আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন- আশির্বাদ না অভিশাপ

www.mkmasud.wordpress.com ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ’, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের অংশ হিসেবে দেশে সরকারিভাবে যেসব বড় রকমের পরিবর্তন আসছে তার একটি হচ্ছে আগামী ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারের সম্ভাবনা। মেশিনটি আমার প্রথম দেখার সুযোগ হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারে ৬-৮ জুলাই তিন দিনব্যাপী চলা ‘ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা ২০১১'-তে। বাংলাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হওয়া ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের সুবিধা ও অসুবিধা কতটুকু? দ্বন্দ্ব আর বিতর্কের পাঠ চুকিয়ে শেষ পর্যন্ত কি চালু হবে নতুন এই পদ্ধতি? এই মেশিন কি আমাদের অগ্রগতির সহায়ক হবে না প্রতিবন্ধক হবে? আসুন জানার চেষ্টা করি। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম কি ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) হচ্ছে বাহ্যত ভোট প্রদানের একটি সহজতর ব্যবস্থা। মেশিনটিতে একটি পূর্ব-প্রোগ্রামিং করা মাইক্রোচিপ থাকে যা প্রতিটি ভোটের ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে হিসেব করে প্রদর্শন করে।

এতে ব্যালট কাগজে সিল মারার পরিবর্তে ভোটার পছন্দের প্রতীকের পাশের সুইচ টিপে ভোট দিতে পারেন। প্রতিটি বুথে একটি ইভিএমের প্রয়োজন পড়ে। এটি কয়েকটি ইউনিটে ভাগ করা থাকে। ইউনিটগুলো নিম্নরূপঃ- ১. ব্যালট ইউনিটঃ ব্যালট ইউনিটটি থাকে বুথের ভেতর। এর মাধ্যমে ভোটার তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন।

২. কন্ট্রোল ইউনিটঃ কন্ট্রোল ইউনিট থাকে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের সামনের টেবিলে। ৩. ডিসপ্লে ইউনিটঃ ইভিএম-এর সঙ্গে একটি বড় ডিসপ্লে ইউনিট রাখা হয়েছে, যা এমন স্থানে রাখা হয় যাতে বুথের ভেতর ভোট-সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টিগোচর হয়। ৪. ব্যাটারি ইউনিটঃ এই মেশিন চালাতে দরকার হয় ১২ ভোল্টের একটি ব্যাটারি। ব্যাটারিতে মেশিনটি সারাদিন চলতে পারে ফলে বাড়তি কোন বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না। ৫. স্মার্ট কার্ড ও মাস্টার কার্ডঃ একটি ভোটিং মেশিন পরিচালনা করার জন্য সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারকে একটি করে Smart Card -ভিত্তিক আইডি কার্ড দেওয়া হবে, যে কার্ডটি ছাড়া কন্ট্রোল ইউনিট পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।

ইউনিটগুলো ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে থাকলেও তারের মাধ্যমে পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে। কিভাবে ইভিএম কাজ করে একটি নির্বাচন কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে থাকে ইভিএমের কন্ট্রোল ইউনিট। এই ইউনিটের সম্মুখভাগে থাকে ডিজিটাল ডিসপ্লে। বিপরীত দিকে থাকে স্টার্ট সুইচ,ব্যালট নামক সুইচ, মেমোরী রিসেট সুইচ, ফাইনাল রেজাল্ট সুইচ এবং ক্লোজ বাটনসহ আরো কিছু সুইচ। ভোট শুরু করার জন্য স্টার্ট সুইচটি চাপতে হয়।

তারপর ব্যালট সুইচটি চেপে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ভোটারকে ভোট দিতে বুথে পাঠান। এই সুইচটি চাপলে বুথের মধ্যে থাকা ইভিএমের অপর অংশ ব্যালট ইউনিটটি একটি ভোট দেয়ার জন্য কার্যকর হয়। ভোট দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার অকার্যকর হয়ে যায় ব্যালট ইউনিটটি। যতক্ষণ না আবার কন্ট্রোল ইউনিটের ব্যালট সুইচ চাপা হচ্ছে। ভোটদান শেষে ভোটার বেরিয়ে গেলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার আবার ব্যালট সুইচ চেপে ব্যালট ইউনিটটি কার্যকর করেন।

