আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুন্দরবনে রাসমেলা

থলের বিড়াল খুজতেছি বঙ্গোপসাগর পাড়ে সুন্দরবনের দুবলার চরে এবার রাস উৎসব শুরু হচ্ছে ঈদের একদিন পর ৮ নভেম্বর থেকে। প্রতি বছরের ন্যায় শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এ রাস উৎসব এবার সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বন বিভাগসহ আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বিভিন্ন সংস্থা নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অপর দিকে প্রতিবারের মতো এবারও দর্শনার্থী নামে চোরা শিকারীর দল রাস মেলার সময় হরিণ শিকারের প্রস্তুতি নিয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। তবে হরিণ শিকার রোধ ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। পুরো সুন্দরবন জুড়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অঘোষিত রেড এলার্ট জারী করা হয়েছে।

আগামী ১০ নভেম্বর এ উৎসবের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি হওয়ার কথা রয়েছে। বন বিভাগ ও উৎসব আয়োজক কমিটি সূত্র জানায়, প্রায় শত বছর ধরে বঙ্গোপসাগর পাড়ের সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোর কোল নামক স্থানে রাস মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর বাংলা কার্তিক মাসের শেষে বা অগ্রহায়ন মাসের প্রথম দিকের ভরা পূর্ণিমার সময় এ রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। হিন্দু ধর্মালম্বী লোকেরা পূর্ণিমার জোয়ারের নোনা পানির স্নানে তাদের পাপ মোচন হয়ে মনস কামনা পূর্ণ হবে এ বিশ্বাস নিয়েই এ রাস উৎসবে যোগ দিলেও সময়ের ব্যবধানে এখন তা নানা ধর্ম ও বর্নের লোকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। এবার ঈদ আর রাস উৎসব একসাথে উদযাপিত হওয়ায় মেলা পরিণত হচ্ছে অনেকটা 'লাখো মানুষের' মিলন উৎসবে।

ঈদ আমেজ কাটাতে ৩/৪ দিনের এ উৎসবে হাজার হাজার মানুষ একাকার হয়ে যাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। আবাল বৃদ্ধ বনিতা নির্বিশেষে সাগর পাড়ের পাড়ের বন এলাকায় কোলাহল আর পদচারনা মিলে মানুষের মিলন মেলায় রুপ নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকায় করে তীর্থ যাত্রী ও দর্শনার্থীরা এসে সমবেত হয় দেশের প্রত্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে। আসে অসংখ্য বিদেশী পর্যটকও। উৎসবের সময় কুটির শিল্পের মেলাসহ নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

মংলার বেসরকারি ট্যুরিজম কোম্পানী লাইভ ট্যু'র মালিক গোলাম রহমান বিটু জানান, রাস উৎসবে যোগ দিতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন ট্যুরিষ্ট লঞ্চ ও বোট বুকিং দেয়া হয়েছে। অনেক পর্যটক ও দর্শণারী বুকিং না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন। মেলা উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান মেজর (অব) জিয়া উদ্দিন জানান, আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে এবার বেশ জমজমাটভাবে মেলা উদযাপনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। মংলাসহ সুন্দরবনের ৮টি পয়েন্ট দিয়ে রাস মেলায় প্রবেশে অনুমতি দেয়া হয়েছে। এসব পয়েন্ট দিয়ে অসংখ্য নৌকা ও ট্রলারে করে হাজার হাজার আবাল বৃদ্ধ বণিতা ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সুন্দরবনের আলোর কোলের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করবে।

মেলায় প্রবেশকারীদের বন বিভাগ থেকে নির্দিস্ট টাকার কর দিয়ে অনুমতি পত্র নিতে হবে। পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা সাহাব উদ্দিন জানান, রাস মেলা সুষ্ঠূভাবে সম্পন্ন ও এর নিরাপত্তায় ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বন বিভাগ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে। দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের জানমালের নিরাপত্তাসহ হরিণ শিকার রোধে বন প্রহরীদের পাশাপাশি মেলায় এবারও র‌্যাব, কোষ্টগার্ড, পুলিশের টহল থাকবে। পুরো সুন্দরবন জুড়ে প্রশাসনের রেড এলার্ট চলবে। এ ছাড়া অযথা কোন দর্শনার্থী যেন হয়রানী না হয় সে দিকেও বিশেষ সতর্ক করা হয়েছে।

রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে সুন্দরবনের বন কর্মি, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের ছুটি কাটছাট করা হয়েছে। এছাড়া ৭ নভেম্বর মধ্য রাতের আগে কাউকেই রাস উৎসবে ঢোকার অনুমতি দেয়া হবে না। অপর দিকে প্রতিবারের মতো এবারও দর্শনার্থী নামে চোরা শিকারীর দল রাস মেলার সময় হরিণ শিকারের প্রস্তুতি নিয়েছে বলে সুন্দরবন সংলগ্ন লোকালয়ের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। এসব সূত্র জানায়, মেলার সময় দর্শনার্থীদের আগ্নেয়াস্ত্র বহন নিষিদ্ধ থাকলেও শিকারীরা ফাঁদ, বিষ প্রয়োগ এমনকি চোরা পথে গোপনে বন্দুক দিয়ে হরিণ শিকারের পরিকল্পনা রয়েছে। অনেকেই হরিণ শিকারের উদ্দেশ্যে অভিজ্ঞ শিকারীদের সাথে ইতিমধ্যে যোগাযোগ করেছে।

মংলা ও দাকোপ এলাকার অনেকেই উৎসবে অংশ নেয়ার নামে হরিণ শিকারের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এদের কাউকেই মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কে পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে এরা ২/৩ দিন আগেই চোরা পথে বনের গহিণে প্রবেশ করেছে। এ ব্যাপারে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় কর্মকর্তা মিহির কুমার দো জানান, রাস মেলায় কোন ভাবেই যেন হরিণ শিকার ও বনজ সম্পদের ক্ষতি না হয় সে জন্য প্রয়োজনীয় সব সতর্কতামুলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখানে ক্লিক করুন ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।