আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আফ্রিকার উপকথা : বুদ্ধিমতী মেয়ে

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ অনেক অনেক দিন আগের কথা। আফ্রিকার এক গাঁয়ে এক গোত্রপতি ছিল। তার কাছে গাঁয়ের লোকজন নানান সমস্যা নিয়ে আসত।

গোত্রপতি সেসব সমস্যার সমাধান করে দিত। একদিন। একজন লোক এল অভিযোগ নিয়ে। লোকটি বৃদ্ধ। গোত্রপতি বৃদ্ধকে জিগ্যেস করল, বল কি তোমার সমস্যা? বৃদ্ধ বলল, আমার প্রতিবেশি আমার ছাগল চুরি করেছে।

গোত্রপতি বৃদ্ধের প্রতিবেশিকে ডেকে পাঠাল। লোকটি এল। মাঝবয়েসি লোক। গোত্রপতি তাকে বলল, এই বৃদ্ধ অভিযোগ করছে যে তুমি নাকি তার ছাগল চুরি করেছে। বল, এ ব্যাপারে তোমার বক্তব্য কি? আমি ছাগল চুরি করিনি।

বৃদ্ধের প্রতিবেশি বলল। হুমম। জটিল সমস্যা। অনেক ভেবে গোত্রপতি বলল, ঠিক আছে। আমি তোমাদের দুজনকে একটি প্রশ্ন জিগ্যেস করব।

যে প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবে ছাগল সেই পাবে। বৃদ্ধ ও তার প্রতিবেশি একে অন্যের মুখের দিকে চাইল। বোঝা যায় তারা অবাক হয়েছে। গোত্রপতি বলল, আমি জানতে চাই এ জগতে সবচে দ্রুত কি? প্রশ্ন শুনে বৃদ্ধ ও তার প্রতিবেশি মাথা চুলকাতে লাগল। গোত্রপতি বলল, তোমরা এখন বাড়ি ফিরে যাও।

কাল আবার এসো। প্রশ্নের উত্তর নিয়ে এসো কিন্তু। বৃদ্ধ আর তার প্রতিবেশি মাথা নাড়তে নাড়তে চলে গেল। এমন জটিল প্রশ্নের উত্তর কে দিতে পারে? বৃদ্ধের একটি মেয়ে ছিল। সেই মেয়ের নাম ছিল জিআহ।

জিআহ সুন্দরী তো বটেই, সুন্দরী আর বুদ্ধিমতী। জিআহ জানত যে ওর বৃদ্ধ বাবা প্রতিবেশির বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে গোত্রপ্রধানের কাছে গিয়েছিল। জিআহ জিগ্যেস করে, বাবা। হু। গোত্রপ্রধান কি বললেন তোমাকে? বৃদ্ধ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে।

তারপর বলে, গোত্রপতি আমাদের দুজনকে একটি প্রশ্ন করলেন। যে সঠিক উত্তর দিতে পারবে ছাগল সেই পাবে। কি প্রশ্ন? জিআহ জিগ্যেস করে। এ জগতে সবচে দ্রুত কি? কাল বিলম্ব না-করে জিআহ উত্তর দিল। পরদিন।

বৃদ্ধ গোত্রপতির কাছে গেল। গোত্রপতি জিগ্যেস করল, কি, প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছ বলে মনে হচ্ছে? বৃদ্ধ মাথা নাড়ল। গোত্রপতি বলল, বল শুনি। বৃদ্ধ বলল, এ জগতে সবচে দ্রুত হল সময়। হুমম।

বলে গোত্রপতি মাথা নাড়তে লাগল। বৃদ্ধ বলল, আমাদের কারওই যথেষ্ট সময় নেই। এ জগতে সবচে দ্রুত যায় সময় । আমরা যা যা করতে চাই করতে পারি না। বৃদ্ধের কথা শুনে গোত্রপতি অবাক।

