আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোনাবরু মরে আমাদের জানিয়ে দিয়েছে ১০টাকায় চাল জুটেনি কপালে কিন্তু ১০বছরের মেয়ের লাশ জুটেছে

একটু আগে খেয়েছি। আলসে নিয়ে ব্লগের প্রথম পাতায় চোখ রাখছিলাম। ১০বছরের মেয়ের ভাতের জন্য আত্মহত্যা নিয়ে একটি পোষ্ট দেখে রীতিমত সারা শরীর শিওরে উঠেছে। আরো কয়েকজন সহব্লগারের মত আমারও পোষ্টটি পুরোটা পড়ার সাহস হয়নি শিরোনাম দেখেই চমকে উঠেছি। কিছু লিখব ভেবে পুরো লেখাটি পড়ে চমকে উঠেছি।

১০বছরের একটি মেয়ে ভাতের জন্য আত্মহত্যা করেছে। মেয়েটির যায়গায় আমার ছোটবোন থাকতে পারত কিংবা আমার ছোট ভাইটি কিংবা আমার আদরের ভাগিনা-ভাগিনী। আদরের ছোটবোনকে হারিয়ে কান্নারত ছবিটিতে আজ ফেরদৌস কাল অন্যকেউ। দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদ: কাঁদছে সোনাবরুর গ্রাম দারিদ্র্য মানতে না পেরে শিশু সোনাবরু আত্মহত্যা করায় এখন বিবেকের দংশনে পুড়ছেন তার স্কুলের শিক্ষক ও গ্রামবাসী। বরগুনার কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের জাকিরতবক গ্রামের সর্বত্র এখন শোকের আবহ।

ছোট্ট সোনাবরুর (১০) ছোট্ট স্কুল জাকিরতবক প্রাইমারি স্কুলে গতকাল শনিবার গিয়ে দেখা যায়, কাঁদছে ছাত্র-শিক্ষক সবাই। চোখ মুছতে মুছতে প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'সবাই যখন বলে, তোমরা থাকতে কী করে অতটুকু মেয়েটা ক্ষুধার জ্বালায় আত্মহত্যা করল? তখন কোনো উত্তর দিতে পারি না। যদি জানতাম ওর মধ্যে এত অভিমান কাজ করছে তবে ওকে আমি আমার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আমার বাড়িতে রেখে পড়াতাম। ' গত বুধবার ১০ টাকা দিয়ে একটি কেক কিনে সহপাঠীদের সঙ্গে নিজের জন্মদিন পালন করে সোনাবরু। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে হাঁড়িতে ভাত না পেয়ে আত্মহত্যা করে সে।

তার সহপাঠী সৌজিয়া ফুঁপিয়ে কাঁদছিল। সে কালের কণ্ঠকে বলে, 'কিছুদিন পরেই আমার জন্মদিন। সোনাবরু বলেছিল, এরপরের জন্মদিনগুলো আরো সুন্দর করে পালন করব। নিজেরা কম খাব। স্যারদের জন্য বেশি কেক রাখব।

' আদরের ছোট বোন: সোনাবরুর ১৩ বছর বয়সী ভাই ফেরদৌস অভাবের তাড়নায় ঢাকায় চলে গিয়েছিল মাস দুয়েক আগে। কচুক্ষেত এলাকার একটি স্টুডিওতে ফাই ফরমাস খাটার কাজ করে ৫০০ টাকা বেতন পেয়েছিল সে। একটি স্কুল ব্যাগ কিনে আনতে সোনাবরুর আবদার রক্ষায় গত ঈদে বাড়ি ফেরার সময় সে বেতনের ২০০ টাকা খরচ করে ফেলে। ভাইয়ের ব্যাগ হাতে নিয়ে সোনাবরু বলেছিল, 'দেখিস দাদা, যদি বেঁচে থাকি তবে কোনোদিনই পরীক্ষায় দ্বিতীয় হব না। ' পিঠেপিঠি ভাই ফেরদৌস এখন সবাইকে সেই ব্যাগ দেখিয়ে শুধুই কাঁদছে।