এভাবে ভোট গ্রহন সম্পন্ন হলে ক্লোজ সুইচটি চাপলেই ভোটগ্রহণ কার্যক্রম পাকাপাকিভাবে বন্ধ হয়ে যাবে এবং ফাইনাল রেজাল্ট সুইচটি কার্যকর হবে। এটি এক এক করে চেপে চললে ব্যালট ইউনিটে সাজানো ক্রমানুযায়ী একের পর এক প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা বেরিয়ে আসে। ইভিএমের অপর অংশ ব্যালট ইউনিটটি রাখা হয় বুথের ভেতর। ভোটার ঢুকে দেখবেন ব্যালট ইউনিটের নিচের দিকে একটি সবুজ বাতি জ্বলছে। অর্থাৎ আপনার ভোট দিন।

ব্যালট ইউনিটের ওপর প্রার্থীর নাম ও প্রতীক সাজানো থাকে। প্রত্যেক প্রতীকের পাশে থাকে একটি করে সুইচ। ভোটার তার পছন্দের প্রতীকটির পাশের সুইচটি চাপবেন। ভোটটি গৃহীত হলে ভোটার ব্যালট ইউনিটের নিচের দিকে থাকা লাল বাতিটি জ্বলতে দেখবেন। অর্থাৎ ভোটটি গৃহীত হয়েছে।

নতুন ভোটটি গৃহীত হলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সামনে রাখা কন্ট্রোল ইউনিটের সামনের ডিসপ্লেতে একটি ভোট যোগ হবে। এরপর তিনি আবার অন্য কাউকে ভোটদানের অনুমতি দিয়ে বুথে পাঠালে ভোটার গিয়ে ব্যালট ইউনিটে সবুজ বাতি জ্বলতে দেখবেন। এভাবেই চলতে থাকবে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া। ইভিএমের আরো কিছু না জানা দিক ইভিএমের একটি ব্যালট ইউনিটে ১২ জন প্রার্থীর জন্য ব্যবস্থা থাকে। চাইলে এর সঙ্গে আলাদা আরো পাঁচটি ব্যালট ইউনিট যোগ করে মোট ৬০ জন প্রার্থীর ভোট নেয়া সম্ভব।

কোথাও ১২ জনের কম প্রার্থী থাকলে ফাঁকা প্রতীকের সুইচগুলো থাকবে অকার্যকর। ব্যালট ইউনিট অথবা কন্ট্রোল ইউনিট বিকল হলে কি করা যাবে এ কথা মাথায় রেখে প্রতিটি কেন্দ্রে একটি অতিরিক্ত ইভিএম দেয়া হবে। প্রদত্ত ভোটের হিসাব কন্ট্রোল ইউনিটে সংরক্ষিত থাকে, তাই কোনো ব্যালট ইউনিট বিকল হলে ভালো ইউনিট দিয়ে সেটিকে প্রতিস্থাপন করলেই চলবে। কন্ট্রোল ইউনিটও অনুরূপভাবে প্রতিস্থাপন করা যায়। এ ক্ষেত্রে বিকল কন্ট্রোল ইউনিটে সংগৃহীত ভোট নষ্ট হবে না।

নতুন কন্ট্রোল ইউনিটের ফলাফলের সঙ্গে বিকল কন্ট্রোল ইউনিটের ফলাফল যোগ করে ভোটের ফলাফল প্রকাশ করা যাবে। এ প্রক্রিয়ায় সারা দিনের ভোট প্রদান শেষ হলে মেশিন অতি দ্রুত জানিয়ে দেবে কোন প্রার্থী কত ভোট পেয়েছেন। সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ফাইনাল রেজাল্ট সুইচটি চাপলে ব্যালটে সাজানো প্রথম প্রার্থীর প্রতীকের নাম ও প্রাপ্ত মোট ভোট কন্ট্রোল ইউনিটের ডিসপ্লেতে দেখা যাবে। একই সুইচ দ্বিতীয়বার চাপলে দ্বিতীয় প্রার্থীর, এভাবে একে একে সব প্রার্থীর প্রাপ্ত মোট ভোট দেখা যাবে। পূর্ব থেকে সরবরাহ করা একটি ফরমে প্রাপ্ত ভোট সংখ্যাগুলো লিখে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারকে দেবেন।

প্রতিটি বুথের ফলাফল একীভূত করে প্রিজাইডিং অফিসার অন্য একটি ফরমে তুলে স্বাক্ষর করে রিটার্নিং অফিসারের কাছে তা পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। ইভিএমের সুবিধার কঠোর হাতছানি ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে যেসব সুবিধার কথা বলা হয় তা নিম্নরূপঃ ১। ইভিএম ব্যবহারের ফলে কোটি কোটি সংখ্যক ব্যালট ছাপানোর খরচ, কাগজের খরচ, এগুলো পরিবহনের খরচ, ভোট গণনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকবলের খরচ সবই সাশ্রয় হবে। নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী একটি জাতীয় নির্বাচনে এক হাজার ৮৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু ইভিএম পদ্ধতিতে একটি জাতীয় নির্বাচনে খরচ হবে মাত্র নয়শ’ কোটি টাকা।