তার কেমন যেন সন্দেহ হল। লোকটাকে দেখে বোকাসোকা বলে মনে হয়। সে কী ভাবে অমন গভীর তত্ত্বকথা জানতে পারল। গোত্রপতি বলল, কে তোমাকে উত্তর বলে দিয়েছে? বৃদ্ধ বলল, কেউ বলে দেয়নি তো। আমি মাথা খাটিয়ে বের করেছি।

সত্যি করে বল! মিথ্যে বললে তোমায় শাস্তি পেতে হবে। গোত্রপতি গর্জে উঠল। এবার বৃদ্ধ ভয় পেল। বলল, আমার মেয়ে জিআহ। ওই আমাকে প্রশ্নের উত্তর বলে দিয়েছে।

জিআহ অনেক বুদ্ধিমতী। হতেই হবে। গোত্রপতি ভাবল। অমন বুদ্ধিমতী মেয়েকে একবার স্বচক্ষে দেখতে হয়। বৃদ্ধ জিআহ কে গোত্রপতির কাছে নিয়ে এল।

গোত্রপতি এর আগে জিআহর বুদ্ধিতে চমকে গিয়েছিল। এবার জিআহ-র রূপ দেখে মুগ্ধ হল। কি সুন্দর দেখতে! যেন কৃষ্ণবর্ণের চিকন বিদ্যুতের শিখা। গোত্রপতি ঈষৎ উত্তেজিত হয়ে বলল, তুমি সত্যিই রূপসী আর বুদ্ধিমতী মেয়ে। তোমাকে স্ত্রী হিসেবে পেলে আমি সম্মানিত বোধ করব।

জিআহ মাথা ঝুঁকিয়ে বিনয় দেখিয়ে বলল, সে তো আমারও সম্মান মাননীয়। বিয়ের পর গোত্রপতি নতুন বউকে নিয়ে সন্তুষ্ট হলেও এক বিষম ভাবনার মধ্যে পড়ে গেল। গোত্রের লোকজন গোত্রপতির কাছে নানান সমস্যা নিয়ে আসে। গোত্রপতি সেসব সমস্যা সমাধান করতে ভালোবাসে। এ নিয়ে তার মনের মধ্যে কিছু চাপা অহংকারও আছে ।

এখন বুদ্ধিমতী জিআহ এসব ব্যাপারে নাক গলালেই সব ভেস্তে যাবে। কি করা যায়? গোত্রপতি এক কৌশল অবলম্বন করল । সে জিআহকে বলল, শোন, জিআহ । আমার ঘরের যা যা আছে সবই তোমার। জিআহ হাসল।

গোত্রপতি বলল, তবে একটা কথা সব সময় মনে রাখবে । কি? লোকজন যখন আমার কাছে সমস্যা নিয়ে আসবে তখন তুমি চুপ করে থাকবে। কোনও কথা বলবে না। আমি তোমায় সতর্ক করে দিচ্ছি। যদি তুমি আমার কথা না শোনো তো আমি তোমাকে তোমার বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেব।

গোত্রপতির কথা শুনে জিআহ হাসল কেবল। কিছু বলল না। কিছুদিন কাটল। গোত্রপতি লোকজনের সমস্যা সমাধান করছেন। জিআহ ঘরসংসার নিয়ে ব্যস্ত রইল।

একদিন। গ্রামের বাইরে ঝর্না থেকে পানি নিয়ে ফিরছিল জিআহ । একটি বালককে গাছতলায় বসে থাকতে দেখল। বসার ভঙ্গিটি ভারি বিমর্ষ ভঙ্গি। জিআহ বালকটিকে চেনে।

অত্যন্ত সৎ। জিআহ তাকে জিগ্যেস করল, কি হয়েছে তোমার? অমন মন খারাপ করে বসে আছ কেন? বালকটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আমার এক বন্ধু আমার ভেড়া চুরি। তাই নাকি? হ্যাঁ। তা তুমি গোত্রপ্রধানের কাছে যাওনি? গেছিলাম। তো কি বললেন তিনি? গোত্রপতি আমাদের দুজনকে একটি করে ডিম দিয়েছেন।

