আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তরমুজ গাছের গোড়ায় পচন, পোকার আক্রমণ

ওই যে নদী যায়রে বইয়া... পটুয়াখালীর গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলার ছয় হাজার তরমুজচাষি তরমুজচারা, ও ফল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। চলতি মৌসুমে এ দুই উপজেলার বেশিরভাগ তরমুজখেতেই গাছের গোড়ায় এক ধরণের পচন দেখা দিয়েছে। যাবপোকা ও মাছিপোকা নামে দুই ধরণের পোকার আক্রমণে বোঁটা থেকে ফল ঝরে যাচ্ছে। পোকা দমনে কীটনাশকও তেমন কার্যকর হচ্ছে না বলে জানান চাষিরা। এ ছাড়া এবছর তরমুজ গাছের এবং ফলের বৃদ্ধিও আশানুরূপ হচ্ছে না বলে চাষিদের অভিযোগ।

গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে তরমুজচাষিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। রাঙ্গাবালীর পশুরবুনিয়া গ্রামের তরমুজচাষি মো. নূর উদ্দিন জানান, তাঁর খেতের তরমুজে গাছে ফল ধরার পরপরই মাছি পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কীটনাশক ব্যবহার করেও তিনি পোকা দমন করতে পারছেন না। এ পোকার আক্রমণে গাছের সব ফল বোঁটা থেকে খসে পড়ছে। গলাচিপার চরবিশ্বাস গ্রামের মো. মহিউদ্দিন জানান, তিনি এ বছর চার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন।

তরমুজের চারায় যখন তিন-চারটি পাতা ছেড়েছে, তখন ‘যাবপোকা’ নামে এক ধরণের পোকা খেতের অনেক চারা নষ্ট করে ফেলে। এ পোকা চারা অবস'ায় কাছের কাণ্ড, পাতা এবং পরবর্তীতে ফুল এবং ফলেও আক্রমণ করেছে। তিনি কোনো অবস্থায়ই কীটনাশক দিয়ে পোকা দমন করতে পারেননি। গলাচিপার বাউরিয়া গ্রামের মো. আবদুল হাই জানান, তাঁর খেতের চারাগুলো যখন একটু একটু বড় হতে শুরু করে তখন গোড়া ফেটে চারাগুলো মরে যেতে থাকে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুসারে বিভিন্ন ছত্রাকনাশক ওষুধ ব্যবহার করেও তিনি চারার গোড়ার পচন ঠেকাতে পারেননি।

নলুয়াবাগী গ্রামের মো. সানু শরীফ জানান, চলতি বছর অনেক তরমুজ খেতের চারা এবং ফলের আশানুরূপ বৃদ্ধি হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে বিভিন্ন চেষ্টা করেও তেমন কোনো লাভ হচ্ছে না। কৃষকদের এসব সমস্যা নিয়ে আলাপকালে গলাচিপা উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা মো. ফজলুল হক জানান, চলতি মৌসুমে গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় প্রায় ছয় হাজার তরমুজচাষি ১০ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। এ এলাকায় তরমুজের উৎপাদন এবং উৎপাদিত তরমুজের গুণগতমাণ ভালো হওয়ায় প্রতি বছরই তরমুজচাষির সংখ্যা বাড়ছে। গত বছর এ দুই উপজেলায় সাড়ে তিন হাজার চাষি সাত হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন।

কীটনাশক ব্যবহার করেও পোকা দমন করতে না পারা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ এলাকার তরমুজচাষিরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিজেদের খেয়ালখুশি মত কীটনাশক ব্যবহার করে থাকেন। সঠিক মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার না করার কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশেষ ধরণের কোনো পোকা দমন করা জটিল হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে পোকা দমনের জন্য খেতে আলোর ফাঁদ এবং সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ’ চারার গোড়া ফেটে পঁচে যাওয়ার ক্ষেত্রেও কৃষকদের দায়ী করেন কৃষি কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘সার, কীটনাশক এবং ওসুধ কোম্পানিগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিদের খপ্পরে পড়ে এলাকার চাষিরা খেতে বেশি মাত্রায় ইউরিয়া সার এবং গাছ ও ফলের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য দ্রুতবর্ধক রাসায়নিক ব্যবহার করছেন।

এতে করে অল্প সময়ে দ্রুত গতিতে বেড়ে ওঠা চারার গোড়া ফেটে পঁচে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এ অবস'া থেকে রেহাই পেতে চাষিদের ওইসব রাসায়নিক এবং ইউরিয়া সারের ব্যবহার একদম বন্ধ করতে হবে। আমরা মাঠ পর্যায়ে এমন পরামর্শই দিচ্ছি। ’ তরমুজগাছ এবং ফলের আশানুরূপ বৃদ্ধি না হওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এ এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে ব্যাপক হারে তরমুজ চাষ করা হচ্ছে। তরমুজ চাষের ক্ষেত্রে কৃষকদের ব্যাড-প্রাকটিস (বদঅভ্যাস) হল অতিরিক্ত মাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহার করা।

একই জমিতে বছরের পর বছর মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহার করায় জমির উর্বরতা কমে যাওয়া স্বাভাবিক। তবে যে সব জমিতে বর্ষাকালে পানি চলাচল করতে পারে সেসব জমিতে স্বাভাবিক ফলন আশা করা যায়। এ বছর যারা এ সমস্যায় পড়েছেন তাঁদের একটু ধৈর্য ধরতে বলা হচ্ছে। সময় একটু বেশি লাগলেও গাছ এবং ফলের বৃদ্ধিটা আসবে। ’ মো. ফজলুল হকের দাবি, এত কিছুর পরও এ বছর গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় তরমুজের ফলন ভালো হবে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।