২। একটি মেশিন দিয়ে চার-পাঁচটি জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব। চাইলে এটা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন বা উপ নির্বাচনেও কাজে লাগানো যাবে। সেক্ষেত্রে শুধু মেশিনটিতে নতুন করে প্রোগ্রাম প্রবেশ করাতে হবে। ৩।

এই প্রক্রিয়ায় কোনো ভোটারের ভোট বাতিল হবে না। ভোটের তথ্য মেশিনে প্রায় ১০ বছর ধরে অবিকৃত অবস্থায় থাকবে। ৪। ১২ ভোল্টের ব্যাটারী চালিত বিধায় ইভিএম ব্যবহারকালে ইলেকট্রিক শক খাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ৫।

একজন ভোটার ভোট দেয়ার পর ১০ থেকে ১২ সেকেন্ড ব্যালট ইউনিট স্বয়ংক্রিয়ভাবে অকার্যকর থাকে। ফলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ইচ্ছা করলেও একজন ভোটারকে একাধিক ভোট দানের সুযোগ করে দিতে পারবেন না। ৬। কোন কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার কন্ট্রোল ইউনিটের ক্লোজ সুইচটি চেপে দিলেই দখলকারীরা কোনো ভোট দিতে পারবে না। তাছাড়া ইভিএমের স্মার্ট কার্ড সরিয়ে ফেললেও মেশিনটি চালু করা যাবে না।

আবার প্রতি মিনিটে ৫টার বেশি ভোট দেয়া যাবে না। ৭। খুবই কম সময়ে ভোট গণনার কাজ সম্পন্ন হয়। যতসব অটল অভিযোগ আধুনিক প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া হলেও ইভিএম নিয়ে রয়েছে অনেক অভিযোগ। যেমনঃ ১।

কথায় আছে জোর যার মুল্লুক তার। অনেক ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের দ্বারা কেন্দ্র দখলের পর পোলিং এজেন্টদের নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটে। এক্ষেত্রে সর্বাধিক সংখ্যক ভোট শক্তির মালিক হবে প্রভাবশালীমহল। ২। বরাবরই শোনা যায় যে নির্বাচন কমিশনে দলীয় লোক ঢুকে পড়ে।

এমনটা ঘটলে তাদের কেউ যদি প্রতি কেন্দ্রে অন্তত একটি করে মেশিনে এ প্রোগ্রাম করে দেন যে, নির্বাচন শেষে ক্লোজ বাটনে ক্লিক করলেই যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট কোনো প্রতীকে অতিরিক্ত ২০০/৩০০ ভোট যুক্ত হবে তাহলে সহজেই নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেয়া সম্ভব। ৩। দুই নং প্রক্রিয়ায় মাইক্রোকন্ট্রোলারের প্রোগ্রাম পরিবর্তনের সুযোগ হলে কোন কেন্দ্রে সকল প্রার্থী একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক(২০ বা ৫০ বা ১০০) ভোট পাবার পর যে কোন ব্যালট বাটনে চাপলেই অতিরিক্ত ভোট দখলকারী প্রার্থীর প্রতীকে যুক্ত হবে, এমন প্রোগ্রামও লিখে ব্যালট ছিনতাই সম্ভব। ৪। যদি নির্বাচনী কর্মকর্তার স্মার্ট কার্ডের নকল কার্ড তৈরি করা হয় এবং তা যদি ইভিএমের প্রোগ্রামকে বিভ্রান্ত করে একবারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট কাস্ট করে দেয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন হয় তাহলে তা নির্বাচনের ফলাফলকে সম্পূর্ণরূপে পাল্টে দিবে।

৫। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ একটি সুনিতিগ্রস্থ(!!!!!) দেশ। গোপনে যে ইভিএম সরবরাহ করা হবে না এমন নিশ্চয়তা অন্তত বাংলাদেশে আশা করা যায় না। ইভিএমের প্রতিটি ইউনিট চালু অবস্থায় পৃথক করা যায়। প্রভাবশালীদের দ্বারা কেন্দ্র দখলের পর গোপনে সরবরাহকৃত অগ্রিম ভোট দেয়া ইভিএমের শুধুমাত্র কন্ট্রোল ইউনিট প্রতিস্থাপন করলেই চলবে।

