আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কারিগরি উদ্যোগে অর্থায়ন-২

অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া! অফিস থেকে যখন রওনা দেই তখন মোর্শেদের একটা এসএমএস পেলাম। লিখেছে – তিনজন বক্তা আর দুইজন শ্রোতা আছে! আপনি কই? ফ্রেপড এ যখন পৌছায় ততক্ষনে বাকী বক্তারাও পৌছে গেছেন। আমি একটু টেনশনে ছিলাম এমটিবিএলের এসএমই ব্যাংকিং এর প্রধান ইকবাল ভাই আসতে পারবেন কী না? কারণ তার একটা বোর্ড মিটিং এর থাকার কথা। তবে তিনিও এসেছেন।

শুরুর দিকে লোকজন খুব বেশি ছিল না ফলে আমরা ১৫ মিনিট দেরিতে অনুষ্ঠান শুরু করি। আমি শুরুতে একটু বলে নিয়েছি আমাদের উদ্দেশ্যগুলো। মূলত নতুন একটি ব্যাংকিং প্রোডাক্ট বানানো যায় কী না সেটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। বিভিন্ন দেশে নতুন কর্মসংস্থানের একটি বড় অংশ সৃষ্টি হয় কারিগরি উদ্যোগের মাধ্যমে। কারণ হলো কারিগরি উদ্যোগে কর্মসংষ্থানের সুযোগটা বেশি।

এখনো নাকি আমেরিকার নতুন কর্মসংষ্থানের বড় অংশ স্টার্টআপরা সৃষ্টি করে। চাকরির মাধ্যমে একটি কর্মসংষ্থান হয়। আর একজন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করেন অনেকের কর্মসংষ্থান। আমাদের দেশে ব্যাংকিং সেক্টরে অনেক নতুন সেক্টর যুক্ত হলেও আইটি সেভাবে যুক্ত হয়নি। আমাদের আইটি এখনো প্রায় এসএমই-র পর্যায়ে পড়ে।

কালকের আলোচনায়ও আমরা দেখেছি আমাদের তরুনদের ১-১০ লক্ষ টাকার মতো দরকার। এটি ব্যাংকের হিসাবে তেমন লুক্রেটিভ না হলেও উদ্যোক্তাদের জন্য খুবই দরকারি। ইকবাল ভাই জানালেন ব্যাংক আসলে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জামানত ছাড়াই দিতে পারে। কিন্তু এজন্য তাদের একটা প্রোডাক্ট বানাতে হবে , বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু নিয়মাবলীও মানতে হবে। উদ্যোক্তারা বলেছেন ব্যাংক তাদের সক্ষমতাটা বোঝেন না।

কারণ তাদের কাজ কীভাবে হয, প্রচলিত অর্থে কোন ওয়ার্ক অর্ডার থাকে না, পেমেন্ট হয় অনলাইনে। যারা বিভিন্ন মার্কেট প্লেসে কাজ করেন তাদের পেমেন্ট আবার হয় ভিন্নভাবে। এগুলো অনেক সময় ব্যাংকের লোন কর্মকর্তাকে বোঝানো সম্ভব হয় না। নাইয়ার আর ইকবাল ভাই বললেন, সবার তো সবকিছু বোঝার দরকার নাই। আমাদের এমন একটা স্ট্রাকচারড প্রোডাক্ট করতে হবে যেখানে এই বিষয়গুলো ঠিক মতো দেওয়া থাকবে এবং লোন কর্মকর্তা সেগুলো আছে কী না সেটা দেখবে।

এটা অবশ্য জটিল হবে না। তবে, এই বিষয়গুলো ব্যাংককে বোঝানোর জন্য আমাদের একটি উদ্যোগ নিতে হবে। মানে এধরণের কাজগপত্রের একটি সেট বানাতে হবে। দেশে যারা কাজ করছে তাদেরও কিছু বিষয় ব্যাংককে বোঝাতে হবে। আলোচনায় ব্যাংকারও মানলেন যে এটি স্বল্পমেয়াদী লোন হরে হবে না।

