আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কালাই ঃ শূন্য ঘরে অঙ্গহীন প্রাণ

আমাদের ছোটবেলায় মায়ের পাশে শুয়ে-বসে রেডিও শোনার চল ছিল। আকাশবানী কলকাতা থেকে প্রচারিত অনুরোধের আসর আর নাটক ছিল খুব জনপ্রিয়। বিখ্যাত শম্ভু মিত্র, তৃপ্তি মিত্র, উৎপল দত্ত বেতার নাটকে অভিনয় করতেন। সেই রেডিওতে শোনা ‘সাহেব’ নামের একটি নাটকে নিু মধ্যবিত্ত পরিবারের খেলা পাগল শিতি বেকার ‘সাহেব’ ছোটবোনের বিয়ের খরচ জোগাতে নিজের একটি কিডনি বিক্রি করে দেন। মানব শরীরে কিডনির প্রয়োজনীয়তা কিংবা উপযোগীতা সমন্ধে তখন ধারনা থাকার কথা নয়।

তারপরেও আপনজনের প্রয়োজন মেটাতে ভাইয়ের এই আত্বত্যাগের কাহিনি ছোট বুক ভরিয়ে দিয়েছিল। আবেগে আপ্লুত করার পাশাপাশি মহৎ কাজের দৃষ্টান্তে উদ্দিপ্ত হয়েছিল। পাষন্ড ব্যবসায়ীদের মদদে, প্রতারক দালালদের খপ্পড়ে পড়ে দুইশ মানুষের বৃক্ক বা কিডনি বিক্রির ঘটনা স্মৃতিময় সেই উদ্দিপনায় পানি ঢেলে দিয়েছে। মানুষ হতবাক-শংকিত, আতংকিত। জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন জুড়ে ১৮ টি গ্রামের এতগুলো হতভাগ্য মানুষ ঋণ থেকে মুক্তি আর একটুখানি ভালো থাকার মোহে পড়ে ৫ বছর ধরে বিক্রি করে দিচ্ছে জীবনের অমূল্য সম্পদ একটি করে কিডনি।

জীবন মানুষের সবচেয়ে প্রিয় সম্পদ। এই জীবন সে পায় মাত্র একটি বার। প্রীতি-প্রেম, কাম-অপত্য, ভক্তি-শ্রদ্ধা, ঘৃনা-বৈরিতা, লোভ-লালসা, ক্রোধ-সমবেদনা এমনকি উদাসিন্যের বোধগুলিতেও মানুষ থাকে আপন অস্তিত্বে বিভোর। কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় জীবনের এই বিভোরতাকে মেলে ধরেছেন কত না সুন্দর শব্দগুচ্ছে-‘বাঁচতে হবে বাঁচার মতো, বাঁচতে বাঁচতে জীবনটা/গোট একটা জীবন হয়ে জীবন্ত হোক’। হায়রে জীবন! হায়রে তার বেঁচে থাকা! দৈনিক প্রথম আলো’র কালাই প্রতিনিধি আনোয়ার পারভেজ সমাজের অভ্যন্তরস্থ এই গভীর তকে নিপুনভাবে তুলে ধরেছেন দীর্ঘ অনুসন্ধানি প্রতিবেদনে।

