আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাড়ে সাত হাজারের ভেলরি, আড়াই লাখের শফি সামি, আর দুই পয়সার আমরা....

আপনারা "শফি সামি"কে চিনেন? তিনি অসাধারণ এক নরাধোম! তিনি আবিস্খার করেছেন কি করে গাছের গোড়া কেটে গাছ বাচান জাই!!! নবেল পুরস্কার পাবার দবিদার এই ভদ্রলোক, আসুন তাকে আমরা চিনি, জানি এবং আর দশ'জন দেশী ভাইকে তার কথা জানাই। গল্পের শুরু'টা এই ভাবে.... এক বোকা মহিলা তারুণ্যে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এই দেশ ঘুরে গিয়েছিলেন ৬৯ সনে। তারপর বোকা মহিলাটি আবার এদেশে ফিরে এসেছিলেন ৭২ সালে। রক্তাক্ত পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের ফিজিওথেরাপি দিতে । কেউ তাকে ডেকে আনেনি।

তবু তিনি চলে এসেছিলেন। পাগলী আর ফিরে যাননি। ৭৯ সনে অনেক চেয়ে চিন্তে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিত্যক্ত গুদাম ঘরখানি পেলেন। ঝেড়েমুছে শুরু করলেন একটা ছোট,খুবই ছোট ফিজিওথেরাপির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সি.আর.পি।

তারপর সেই বোকা মেয়েটি তার সীমিত সাধ্যে একখান সাইকেল চেপে ঘুরতে লাগলেন দুয়ারে দুয়ারে। মাথা নিচু করলেন,হাত পাতলেন,অপমানিত হলেন,গঞ্জনা সইলেন,হতাশ হলেন তবু হাল ছাড়লেন না। নিজের জন্য নয়,সেই বোকা মানুষটি সব করলেন আমাদের জন্য। মেরুদন্ড ভেঙ্গে পড়ে থাকা কিশোরী,বাবার কাধে ভর করে চলা চলৎ শক্তিহীন তরুন,বাড়ি ফেরার পথে দূর্ঘটনায় পড়ে পঙ্গু হওয়া পরিবারের একমাত্র লোকটা...তাদের জন্য কেঁেদ ফিরতে লাগলেন ...। তারপর এখানে সেখানে ভাড়া বাড়ি খুজে খুজে হয়রান হলেন,তবু তার মানব সেবা শেষ হলো না।

এভাবেই একদিন মহীরুহ হলো তার সংগঠনটি। সি.আর.পি পরিনত হলো দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠানে যেখানে ঠাই হলো মেরুদন্ড ভাঙা অসহায় মানুষের,ক্রাচে ভর করে চলা,বুকে হেটে চলা,উবু হয়ে চলা,গড়িয়ে চলা অজস্র মানুষের। আমার দেশের মানুষের। চলার পথে পিছু ফিরে একদিন সেই পাগলী দেখলেন পাগলী মেয়ে থেকে তিনি পাগলী প্রৌড়াতে রূপান্তরিত হয়েছেন,কিন্তু জীবনের পথে হয়নি সংসার...। দুইটি মেয়েকে দত্তক নিলেন তিনি,পঙ্গুমেয়ে,পক্ষাঘাতগ্রস্ত মেয়ে।

আর সবার মতোই তাদেরকে কাজ শেখালেন তিনি,তারপর চাকরি দিলেন সি.আর.পিতে। এদেশে এন.জি.ও বলুন, কনসালটেন্সী ফার্ম বলুন আর যাই বলুন,সংগঠনের বড়ো কর্তার কিন্তু বেতনটা হয় ডলারে। টাকার অংকে সেই বেতন শুনে আমরা সাধারন মানুষ ভিমরি খাই। আমাদের কল্পনাতেও কোনদিন এতোটাকা ধরা দেয় না। এই বিদেশীনি পাগলি কতো বেতন নেন জানেন?সাড়ে সাত হাজার ! না ডলার নয়,টাকা!! মাত্র সাড়ে সাত হাজার টাকায় চলে তার সংসার।