কমপক্ষে ৬ মাসের একটি গেস্টেশন পিরিয়ডসহ ৩/৫ বছরের রি-পেমেন্ট হলে এটি সবচেয়ে ভাল হবে। ব্যাংকাররা ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে তারা নিশ্চিত হবেন উদ্যোক্তার রি-পেমেন্ট ক্ষমতা নিয়ে সেটাই আসলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তার মানে এ দাড়ালো যে, ব্যবসার ভিন্নতার জন্য এই সকল উদ্যোগে অর্থায়নের ক্ষেত্রেও ভিন্নতা দরকার। এখন ব্যাংকের বেলায় আমাদের কাজ দাড়ালো কারিগরি উদ্যোক্তাদের সক্ষমতাগুলো যেন তারা বুঝতে পারে সে ব্যবস্থা নেওয়া। ব্যাংক ছাড়াও আছে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোক্তা।

সীফের আলতাফুজ্জামানের কাছ থেকে জানা গেল দেশে প্রাতিষ্ঠানিক ভেঞ্চার ফান্ড শুরু করে গ্রামীণ ফান্ডের মাধ্যমে। সেটার অনেক সাফল্য আছে। বর্তমানে বেশ কিছু ভেঞ্চার ফান্ড রয়েছে। সীফ ফান্ডের লিমিট হলো এক থেকে ৫ লক্ষ ডলার। তারা ইকুইটি শেয়ার করে।

প্রথমে তারা দেখে উদ্যোগটি কতোটা বাস্তবসম্মত এবং সেটার ভবিষ্যত কী। বর্তমানে কী আছে সেটা নিয়ে তারা তেমন ভাবে না। যে দুইটি উদ্যোগে তারা বিনিয়োগ করেছেন সেগুলোর মধ্যে একটি কারিগরি উদ্যোগ। এখানে উদ্যোক্তার কোন আর্থিক সঙ্গতিই ছিল না সে অর্থে। কিন্তু তার একটি পেটেন্টেড টেকনোলজি রয়েছে যা সোলার প্যানেলের কার্যকারিতা ডাবল করতে পারে।

এটি টেকনোলজির দিক। এটা ওনারা মেনে নিয়েছেন। তবে, টেকনোলজি থাকলেই তো হবে না সেটাকে মার্কেটিং করার যোগ্যতা ও সক্ষমতা দুটোই থাকতে হবে। এক্ষেত্রে তারা দেখেছেন উদ্যোক্তা তার এই কাজের সঙ্গে ব্র্যাককে যুক্ত করতে পেরেছে। তো, সীফ ফান্ড সর্বোচ্চ ৪৯% পর্যন্ত স্টেক নিয়ে থাকে! নাহিদ রুমেলের কাজ থেকে জানা গেল বিআইআইসি নামের একটি নতুন প্রতিষ্ঠান আইটি উদ্যোক্তাদের সহায়তা করছে।

এটিও মালিকানা শেয়ারিং এর মাধ্যমে বিনিয়োগ করছে। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী কারিগরি উদ্যোক্তদের মধ্য কথা বলেছেন পাই ল্যাবসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুল হাসাস সোহাগ, মুক্ত সফটের প্রধান নির্বাহী তামিম শাহরিয়ার সুবিন, প্রাণন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী নাহিদুল ইসলাম রুমেল, ড্রয়েড বাংলাদেশের উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলাম বিপ্লব, বিজ কিউবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিনহাজ আনোয়া টেকনোবিডির ইমরাউল কায়েস প্রমূখ। তাদের বক্তব্য ছিল সোজা সাপ্টা, বিনিয়োগকারী এবং ব্যাংকগুলো পাশে দাড়ালে তাদের পক্ষে দেশে কর্মসংস্থানের জোয়ার সৃষ্টি করা সম্ভব। তবে, প্রচলিত ব্যাংকিং পদ্ধতিতে তাদের পক্ষে ঋণ প্রাপ্তি সম্ভব হয় না কারন ঋণের বিপরীতে স্থাবর জামানত তারা দিতে পারেন না। এক্ষেত্রে ভিন্ন পদ্ধতিতে, বিশেষ করে কাজের সুযোগ, অভিজ্ঞতা এবং কাজ প্রাপ্তির রেকর্ডকে বিবেচনায় নিলে কারিগরি উদ্যোক্তাদের জন্য তা সহায়ক হবে বলে তারা বলেছেন।

অনুষ্ঠানে সিটিডির পক্ষে একজন রেপোটিয়ার ছিল। তার রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা এটিকে একটি প্রতিবেদন আকারে উপস্থাপন করতে পারবো। উপস্থিত যারা ছিলেন এবং যারা ছিলেন না সবাই তাদের মতামত যোগ করলে প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.