আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি কাল্পনিক গল্প :কাবুল ভাইয়া,

স্বপ্ন ছুঁয়ে গাড়ি থেকে নেমেই যেন গায়ে আগুনের ছ্যাঁকা লাগল যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ কাবুল হোসেনের। গাড়ির ভেতর এসি চলছিল কিন্তু বাইরে প্রচন্ড গরম। এই গরমের ভেতর গাড়ি পার্কিং এর জায়গা থেকে নিজের অফিসটায় হেঁটে ঢোকা অসহ্য মনে হয় তার কাছে। কতবার তার পি এস কে বলেছেন এই জায়গাটুকু এয়ার কন্ডিশন্ড করে ফেলার জন্য, কিন্তু পাজি পি এস টা বলে কিনা এই কাজ করলে পত্রিকায় খবর চলে যাবে! তাতে নাকি মন্ত্রীরই ঝামেলা হবে! নিজে নিজেই হেসে ফেলেন কাবুল হোসেন! পত্রিকা, হাহ! পত্রিকা কি আর জানে তার সব খবর! পি এস ব্যাটাটা বিশাল বোকা! নিজের রুমটায় ঢুকেই মন ভালো হয়ে গেল কাবুল সাহেবের। ওরা এসে গেছে! আরে, ওরা মানে ওই যে ওরা! এই যে বদ্দা সেতু নিয়ে যারা দেন দরবার করছে তার কাছে! আড়চোখে লোকগুলোর হাতে ধরা ব্রিফকেসটার দিকে তাকান কাবুল হো্সেন।

চেকটা এনেছে তো? , একটু চি্ন্তিত হয়ে পড়েন তিনি! "স্লামালাইকুম স্যার", তেলতেলে হাসি দিয়ে কাবুল হোসেনকে সালাম দেয় মাঝ খানের টেকো মাথার লোকটা। "ওয়ালাইকুম, তা সরাসরি কাজের কথায় চলে আসি"। একটু গম্ভীর হয়ে বলেন মন্ত্রী। "জ্বি স্যার, জ্বি স্যার", হাত কচলে সম্মতি জানায় সামনে বসা তিনজন! "দেখুন , কাজটা বেশ ঝামেলার। পত্রিকার লোক পিছনে লাগতে পারে, মহাবিশ্ব ব্যাংক ও ঝামেলা করতে পারে।

এছাড়া আমাদের অর্থমন্ত্রী টাল সাহেব কেও একটা পার্সেন্ট দিতে হবে! সুতরাং আমি যা চেয়েছি তার কম আনলে কিন্তু হবে না!" মন্ত্রীর কথা শুনে লোকগুলোর মুখের তেলতেলে হাসি আরো বেড়ে যায়। “না না স্যার ,সে ব্যাপারে আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন। আপনার চাহিদামতই আরা চেক লিখেছি! তবে স্যার যেহেতু এই দেয়া-নেয়ার পার্সেন্ট টা একটু বেশি, কাজেই আমাদের "এদিক-ওদিক" করার ব্যাপারটাও যাতে একটু বেশি হয় সেতু বানানোর সময়, তা কিন্তু আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে! " যোগাযোগ মন্ত্রী এবার তার ট্রেড মার্ক ওয়ালা সেই বিখ্যাত হাসি ( যে হাসি পত্রিকা ওয়ালারা ছাপায়! ) হেসে বলেন, "আরে ওটা কোন ব্যাপারই না! সব আমি ম্যনাজে করব! কাবুল আমার নাম! "। এর কিছুক্ষন পরেই চলে যায় লোকগুলো। কাবুল হোসেন আনন্দের হাসি হাসেন আপন মনে! রাতে বাসায় ফিরতেই কাবুল হোসেনের সামনে এসে হাজির হয় তার কন্যা।

