আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লাভলী - বিভৎস যৌনতার শিকার এক হতভাগিনী কিশোরী

বিকৃত যৌনতার বিশেষ স্বাদ আছে , সেই স্বাদ পেতে বিকৃত মানুষেরা বেছে নেয় বিচিত্র রকম পথ। সেই পথে হাটতে গিয়ে মাড়িয়ে যায় হাজার তাজা ফুল, পেছনে পড়ে থাকে স্বজন হারানোদের বুকফাটা আহাজারী। অকালে ঝরে যাওয়ার পথে এমনই এক ফুল লাভলী যার উপর দিয়ে বয়ে গেছে নানামুখী অত্যাচার । বলছি -একই সাথে বেশ কয়েকটি জটিল সামাজিক সমিকরণ মোকাবেলা করা সেই অদ্ভুদ কাহিনী। লাভলীর বাবা গ্রামের বাজারে পিঁয়াজু, চানাচুর, বাদাম বিক্রি করেন।

বাদামের দোকান এবং দোকানের মালিকের বর্ণনা দেবার আগেই নিশ্চয় কল্পনায় ভেসে উঠেছে ছেঁড়া কাপড় পরা জীর্ণদেহি এক সহজ সরল মানুষের ছবি। লাভলীর বাবা তাই-ই। নিজের বাড়িতে থাকার জায়গা নেই, তাই আট-নয় বছর বয়সী লাভলীর থাকার ব্যবস্থা করেছেন পাশের বাড়িতে । গৃহপতি সম্পর্কে লাভলীর বড়আব্বা। সুতরাং নিশ্চিন্তেই ছিলেন মেয়ের বাবা।

কিন্ত এই নিশ্চয়তার বেড়াজালে যে লুকিয়ে ছিল অশান্তির কালো বাঘ তা তিনি ঘুণাক্ষরেও টের পাননি। পরের ঘটনা সংক্ষেপ এরকম- শিশু লাভলীর উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে যৌনদস্যু গৃহপতি আবুল হোসেনের, সম্পর্কে ভাতিজি হলেও নিজের কামনা ধরে রাখতে পারেননি। প্রথম দিকে নানা প্রসাধনি সামগ্রি কিনে দিয়ে শিশুর সরল হৃদয়কে কব্জা করে ফেলেন তিনি। এরপর শুরু হয় অবুঝ শিশুর সাথে আদিম লীলা। সুন্দর চেহারার লাভলী পশুভারে মলিন হয় ,দিনে দিনে হতে থাকে হাড্ডিসার।

ঘটনা এখানেই থেমে নেই। আবুলের আপন ভাগিনা সুমন(ছদ্মনাম) অনেকবার চেষ্টা করেও যখন লাভলীর কাছ থেকে বারবার প্রত্যাখাত হতে থাকে তখন তার মাথায় চাঁড়া দিয়ে ওঠে পেছনের রহস্য উদ্ঘাটনের। সুমন সফলও হয়ে যায় অচিরেই,আপত্তিজনক অবস্থায় দেখতে পার লাভলী আর আবুলকে । নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছেনা সুমন, যে মামাকে এত শ্রদ্ধা ভক্তি করত সে, সেই মামাই এতখানি পিশাচ হতে পারে ? মামার প্রতি প্রবল অশ্রদ্ধা আর প্রত্যাখাত হওয়ার বেদনায় রাগে ক্ষোভে সে লাভলীর মা বাবাকে বলে দেয়সব ঘটনা । ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারত কিন্তু না, নির্মমতার বাঁকি আছে আরো অনেক।

সবকিছু জেনেও দরিদ্র পিতার সামর্থ্য হয়নি এই অন্যায় বন্ধ করতে। দিনের পর দিন নিজের মেয়েকে ধর্ষিতা হতে দেখেও মানসন্মানের ভয়ে প্রভাবশালী আবুলের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দ করার সাহস পাননি তিনি। আল্লাহর কাছে বিচার দিয়ে নীরবে চোখের পানি ফেলতে থাকেন লাভলীর মা। কালক্রমে ঘটনা জেনে যায় আবুলের স্ত্রী রহিমা। সে আরো একধাপ এগিয়ে।

বদমেজাজী এবং সাংঘাতিক কুটিল হৃদয়ের রহিমা শুরু করে স্ত্রীবুদ্ধির চাল। প্রথমে লাভলীকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। এরপর স্বামীর সাথে শুরু হয় রহিমার অশান্তি। কিন্তু জজকোর্টের উকিলের মুহুরী চতুর আবুল এক নতুন চাল চালেন। তার অর্জিত সব টাকা এবং জমিজমা নিজের নামে লিখে দেওয়ার চুক্তিতে আবুলের কর্মকান্ডে মৌন সন্মতি জ্ঞাপন করেন রহিমা ।

