আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শামসুর পহেলা বৈশাখ

অবশেষে কিছু পথ থেমে থাকা কলরব, গুঞ্জন গুঞ্জন একদম চুপ..... ক্রিং ক্রিং মোবাইল এর শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। বেশ বিরক্ত হলেও তন্দ্রা ভাব সম্পূর্ণ কেটে গেলো। কারন আমার কোন মোবাইল ফোন নেই। এদিকে ফোনটা একনাগারে বেজেই চলছে। আওয়াজের উৎস আলনাতে রাখা পাঞ্জাবী।

গতকাল মাত্র যেটা এক জনের কাছে থেকে চেয়ে আনা হয়েছে। চেয়ে আনা মানে সাধারণ ভাবে চেয়ে আনা না। কেউ কিছু চাইলেই তাকে লোকে কেন সেটা দিয়ে দিবে। তবে মানুষটি যদি হয় শামসু, তাহলে তো দিতেই হবে। ঘটনাটা গতকাল সন্ধ্যা-রাত এর।

রাস্তার পাশে বসে থাকা এক জোড়া জুটি কে নিয়ে। ছেলেটি মেয়টিকে জাপটিয়ে ধরে আছে। ভদ্র সমাজে যা মানায় না। দেখে আমি তাদের দিকে গেলাম। ভাইজান ভালো আছেন ? ছেলেটা বেশ বিরক্তি ভরা চোখে আমার দিকে তাকাল।

কোন জবাব দিল না। আপা আপনি ভালো আছেন। ওই তুই কে, এইখানে কি চাস, বলল ছেলেটি। জী আমাকে আপনি চিনবেন না। আপনাদের সাথে একটু পরিচিত হতে আসলাম।

তোরে চিনা আমি কি করুম, বেটা ফাইযলামি পাইছস। ভাই, আপনি তুই-তোকারি করছেন কেন তো কি তোরে কোলে বসাইয়া গান শোনামু নাকি, বেটা ফাযিল জানস এটা কার এলাকা। শামসু ভাই এর এলাকা। এখান থেকে বিদায় হ, নইলে কিন্তু তোর কপালে খারাবি আছে। আপনি শামসু ভাই কে চিনেন ? তোর কি তাইলে সন্ধেহ আছে।

না, মানে এমনি জানতে চাইলাম আরকি। আমি উনার খুব ফ্যান। উনাকে দেখার আমার খুব শখ। ওই তুই এক্ষণই বিদায় হ। নইলে কিন্তু...... ভাই অনেক বলছেন, এখন একটু রেস্ট নেন।

পকেট থেকে ছুড়ি টা বের করে দেখালাম। মেড ইন জাপান। সুন্দর না। ছুড়ি দেখে ছেলেটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। আমি বললাম, বাহ আপনার পাঞ্জাবীটা তো খুব সুন্দর।

নতুন নাকি। আমি যদি পাঞ্জাবীটা নিতে চাই আপনার দিতে কি কোন আপত্তি আছে। ছেলেটি কোন জবাব দিল না, পাশ থেকে মেয়েটি ধাক্কা দিতেই বলল 'না ' ছেলেটা পাঞ্জাবীটা খুলে দিল, আমি পাশে থাকা মেয়েটির উদ্দেশ্যে বললাম- আপা বাসায় চলে যান, দিনকাল ভালো না। বলে একটা সুন্দর করে হাসি দিলাম। এই ছিল পাঞ্জাবীর ঘটনা।

রাতে পাঞ্জাবীটা আলনাতে ফেলে রেখেছিলাম। মোবাইল ফোনের আওয়াজটা ওইখান থেকেই আসছে। আমি এগিয়ে গিয়ে পাঞ্জাবীর পকেট থেকে ফোনটা নিলাম। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একটা নারী কণ্ঠ প্রায় চিৎকার করে উঠল। ফোন ধরতে এতক্ষণ লাগে, জানো আমি কতক্ষণ ধরে দাড়িয়ে আছি।

তুমি কি আদৌ আসবে নাকি আমি চলে যাব। আমি বললাম, আসব না কেন অবশ্যই আসব। একটু ইতস্তত করে বললাম, আচ্ছা তুমি এখন কোথায় আছ। কোথায় আছি মানে, আমাদের কোথায় থাকার কথা। আমি বললাম, না মানে exactly কোথায় আছ সেটা জানতে চাচ্ছিলাম আরকি।

