আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জেলহত্যা মামলার পলাতক আসামি রাষ্ট্রদূত মেজর খায়রুজ্জামান কানাডায়

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম ঢাকা: সরকারের নথিতে ‘পলাতক’ মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার কয়েক মাস ধরে কানাডায় অবস্থান করছেন। ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাওয়া এ রাষ্ট্রদূত সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ারও আবেদন করেছেন। সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র বাংলানিউজকে এ তথ্য জানায়। শুধু জেলহত্যা মামলাই নয়; খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৬০ লাখ টাকার তহবিল তসরুফেরও সুনির্দিষ্ট অভিযোগে অডিট আপত্তিটির নিষ্পত্তি হয়নি। বিএনপি-জামায়াত জোটের সময় গত ২০০৪ সালে জেলহত্যা মামলার আসামি থেকে অব্যাহতি পাওয়া সেনাবাহিনীর একসময়ের এ কর্মকর্তা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের স্নেহ পেয়ে ১৯৭৯ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আত্তীকৃত হন।

এরপর ক্ষমতাসীনদের প্রশ্রয় পেয়ে সচিব পদমর্যাদায় এ গ্রেড অ্যাম্বাসেডর হন। সর্বশেষ ছিলেন মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে ফিরতে বলা হলে তিনি হয়ে যান পলাতক। তাকে দেশে ফিরতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হলেও কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি ছিলেন মেজর (অব.) এম খায়রুজ্জামান।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক পদমর্যাদার এই কর্মকর্তাকে ফিলিপাইন থেকে ফেরত এনে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই বছর ২৪ সেপ্টেম্বর তাকে অবসর দেওয়া হয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর ২০০৪ সালে ট্রায়াল কোর্টে জেলহত্যা মামলা থেকে খায়রুজ্জামানকে খালাস দেওয়া হয়। তবে মামলা চলাকালেই ‘নজিরবিহীন’ভাবে তাকে পদোন্নতি দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেইসঙ্গে তাকে ‘সসম্মানে’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।

২০০৫ সালে তাকে মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত পদেও নিয়োগ দেয় বিএনপি-জামায়াত জোট। বিগত ফখরুদ্দীন-মইনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের আগস্টে তাকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার করা হয়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি এম খায়রুজ্জমানকে কুয়ালালামপর থেকে দেশে ফিরে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এরপর ওই বছরের ৩ জুলাই পর্যন্ত ছুটির আবেদন করেন তিনি। ৪ জুলাই থেকে তার এলপিআরে যাওয়ার কথা ছিল।

তবে সরকার তার ছুটির আবেদন অগ্রাহ্য করে ৮ মার্চের মধ্যে দেশে ফিরতে আদেশ দেয়। দেশে ফেরার আদেশ পেয়ে ২৪ জানুয়ারি তিনি দায়িত্ব ত্যাগ করে নিরুদ্দেশ হন। সরকার এরপর তার পাসপোর্ট বাতিল করে। এদিকে এলপিআর চলাকালে সরকারের নির্দেশ অমান্য করে আত্মগোপন করায় ১৯৮৫ সালের (আপিল ও শৃঙ্খলা) বিধিমালার বিধি ৫-এর উপবিধি ২ অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নির্দেশ সত্ত্বেও দেশে না ফেরায় তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে বিষয়ে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে চেয়েছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সংস্থাপন মন্ত্রণালয় তাদের জানায়, কেউ অবসরে গেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার সুযোগ থাকে না। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ থাকলে তার বিরুদ্ধে অর্থ আদায়ের মামলা করা যেতে পারে। এরপরই খোঁজ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানতে পারে, তিনি ৬০ লাখ টাকার তহবিল নয়ছয় করেছেন। এটি আদায়ের জন্য পরে চিঠি ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও কোনও কাজ হয়নি। খায়রুজ্জামান যেভাবে কানাডায়: মালয়েশিয়ায় হাইকমিশনারের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর খায়রুজ্জামান সস্ত্রীক মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালমপুরের আমপাঙ জায়া এলাকায় একটি বাড়ি কিনে বসবাস শুরু করেন।

মালয়েশিয়া সরকারের দেওয়া ‘সেকেন্ড হোম’ সুযোগের আওতায় তিনি দেশটিতে স্থায়ীভাবে থাকার আবেদন করেন। ২০১০ সালের শুরুর দিকেও তাকে কুয়ালালামপুরে দেখা যেত। তবে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসির আদেশ কার্যকরের পর তিনি মালয়েশিয়া ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। খায়রুজ্জামানের সঙ্গে একসময় যোগাযোগ হতো এমন একটি সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, খায়রুজ্জামান ভেবেছিলেন, প্রায় অর্ধকোটি টাকা খরচ করে মালয়েশিয়ায় বসবাসের অনুমোদন পাওয়ার পরও হয়তো তাকে হাসিনা সরকারের জালে পড়তে হতে পারে; এজন্য নিরাপত্তার শঙ্কা থেকেই তিনি মালয়েশিয়া ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করেন। দুবাই হয়ে তিনি কানাডায় পাড়ি জমান।

কয়েক মাস ধরে তিনি মন্ট্রিয়লে অবস্থান করছেন বলে সূত্রের খবর। কানাডা সরকারের কাছে তিনি নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে দেশটিতে বসবাসের জন্য রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। বাংলাদেশ সময়: ০৫২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১১ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.