আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লাকসামকে জেলা ঘোষণা করা হোক... (পড়লে বুঝতে পারবেন লাকসামকে কেন জেলা করা দরকার )

লাকসাম জিলা বাস্তবায়নের দাবি জোরালো হচ্ছে.. বাংলাদেশের মানচিত্রে লাকসাম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। নানা ঐতিহ্য সমৃদ্ধ লাকসামকে জিলা বাস্তবায়নের দাবি জোরালো হচ্ছে। ‘‘আর কোন দাবী নাই, লাকসামকে জিলা চাই’’- এ শ্লোগানের মাধ্যমে বৃটেনের মহারাণী ভিক্টোরিয়া কর্তৃক উপাধী প্রাপ্ত নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীর স্মৃতি বিজড়িত লাকসাম বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। আলোর শহর বা ‘‘কত লাকসাম কত বাত্তি’’ নামে খ্যাত এই লাকসাম এর প্রায় চার শত একর জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেলওয়ে জংশন যার মাধ্যমে বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত ভ্রমণ করা সম্ভব। এক সময়ের বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম থানা লাকসামকে বিভক্ত করে ইতিমধ্যে চারটি উপজেলা গঠিত হয়েছে।

এ চারটি উপজেলা হচ্ছে- লাকসাম উপজেলা, নাঙ্গলকোট উপজেলা, মনোহরগঞ্জ উপজেলা ও সদর দক্ষিন উপজেলা। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা অনুযায়ী এ চারটি উপজেলায় সর্বমোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ। উল্লেখিত চারটি উপজেলার সাথে চাঁদপুরের শাহরাসিত্ম উপজেলা, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলা এবং কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম ও বরুড়া উপজেলা যুক্ত করা গেলে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা অনুযায়ী প্রস্তাবিত লাকসাম জেলার সর্বমোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ। এক্ষেত্রে ইতিহাস, ঐতিহ্য, আয়তন, জনসংখ্যাসহ সকল দিক বিবেচনায় লাকসাম জেলা বাস্তবায়নের যৌক্তিক দাবীদার। বাংলাদেশে ইতিপূর্বে অনেক জেলা ঘোষিত হয়েছে যার ভোটার সংখ্যা প্রস্তাবিত লাকসাম জেলা রূপরেখার ভোটার সংখ্যার চাইতে অর্ধেক বা তার চেয়েও কম।

উদাহরণ স্বরূপ মেহেরপুর জেলা মাত্র ৩টি উপজেলা নিয়ে গঠিত হয়েছে এবং এ জেলার সর্বমোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ মাত্র। ঝালকাঠি জেলা মাত্র ৪টি উপজেলা নিয়ে গঠিত এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা অনুযায়ী এ জেলার সর্বমোট ভোটার সংখ্যা সাড়ে ৩ লাখ। নড়াইল জেলা মাত্র ৩টি উপজেলা নিয়ে গঠিত এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা অনুযায়ী এ জেলার সর্বমোট ভোটার সংখ্যা সোয়া ৪ লাখ মাত্র। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রণীত ভোটার তালিকা ২০০৯ অনুযায়ী এই রকম প্রায় ২৫টি জেলা পাওয়া যাবে যার ভোটার সংখ্যা লাকসাম জেলা রূপরেখা (লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট ও সদর দক্ষিণ) এর ভোটার সংখ্যার চাইতেও কম। লাকসাম জেলা বাস্তবায়ন পরিষদ কর্তৃক প্রণীত লাকসাম জেলার সম্ভাব্য রূপরেখা অনুযায়ী লাকসাম জেলা বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করেন বিজ্ঞ মহল।

আর লাকসাম জেলা বাস্তবায়ন হলে মানুষের জীবন যাত্রার মান পরিবর্তনের পাশাপাশি লাকসামকে শিল্প ও বাণিজ্য নগরে রূপান্তরিত করা সম্ভব হবে। লাকসামকে জেলা ঘোষণা করা হোক... দেশের বিভিন্ন প্রশাসনিক অঞ্চলের পুন:বিন্যাস করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে নতুন জেলা ও বিভাগের সৃষ্টি হচ্ছে (ভৈরব, রংপুর)। এই ধারাবাহিকতায় বর্তমান কুমিল্লা জেলা অন্ত:র্গত লাকসাম উপজেলাকে জেলা ঘোষনা করা হোক। আজ প্রায় পনের বছর ধরে কাজটি করবো করছি বলে করা হচ্ছে না।

অথচ লাকসামকে জেলা করার যৌক্তিকতা অনেক কাল ধরে স্বীকৃত। দেশের সবচেয়ে বড় রেলওয়ে জংশন এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ভৌগলিক অবস্থানের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক আমল থেকে গুরুত্ববহ লাকসাম দ্রুত জেলা হলে এই বৃহত্তর অঞ্চলের প্বার্শবর্তী ও সংলগ্ন ৮টি থানার অন্তত: ১২ লক্ষ মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে। ৭২ সালে লাকসামকে জিলা করার দাবীতে স্মারকলিপি স্মারকলিপি অনুযায়ী তৎকালীন বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ থানা ছিল লাকসাম। প্রায় ২০১ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে ও ২৭টি ইউনিয়ন নিয়ে লাকসাম থানা গঠিত হয়েছিল। ১৯৭২ সালে লাকসামের জনসংখ্যা ছিল চার লক্ষ্যেরও বেশী।