মা আকলিমার জানান, রাতে বিছানায় তাঁর পাশে শুয়ে সোনাবরু প্রায়ই জিজ্ঞেস করত, 'মা, আমরা এত গরিব কেন?' কখনো কখনো প্রশ্ন করত, 'মা, আমার বাবা নেই কেন?' সোনাবরুর ওড়না হাতে কেঁদে তিনি বলেন, 'আমার মাইয়ার কতার জবাব আমি দেতে পারি নায়। পারি নায় ওর লইগগা দুফারের ভাত রানতেও। ' গ্রামবাসীর হাহাকার: সানাবরুর স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন কালের কণ্ঠকে জানান, 'বিষয়টি একটি অপমৃত্যু হলেও একে ছোট হিসেবে দেখা উচিত নয়। কারণ সোনাবরুর মতো আমাদের গ্রামাঞ্চলে হাজার হাজার শিশু প্রতিনিয়ত চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়ছে। তাই এমন প্রবণতা যদি সেই সব শিশুর মাঝেও ছড়িয়ে পড়ে তবে তা হবে অনেক বেশি ভয়ংকর।

' গ্রামবাসী আলম সিকদার (৫০) বলেন, 'আমাগো রাজনৈতিক নেতারা গ্রামে আয় খালি ভোটের কালে। ভোট অইয়া গেলে আর কেউ গ্রামের খোঁজ লয় না। কেডা খাইয়া মরলে, আর কেডা না খাইয়া মরলে হ্যা দ্যাহনের সময় নাই হ্যাগো। ' বরগুনার তরুণ আইনজীবী হাসান তারেক পলাশ বলেন, 'এমন মর্মান্তিক একটি ঘটনায় বরগুনার সব রাজনৈতিক নেতার সোনাবরুর মায়ের পাশে এসে সমবেদনা জানানো উচিত ছিল। শুধু সমবেদনা নয়, তাঁদের উচিত বিষয়টি খতিয়ে দেখা।

যদি দারিদ্র্যের কারণেই সোনাবরু আত্মহত্যার আশ্রয় নেয় তবে বুঝতে হবে বরগুনায় আমাদের বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠনগুলো (এনজিও) ঠিকভাবে কাজ করছে না। তারা শুধু আমাদের দারিদ্র্যকে পুঁজি করে কিংবা সোনাবরুদের নাম ভাঙিয়ে বিদেশি দাতা সংস্থার কাছ থেকে শুধু টাকাই আনছে, যথাযথভাবে তা খরচ হচ্ছে না। ' অনেকেই হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন যে দেশে কিশোরী মেয়েরা ধর্ষিত হয় যে দেশে কিশোরী মেয়েরা ইভটিজিংয়ের স্বীকার হয়ে আত্মহত্যা করে সে দেশে এক সোনাবরুর আত্মহত্যা কোন ব্যাপার হলো?ভাতের জন্য আত্মহত্যা করেছে ধর্ষিত হয়ে যে আত্মহত্যা করেনি সেটাই সোনাবরুর সোভাগ্য। সোনাবরু ভাতের জন্য আত্মহত্যা করেছে কিন্তু এর আগে ইভটিজিংয়ের স্বীকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে কয়েকশ সোনাবরু যাদের কারো নাম আন্না বিশ্বাস কিংবা শাবনূর। কিশোরীর আত্মহত্যা আজ অন্য দশটা ঘটনার মতই সাধরণ একটি ঘটনা।

কয়েকদিন এই নিয়ে আমাদের বিবেক জেগে উঠবে কারো কারো। আবার কয়েকদিন পরই সব ঠিক হয়ে যাবে। যেখানে নিজের মা বাবা মরলে কয়েকবছর পর আর তেমন মনে পড়েনা সেখানে সোনাবরুতো আমাদের কেউ না। মরে যাকনা সোনাবরুরা আমাদের কি। আমরা পেট ভরে খাব।

আমার ভাইটি ,বোনটি কিংবা সন্তানটি না খেলে অস্থির হয়ে যাব । অনুযোগের সুরে বলব,বাচ্চাটাকে খাওয়াতে রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়। একই দেশে কোনো মা খাবার প্লেটে নিয়ে খাওয়ানোর জন্য রীতিমত যুদ্ধ করছে আবার কোনো বাবা- মা খাওয়ার যোগাড় করে দিতে না পারার ব্যর্থতার কারনে সন্তানের লাশ নিয়ে নির্বাক তাকিয়ে থাকে।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।