বনানী গুলশানের যেকোন সাহেবের ড্রাইভারের বেতন থেকে দেড় হাজার টাকা কম! সেই পাগলী মহিলার নাম ভেলরি এ.টেইলর। অন্যছবি: আমাদের এক সাবেক সচিব নামের আমলা আছেন। তিনি তার অভিজ্ঞতা দেবার নাম করে ঢুকে গেলেন সি.আর.পিতে। বিদেশী দাতাদের সাথে তার আলাদা খাতির। হবেই না বা কেন,তিনি আমলা ছিলেন বটে।

সেই দাতাদের কাছে তার অভিজ্ঞতার ঝুলি বিছিয়ে দিলেন তিনি। সি.আর.পিকে তিনি এবার নাকি গুছিয়ে দেবেন। শুধুই সমাজ সেবা,আর কিছু নয়। তাই তিনি নাম কা ওয়াস্তে একটা বেতন নিবেন সাব্যস্ত করলেন। কতো জানেন? মাসে আড়াই লক্ষটাকা!! প্রতিবাদ করলেন ভেলরি।

মানব সেবার সংগঠনে যদি একজনই আড়াইলক্ষ টাকা বেতন নেন,তাহলে প্রতিষ্ঠান চলবে কেমনে?(আর এখানেই কি তিনি ভুলটা করলেন। ) টাকা রোজগারের ব্যবস্থাও করে ফেললেন মান্যবর আমলা। রোগীরা টাকা দেবে। যে সংগঠনটি ২৫ বছর ধরে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে,সেই সংগঠনে এখন উচ্চ মূল্যে চিকিৎসা বিক্রী হচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে,এপোলো আর বামরুনগ্রাদের শাখা খুলে দিব্যি ব্যবসা করে যাচ্ছে সবাই,আমলা সাহেব করলে দোষ? দেশের পক্ষাঘাতগ্রস্থ গরীব মানুষের শেষ আশ্রয় স্থল,এশিয়ার সাড়া জাগানো একটি প্রতিষ্ঠান ক্রমেই পরিনত হচ্ছে বড়োলোকের ক্লিনিকে।

সবকিছু বদলাচ্ছে,দ্রুত বদলাচ্ছে: ঘটনা ঘঠছে খুব দ্রুত। ইতিমধ্যেই সমন্বয়কের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে ভেলরিকে। তিনি এখন আয়ব্যয়ের হিসাব দেখতে পারবেন না। এক অকস্মাত চিঠি দিয়ে প্রতিষ্ঠানের চেকবুক থেকে স্বাক্ষরের ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়েছে ভেলরির। ইয়ার বুকে রাজ্যের যতো হোমড়া চোমড়া আর আমলাদের বাণী ছাপা হয়েছে,ছবি ছাপা হয়েছে,কিন্তু ভেলরির নামগন্ধও নেই সেখানে।

একের পর এক দ্রুত বিভিন্ন সেকশনে বদলি করে হয়রানি করা হচ্ছে ভেলরির পালিতা পক্ষাঘাতগ্রস্থ অসহায় মেয়েটিকে। ভেলরিকে করা হয়েছে কর্মহীন, ক্ষমতা হীন। নিজের প্রতিষ্ঠানে আজ তিনি নিজেই শোপিস। তিনি নাকি দূর্ণীতি করেছেন? কিন্তু তন্ন তন্ন করেও একটা দূর্ণীতির প্রমান বের করতে পারছেন না আমলা মহাশয়। তিনি নাকি ম্যনেজমেন্ট বুঝেন না।

পরিত্যক্ত গুদাম থেকে ৪০০ বেডের হাসপাতাল একাই গড়ে তুললেন যে নারী,তাকে এখন শিখতে হবে ম্যানেজমেন্ট? হাহ্! এই আমলা মহোদয়ের নামের আগে আমি শুওরের বাচ্চা শব্দটি যোগ করে শুওরের অপমান করতে চাই না। আমি শুধু তার নামটি বলে দিতে চাই। তার নাম শফি সামি। আমরা যারা দুই পয়সার মানুষ: জনাব শফি সামি,জানি না এই লেখাটি আপনার চোখে পড়বে কি না। তবু আমি আপনাকেই বলছি।

