‘মানবিক সহায়তা’র নামে সিরিয়ায় ন্যাটোর সম্ভাব্য অভিযান প্রতিহত করার উদ্দেশে দেশটির সমুদ্রসীমায় রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ অবস্থান নিয়েছে। রাশিয়া জানিয়েছে, এই পদক্ষেপের সুস্পষ্ট অর্থ, পশ্চিমকে জানিয়ে দেয়া যে, সিরিয়ার এ অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতার সুযোগে যে কোনো বিদেশি হস্তক্ষেপ প্রতিহত করবে রাশিয়া। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সিরিয়ার একটি বার্তা সংস্থা জানিয়েছিল, রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ সময়মতো সিরিয়ার সমুদ্রসীমায় আসবে। সম্প্রতি রাশিয়া আন্তর্জাতিক মহলের বিপরীতে সিরিয়াকে রক্ষার অবস্থান নিয়েছে। কয়েক দিন আগে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই লাভরভ সিরিয়ার চলমান বিক্ষোভ ও সহিংসতাকে গৃহযুদ্ধ বলে বর্ণনা করেছেন।

মাত্র কয়েক মাস আগেই সাধারণ নাগরিকদের রক্ষার কথা বলে লিবিয়াতে সামরিক অভিযান চালায় ন্যাটো। তাদের সহায়তায়ই লৌহমানব মুয়াম্মার গাদ্দাফির দীর্ঘ চার দশকের শাসনের পতন ঘটে। সেই সঙ্গে বিদ্রোহীদের হাতে প্রাণ দিতে হলো তাকে। তার পরিবারও দেশছাড়া। গত শনিবার ছেলে সাইফ আটক হয়েছেন।

ঠিক একই কায়দায় এখন প্রেসিডেন্ট আসাদের সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে রাশিয়া। রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ভদ্মাদিমির পুতিনও সিরিয়াতে লিবিয়া ধাঁচের অভিযানের ব্যাপারে পশ্চিমাদের সতর্ক করে দিয়েছেন। এদিকে সিরিয়ার ঘটনাকে গৃহযুদ্ধ বলে মানতে নারাজ যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র মার্ক টোনার বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, আসাদের সরকার নিরপরাধ প্রতিবাদকারীদের ওপর ব্যাপক সহিংসতা, ভীতি প্রদর্শন এবং নিপীড়ন চালাচ্ছে। সিরিয়ার পক্ষে রাশিয়ার অবস্থানের ব্যাপারে ফ্রান্স বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান জ্যাঁ রানু বলেছেন, রাশিয়ার সহায়তা ছাড়া সিরিয়া ন্যাটোর অভিযানের বিরুদ্ধে একেবারে অরক্ষিত।

আমি এখানে সাদামাটাভাবে কোনো সামরিক সমস্যা দেখছি না। পশ্চিমা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সিরিয়ার কোনো প্রতিরক্ষা নেই। তবে এই অভিযান লিবিয়ার চেয়ে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, এটা হবে বড় ধরনের সামরিক অভিযান। গত মধ্য মার্চ থেকে সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, সহিংসতায় এ যাবত্ ৩ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এদিকে দেশে রক্তাক্ত সংঘাত বন্ধে শান্তি পরিকল্পনা পরিবর্তনের সিরিয়ার দাবি আরব লিগ নাকচ করে দিয়েছে। দেশটিতে পর্যবেক্ষক মিশনে ৫শ’ সদস্য পাঠানোর প্রস্তাব সংশোধনের সিরিয়ার দাবি আরব লিগ নাকচ করে দিয়েছে। সিরিয়ায় দমনাভিযান বন্ধে আরব লিগের বেঁধে দেয়া সময়সীমা রোববার রাতে শেষ হয়েছে। তবে সংঘাত রোধের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

প্রেসিডেন্ট আসাদ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন, কোনো চাপের কাছে সিরিয়া মাথানত করবে না। সংঘাত অব্যাহত থাকবে—এমন ইঙ্গিতই তিনি দিয়েছেন। ব্রিটেনের সানডে টাইমস-এর সঙ্গে সাক্ষাত্কারে আসাদ বলেন, সিরিয়ার স্থিতিশীলতা ও ঐক্য হুমকির মুখে। আরব লিগের শান্তি পরিকল্পনাকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংঘাত নিরসনে বিশ্ব আশাবাদী। কিন্তু তা যেন নস্যাত্ হয়ে যাওয়ার পথে।

রোববার দামেস্কে ক্ষমতাসীন বাথ পার্টির দফতরে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। গণঅভ্যুত্থানের সূত্রপাতে রাজধানীতে এ ধরনের হামলা প্রথম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মার্চে সিরিয়ায় গণঅভ্যুত্থানের সূত্রপাত হয়। কূটনৈতিক উপায়ে সিরিয়ার সংঘাত নিরসনে আরব লিগের পরিকল্পনাকেই গুরুত্ব দিয়ে আসা হচ্ছে। সেভাবেই প্রয়াস চালানো হচ্ছে।

এদিকে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের হুমকি দিয়েছে। রোববার এক বিবৃতিতে আরব লিগ বলেছে, সিরিয়ার উত্থাপিত সংশোধন ও আনুষঙ্গিক উদ্যোগ পরিকল্পনার মূল দলিলই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর তা হলে মিশনের মূল উদ্দেশ্যেরই আমূল পরিবর্তন হবে। সিরিয়ার সঙ্কট ও সিরীয় বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষার উদ্যোগ তদারকি করার কথা পর্যবেক্ষক মিশনের। অপরদিকে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ালিদ আল মুয়াল্লেম আরব লিগের বিবৃতি প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, দামেস্ক আরব লীগের শান্তি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

তবে সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে সামান্য সংশোধনের কথা বলেছে। link: amardesh. 22-11-2011 ।