আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাবিতে বেড়েছে যৌন হয়রানি , বেড়েছে আত্মহত্যার প্রবণতা

ঘুম অনেক প্রিয় এম এইচ বাধন যৌন হয়রানি, ইভটিজিং, স্ত্রীকে স্বীকৃতি না দেয়াসহ বিভিন্নপ্রকার অমানবিক নির্যাতনের শিকারে অতিষ্ঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামধারী শিক্ষকরা সাজেসন, নোট দেখে দেয়া, তাদের সহযোগীতার নাম করে বিভিন্ন সময়ে ছাত্রীদের তাদের চেম্বারে ডেকে নানা প্রকার কু-প্রস্তাব দেয়। আর এতে রাজি না হলে সেইসব ছাত্রীদের দিকে বাড়িয়ে দেয় তাদের কালোহাত। ইতমধ্যে এই বিদ্যাপিঠের অনেক ছাত্রী, শিক্ষক নামের কলংক বহনকারী পশুরূপী হায়েনাদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। আর এদিকে রাবিতে বেড়েই চলছে ছাত্রী আত্মহত্যার প্রবণতা।

এই বছরেই ৮জন ছাত্রী আত্মহত্যার মত বেছে নিয়েছে জঘন্যতম পথ। প্রশাসনের অবহেলার কারনে এর মূল কারণ কি তা আজও রয়ে গেছে জন চুর আড়ালে। এর পিছনে কি রয়েছে শিক্ষকদের সেই কালো থাবা তাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়ছে সবার কাছে। ৩ ফেব্রুয়ারী ২০১১: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনিস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিস (আইবিএস)-এর সচিব মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা এসএম গোলাম নবীর বিরদ্ধে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির গুরুতর অভিযোগ উঠে। ২০১০-১১ শিাবর্ষে ভর্তিচ্ছু এক ছাত্রী এ অভিযোগ তোলেন।

এ ঘটনায় নগরীর মতিহার থানায় ওই ছাত্রী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়েরের ৩দিন পর রোববার সেটি মামলা হিসেবে থানায় নথিভুক্ত হয়। যৌন হয়রানীর শিকার হওয়া ছাত্রীর অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়ন নামের এক শিার্থীর মাধ্যমে এসএম গোলাম নবীর সাথে তার পরিচয় হয়। এরপর ভর্তি কাজে সহায়তার নাম করে গত ৩ ফেব্র“য়ারি আইবিএস ভবনের তৃতীয় তলার নিজ কে ওই ছাত্রীকে আসতে বলেন ওই কর্মকর্তা। কর্মকর্তার ডাকে সাড়া দিয়ে অপরিচিত ওই ছাত্রী তার কে গেলে সেখানে একা পেয়ে গোলাম নবী ছাত্রীকে কুপ্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবে রাজি না হলে গোলাম নবী ও ওই ছাত্রীর মাঝে বেশকিছু সময় ধরে অশালীন ভঙ্গিতে ধস্তাধস্তি হয়।

পরে ওই ছাত্রী সেখান থেকে কোনভাবে বেরিয়ে এসে ওই দিনই নগরীর মতিহার থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। ১৭ জানুয়ারী ২০১১ঃ গত ১৭ জানুয়ারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের খন্ডকালীন শিক্ষক অমিতাভ চ্যাটার্জীর হাতে লাঞ্চিত হয় ঐ বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী নন্দা বর্ধন। শিক্ষার্থীর অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে অমিতাভ চ্যাটার্জী তাকে বিভিন্ন ভাবে কু প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। ঐ শিক্ষক নন্দাকে প্রায়ই ফোনে বিভিন্ন ধরনের কুরুচিপূর্ণ কথা বলত এবং তাকে কুপ্রস্তাব দিত। এতে অতিষ্ঠ হয়ে ঐ ছাত্রী সম্মান বাঁচাতে পড়া শোনা বাদ দিয়ে তার দেশের বাড়ি বরিশালে চলে যায়।

ফলে অকালে ঝরে যায় একটি মেধাবী শিক্ষার্থী। এ ছাড়া ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েকদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী তনুশ্রী দত্তকে সংগীত চর্চার নাম করে অমিতাভ চ্যাটার্জী যৌন কু-প্রস্তাব করে। তার এই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ঐ শিক্ষার্থীকে শিক্ষা জীবন ধ্বংসের হুমকি দেয়। ২৪ ডিসেম্বর ২০১০ঃ স্বামীর কক্ষের সামনে স্ত্রীর অধিকার আদায়ে রাতভর অনশনের পরও স্ত্রীর অধিকার দেয়নি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক মো. মাহবুবুর রহমান।

মাহবুবুর রহমানের সদ্য বিবাহিত স্ত্রী সালমা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের সময় তার স্বামী তার কাছ থেকে যৌতুক হিসেবে দুই লাখ টাকা নিয়ে বিয়ে করে। কিন্তু স¤প্রতি রাবিতে চাকুরি পাওয়ার পর থেকে তার সাথে সে অসৌজন্যমূলক আচরণ শুরু করেন। তিনি আরো বলেন, রাবিতে শিক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সুবাদে স্বামী মাহবুবুর রহমান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসলে সালমার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। নিরুপায় হয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক কোয়াটার জুবেরী ভবনের ৩১৯ নম্বর কে মাহবুবের সঙ্গে সাাত করতে আসেন সালমা এবং সেখানে তার অধিকার প্রতিষ্ঠায় করে সামনে অনশন শুরু করেন। রাতভর অনশনের কারণে সালমা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