লিখেছেন, “ অধিকাংশ নারী-পুরুষই দালালদের দেখানো বড় অংকের নগদ টাকার প্রলোভন আর বেসরকারী সংস্থার (এনজিও) ঋণের চাপ থেকে মুক্তি পেতে কিডনি বিক্রি করেছেন। কিডনি জনিত পরবর্তী স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং অনাত্বীয়ের কাছে টাকার বিনিময়ে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি যে শাস্তিযোগ্য অপরাধ, তা শুরুতে জানতেনই না তারা। কিডনি বিক্রি করে অভাবী এই মানুষেরা মাত্র এক থেকে দেড় লাখ টাকা পেলেও আরও বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় দালালেরা”। ঋণের চাপে পিষ্ট মানুষের চরম দারিদ্রতাকে কাজে লাগিয়ে আর অস্তিত্বের সংকটে দিশেহারা মানুষের মধ্যে লোভ জাগিয়ে দিয়ে কিডনি বিক্রির এই প্রলুব্ধকরণ প্রক্রিয়া ক্রমশই সংক্রমিত হয়ে পড়ছে গোটা এলাকা জুড়ে। ভেরেন্ডি গ্রামের ইউ পি সদস্য জিয়াউর রহমান বাদশা দাবি করেছেন, “ ১৮ গ্রামের অভাবী মানুষের শরীর পরীা করলে অর্ধেক মানুষেরই একটি করে কিডনি খুঁজে পাওয়া যাবে না।

কিডনি বিক্রি করে ঢাকা থেকে ফেরার পর দাতা নিজেই দালাল বনে যাচ্ছে”। মনুষ্যত্ব্যের এই নিদারুন কেশের সংগে ভুক্তভোগী কিছু মানুষ সম্পৃক্ত হয়ে কিডনি বিক্রির এই প্রক্রিয়াকে রীতিমত ব্যবসায়িক রূপ দিয়ে ফেলেছে। কিডনি বিক্রির ইচ্ছা নিয়ে দালালের সঙ্গে ঢাকায় যান দূর্গাপুর গ্রামের যুবক মেহেদী হাসান। সেখানে জানতে পারেন কিডনি নয়, দরকার যকৃৎ। রাজধানীর ল্যাব এইড হাসপাতালে গত ৮ মে তার যকৃতের কিছু অংশ কেটে একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গিয়াস উদ্দিনের শরীরে লাগানো হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপ জানিয়েছে, ‘ রোগীপ যে কাগজপত্র হাসপাতালের চিকিৎসকদের দিয়েছে তাতে বলা আছে, গিয়াস উদ্দিন ও মেহেদী সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে’। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মেহেদী বলেছেন, গিয়াস উদ্দিন তার মামা নন। তিনি তাকে যকৃৎ দান করেননি, ৩ লাখ টাকায় যকৃতের কিছু অংশ বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। তবে প্রতিশ্র“ত টাকা তাকে দেয়া হয়নি। বেচাকেনার এই প্রক্রিয়ায় আইনগত সমস্যার কারনে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দালালদের মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরী করে এই জঘন্য ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনে (১৯৯৯) বলা আছে, নিকটাত্বীয় (পুত্র, কন্যা, মাতা, পিতা, ভাই, বোন ও রক্ত সম্পর্কিত আপন চাচা, ফুফু, মামা, খালা ও স্বামী-স্ত্রী) দেহে সংযোজনের জন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে পারবেন। প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে, ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ক্রেতা-বিক্রেতাকে নিকট আত্বীয় বানানো হচ্ছে। কাগজ-কলমের আত্বীয় গিয়াস উদ্দিন মারা গেলেও প্রতারিত মেহেদী বেঁচে আছেন মরা মানুষের মতো। বলছেন তিনি, ‘আমি আসলে জীবন্ত লাশ হয়ে গেছি। ঠিকমত চলাফেরা করতে পারিনা।

কিছুই খেতে পারিনা। ঘনঘন প্রস্রাব হয়। পায়খানা করতে প্রচন্ড কষ্ট হয়। কোন কাজ করতে পারেন না। পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে’।