রমনার গেটের কাছে দাড়িয়ে আছি জলদি আসো, নইলে আমি কিন্তু গেলাম। আমি বললাম, এক্ষুনি আসছি। আমি ফ্রেশ হয়ে পাঞ্জাবীটা পরে বের হলাম, উদ্দেশ্য মেয়েটিকে গতকাল রাতে ছেলেটির কাছ থেকে নেওয়া মোবাইল ফোনটি ফেরত দেওয়া। বাইরে বের হয়েই আমার মনে পরল আজকে পহেলা বৈশাখ। চারিদিকে রঙের ছড়াছড়ি।

পনেরো মিনিটের মাথায় রমনার গেটের কাছে পৌঁছে গেলাম। দেখলাম অনেক মানুষের ভিড়। এতো মানুষের মধ্যে মেয়েটিকে কিভাবে বের করবো বুঝতে পারলাম না। হঠাৎ করেই পাঞ্জাবীর পকেটে রাখা ফোনটি বেজে উঠল। ধরতেই ওপাশ থেকে বলল, এই তুমি কোথায়, এতক্ষণ লাগে আসতে।

আমি কিন্তু গেলাম। আমি বললাম আমি তো আসছি, কিন্তু তোমাকে খুজে পাচ্ছি না। খুজে পাবে না কেন, আমি গেটের কাছে লাল রঙের একটা শাড়ি পরে দাড়িয়ে আছি। জলদি আসো। ফোন কথা বলতে বলতে আমি গেটের পাশে গেলাম।

সেখানে মেয়টিকে খুজে পেলাম। গিয়ে তার পাশে দাঁড়ালাম। আমাকে দেখেই মেয়েটি বলে উঠল এই তুমি জাহিদ না। আমি কিছু বলে উঠার আগেই মেয়েটি চিৎকার করে উঠল, এতক্ষণ লাগে তোমার আসতে। জানো আমি কতক্ষণ থেকে এখানে দাড়িয়ে আছি।

আমি বললাম, আসলে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে। তাই আসতে দেরি হল। নিশ্চয়ই রাতে দেরি করে ঘুমিয়ে ছিলে, তাই না। আমি বললাম, হুম। আলসে কোথাকার, কবে যে তোমার দায়িত্ব জ্ঞান হবে কে জানে।

যাই হোক, চল রমনার ভিতরে ঢুকি। বলেই সে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো। অনেক ভিড় পেরিয়ে অবশেষে ভিতরে ঢুকলাম। পাশে থাকা মেয়েটি অনরগল কথা বলেই চলছে, আমি কয়েকবার থামানোর বার্থ চেষ্টা করলাম। সারাদিন অনেক ঘুরাঘুরি হল।

মেয়েটির কথা থেকে জেনে নিলাম তার নাম জিনিয়া। একটা সময় নিরিবিলি জায়গা দেখে আমরা বসে পরলাম। মেয়েটি তখনও কথা বলেই চলছে। আচ্ছা, গতকাল রাতে ফোন দিলাম তুমি ধরলে না কেন। আসলে আমি...ইয়ে মানে... যাই হোক, তোমাকে এই পাঞ্জাবীতে অনেক মানিয়েছে।

কোত্থেকে কিনেছ, নিউমার্কেট। আমি বললাম, না। এটা আমাকে আরেকজন দিয়েছে। ও তাই তো বলি, পাঞ্জাবীটা এতো ক্ষেত কেন। আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম।

কি রাগ করলে, বলেই মেয়েটি ফিক করে হেসে উঠল। বলল, আরে আমি মজা করছিলাম। পাঞ্জাবীটা আসলে খুবই সুন্দর হয়েছে। আমি ওকে থামালাম। বললাম, তোমাকে কিছু গুরুত্ব পূর্ণ কথা বলব।

আচ্ছা ঠিক আছে বল, বলে মেয়েটি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি একটু ইতস্তত করে বললাম, তুমি আসলে যা ভাবছ আমি আসলে তা না। মেয়েটি বলল, তাহলে তুমি কি ? আমি বললাম, আমি আসলে জাহিদ না। কথাটা শুনেই মেয়েটি আবারো ফিক করে হেসে উঠল। আমি বললাম, হাসলে যে।

না, আমি ভাবছিলাম তুমি হয়ত বলবে তুমি ভিন গ্রহের কোন মানুষ। তোমার জবাব শুনে তাই আমার হাসি পেল। বলেই আবার সে হাসতে লাগলো। আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললাম, তুমি যা ভাবছ তা আসলে ঠিক না। আমি আসলেই জাহিদ না।