সম্পদ পেয়েও তৃপ্ত হতে পারেননি রহিমা, নিজের স্বামী অন্যের কাছে যাবে তা মানা যায় না। শান্তিচুক্তি অনুযায়ী স্বামীকে কিছু বলতে না পারলেও,পাশাপাশি বাড়িতে থাকায় লাভলীর উপর দিনে রাতে চলে মানসিক নির্যাতন। উপরন্তু রহিমা আঁটলেন নতুন এক ফন্দি। নিয়ে আসলেন লাভলীর বিয়ের ঘর। লাভলীর মা-বাবাও খুঁজছিলেন মুক্তির পথ।

রাতের আঁধারে তড়িঘড়ি করে অপ্রাপ্তবয়স্ক ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া লাভলীকে বিয়ে দিয়ে আপদ বিদায় করে দেওয়া হয়। কিন্তু বিধি বাম, স্বামীর বাড়িতে গেলেও আবুলের প্রভাবমুক্ত হতে পারেনি সে। এ জন্য সেখানেও পড়ে এক প্রতিকূল পরিবেশের। বয়সন্ধিকালের খামখেয়ালিপনা মেনে নেবার মত পরিস্থিতিও নেই অশিক্ষিত শ্বশুর-শ্বাশুড়ির। ভরদুপুরে তেঁতুল কুড়াতে যাওয়া কিংবা সমবয়সীদের সাথে হেসে কথা বলার মত অপরাধে সেখানেও চলতে থাকে শারিরীক এবং মানসিক শাস্তি।

স্বামী তার রূপমুগ্ধ কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দিতে অক্ষম, এ যেন নতুন হৈমন্তির কেচ্ছা। অভিমান করে লাভলী বাপের বাড়ি আসে,কিন্তু সুখ নেই ,আছে রহিমার রক্ত চক্ষু আর আবুলের কামনার আগুন। সকাল সন্ধ্যা শোনা যায় রহিমার ভর্ৎসনা আর সংসারের মারপ্যাঁচ অজ্ঞ লাভলীর কান্না। স্বামী শ্বশুরও বসে থাকেনা। পুত্রবধুকে নেবার জন্য আসেন তাঁরা, কিন্তু আবুলের ফাঁদে আটকা লাভলী আর সে দোজখে যেতে চায় না।

শুরু হয় গ্রাম্য শালিস , সে শালিসের প্রধান বিচারক হয় স্বয়ং আবুল। বিচিত্র সে বিচার-সব দোষ হয় লাভলীর। সে কাউকেই কিছু বোঝাতে পারেনা , ছোট্ট সে শরীর মনে বিশাল জোঁয়াল টানার কত বড় ক্ষত লুকিয়ে আছে! লাভলী এখন সারাক্ষণ বিড়বিড় করে সবাইকে অভশাপ দেয়। সবাই সে অভিশাপের জবাব দেয় পাগলী কিংবা জ্বীনে ধরা বলে টিটকারীর মাধ্যমে। একসময় লাভলী সত্যিসত্যিই আংশিক মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।

শুরু হয় কবিরাজি চিকিৎসা। একদিন দেখা গেল বেত দিয়ে পিটিয়ে লাভলীর পা ফুলে তুলেছেন কবিরাজ। ট্রাজেডির শেষ ধাপ মৃত্যুকে অতিক্রম করেনি লাভলী, সুতরাং পত্রপত্রিকার সাংবাদিকের কাছে সেটা মামুলী ব্যাপার, কেউ সেটার খোঁজ রাখেনি। হয়তো লাভলী একদিন আত্নহত্যা করবে, কিংবা এভাবেই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়েই বাঁকি জীবন কাটাবে। এখন মা-বাবাকে দেখেও তেড়ে মারতে যায় সে, আবুল হোসেন নিজের সোনাতে হাত বোলায় আর আহ উহ করে প্রেমিকার নধর দেহ বঞ্চিতের কথা জানান দেয়, আর রহিমা! মিশন সফলের অট্ট হাসিতে মাঝে মাঝে সে ফেটে পড়ে, কয়লা কালো সে চেহারা দিনে দিনে হয়ে ওঠে নূরানী।

লাভলী আমাকে খুব সন্মান করে, একদিন আমাকে বলল, “ভাই, সবাই মোক পাগলী কয়,তুই জান কসনা, মুই আসলে পাগলী নয়” এরপরে কথা শেষ হবার আগেই লাভলীর মা এসে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় তাকে। আর কি কথা যে সে বলতে চায় জানা যায় না। সে অব্যক্ত কথা কানে কানে বলে যায় হৈমন্তি, বিলাসীরা, সে কথা প্রতিধ্বনি হয়ে ফেরে চতুর্দিকে “দুনিয়ার তামাম আবুলদের থামাও…থামাও......আমাদের বাঁচাও” । সে ডাকে আমার রক্ত গরম হয় কিন্তু আবুলদের সামনে গেলে আবার সেই রক্তই হয়ে যায় ভয়ে হিমশীতল। কারন আমি যে সমাজের আর আট-দশজনের মতই নপুংশক।

এফ এইচ রিগ্যান ১/১০/১১ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।