ফলাফল শতভাগ অনুকূলে। ৬। মাইক্রোকন্ট্রোলার চিপ নিয়ন্ত্রিত এই ইভিএমের প্রতিটি স্মার্টকার্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে RFID(রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন) ট্যাগ। অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতা পেলে কোন প্রার্থীর কর্মীরা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে কয়েকশ মিটার দূর থেকেও কন্ট্রোল ইউনিট নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে। ৭।

বাংলাদেশের ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনটি ভারতের মেশিনগুলোর কাছাকাছি মানের। গত বছর ১২ আগস্ট ‘ভারতের ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন জালিয়াতি প্রতিরোধক নয়’ দাবি করে একদল মার্কিন আইটি বিশেষজ্ঞ বক্তব্য রাখে। তারা বলেন, ‘ভারতের ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন জালিয়াতি প্রতিরোধক নয় এবং দেশটির নির্বাচন কমিশনকে স্বচ্ছ ও নিরাপদ ভোট গ্রহণ ব্যবস্থার কথা চিন্তা করা উচিত। ’ বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বেন আডিডা, মাইক্রোসফট গবেষক ড. জোশ বেনালো ও পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাট ব্লেইজ। তারা বলেন, ‘ইভিএম তৈরির পর নতুন ধরনের নিরাপত্তা হামলার বিষয় জানা গেছে ও ইভিএমের নিরাপত্তার বিষয়টি পুরনো হয়ে গেছে।

বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনী ফলাফলের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা ও যাচাইযোগ্যতা ভারতীয় ইভিএম দিতে পারে না। ’ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের সভাপতি নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘ভারত সফল হলেও এ পদ্ধতিতে ব্যর্থ হয়েছে অধিকাংশ দেশ। আমাদের দেশে যে মেশিনটা তৈরি করা হয়েছে তা আধুনিক তবে অত্যাধুনিক নয়। কি হচ্ছে ভিন দেশে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইভিএম পদ্ধতি চালু রয়েছে। এই পদ্ধতি প্রথম চালু হয় যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৬০ সালে।

এর ৪ বছরের মধ্যেই ৭টি রাজ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এ পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই পদ্ধতি নিয়ে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। আইনগতভাবে আমেরিকা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, ফ্রান্স, জাপান, কাজাখস্তান, পেরু, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভেনিজুয়েলায় চালু রয়েছে ইভিএম প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোট গ্রহণ পদ্ধতি। এছাড়া আর্জেন্টিনা, ইতালি, মেক্সিকো, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বেশকিছু দেশে এখনো এই ব্যবস্থা নিয়ে চলছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। আবার এটাও ঠিক যে বিভিন্ন কারণে পৃথিবীর প্রায় ৮৫ ভাগ দেশেই এই পদ্ধতি ব্যর্থ হয়েছে।

এর পেছনে মেশিন যতটা না দায়ী ছিল তার চেয়ে বেশি ছিল রাজনৈতিক ও অন্যান্য কিছু সমস্যা। বাংলাদেশে ইলেক্ট্রনিক ভোটিংয়ের যা কিছু না জানা ২০০৭ সালে ঢাকার অফিসার্স ক্লাবের কার্যকরী সংসদের নির্বাচনে এ পদ্ধতি প্রথম ব্যবহার করা হয়। ছোট নির্বাচনে সফলতার পর ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে এ প্রকল্প জমা দেন উদ্ভাবক, বুয়েটের আইআইসিটি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. এস এম লুৎফল কবির এবং প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে পাইল্যাব বাংলাদেশ। তখন ছবি সংবলিত ভোটার তালিকার কাজ চলার কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি। পরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পরীক্ষামূলক কার্যক্রমকে সামনে রেখে ১৩০টি ইভিএম তৈরি করা হয়।

এর মধ্যে ১০০টি ইভিএম চট্টগ্রামে আনা হয়। তবে ১৪ ভোট কেন্দ্রের ৭৯টি বুথে ৭৯টি ও প্রতি কেন্দ্রের জন্য একটি অতিরিক্ত হিসাবে মোট ৯৩টি ইভিএম স্থাপন করা হয়। গত বছর ১৭ জুন অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে সফলতা আসে। সেখানে মোট ২৫ হাজার ২৩৮ জন ভোটার ইভিএমে ভোট প্রদান করেন। দ্রুত ভোট গ্রহণ ও দ্রুত ফলাফল ঘোষণায় ইভিএম পদ্ধতির সফল কার্যকারিতার প্রমাণ মেলে।