অসহায় এই পরিবারগুলোর তালিকা ক্রমশই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। আবার একই পরিবারের চারজন থেকে পাঁচজন পর্যন্ত কিডনি বিক্রি করেছেন। বহুতি গ্রামের ছাত্তার, স্ত্রী আছিয়া বেগম, ভাই শুকুর আলী ও রুহুল আমিন এবং ভাতিজা নাসির উদ্দিনের মত আরো আরো পরিবার তলিয়ে যাওয়ার প্রান্তে এসে দাড়িয়েছে। শঠ, তঞ্চক চক্রের এই প্রেষণ প্রক্রিয়ায় অনেকে আবার বহু বিবাহের কৌশলকে কাজে লাগাচ্ছে। উপজেলার বিয়ানা আশ্রায়নের শাপলা আকতারের সঙ্গে দূর্গাপুর গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের বিয়ে হয়।

বিয়ের পর শাপলা জানতে পারে, মোস্তাফিজ বিবাহিত এবং এক সন্তানের জনক। কিছুদিনের মধ্যে শাপলাকে নিয়ে ঢাকায় বেড়াতে যান। সেখানে স্বাস্থ্য পরীার নামে কোন এক হাসপাতালে নিয়ে যান। পরিচয় হয় বজলুর রহমান নামের এক ব্যাক্তির সাথে। কথাবার্তায় শাপলা টের পান বজলুর কিডনি নষ্ট।

তার কিডনি সেখানে প্রতিস্থাপিত করার জন্য মাদ্রাজ নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসাবেই শাপলাকে ঢাকায় নিয়ে আসা। অতঃপর কৌশলে শাপলা সেখান থেকে পালিয়ে আসেন। কিডনি বিক্রি করতে না পেরে কিছুদিন পর মোস্তাফিজ তাকে তালাক দেয়। ভালোবাসার পাশের এই অসুখগুলি নিয়েই ভালোবাসাহীন মানুষদের এই বেনামী বেসাতি। লুটেরা পুঁজির এই মনুষ্যত্বহীন বানিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছে দেশের নামী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসমূহ।

কিডনি বিক্রেতারা জানিয়েছে, তাদের বেশিরভাগ অস্ত্রোপচার হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, কিডনি ফাউন্ডেশন, ইউনাইটেড হাসপাতাল, বারডেম প্রমূখ দামী প্রতিষ্ঠানে। অথচ এসংক্রান্ত কোন নথি কিংবা চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়নি। হলফনামা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাগজপত্র তুলে দেয়া হয় দালাল এবং কিডনি ক্রেতাদের আত্বীয়-স্বজনের হাতে। অসাধু ব্যবসার অঢেল টাকায় ঘেরা এক কালোজগত। নোবেল জয়ী লেখক আর্নেষ্ট হেমিংওয়ে লিখেছেন, ‘ মানুষ ধ্বংশ হয় কিন্তু পরাজিত হয়না’।

কালাইয়ের এই মর্মস্পর্শি বেদনাদায়ক ঘটনা এবং ঘটনার ঘটক-অনুঘটকের কর্মকান্ড চিরকালীন এক সত্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কিন্তু কথা হচ্ছে, কেন এই সমূহ পতন ? কেন এই আকন্ঠ নিমজ্জন? বলা হচ্ছে প্রলোভন বা লোভের তাড়নায় এবং বেসরকারী সংস্থার ঋণের চাপ থেকে মুক্তি পেতে গরীব মানুষ কিডনি বিক্রি করছেন। লোভ মানুষের ষড়রিপুর একটি। রিপুতাড়িত মানুষের কাছে এটি এক ধরনের প্রত্যয় বা প্রনোদনা। পুজিবাদ লোভকে প্রেষিত করে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়।

তাছাড়া চোখের সামনে দেখা অল্প কিছু মানুষের ত্বরিত উত্থান শিা-সংস্কৃতিহীন গরীব মানুষকে দারুনভাবে প্রনোদিত করে। কিডনি ব্যবসার গডফাদার ঢাকার তারেক হোসেন দালাল ছাত্তার, রুহুল আমিনদের মাধ্যমে টাকার লোভ দেখিয়ে অভাবী মানুষদের প্রলুব্ধ করে। সাময়িক মুক্তির আশায় অস্তিত্বে ত নিয়ে অপুষ্ট মানুষ ধীরে ধীরে কর্মহীন হয়ে পড়ে। এরপর নিঃস্ব হয়ে যায়। নিঃস্ব মানুষের যন্ত্রনা ঢাকতে নিরাপত্তার উষ্ণতা হতে চেয়েছিল বেসরকারী সংস্থা বা এনজিও।

