আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লেখাটির শিরোনাম দিতে পারলামনা

লিখতে ভালবাসি আমাদের যখন নিজেদের পরিচয় প্রদানের জন্য কোন সরকারী বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের ফরম পূরণ করতে হয় তখন লৈঙ্গিক পরিচয় প্রকাশ করার জন্য যে ঘরটি থাকে যেখানে শুধুমাত্র নারী এবং পুরুষ এই দুটি শব্দের যে কোন একটিতে টিক চি‎হ্ন‎ দিতে হয়। কিন্তু যারা প্রকৃতির খেয়ালে না পুরুষ না নারী হয়ে জন্ম গ্রহন করেছে, ইংরেজীতে যাদেরকে সীমেল ব এবং হিফিমেল নামে আখ্যায়িত করা হয় তারা কোন শব্দটিতে টিক চি‎হ্ন দিবে এটা কোন মতেই ভেবে স্থির করতে পারি না। মানুষের অস্তিত্ব প্রকাশের জন্যই তার নিজের পরিচয়টি প্রকাশ করা অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ন বা প্রথম পদক্ষেপ। এই পুরো পরিচয় প্রকাশের প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ সে যে একজন মানুষ সেটি প্রকাশ করা এবং দ্বিতীয় ধাপ তার লৈঙ্গিক পরিচয়টি প্রকাশ করা। কিন্তু তারা আমাদের সমাজ বা রাষ্ট্রেও কোথাও তাদেরএরই লৈঙ্গিক পরিচয়টি প্রকাশ করতে পারেনা এরবং একজন মানুষ হিসেবে তার প্রাপ্য সন্মান টুকু থেকে সে বঞ্চিত হয়।

এবং সমাজ বা রাষ্ট্রের অন্দরে কোন ধরনের প্রবেশাধিকার তাদের দেয়া হয় না। সমাজের অন্যান্য মানুষের সাথে বেড়ে উঠার বা মেলা মেশার কোন সুযোগ তারা পায় না। তাদেরকে বসবাস করতে হয় সমাজের বাহিরে শুধু মাত্র নিজেদের জন্য একেকটি ছোট ছোট পল্লী তৈরী করে নিয়ে । একটি শিশু সীমেল বা হিফিমেল হিসেবে জন্মগ্রহন করার সাথে সাথে তাদেরকে ঐ সমস্ত পল্লীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । কারন কোন পরিবাওে একটি শিশু যদি সীমেল বা হিফিমেলহিসেবে বেড়ে উঠতে থাকে তাহলে সমাজ ঐ পরিবারটিকে ছুড়ে ফেলে দেয় ।

ঐ পরিবারের সাথে আর কোন ধরনের সম্পর্ক তারা রাখতে চায় না। ঐ শিশুটির স্নেহময়ী জননী যে তাকে দশটি মাস গর্ভে ধারন করে নিজের শোনিত পান করিয়ে তিলে তিলে গড়ে তুলেছে তার প্রানটিকি একবারও হুহু করে কেদে উঠে না। মাতৃক্রোড়েই যে শিশুটির পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ এবং আরামদায়ক স্থান সেখঅন থেকে যখন তাকে উচ্ছেদ করা হয় তখন ঐ শিশুটিও কি আর্তচিৎকারে আমাদের বিভিষীকা জাগিয়ে তোলেনি । কিন্তু আমাদের অন্ধ এবং বধির সমাজের হৃদয়ে ঐ কান্না কোন ধরনের স্পন্দন জাগাতে পারে না। আমাদের সমাজ তাদেরকে একজন পূর্নাঙ্গ মানুষ হিসেবে স্বীকার না করলেও তারা কিন্তু শারীরিক এবং মানসিকভাবে সমাজের আর দশজনের মতই মানুষ।