এ নির্বাচনে ভোট গণনার ক্ষেত্রে অন্য ওয়ার্ডগুলোতে যেখানে তিন থেকে দশ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগেছে, এ ক্ষেত্রে জামাল খান ওয়ার্ডে এক ঘণ্টার মধ্যেই ফল ঘোষণা সম্ভব হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞমহল মনে করছে জাতীয় নির্বাচনের মত বৃহৎ পরিসরে কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটলে যে কোন দলের জন্যই এ পদ্ধতি হবে অনেক বেশি হতাশাজনক। এদিকে ইভিএমের দাম নিয়ে নির্বাচন কমিশন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির মধ্যে লুকোচুরি খেলা শুরু হয়েছে। যৌক্তিক কারণ ছাড়াই এক বছরে এর দাম বেড়েছে চারগুণেরও বেশি। গত বছর যে ইভিএম কেনা হয়েছিল ১০ হাজার ৮০০ টাকায় এবার তার দাম চাওয়া হয়েছে ৪৬ হাজার ৫০১ টাকা।

নবগঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য ৭০০ ইভিএম প্রস্তুত করতে বুয়েট এবং বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির সঙ্গে কথা বলে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু প্রতিটি ইভিএমের দাম আগের চেয়ে ৩৫ হাজার ৭০০ টাকা করে বেশি চাওয়া হয়। ৭০০ ইভিএম তৈরি করতে খরচ চাওয়া হয়েছে ৩ কোটি ২৫ লাখ ৫০ হাজার ৭১৪ টাকা। অথচ গত বছর এই ৭০০ ইভিএমের দাম ছিল মাত্র ৭৫ লাখ টাকা। প্রশ্ন উঠছে, ইভিএমে নতুন অতিরিক্ত এমন কি যন্ত্রাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে যার কারণে এর দাম ৪গুণ বেশি! ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশন আগের তুলনায় অনেক শক্তিশালী’ ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন নির্বাচন কমিশনার 'বাংলাদেশে আমরা যে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন চালুর কথা বলছি এটা যথেষ্ট কার্যকর একটি পদ্ধতি।

ইতোমধ্যে এটা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি ওয়ার্ডে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়েছে। সেখানে আমরা সফলতা পেয়েছি। যারা এ মেশিনের বিরোধিতা করে নানা সময় বক্তব্য, বিবৃতি দিচ্ছেন তারা আসলে বিভ্যান্তি এবং অজ্ঞতা থেকে এসব বলছেন। বলা হচ্ছে, আমাদের দেশের মানুষ সবাই সচেতন ও শিক্ষিত নয়। আমরা জানি, ভারতেও একই অবস্থা।

কিন্তু সেখানে সর্বত্র এই পদ্ধতি চলছে। ২০০৯ সালে আমি ভারতে গিয়ে এই পদ্ধতিতে নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়া দেখে এসেছি। আমার কাছে সেসব ছবিও আছে। আসলে যারা মেশিনটি দেখেছেন তারা বুঝবেন, এটা কোনো জটিল পদ্ধতি নয়। আপনার পছন্দের প্রতীকের পাশের সুইচটি চাপবেন মাত্র।

তবে আমি মানছি যে, এটা খুব ভালোভাবে প্রচার করতে হবে। খরচের দিক থেকে বিবেচনা করলে এটা অবশ্যই লাভজনক। একটি মেশিন অন্তত ২০ থেকে ২৫ বছর চলবে। বর্তমান বিরোধী দল এসব নির্বাচনে পাল্লা দিয়ে সরকারি দলের সঙ্গে লড়ছে। কোথাও তারা জিতছে।

কোথাও অন্যরা জিতছে। সরকারের প্রভাবে কোথাও নির্বাচন কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়নি। বর্তমান নির্বাচন কমিশন আগের তুলনায় অনেক শক্তিশালী। একমাত্র এই কমিশনের পক্ষেই সম্ভব কোনো রকম বিতর্কের উর্ধ্বে থেকে কাজ করা। সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমার অনুরোধ, অযথাই ইস্যু সৃষ্টি না করে দেশকে এগিয়ে নিতে দিন।

' পরিশেষে, বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তি ছাড়া আমাদের একদিনও অতিবাহিত করা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। উদাহরণস্বরূপঃ ডিজিটাল ক্যামেরা বা সিসি ক্যামেরা নিরাপত্তার অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এই প্রযুক্তিটির অপব্যবহার রোধে মহামান্য সুপ্রিমকোর্ট সকল বিউটি পার্লার থেকে ক্যামেরা সরিয়ে নেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করে। তেমনি প্রযুক্তির ব্যবহার যেন গণমানুষের আকাংক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ না হয়।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.