তবে তাকে স্ত্রীর অধিকার দেয়নি বরং তার বিরুদ্ধে কেলেংকারীর অভিযোগ দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। এদিকে গত দুই মাস আগে একই রকম অভিযোগ উঠে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দলীয় বিবেচনায় সদ্য নিয়োগ পাওয়া আরেক শিকের বিরুদ্ধে। ঐ বিভাগের ৩য় বর্ষের এক ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন একত্রে বসবাস করেছেন তিনি। কিন্তু ওই শিক তাকে বিয়ে করতে না চাইলে ওই ছাত্রী কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে রাজনৈতিকভাবে প্রক্টরের মধ্যস্থতায় বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়া হয়।

বর্তমানে ওই ছাত্রী ক্যাম্পাসের বাহিরে রয়েছে। ১২ আগস্ট ২০১০ঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাপসী রাবেয়া হলের গেটে ছাত্রলীগ কর্মী কাউছার বাংলা বিভাগের ২য় বর্ষের এক ছাত্রীকে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত ও মারপিট করে। ভুক্তোভুগী জানায়, ১২ আগস্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাবির বাংলা বিভাগের ২য় বর্ষের ও তাপসী রাবেয়া হলের আবাসিক ছাত্রী মুন্নী ক্যাম্পাস থেকে হলে ফেরার পথে হল গেটে আসলে রিক্সা থেকে নামিয়ে নিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও ব্যাপক মারপিট করে ছাত্রলীগ কর্মী কাউসার। এসময় কাউসারের ১০/১২ জন সহযোগী হাততালী দিয়ে আনন্দ উল্লাস করে। ছাত্রলীগের এই কর্মীর বিরুদ্ধে হলের ছাত্রীরা এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করতে বের হলে রাবি প্রক্টর মো. জাকারিয়া বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়ন করে হল গেটে তালা লাগিয়ে ছাত্রীদের অবরুদ্ধ করে রাখে।

এতে ছাত্রীদের বিােভ মিছিল ও প্রশাসন ভবন ঘেরাও কর্মসূচী ভন্ডুল হয়ে যায়। এই খবর পত্রপত্রিকা ও বিবিসিতে প্রচার ও পর্যালোচনা হলে স্বয়ং প্রধান মন্ত্রীর দপ্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নিকট ফোন আসে “হয় আপনার পদ থেকে সরে দাড়ান নয় অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন”। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান কাওসারকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করে । কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সে বর্তমানে ক্যাম্পাসে বহাল তবিয়তে চলাফেরা করছে। ২১ জুলাই ২০১০ঃ রাবি’র অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র আসাদুজ্জামান সিজু কর্তৃক একই বিভাগের ছাত্রীকে লাঞ্চিত করার অভিযোগ ওঠে।

শিার্থীদের অভিযোগ, অর্থনীতি বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র আসাদুজ্জামান সিজু ঐ বিভাগের একই বর্ষের এক ছাত্রীকে নোট দেয়ার অজুহাতে কৌশলে রাবি সংলগ্ন শামিম ছাত্রাবাসে ডেকে নিয়ে তাকে শারিরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। ওই ঘটনার পর থেকে লাঞ্ছিত ছাত্রী মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে লাঞ্ছিত ছাত্রী বিভাগীয় সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ করার পরেও সে ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বরং শিকরা শিার্থীদের অভিযোগ পুরোপুরি সত্য নয় এবং তাদের আন্দোলন যথাপোযুক্ত নয় বলে দাবি করেছেন। এ ছাড়াও ১৫ জুলাই মুন্নুুজান হল থেকে ওই ছাত্রীর আবাসিকতাও বাতিল করা হয়। সর্বশেষ ঘটনা ঘটে মার্কেটিং বিভাগে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে একই বিভাগের এমবিএ শেষ বর্ষের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানীর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মো. জুলফিকার নামের ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও ইন্টার্নশীপ কোর্সের তত্বাবধায়ক পরিবর্তন করতে ভিকটিম বিভাগীয় সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছে। ছাত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরীা কমিটি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তি স্বরুপ কোর্স তত্বাবধায়ক থেকে বাদ দিয়ে আরেকজন সিনিয়র শিককে সে দায়িত্ব দিয়েছে বলে বিভাগটি নিশ্চিত করেছে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে অবহিত করা হলেও কোন বিচার পায়নি ভুক্তোভুগীরা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইভটিজিং এবং যৌন হয়রানি মূলক কর্মকান্ড দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে এ সকল অভিযোগ নিয়ে রাবি প্রক্টর চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়ার কাছে গেলেও তিনি কোন ছাত্রীকে এর সুরাহা দিতে পারেননি।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সাংবাদিকদের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান আমরা বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের কাছে মেয়েদের সমস্যা নিয়ে তাদের পক্ষে দাবি আদায়ের জন্য গিয়েছি কিন্তু প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিরা অসহযোগিতা করেছে। এবং তারা আরোও বলেন কয়েকটি ঘটনার সাথে উর্ধ্বতন ব্যাক্তিরা জড়িত রয়েছেন বলে আমাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছেনা। আমরা তাদের (প্রশাষনের কর্তা ব্যাক্তি) কারণে সব সময় যথাযথ ব্যাবস্থা নিতে পারছি না। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.