আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক

'যুবক' তকমাটা তখনও আমাদের গায়ে লাগে নাই। মাত্রই মুখে দাড়ি-গোফের হালকা আভা দেখা যায়। সেই দুরন্ত সময়ের গল্প। চাচাতো বোনের বিয়ে উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে এসেছি। বিয়ে উপলক্ষেই অনেকদিন বাদে সমবয়সী ভাইবন্ধু আবারো একসাথে।

আর এই বাঁধ না ভাঙ্গা বয়সে সবাই একসাথে হলে যা হয়, যত সব আজগুবি পরিকল্পনা মাথায় ঘুরতে থাকে। কী করা যায়? কী করা যায়? ভাবতে ভাবতে কে যেন বুদ্ধি দিল 'চল, সিনেমা দেখে আসি'। এই গ্রামদেশে সিনেমা হল নাই, বাজারের গুদাম ঘরগুলোয় এক একটা সিনেমা হল। ফাকা গুদাম ঘরে ২০ ইঞ্চি রঙ্গিন টেলিভিশন, ভিসিআর, শীতল পাটির আসনব্যবস্থা, দুই টাকার টিকিট সব মিলিয়ে ধুন্ধুমার বিনোদন। রাত যত বাড়তে থাকে গুদাম ঘর মার্কা সিনেমা হলের টিকিটমূল্যও বেড়ে যায়, চাদরমুড়ি দর্শকরা গুটি গুটি করে নিস্তব্ধ পায়ে গুদাম ঘর পূর্ণ করে, ভিসিআর মালিকের থলে থেকে বের হয় বিশেষ ফিতা।

গ্রামদেশ। সন্ধ্যার আলো ফুরাতেই সকলের ঘুমের আয়োজন চলছে। বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে অনেক মানুষের ভীড়। এত মানুষের ঘুমানোর জায়গা এই বাড়িতে হবে না। তাই আমরা নিজেরায় সিদ্ধান্ত নিলাম, অভিভাবকদের জানিয়ে দিলাম, আমরা ঠিকই পাড়ার অন্য বাড়িতে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে নিবো।

আমাদের নিয়ে চিন্তা না করলেও হবে। তখন কী আমাদের মাথায় ঘুম চিন্তা আছে? শুধু চাঁদের আলোর অপেক্ষায়..। একটু রাত বাড়তেই চুপিচুপি আমরা আমাদের গোপন অভিসন্ধির নেশায় বেড়িয়ে পড়ি। কিছুক্ষণ আগে একপসলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। পায়ে হেটে চলা রাস্তা বৃষ্টির জলে কর্দমাক্ত, কিছু দূর পরপর রাস্তার মাঝে বৃষ্টির পানিতে ছোট্ট পুকুর! আর পড়বি পড় প্রতি বার আমার পা সেই গর্তে হুমরি খায়।

আমি শহুরে ছেলে, শহরে মানুষ, পায়ে হেটে চলা অভিজ্ঞতা নেই বললে চলে; সেই আমি সিনেমা দেখার নেশায় বৃষ্টি ভেজা রাস্তা রাতের আঁধারে দুই কিলোমিটার পাড়ি দিই। আমরা যখন গুদামঘরে ঢুকলাম তখন পূর্ণদৌর্ঘ্য বাংলা সিনেমার শেষ দৃশ্য, টানটান উত্তেজনা। যথারীতি শেষদৃশ্যে পুলিশের আগমন, নায়কনায়িকার মধুর মিলন এবং The END. সিনেমা শেষ হতেই উপস্থিত সবাই নড়েচড়ে বসে। এখনই ভিসিআর মালিকের থলে থেকে বের হবে প্রতীক্ষিত বিশেষ ফিতা। আমরা সতর্ক চোখে এদিক-ওদিক দেখে নেয়।

কেউ দেখে ফেললো না তো? কেউ চিনে ফেললো না তো? নাহ্, উপস্থিত কারোর মুখ দেখা যায় না। চাদরের আড়াল সবাই মুখ ঢেকে রেখেছে। শুধু আমরা বেকুবের দল হাত দিয়ে মুখ ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা করি। ততক্ষণে টেলিভিশনের পর্দায় ভেসে উঠেছে রগরগে দৃশ্য। কিন্তু আমাদের শেষপর্যন্ত শেষ দৃশ্য পর্যন্ত উপভোগ করা হলো না।

বাইরে কার যেন গলার স্বর শোনা যায়, "..আছোস নাকি"। ঠিক কাকে ডাকছে, কাকে খুঁজছে গলার স্বরে বোঝা যায় না। কিন্তু আমাদের মনে ভয় ধরে যায়। বাড়ীতে কেউ যদি এতক্ষণে খোঁজ করে খুঁজে না পায়। যা হইছে অনেক হইছে, চলো এবার বাড়ী ফিরি।

চোরের মতো ত্রস্ত পায়ে ফিরি। বাড়ী ফিরে দেখি সবাই ঘুম। ঘরের দরজা বন্ধ। এতক্ষণে চিন্তাটা আমাদের মাথায় এসেছে। এবার আমরা ঘুমাবো কোথায়? সব ঘরের দরজা তো বন্ধ।

উপায়ান্তর না দেখে শেষমেশে উঠানে পড়ে থাকা বরের জন্য মঞ্চ তৈরির শুন্য খাটে বিছালী আর ইটের বিছানা তৈরী করে ঘুমানোর আয়োজন করলাম। কিন্তু বিধিবাম। মাঝরাতে হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে সাধের ঘুমটা পন্ড হয়ে গেল। //কোন দুঃখে যে হঠাৎ সিনেমা দেখার সাধ হলো? সেই প্রথম সেই শেষ, তারপরে আর কোনদিন গুদামঘরে সিনেমা দেখা হয়নি। (পুরানো দিনের গল্প) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।