ডিম দিয়েছেন? আশ্চর্য! কেন? ডিম দিয়ে গোত্রপতি বলেছেন আগামীকালের মধ্যে যে ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়ে নিয়ে যেতে পারবে সেই ভেড়া পাব। জিআহ কি যেন ভাবল। তার পর মুচকি হাসল। বলল, তুমি এখনই গোত্রপ্রধানের কাছে এক মুঠো ধান নিয়ে যাও। তারপর বল যে, ধানগুলি আজই বুনতে কাল সকালে যেন ভাত খেতে পার।

তাহলেই গোত্রপ্রধান বুঝতে পারবেন যে একদিনে যেমন ধান ফলানো সম্ভব না, তেমনি অত তাড়াতাড়ি ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটানোও যায় না। তো বালকটি ধান নিয়ে গোত্রপতি কাছে গেল। জিআহ ওকে যা বলেছিল গোত্রপতিকে তাই বলল সে । গোত্রপতি বিস্মিত না হয়ে বরং ভয়ানক রেগে উঠল। ক্ষিপ্ত হয়ে বলল, এসব কথা তোমাকে কে বলেছে? এত ছোট বয়েসে এসব নিশ্চয়ই তোমার মাথায় ঢোকার কথা না।

বালক বুক ফুলিয়ে বলল, কেউ বলে দেয়নি। আমি মাথা খাটিয়ে বের করেছি। সত্যি কথা বল! কে তোমায় এসব বলেছে? সত্যি কথা না-বললে তোমাকে শাস্তি দেব। গোত্রপতি গর্জে উঠল। এই কথা শুনে বালক মিইয়ে গেল।

মিনমিন করে বলল, জিআহ। গোত্রপতি রেগে উঠে জিআহ কে ডেকে পাঠাল। জিআহ এলে তাকে কিছুক্ষণ বকাঝকা করল। জিআহ মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকল। গোত্রপতি বলল, যাও, এখুনি বাপের বাড়ি চলে যাও।

তোমার মুখ আমি দেখতে চাই না। জিআহ শান্তকন্ঠে বলল, যাব। তবে শেষবারের মতো আমি আপনাকে রেঁধে খাওয়াতে পারি। তারপর আমার যা যা আছে সব নিয়ে চলে যাব। ঠিক আছে।

যা ইচ্ছে নিয়ে যাও। গোত্রপতি বলল। জিআহ রান্না করতে বসল। গোত্রপতির সব প্রিয় খাবার। তবে খাওয়ার পর বেশি করে তালের রস খেতে দিল।

গোত্রপতি মাতাল হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। জিআহ তার পরিবারের লোকজনকে ডেকে পাঠাল। তারা ধরাধরি করে গোত্রপতিকে জিআহর বাবার বাড়ি নিয়ে এসে বিছানায় শুইয়ে দিল। গোত্রপতি সারারাত ঘুমিয়ে কাটাল। গোত্রপতি সকালে জেগে উঠে বাড়ি কাঁপিয়ে হুঙ্কার ছাড়ল, অ্যাই! কোথায় আমি? জিআহ বলল, আমার বাবার বাড়ি।

কেন? আমি এখানে কেন? জিআহ বলল, আপনি না বলেছিলেন আমার যা ইচ্ছে তাই নিয়ে যেতে পারি। তাই আমি আপনাকে নিয়ে এসেছি। গোত্রপতি হেসে ফেলল। বলল, তুমি ভীষণ বুদ্ধিমতী মেয়ে জিআহ । বোকারাই কেবল তোমার মতো মেয়েকে দূরে রাখতে পারে।

আপনি তো আর বোকা নন। বুদ্ধিমতী জিআহ বলল। অনুবাদ উৎস: Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।