আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্ম ও মানবিকতা

ধর্মের নামে চলছে অনাচার, অত্যাচার, অমানবিকতা। চালাচ্ছি সবকিছুই আল্লার নামে, ধর্মের নামে। যদিও সষ্টিকর্তা আমাদের কাউকেই সরাসরি সেই আদেশ দেননি। তার প্রেরিত পুরুষের মাধ্যমেই আমাদের কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন। সেই আদেশ যে কোনো বিশেষ ব্যক্তির স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ নয়, তা কীভাবে নিশ্চিত হয়েছেন ধর্মান্ধগোষ্ঠী তা বুঝতে পারা অনেক কঠিন।

সমস্ত নিয়ম কে সার্বজনীন এবং সর্বকালের ভাবা যেতে পারে সেটাও মানুষ হিসেবে বুঝতে পারি না। ধর্মের বিধিবিধানের নামে আমরা যখন অমানবিকতা প্রদর্শন করি, তখন সেগুলোর দায়ভার দিয়ে দিই সৃষ্টিকর্তার নামে। তাহলে আমাদের চিন্তা চেতনা, বুদ্ধি, বিবেকের কি কোনোই মূল্য নেই? আমাদের পালন করতে হবে এক রাশ স্বেচ্ছাচারী নির্দেশ? সম্প্রতি সৌদি আরবে বাংলাদেশের ৮ জন নাগরিকের শিরচ্ছেদের ঘটনায় একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। কেউ কেউ বাংলাদেশের নাগরিকের পক্ষে কথা বলেছেন, কেউ বলেছেন আল্লার আইনের পক্ষে। আমি কোনো পক্ষেই কথা বলতে চাইছি না।

অপরাধ করলে শাস্তির বিধান সবদেশের আইনেই আছে। উন্নত দেশ গুলোতেও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, সেখানে কার্যকরও করা হচ্ছে। আমি শুধু জানতে চাই, প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এক কোপে মাথা ফেলে দেওয়ার মধ্যে কি একটা প্রচণ্ড পৈশাচিকতা নেই? অনেকেই বলবেন, ‘এটাই আল্লার বিধান। ’ তাহলে আমাদের নিজেদের বিবেচনা বোধের কোনো মূল্য নেই?? শুধু মাত্র অন্ধ, কপট, ভীত, স্বর্গ ও হুরপরী লোভীরাই এটা মেনে নিতে পারে। কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এটা মেনে নিতে পারে বলে আমরা মনে করি না।

বর্তমান পৃথিবীতে এত সংঘাতের কারণ যে ধর্ম এটা একটু চিন্তা করলেই বোঝা যায়। প্রবল ধার্মিকের পক্ষে সম্ভব নয় অন্য ধর্মের লোকদের কে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখা। এক ধরণের ঈর্ষা ও একনায়কী মনোভাব আপনা আপনিই চলে আসে ধর্মান্ধ ব্যক্তিদের। পৃথিবীটাকে আজ খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত করেছে এই ধর্মই। ধর্মীয় সূত্র না মানলেই লোকেরা আচমকা বলে বসে ‘আপনি নাস্তিক।

’ নাস্তিক্য হচ্ছে সেই বৈশিষ্ট্য যা সৃষ্টিকর্তার উপস্থিতি কে অস্বীকার করে। ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি এক জন ধর্মহীন মানুষও আস্তিক হতে পারে। সৃষ্টিকর্তার উপস্থিতি তে বিশ্বাস থাকলেই যে ধর্মে বিশ্বাস থাকতে হবে এমনটি আমার মনে হয় না। আস্তিক বা নাস্তিক হওয়ার মধ্যে দোষ বা গুণের বিশেষ কিছু নেই। এগুলো মানুষের ব্যক্তিগত উপলব্ধির প্রকাশ মাত্র।

জোর করে কাউকে আস্তিক বা নাস্তিক বানানো যায় না। এগুলো ব্যক্তির স্বকীয়তার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। কাজেই এগুলো দিয়ে মানুষকে মূল্যায়ন করা ঠিক বলে আমি মনে করি না। গত কাল একটা পোস্ট দেখলাম একজন নারী ব্লগার লিখেছেন। তিনি আমাদের দেশের প্রবল ধর্মানুভূতি সম্পন্ন লোকের মতোই মনে করেন মেয়েদের পোশাকে সমস্যার কারণেই ধর্ষণ বা বখাটেপনার মত ঘটনা ঘটছে।

কিন্তু আমরা জানি ধর্ষণ বা বখাটেপনার সাথে যৌনতার সম্পর্ক বিশেষ নেই। এর সাথে রয়েছে পুরাষাধিপত্যের বহিঃপ্রকাশ। নারীকে নগ্ন করে ভিডিওচিত্র ধারণ করে কোন ধরনের যৌনতা চরিতার্থ করা হয়??? সমস্যা আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মগজে, অন্য কোথাও নয়। নারীকে মানুষ মনে করুন, নারী নয়। ।

জ্ঞান-বিজ্ঞান অনেক এগিয়েছে, কিন্তু ধর্ম এগোয়নি, কোনোদিন এগোবে না। ধর্ম অবিকার, বিজ্ঞান প্রগতিশীল, প্রগতিই তার লক্ষ্য। বিজ্ঞানের চেতনা আমাদের অনেকের ভেতরেই প্রবেশ করেনি, তবে বিজ্ঞানের সুবিধাটুকু নিতে আমাদের পিছপা হতে কখনোই দেখা যায় না। এ কেমন বৈরীতা এটাও এক ধরনের প্রশ্ন। মানবাধিকার সংস্থা কে কটাক্ষ করে এক ব্লগার একটি পোস্ট দিয়েছেন।

মানবাধিকার সংস্থা কাজ করে মানুষের নিজস্ব বুদ্ধি, বিবেচনার উপর ভর করে। আর আপনি যে মতাদর্শে বিশ্বাস করেন তারা কাজ করে একরাশ ভৌতিক, অলৌকিক, স্বেচ্ছাচারী নির্দেশের উপর ভর করে। পার্থক্য তো থাকবেই। তবে আধুনিক যুগের মানুষ মধ্যযুগের দিকে এভাবে দৌড়ে যেতে পারে ভাবলে অবাক না হয়ে পারি না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.