আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোনাবরু কে লেখা একটি চিঠিঃ আমাদের ক্ষমা কোরো না, আপু !

আমি চাইনা হতে কারো চোখের ও কাজল, আমি চাইনা হতে কারো মনের অনল । ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৮:২০ সোনাবরু, ছোট্ট আপু, আমি লজ্জ্বিত, হতাশ, ক্ষুদ্ধ... ক্ষুধার কষ্ট অনেক বেশী তাই না আপু? অবশ্যই কষ্টের। মৃত্যুর কষ্টের চেয়েও বেশী। তাই তো তুমি ক্ষুধার কষ্ট সইতে না পেরে চলে গিয়েছ বিধাতার কাছে। কারণ কেউ যে আর এগিয়ে আসেনি তোমার কষ্ট লাগবে।

সোনাবরু, এ লিখাটি যখন লিখছি তখন শিল্পী হায়দারের গান শুনছি আর চোখ দিয়ে কেন জানি কান্নার লোনা জল নেমে আসছে। আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া করিতে পারিনি চিৎকার বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার কত ব্যথা বুকে চাপালেই তাকে বলি আমি ধৈর্য নির্মমতা কতদূর হলে জাতি হবে নির্লজ্জ || আপু তুমি কি জান, পদ্মা সেতুর সমীক্ষার কথা বলে কত শত কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে? ঈদের আগে রাস্তা মেরামত করতে গিয়ে কত টাকা গায়েব করা হয়েছে? তুমি কি জান মন্ত্রী ও সচিবরা অভিজ্ঞতা অর্জনের কথা বলে বিদেশ ভ্রমনে গিয়ে কত টাকা খরচ করে? কখনো কি শুনেছ, হোটেল শেরাটনে দারিদ্র নির্মূলের কৌশল বিষয়ক সেমিনারে কত খরচ হয়? বলতে পার আপু, কতশত কোটি টাকা একেকবার সংসদ অধিবেশনে খরচ হয়? জান তুমি, এভাবে কতদিকে কত বিলিয়ন টাকা অযথা খরচ হয়, লুটপাট হয়? তুমি কি জান এই হাজার কোটি টাকার কিয়দংশ দিয়ে তোমার কত বেলা খাবার ব্যবস্থা করা যেত? সোনাবরু, কেন তোমাকে আমি এ প্রশ্ন গুলো করতে গেলাম? তুমি নিজেই তো তোমার মাকে প্রশ্ন করতে, মা, আমরা এত গরিব কেন? সবার বাবা আছে, আমাদের বাবা নেই কেন? ওই প্রশ্নের উত্তর তুমি পাওনি। পাওনি খেতে। তোমার মা চেষ্টা করেছিল, কিন্তু অভাবের কারণে পরপর দু'দিন দিতে পারেনি তোমার মুখে আহার। তোমার ছোট্ট শরীর তাই আর পারেনি ক্ষুধার কষ্ট সহ্য করতে।

পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার আনন্দ সেই কষ্টের কাছে ম্লান হয়ে গিয়েছে। তৈরি হয়েছে সমাজ ও জীবনের প্রতি এক অভিমান। সেই অভিমানের পর আত্মহত্যা করেই বুঝিয়ে দিয়েছ এই নষ্ট ও হৃদয়হীন সমাজের প্রতি তোমার ঘৃণা কত বেশী। এভাবেই হয়তো এই সমাজকে বুঝাতে চেয়েছ কত কষ্টে ছিল তুমি। বুঝাতে চেয়েছ ক্ষুধার কষ্ট মৃত্যুর কষ্টের চেয়েও বেশী।

কিন্তু এই নোংরা রাজনীতি, নিষ্টুর সমাজ কি তোমার সেই অভিমান, সেই কষ্ট বুঝার যোগ্যতা রাখে? কেউ কি বুঝার চেষ্ঠা করবে তোমার ভাইয়ের চোখে কিসের জল? কারণ অসম্ভব নিষ্ঠুর হৃদয়হীন সমাজে জন্মেছ তুমি। এরা সবসময় ব্যস্ত থাকে শুধু নিজেকে নিয়ে, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে নিজের ক্ষমতার পথ নিষ্কন্টক রাখতে। সেই ক্ষমতার লোভ ও দম্ভ ভূলিয়ে দিয়েছে তোমার মতো লক্ষ লক্ষ অসহায় শিশুর কথা। লোপ পেয়েছে মানবতা, দায়িত্বশীলতা, আদর্শ, ন্যায়নীতি, নৈতিকতা। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, লুণ্ঠন, অবিচার।

আপুরে, বিধাতা তোমাকে এমন এক দেশে পাঠিয়েছে, যে দেশের নেতা নেত্রী শান্তির জন্য নানা পুরস্কার পায়, জাতিসংঘে গিয়ে বিশ্ব শান্তির ফর্মূলা দেয়, কিন্তু তোমার মতো শিশুর ক্ষুধা লাঘবের জন্য কিছু করতে পারেনা। আরেকবার ক্ষমতায় আসার জন্য কত চিন্তা, কত কিছু করা হয় কিন্তু তোমার কষ্ট নির্মূলের জন্য কিছু করেনা। তাদের লোভের কাছে, স্বার্থপরতার কাছে, নিষ্ঠুরতার কাছে তোমার মতো শিশুর কষ্ট তুচ্ছ হয়ে যায়। তাই কবি আবদুল হাই সিকদারের মতো ঠিক একই আহবান জানাচ্ছি। আপু পারলে, বিধাতাকে বলবে, প্রভু, বাংলাদেশ আজ আর কোনো মানবিক ভূখণ্ড নয়।

ওখানে ১৬ কোটি লোক আছে, কিন্তু মানুষ নেই একজনও। এমন ভুবন রাখার আর কোনো প্রয়োজন আছে কি? এ কথা বলতে না পারলে অন্ততঃ বলবে, ওই দেশটাকে প্রভু রাজনীতিবিদ এবং বুদ্ধিজীবীদের হাত থেকে রক্ষা কর। আমার মতো আরও লাখ লাখ শিশু ওখানে প্রতিদিন না খেয়ে থাকে। ঘরে ঘরে স্তূপীকৃত হয়ে আছে জমাটবাঁধা কান্না। মানুষের দুঃখের পাশে দাঁড়ানোর কেউ আজ আর নেই ওদেশে।

ওখানকার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে আছে পাপে। প্রভু একটা কিছু কর.." লেখাটি একজন শ্রদ্ধেয় বড় ভাইয়ের নোট থেকে তুলে দেয়া। (আন-এডিটেড, আন-কাট) আমাদের বিবেক যেন আর জেগে জেগে ঘুমিয়ে না থাকে। সবার বিবেকের কাছে প্রশ্ন করার জন্যই পোস্টটার অবতারনা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।