শুধুমাত্র তাদের জননেন্দ্রীয় গুলো পুরোপুরি কোন নারী বা পুরুষের মত বিকশিত হয়ে উঠেনি । চোর, ডাকাত, বদমাশ, দূর্নীতিবাজ, কালোবাজারী, গুন্ডা, মাস্তান এরা যদি আমাদের সমাজে শ্রদ্বেয় এবং পূজিত হয়ে বসবাস করতে পারে তাহলে কোন অপরাধে তারা সমাজে বসবাসের অনুমতিটুকু পর্যন্ত পাবেনা? এবং সমাজের বিভিন্ন ধরনের নিগ্রহ, লাঞ্চনা, বঞ্চনা, অত্যাচার, নির্যাতন, অপমান, ঘৃনা ইত্যাদি বহুল পরিমান পেয়ে থাকে। তারা শিক্ষর অধিকার চিকিৎসার অধিকার সর্বোপরি সকল ধরনের নাগরিক অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত। তাদের ঐ অন্ধকার পল্লী গুলোতে সভ্যতার কোন আলোক প্রবেশ করতে পারে না। অথচ ওরাই তাদের সংঘের মাধ্যমে সমাজের গরীব মানুষদের বিনা খরচে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকে।

তারা দুই রকমভঅবে তাদের জীবীকা নির্বাহ করে থাকে। এক: ভিক্ষা বৃত্তি, দুই: সভ্যসমাজের খদ্দেরদের সাথে যৌনকর্ম করে। ভাবতে অবাক লাগে আমাদের সমাজ এত বেশী সভ্যযে, যে অজরিনত জননেন্দ্রীয় গুলোর কারনে তারা সমাজ থেকে বহিঃসকৃত, সেই জননেন্দ্রীয় গুলোর নিকটেই তাদেরকে যেতে যৌন মুখ চরিতার্থ করার জন্য। অনেকে বলে থাকেন, তাদের অঙ্গভঙ্গি এবং ভাষা চরমভাবে কুরুচিপূর্ন এবং অশ্লীল, সুতরাং তাদেরকে সমাজের বাইরে রাখাই শ্রেয় । কিন্তু ভদ্রমহোদয়গন কেন এমন হলো সেটা কি একবার ও ভেবে দেখেছেন? তারা সন্তার হিসেবে বাবামায়ের স্নেহ মমতা থেকে সহোদর হিসেবে সহোদরের ভালবাসা থেকে , প্রেমাস্পদ হিসেবে প্রেমিক বা প্রেমিকার প্রনয় থেকে বঞ্চিত।

তারা সকল ধরনের মানবিক ভালবাসা থেকে বঞ্চিত। তাদের বঞ্চনার কেরন শেষ নেই , বঞ্চিত হতে হতে তাদের অন্তওে জনম নেয় তীক্ষè বেদনা। সেই বেদনাই তাদেরকে প্ররোচিত করে কুরুচিপূর্ন ও অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির ও ভাষার মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি ঘৃনার সুনামি বইয়ে দিতে। তাদের মুখের রেখায় রেখায় চোখের ভাষায় কুঞ্চিত নাসা ও ভ্রুতে তীক্ষè বেদনা ও তীব্র ঘৃনার মিশেল ফুটে উঠে । মনে হয় কড়ায় গন্ডায় তাদের বঞ্চনার শোধ তুলতে চায় তীব্র ঘৃনা প্রকাশের মধ্য দিয়ে।

ওরা কিন্তু নিজেদের মধ্যে একধরনের বৈষম্যহীন, ভালবাসাময় একধরনের সমাজ গড়ে তুলেছে। ওখানে ওরা মুক্ত বিহঙ্গের মতই বিচরন করে। আনন্দ উল্লাসে, আশায়, ভালবাসায় তারা একে অপরকে জড়িয়ে থাকে। প্রত্যেকের দুঃখ , কষ্ট, বেদনা তারা হৃদয় দিয়ে অনুভব করে। তারা যেন সমাজের পশুরুপী মানুষদের হাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষাকল্পে একান্ত নিবিড়তায় জড়িয়ে রয়েছে।

কোন ধরনের হিন্দু মুসলিম , বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান প্রভৃতি সাম্প্রদায়ক বৈষ্যম্যকে তারা পুরোপুরি মুখে ফেলেছে , এমনকি নেই কোন ঝযবসধষব, ঐবভবসধষব সংক্রান্ত বৈষম্য। ধনী গরীব উ”ু-নিচু সকল ধরনের বৈষম্যকে মুছে ফেলে তারা যেন মাটির বুকে স্বর্গ রচনা করেছে। ওদের মানব ধর্মের জয় হোক। আমি একদিন শাহবাগের মোড়ে দাড়িয়ে সিগারেট ফুকছি, এবং কোন একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করতেছি। আমার বন্ধুরা পাশেই দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ইত্যাদি বিষয়ে গভীর আলোচনায় ব্যাপ্ত।