'আব্বাজান , আমার একখান আবদার আছে। আপনাকে পূরন করতেই হবে!" মন্ত্রী আজ খোশ মেজাজে আছেন, কাজেই দিলখোলা হাসি দিয়ে বলেন , "কি আবদার আম্মিজান, বলেন"। "আব্বাজান, আমি সিনেমা বানাইবার চাই! সিনেমার নাম হবে "পাকিজান"। মন্ত্রী একটু দ্বিধায় পড়ে যান! এ কেমন নাম! কন্যাকে জিজ্ঞেস করতেই স্বপ্ন স্বপ্ন চোখে কন্যা বলে ওঠে, " উফ আব্বাজান! আপনি এত ব্যাকডেটেড! দেখেন না পাকিস্তানের ছেলেগুলা কি হ্যান্ডসাম! কি লম্বা! কি সুন্দর চেহারা! আপনারা তো খালি মুক্তিযুদ্ধ বলতে ঢিসুম-ঢাসুম গোলাগুলির সিনেমা বোঝেন। কিন্তু চিন্তা করেন এই হ্যান্ডসাম পাকিস্তানিদের দেখে একাত্তরে কত্ত ওওওওওওওও বাঙ্গালি মেয়ে ওদের প্রেমে পড়েছে! আমি এই কাহিনী নিয়া সিনেমা বানাইবার চাই।

আমারে টাকা দিতেই হইব!" মন্ত্রী একটু বেকায়দায় পড়ে যান! এই গত সপ্তাহে তিনি রাজাকার কুতুব মিয়ারে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দিয়েছেন , কারন সে কাওয়ামীলীগে যোগ দিছে বলে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙ্গালি মেয়ে পাকিস্তানির প্রেমে পড়ছে এই গল্প তো স্বয়ং বিধাতা কইলেও মানুষে বিশ্বাস করবে না! কিন্তু তার এই মেয়ে বড় আদুরে! সারাদিন হিন্দি সিরিয়াল দেখে, হিন্দি নায়িকাদের মত পোশাক পরে আর তার রুম ভর্তি পাকিস্তানি খেলোয়াড়দের পোষ্টার লাগানো! এই মেয়ের আবদার তিনি তো না রেখে পারেন না! আর তাছাড়া পাকিস্তানি মেয়েদের প্রতি তার নিজের ও ............(!) "ঠিক আছে আম্মিজান, তুমি অবশ্যই বানাইবা "পাকিজান"! টাকা কুনো সমস্যাই না! " খুশিতে ডগমগ হয়ে শিলা কা জাওয়ানির ড্রেস পরিহিতা মন্ত্রী কন্যা ক্যাট ওয়াক স্টাইলে হেটে চলে যান! কিছুদিন পরের কথা। এক ছুটির সকালে মন্ত্রীর পি এস ছুটতে চুটতে তার বাসায় হাজির! "স্যার কাহিনী ঘইটা গেছে!" "কি কাহিনী খুইলা কও", চায়ের কাপে আয়েশি চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করেন সৈয়দ কাবুল হোসেন। "স্যার যেই পত্রিকা "পাকিজান" সিনেমারে বাঁচানোর লাইগা লেখালেখি কইরা বাঁশ খাইছিল হেরা তো এবার নিজেগো বাঁচানোর লাইগা আপনারে বাঁশ দিয়া দিছে! মহাবিশ্ব ব্যাংক যে আপনার "এদিক-ওদিক" এর কারনেই বদ্দা সেতুতে টাকা দেওয়া বন্ধ কইরা দিছে তা পুরা স্টোরি সহ লিখ্যা ফালাইছে! এমনকি অর্থমন্ত্রী টাল সাহেবও আপনারে বাঁচাইতে পারে নাই! " মন্ত্রীর মুখ হা হয়ে যায়! তবে মাত্র কিছুক্ষনের জন্য! এরপর সেই বিখ্যাত কাবুলীয় হাসি দিয়ে বলেন, "ধুর মিয়া চিন্তা কইর না! সব ম্যানেজ কইরা ফালামু! দেখলা না ঈদের সময় সবাইরে কেমন ভাঙ্গা রাস্তা দিয়াই বাড়ি পাঠায় দিলাম! কিছুদিন পরেই মন্ত্রীকে দেখা যায় বদ্দা নদীর ফেরিঘাটে! সেখানে পরিদর্শনে যেয়ে মন্ত্রী বলেন, " আমি যোগাযোগ মন্ত্রী হয়েছি বলেই এ দেশের যোগাযোগের বিশাল উন্নতি হইছে! এই দেখেন আগে এই ঘাটে লাইন পড়ত বড়জোর কয়েকশ গাড়ির! আর এখন লাইন হয় কয়েক হাজার গাড়ির! দেখেছেন আমাদের কত্ত গাড়ি বাড়ছে! বদ্দা সেতু হলে কি আপনারা এই উন্নয়ন চোখে দেখতে পাইতেন?", হাসতে থাকেন কাবুল হোসেন! উপস্থিত জনতা বিপুল উৎসাহে হাত তালি দিয়ে মন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন জানায়! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.