স্বাস্থ্য, শিা, সেনিটেশন, লিংগ (জেন্ডার) উন্নয়ন, নারীর সমতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান, পরিবার পরিকল্পনা সর্বপরি ধর্মীয় গোড়ামি ও কুসংষ্কার মুক্ত সংস্কৃতির ধারায় তারা পথ চলতে চেয়েছিল। এসব েেত্র তাদের সাফল্যও অনেক। মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে স্বাস্থ্য সেবায় তাদের ভূমিকা অত্যুজ্জল। প্রথম বাংলাদেশী হিসাবে ুদ্র ঋণের রূপকার ডঃ মুহম্মদ ইউনুসের নোবেল জয় বিশ্বমাঝে আমাদেরকে গর্বিত করেছে। হরহামেশায় যারা বিদেশ যান, এমন বিশিষ্ট নাগরিকদের লেখায় জানতে পারি-স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘকাল বাংলাদেশ যেমন পরিচিত হতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে, এখনকার বাংলাদেশ তেমন পরিচিত হয় ডঃ মুহম্মদ ইউনুসের নামে।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এনজিও ব্রাকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ফজলে হাসান আবেদ সারা বিশ্বেই সমাদৃত নাম। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পর তিনিই সম্ভবত দ্বিতীয় বাঙালি যিনি মর্যাদাবান ‘নাইট’ পেয়েছেন। কাজের মানুষ, সফল মানুষ। দেয়ালে টাঙানো বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিনের ‘মুক্তিযোদ্ধা’র মতই অবিচল, উদ্দিপ্ত, বেগবান। অনেক না পাওয়ার মাঝে এগুলি অনেক বড় পাওয়া।

কিন্তু আলোর এই ঝর্ণাধারার উল্টা পিঠে আলকাতরার মত অন্ধকার। প্রচারে প্রসারে ুদ্রঋণ বিশ্বখ্যাতি লাভ করলেও আপন আংগিনায় তার ভয়ের ছায়া। ঋণগ্রস্থ মানুষের এই কিডনি বিক্রির খবর প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক আশোক কুমার বিশ্বাসের নেতৃত্বে তদন্ত দল ভেরেন্ডি গ্রামের মেহেরুল-সেলিনার পরিবারে আসেন। পাঁচ সদস্যের দরিদ্র এই পরিবারের চারজনই টাকার বিনিময়ে একটি করে কিডনি বিক্রি করে দিয়েছেন। জেলা প্রশাসক জানতে চান, কেন চারজন কিডনি বিক্রি করলেন।

কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সেলিনা জানান, ‘স্বামী-স্ত্রীর একটি করে কিডনি বিক্রির টাকা দিয়েও এনজিওর ঋণ শোধ হয়নি। তাই অন্য দুজনও বিক্রি করতে বাধ্য হয়’। বিখ্যাত লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের মহাকাব্যিক বিস্তার ‘খোয়াবনামা’ উপন্যাসে সুদখোর মহাজন জগদিশের যে চিত্র আমরা দেখতে পাই, তার ছায়া যদি নোবেল, নাইট, রোকেয়া জয়ীদের আদলেও এসে পড়ে তবে বোঝা যাবে, প্রযুক্তি দুই পা এগোলেও মানুষ পিছিয়েছে তিন পা। ‘বিষন্ন আলোয় এই বাংলাদেশ --/এ আমারই সাড়ে তিন হাত ভূমি’-নিজ দেশে প্রায় নির্বাসিত এই মানুষদের আর্তনাদ শোনার জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। ৫৫ হাজার বর্গমাইল জুড়ে এমাটির কোষে কোষে শহীদের রক্ত।