এমন সময় দুইজন ঝযবসধষব পাশের টঙ্গের দোকানটিতে এসে চা ও সিগারেটের অর্ডার দিল। আমি দেখামাত্র একজনের প্রেমে পড়ে গেলাম, সেটাকে বলে লাভ এট ফাস্ট সাইট। তার পরনে একটি রঙ্গীন হাফহাতা শার্ট, টাইট জিন্সের প্যান্ট এবং একজোড়া চটি জুতা। তারা মাঝারি আকারের রেশমি চুল গুলো পিছনদিকে জুটি করে বাধা। তাদের চোখ গুলো রাতের নক্ষত্রের মত ঝলমল করতেছে ।

তার ঠোটে অস্পষ্ট হাসির রেখা। নিয়ন বাতির আলোতে তাকে খুবই সুন্দর দেখাচ্ছিল । তার প্রান থেকে নির্গত আলোর বন্যা তার চতুর্দিকে খেলা করতেছিল। । যেন লিওনার্দো দ্য ভেঞ্চি তার অসীম ধৈর্যে তার সমস্ত কল্পনা এবং সমস্ত শিল্পী সত্বা দিয়ে বেদনার রেখাগুলো তার মুখের মধ্য দিয়ে চিত্রিত করে চলেছেন ।

এই চিত্রিত করার প্রক্রিয়া যেন কোন দিন শেষ হবেনা । তার অন্তরের বেদনা ও ঘৃনার আকার ধরে যেন ফেটে বের হতে পারছে না তার ভেতরের গুমরে গুমরে কান্না। আমি তার নক্ষত্রের মত চোখের মধ্যে সেই কান্না আমি দেখতে পারছিলাম । আমার তখন প্রচন্ড ইচ্ছে হয়েছিল দৌড়ে গিয়ে জানু পেতে বসে করজোড়ে বলি অশ্লিল অঙ্গভঙ্গি ও ভাষার মাধ্যমে অভ্যক্ত তীব্র ঘৃনাই তুমি প্রকাশ কর । তোমার মুখে বেদনার রেখা এবং ভেতরের কান্না সহ্য করতে পারছিনা ।

তোমাকে দেখামাত্রই প্রচন্ডভাবে তোমার প্রেমে পড়ে যাওয়ার পরও তোমার কান্না ভেজা হৃদয়ে আমার প্রেমটুকু নিবেদন করতে পারলাম না বিধায় আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি । সমাজের সুক্ষ সুক্ষ তন্তুতে আমার শারিরীক মানসিক গ্রন্থি গুলো বাধা, এ বন্ধনছিন্ন করি এমন ক্ষমতা আমার নেই । আমি আবারও তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতেছি। আমি ওদের চলে যাওয়ার দিকে সতৃঞ্চ নয়নে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভাবি ওরা কি আমাকে আমাদেরকে কোনদিন ক্ষমা করতে পারবে। আমি যখন এসব ভাবছিলাম আমার বন্ধরা তখন তাদের সমাজ রাজনীতি আলোচনা ছেড়ে এসে ওদের সমবন্ধীয় কুৎসিত আলোচনায় আসর জমিয়ে তোলে এবং ওদের লক্ষ করে বিদ্রুপ মন্তব্য ছুড়ে দিচ্ছিল ।

বন্ধুদের দোষ দিয়ে কোন লাভ নেই কারন সমাজ, পরিবার, আমাদের শিখিয়েছে ওদের ঘৃনা করতে, ওদের মানুষ মনে না করতে, ওদের ভালনাবাসতে, ওদের প্রতি কোন ধরনের সহানুভূতি প্রকাশ না করতে, ওদের সাথে কোন মানসিক সম্পর্ক স্থাপন না করতে । ওদের প্রতি আমাদের সমাজের রন্ধে রন্ধে শুধু উচ্চারিত হচ্ছে একটি শব্দ ‘না'। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.