মেয়েটি এবার নিরব হয়ে গেলো। হয়তো আমার কথার মধ্যে এমন কিছু ছিল যাতে করে সে ব্যাপারটা বুঝতে পারলো। মেয়েটি বলল, তাহলে তুমি কে ? আমি বললাম, আমার নাম শামসু। আমাকে অনেকেই চিনে। তুমিও হয়তো চিনবে।

সবাই আমাকে কোপা শামসু নামে চিনে। তুমি মিথ্যা বলছ, তোমাকে দেখতে মোটেও ভয়ঙ্কর ঠেকছে না। আমি খেয়াল করলাম সে এখনও আমাকে তুমি তুমি করে সম্বোধন করছে। আমি বললাম, বিশ্বাস করতে ইচ্ছা না করলেও ব্যাপারটা সত্য। মেয়েটি চুপ হয়ে গেলো।

বলল, তাহলে জাহিদ কোথায়। তুমিই বা ওর ফোন পেলে কোথায়। আমি কিভাবে ফোনটা পেলাম তা বললাম। বললাম, তুমি জাহিদ কে কিভাবে চিনো। মেয়েটি বলল, ফোনে ওর সাথে আমার পরিচয়।

কখনও দেখা হয়নি ? মেয়েটি বলল, না। একটা কথা বলি। আশা করি আমার কথা গুলো তুমি বুঝতে পারবে। জাহিদ ছেলেটি মোটেও ভালো না। আমার ধারণা ওর আর অনেক মেয়ের সাথে পরিচয় আছে, ঠিক তোমার মত।

হয়তো তারাও তোমার মত ব্যাপারটা জানে না। তুমি মেয়ে হিসাবে অনেক ভালো। জাহিদ ছেলেটা তোমার একদমই উপযুক্ত না। নিরবতা... আমার বিশ্বাস তুমি অনেক ভালো একটা ছেলেকে তোমার জীবন সঙ্গী হিসাবে খুজে পাবে। জাহিদের মত কোন ছেলের পিছনে সময় নষ্ট না করাটাই অনেক ভালো হবে।

বলে আমি উঠে দাঁড়ালাম। তোমার সাথে পরিচিত হয়ে অনেক ভালো লাগলো। আমি আমার জীবনে এতটা ভালো সময় আর কখনও পালন করিনি। তোমাকে এজন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনি চলে যাচ্ছেন ? আমি বললাম, হ্যাঁ।

আপনি কি সত্যি জাহিদ নন ? আমি বললাম, হ্যাঁ। মেয়েটির চোখ ছলছল করে উঠল। আমি খেয়াল করলাম মেয়েটি আমাকে আপনি সম্বোধন করছে। তার মানে সব কিছু এখন স্বাভাবিক হিসাবে ধরে নেওয়া যায়। আপনাকে কিন্তু আমার একদমই খারাপ মানুষ বলে মনে হয় না।

আমি বললাম, মনে হওয়া না হওয়া দিয়ে কিছু আসে যায় না। আপনি ভালো থাকবেন। হয়তো আবার দেখা হবে। আসি। আমি হাঁটছি, পিছন ফিরে তাকালে হয়তো দেখতে পাব মেয়েটি আমার দিকে এখনও তাকিয়ে আছে।

আমি পিছন ফিরে না তাকিয়ে হাঁটতে লাগলাম। বেলা ৩টা। হ্যালো, ভাই আসসালামুয়ালাইকুম। কে জাহিদ। আরে ভাই আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে ? কেন, আমার জন্য কি ব্যাপারটা অসম্ভব নাকি।

না না, তা হবে কেন। ভাই একটা অনুরোধ। যদি রাখেন অনেক উপকার হয়। ফোনটা ফেরত চাই, এইতো ? না না, শুধু সিমটা হলেই চলবে। আপনি চাইলে ফোনটা রেখে দিতে পারেন।

তাই নাকি। ভাই, আপনার সাথে কি একটু দেখা করা সম্ভব সিমটা নেওয়ার জন্য। জানি আপনি অনেক ব্যস্ত মানুষ। তারপরও যদি... হ্যাঁ, দেখা তো তোমার সাথে করতেই হবে। তোমার মত এতো সুশীল ছেলের সাথে দেখা না করে থাকি কিভাবে।

একটা জায়গার নাম বললাম। ৫ টার সময়। বলে ফোন রেখে দিলাম। দেখা যাক কি করা যায়...... কিছু কথা : গল্পটিতে শামসু অরফে কোপা শামসু নামে যে চরিত্রটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটা অবশ্যই কাল্পনিক। কোন কিছুর সাথে তাই এই চরিত্রটির তুলনা না করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।