বাংলাদেশের বৃহত্তম থানার তৎকালীন জনপ্রতিনিধি আওয়ামী লীগের তৎকালীন এমসিএ জালাল আহমেদ, এমসিএ আবদুল আউয়াল ও আওয়ামী লীগ নেতা আনু মজুমদার লাকসাম থানার উন্নয়ন ও বিভিন্ন নাগরিক সুবিধার জন্য তৎকালীন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সচিব ও গণ পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ এর নিকট ১৯৭২ সালের ২৬ জানুয়ারি এক স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপিতে নেতৃবৃন্দ লাকসামকে “লক্ষ শ্যামের দেশ” হিসাবে উল্লেখ করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের নিকট লাকসামকে জিলা ঘোষনা করার দাবী জানায়। স্মারকলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, লাকসাম থানাবাসী সরকারের দেয়া বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা হইতে বঞ্চিত হইয়া আসিতেছে এবং লাকসামবাসীর পরিত্রানের জন্য অবিলম্বে লাকসামকে জিলায় রূপান্তরিত করা হউক। লাকসামের ইসলামিয়া প্রেস থেকে মুদ্রিত এই স্মারকলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, বিগত ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জিলা সদর দপ্তরকে ঐতিহ্যবাহী এই লাকসাম থানায় স্থানান্তরিত করা হইয়াছিল এবং সেই সময় লাকসাম থানায় জিলা পর্যায়ের সকল কর্মকান্ড সম্পাদন করা হইয়াছিল। সুতরাং লাকসামকে জিলা রূপান্তরিত না করার যৌক্তিক কোন কারন নেই।

উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে লাকসামের জনপ্রতিনিধি প্রাক্তন এমপি মরহুম আলহাজ্ব জালাল আহমেদ, প্রাক্তন এমসিএ মরহুম আবদুল আউয়াল ও আনু মজুমদারের পরেও লাকসামকে জিলা ঘোষনার দাবীতে লাকসামের জনপ্রতিনিধি গন সরকারের নিকট জানিয়ে আসছিলেন। বিশেষ করে লাকসাম পৌরসভার প্রাক্তন মেয়র মরহুম মোস্তফা কামাল লাকসামকে জিলা ঘোষনার দাবীতে আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই আন্দোলেনের ফলে বর্তমান রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় গেলে লাকসামকে জিলা করবেন বলে ঘোষনা দেন। কিন্তু মরহুম মোস্তফা কামালের মৃত্যুর পর এই আন্দোলনের গতি স্লথ হয়ে যায়। লাকসামকে জেলা ঘোষনার দাবীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনির নিকট স্মারকলিপি প্রদান বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনি যুক্তরাষ্ট্রের ষ্টেট ডিপার্টমেন্টে যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব ষ্টেট হিলারী ক্লিনটনের সাথে এক সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হন।

বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনি ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে এলে লাকসাম জিলা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শিব্বীর আহমেদ পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনির সাথে দেখা করে লাকসাম জিলার দাবী সম্বলিত স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন। স্মারকলিপি গ্রহন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনি বর্তমান লাকসাম উপজেলার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে লাকসাম জিলা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শিব্বীর আহমেদ পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে লাকসাম সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত প্রদান করেন। এছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনি লাকসাম জিলার আন্দোলন কতিদন থেকে চলছে জানতে চাইলে লাকসাম জিলা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শিব্বীর আহমেদ ১৯৭২ সালের ২৬ জানুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সচিব তোফায়েল আহমেদ এর কাছে দেয়া লাকসামের তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা সংসদ সদস্য মরহুম আলহাজ্ব জালাল আহমেদ, মরহুম আবদুল আউয়াল এর প্রদত্ত স্মারকলিপির কপি হস্তান্তর করে লাকসাম জিলা আন্দোলনের ইতিহাস বিস্তারিত তুলে ধরেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা, দীপু মনি লাকসাম জিলা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শিব্বীর আহমেদ এর বিভিন্ন বক্তব্য ও লাকসাম জিলা বাস্তবায়েনর বিভিন্ন যৌক্তিক বক্তব্য শুনার পর লাকসাম জিলা বাস্তবায়নের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আলাপ আলোচনা করে সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। উল্লেখ্য, গত সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৬৬তম অধিবেশনে যোগদিতে এলে লাকসাম জিলা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শিব্বীর আহমেদ লাকসাম জিলা বাস্তবায়ন সংক্রান্ত এক স্মারকলিপি প্রদান করেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন।

র্পূবে এখানে প্রকাশ করা হয়েছে.....  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।