, একই সঙ্গে বিশ্ব বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার বৈদেশিক সাহায্য কমে গেছে, এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে এক বছরের ব্যবধানে ডলারের দাম ৯ শতাংশ বেড়েছে। আকবর আলী খান বলেন, বর্তমানে অর্থনীতির যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তাতে জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমে যাবে, তবে প্রবৃদ্ধি আসবে।

কিন্তু প্রবাসী আয় কমে যাবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর প্রভাব পড়বে। ফলে ডলারের দাম আরো বেড়ে যাবে। এসব দিক বিবেচনায় অর্থমন্ত্রীর চলতি অর্থবছর যে বাজেট দিয়েছেন তা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছবে না। প্রবৃদ্ধি বিষয়ে তিনি বলেন, বাজেটে চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধিও যে হার নির্ধারণ করা হয়েছে আইএমএফও তা সমর্থন করেছে।

তবে এ হার কমে যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তেলের দাম বাড়ানোর ফলে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাবে। ফলে অর্থনীতির সব খাতেই এর প্রভাব পড়বে। আর এ প্রভাবের ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের বেশি হওয়াই বিপজ্জনক।

৬ শতাংশের ওপরে উঠলে প্রত্যাশা বেড়ে যায়। আর প্রত্যাশা বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতিও বাড়তে থাকে। এর ফলে দরিদ্র মানুষ আরো দরিদ্র হয়ে পড়ে। মানুষের জীবনযাত্রার মান কমে যায়। এতে অর্থনীতি বিরূপ আচরণ করবে।

বিনিয়োগ এবং প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র হ্রাস পাবে। তিনি বলেন, গরিব মানুষের ওপর যাতে এর প্রভাব না পড়ে সে জন্য সরকারের উচিত বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া। সরকার তা নিয়েছে, কিন্তু এখানে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। এর ফলে সঠিক বণ্টন হচ্ছে না।

একইভাবে গরিব মানুষের জন্য সরকার ব্যবস্থা নিলেও নির্ধারিত আয়ের মানুষের জন্য সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলে এসব মানুষ গরিব হচ্ছে। তারা ক্রয় ক্ষমতা হারাচ্ছে। কারণ সমাজে সামাজিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। যা অর্থনীতিকে সঙ্কটের দিকে নিয়ে যাবে।

প্ুঁজিবাজার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে তারা পুঁজি হারিয়েছে। তারা পুঁজি হারানোর ফলে অনেকে নতুন পুঁজির জোগান দিয়েছে। কিন্তু বাজারে অস্বাভাবিক দরপতনের ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ করলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি। এসব প্রতিষ্ঠানের পুঁজি হারানোর বিষয়টি এখনো প্রকাশ পায়নি, তবে বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি হলেই তা প্রকাশ পাবে। তিনি আরো বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুঁজি কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হাতে চলে গেছে।

এতে দেশে আর্থিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কারণ যারা মুনাফা লুটে নিয়েছে তারা সে টাকা বাজারে ছাড়ছে না। ফলে টাকা থাকার পরও দেশে টাকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অর্থনীতিকে নিচে নামাবেন, ওঁরা ঠিক করে ফেলেছেন গণমাধ্যম ও অর্থনীতিবিদদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, 'আপ-নারা কিছুই দেখছেন না। আমার মনে হচ্ছে, আপনারা ঠিক করে ফেলেছেন অর্থনীতিকে নিচে নামাবেন।

' রোববার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আর্থিক ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত সমন্বয় কমিটির সভা শেষে তিনি এ কথা বলেন। অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে দাবি করে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'অর্থ-ব্যবস্থাপনায় যে ঝুঁকিগুলো আছে তা আমার বাজেট বক্তৃতায় বলেছি। আমি একটি তালিকাও দিয়েছি। ডেইলি স্টার পত্রিকা আমার অনুপস্থিতিতে ৩০টি ঝুঁকি চিহ্নিত করেছে যার ২৬টিই আমার, আর চারটি তাদের। তারা অর্থবছর পরিবর্তন করার কথা বলেছে।

বর্তমান অর্থবছর এলে পরিবর্তন হয়েছে পাকিস্তান আমলে। কারণ নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত আমাদের উন্নয়ন কাজগুলো হয়। আমরা ব্যর্থ হলে সেটা আমাদের ব্যর্থতা। অর্থবছরের নয়। ' ভর্তুকি বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'কেউ বলে ভর্তুকি কমান আবার কেউ বলে ভর্তুকি কমালেন কেন।

' তিনি জানান, ভর্তুকি অবশ্যই ধাপে ধাপে কমিয়ে আনা হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.