বাতাসের রন্ধে রন্ধে মায়ের হাহাকার। অদৃশ্যের দৃশ্য হয়ে থাকা সকল দেখার শ্রেষ্ঠ সেই মানুষেরা বলছে, বারবার বলছে-কালাইয়ের এই বিপন্ন মানুষেরা সাড়ে তিন হাত ভূমির চিন্তা নিয়ে এদেশে বাসিত হননি। তাদের দিকে তাকাতে হবে। কয়েকজন দালালকে গ্রেফতার করে জেলা প্রশাসন থেকে মাইকিং করে এদেরকে সচেতন করা যাবে না। স্বাস্থ্য ক্যাম্প খূলে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে এদেরকে সুস্থ করা যাবেনা।

বাঙালিরা এমনিতেই শারীরিকভাবে কাহিল। দেশের সিংহভাগ মানুষের‘ফিজিক্যাল ফিটনেস ’ নেই। এমনি প্রেেিত শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে ভেঙ্গে পড়া এইসব মানুষকে আত্বকর্মসংস্থানের দিকে নিয়ে যেতে হবে। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিার ব্যবস্থা করতে হবে। শরীর-স্বপ্ন দুইই হারানো এদের পেটে ভাতের ব্যবস্থা করতে হবে।

এই জঘন্য অপরাধ প্রতিরোধে আইন শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সুশীল সমাজ, সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসকদের এগিয়ে আসতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, কিডনি কেনা-বেচার নামে দরিদ্র মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদেরকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার এই হীন ব্যবসা আইনের সঠিক প্রয়োগে বন্ধ করতে হবে। ব্যবসায়ী সমাজকে বুঝতে হবে, বুঝাতে হবে-পুঁজিবাদেরও কিছু মানবিক সৌন্দর্য আছে। আমেরিকা থেকে স্বত্ব কিনে এনে সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে উপস্থাপিত‘কে হতে চায় কোটিপতি’ অনুষ্ঠানটি পুঁজির মানবিক সৌন্দর্যে ভরপুর। স্বচ্ছ-সাবলিল যে কোন দেয়া-নেয়া মানুষের সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যায়।

সা¤প্রতিককালে বৃটেনের দাঙ্গায় জড়িত ও তিগ্রস্থদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, তাদের প্রয়োজন ‘ কঠিন ভালোবাসা’। তিনি মনে করেন, ‘যেসব শিশু কিশোর এই ভয়াবহ ঘটনায় যুক্ত হয়েছিল সম্ভবত তাদের কারও কারও অতীত পটভূমি ও পারিবারিক ব্যর্থতা রয়েছে। সম্ভবতঃ তাদের শুধু সম্মান ও সীমারেখার বোধই নয়, ভালোবাসারও অভাব রয়েছে’। ভিন্ন প্রেতি বিবেচনায় আমাদের শাসক শ্রেণী এবং মতাবানদেরকেও এমন উপলব্ধিতে আসতে হবে। আর যেন কোন কালাই এমন বালাই হয়ে না আসে।

বোধের এমনিতর অনুভবে বেদনাদায়কভাবে ম্লান এই বঞ্চিত-প্রতারিত মানুষদের জন্য আমরা সাধারন মানুষেরা উৎসর্গ করতে পারি কবি বুদ্ধদেব বসুর ‘শীতরাত্রির প্রার্থনা’। বলতে পারি তার কিছু অংশ-“এসো, ভুলে যাও তোমার সব ভাবনা, তোমার টাকার ভাবনা, স্বাস্থ্যের ভাবনা,/এর পর কী হবে, এর পর/ফেলে দাও ভবিষ্যতের ভয়, আর অতীতের জন্য মনস্তাপ/...এসো প্রস্তুত হও”। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।