আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিষ্টির দাম যখন ১০ হাজার টাকা!!!!!!!

আমার যোগ্যতা কিছুই নেই। শিরোনাম দেখে সবার মনেই হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে,বাপ!এইটা আবার কি মিষ্টি !ডিজিটাল মিষ্টি নাকি?আমিও প্রথম বার শোনার পর এরম কিছু একটাই ভেবেছিলাম। কিন্তু মিষ্টির দাম যে এত হতে পারে এবং দাম শোনার পর কি পরিমাণ ভীরমি খেয়েছি সেই অভিজ্ঞতাটায় একটু শেয়ার করছি। আমি জাহাজে চাকরী করি। জাহাজে যাবার জন্য আমাদের কে এজেন্সী নামক মাধ্যমের শরণাপন্ন হতে হয়।

যারা ম্যানিং এজেন্সী নামেই বেশি পরিচিত। কেউ কেউ হয়তো সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে জাহাজে উঠতে পারেন। কিন্তু আমাদের মত আমজনতার ঐ এজেন্সী গুলই ভরসা। এই এজেন্সী গুলো আমাদের মত আমজনতা কে পাঠিয়ে শিপিং কোম্পানি থেকে বেশ মোটা অঙ্কের কমিশন পান। গত পরশু এরকম একটা এজেন্সি থেকে ফোন পেলাম।

ঐ এজেন্সীতে আমার একটা বায়োডাটা জমা দিয়েছিলাম বেশ কিছুদিন আগে। ফোনে ওঁরা জানতে চাইলো আমি ফ্রী আছি কিনা?আমি জানালাম যে আমি ফ্রী আছি। তখন ওঁরা জাহাজের সমস্ত ফিরিস্তি আমার সামনে পেশ পূর্বক জানতে চাইলো ওঁদের কোম্পানিতে আমি যেতে ইচ্ছুক কিনা?আমি বললাম যে আমি ইচ্ছুক। আমার ইচ্ছার প্রেক্ষিতে ওঁরা সিঙ্গাপুর থেকে মোবাইলের মাধ্যমে একটি মৌখিক পরীক্ষার আয়োজন করলো এবং আমি তাতে আমার গাধা মস্তিষ্ক নিয়ে টিকে গেলাম। এবার সিলেকশন হবার পর যে ভদ্রলোক আমার জন্য এতো খাটা খাটনি করলেন তিনি বিগলিত গলায় আমাকে বললেন ভাই আপনি তো টিকে গেছেন।

আমি যারপরনাই তার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে প্রতি উত্তরে এমন একটা হাসি দিলাম যে হাসির অর্থ হতে পারে"আপনার দোয়ায় সব হয়েছে আমি তো উছিলা মাত্র" । এবার তিনি আমার দিকে প্রেমপূর্ণ নয়নে তাকিয়ে বললেন আমাদের কে কিছু মিষ্টি টিস্টি খাওয়াইয়েন। আমি তার চেয়েও বিগলিত হয়ে বললাম তা আর বলতে!! আজকে আমি আমার পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ৪ কেজি মিষ্টি নিয়ে উপস্থিত হলাম সেই এজেন্সীর দোরগোড়ায় । চাকরী পেয়েছি মিষ্টি খাওয়াব না তা তো হতে পারে না । তাই এই মিষ্টির আয়োজন।

মিষ্টি দেখে সবাই খুশি হলেও যে লোকটি আমার জন্য এত কাজ করলেন তিনি কেন যেন খুশি হতে পারলেন না। আমি তার কাছে এই অখুশির কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন ধুর ভাই। আপনারে বললাম কি আর আপনি আনলেন কি ?আমি বললাম কেন আপনি তো মিষ্টি খেতেই চেয়েছেন। তিনি তখন বললেন আমি এই মিষ্টির কথা বলিনি। আমি তখন বললাম কোন মিষ্টির কথা বলেছেন?তিনি তখন ব্যপারটা আমায় খুলে খুলে বললেন।

এই মিষ্টির মুল্য ১০ হাজার টাকা যা একটা খামের মধ্যে ভরে তাকে দিতে হবে । আমিও অতি বুঝদার ছেলের মত বুঝলাম এবং অবাক হলাম এবং অভ্যেস বশত ভীরমি খেলাম। সরকারী অফিসে এই জিনিস হয় তা আমার অজানা নয় কিন্তু বেসরকারি লাভজনক একটি প্রতিষ্ঠানেও যে তা হয় তা জানলাম আজ । আজ থেকে ৫ বছর আগে যখন আমি এই জাহাজ জীবনে ঢুকেছিলাম তখন আমাকে এমন কিছু করতে হয়নি। অবশ্য এর জন্য আমারাই দায়ী।

আমাদের মধ্য থেকে অনেকেই আগে জাহাজে উঠার জন্য এই সকল লোকগুলোকে টাকার লোভ দেখিয়ে পাততাড়ি গোটাতে চান। কিন্তু এর ভবিষ্যৎ কি কেউ ভেবে দেখেছেন?জাহাজের গায়ের রক্ত পানি করা টাকা এভাবে একজন কে দিয়ে দিচ্ছেন। যে আপনাকে পাঠানোর দায়িত্ব নিয়ে বসে আছেন এবং শিপিং কোম্পানি গুলো থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিচ্ছেন এবং যার ব্যবসায় হচ্ছে আপনাকে নিয়ে। মানে আমি আপনি তার কাছে চরম আরাধনার বস্তু। কিন্তু সেই আমাদের সাথেই চলছে সব ধরণের অনিয়ম।

জানি এ দেশে কোন কিছুই ঠিক থাকে না। উপরন্ত যথেষ্ট মেধা এবং পরিশ্রমী লোকজন সুযোগ পাচ্ছেন না জাহাজে যাবার। আমি এমন ও শুনেছি যে অধিক টাকার বিনিময়ে অযোগ্য ও অদক্ষ লোক গুলোকে এই সমস্ত এজেন্সীর কর্মচারীরা জাহাজে উঠিয়ে দিচ্ছেন। যারা জাহাজে গিয়ে কাজ পারেন না এবং নষ্ট করেন বাংলাদেশের ভাব মূর্তি। ফলে বাংলাদেশ থেকে ঐ সমস্ত কোম্পানি গুলো আর লোক নিয়োগ করেন না।

হয়তো এমন এক সময় আসবে যখন বাংলাদেশ থেকে ভালো ভালো শিপিং কোম্পানি লোক নিয়গে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে যা আমাদের জন্য যেমন উদ্বেগের তেমনি আমাদের দেশের অরথনীতির জন্যও চিন্তার কারণ। তাই ব্লগে যারা জাহাজী ভাই কিংবা এজেন্সির ভাই আছেন তাদের কাছে আমার বিনীত অনুরধ এই অপার সম্ভাবনাময় খাতটিকে আপনারা বিলুপ্তির পথে না ঠেলে আলোর পথে নিয়ে আসুন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.