আমি খুব সাধারন একজন মানুষ,খুবই সাধারন। আমার সাধ্যের বড়ো অভাব। তবু আমি আমার সাধ্যের সবটুকু উজাড় করে আপনাকে প্রতিরোধের চেষ্টা করব। আমার জীবদ্দশায় এতোবড়ো একটা অন্যায় আমি মুখ বুজে মেনে নেব না। আমি আপাতত:পাগলের মতো ইমেইল করে যাবো সবগুলো শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানে।

আমি তাদেরকে বিনীতভাবে অনুরোধ করব,এতো বড়ো একটা অন্যায়ের প্রতিকারে তারা যেন এগিয়ে আসেন। এই কলংকে বোঝা যেন আমাদের ঘাড়ে না চাপে। আমি এই মূহুর্তে ইমেইল করব সেনা প্রধানের কাছে,ইমেইল করব তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের কাছে,ইমেইল করব বৃটিশ আর আমেরিকান রাষ্ট্রদূতদের কাছে,ইমেইল করব এমনেস্টির কাছে,টি.আই.বির কাছে,ইমেইল করব সি.আর.পির যে অগনিত দাতা আছেন দেশের বাইরে সেই সব দাতাদের সংগঠন গুলোর কাছে। বিশেষ করে ইংল্যান্ডের মূল দাতা প্রতিষ্ঠান আর জার্মানির দাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে। ইংল্যান্ড আর জার্মানির এই দুইটি প্রতিষ্ঠানকে আমি ফোন করেও অনুরোধ করবো,সত্য জিনিষটা বুঝতে।

আমি এই আবেদন ছড়িয়ে দেব আমার বন্ধুদের মাঝে,তারা ছড়িয়ে দেবে তাদের গ্র“প মেইলে। এভাবেই চলতে থাকবে। এক থেকে দুই,শত থেকে সহস্র,লক্ষ থেকে নিযুত ই-মেইল,ফ্যাক্স আর ফোনে আমি কাউকে শান্ত থাকতে দেব না। অগনিত মানুষ ফোন করবে লন্ডনের আর জার্মানির সেই প্রতিষ্ঠান দুটিতে। ভেলরি আমাদেরকে দিয়েছেন তার জীবনের ৩৬টা বছর।

এখন আমাদের দেবার পালা। দিনে আমি কমপক্ষে ৩৬ মিনিট সময় দেব এই কাজে..সেটাই একসময় বিশাল হয়ে উঠবে। আমি হয়তো আরো অনেক কিছুই করব,অথবা করতে ব্যর্থ হবো। তবু সফি সামি আপনি জেনে নিন,আমার মতো দুই পয়সার মানুষের হয়তো একা কিছু করার ক্ষমতা নেই,কিন্তু দুই পয়সা দুই পয়সা যূথবদ্ধ হয়েই আমি থেকে আমরা হবো,আর আপনার আড়াই লক্ষটাকার ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যাবো। আপনি সেটা দেখে যাবেন ইনশাআল্লাহ! আমার কথাঃ লেখাটা পড়ে অনেক খারাপ লাগল।

আমাদের সাধ্য কম তাতে কিছু আসে যায় না, আমরা এই ঘটনাটি আমাদের ওয়ালে পোস্ট করে অন্তত কয়েকজন বন্ধুকে তো ঘটনাটা শেয়ার করতে পারি - এটাই বা কম কিসে। হয়তো কাজের কাজ কিছু হবে না, তাতে কিছু এসে যায় না। তবুও তো শফি সামি নামে এক এক দানবের নামে কেও কেও মন থেকে একটু ঘৃনার অভিশাপ দেবে! আর হয়ত সেই মহীয়সি নারী ভেলরি এ.টেইলর এর জন্য মনের ভেতর থেকে একটু দোয়া করবে, এটাই বা কম কিসে। ঘৃনা অর্জন করা খুবই সহজ কিন্তু লাখো মানুষের দোয়া আর শুভকামনা অর্জন শুধুমাত্র ভাগ্যবান বা ভাগ্যবতীদের ভগ্যেই জোটে। সচেতন প্রত্যেকটা মানুষের উচিত হবে এই লেখাটি তার বন্ধু বান্ধবদের সাথে শেয়ার করা।

(এই লেখাটি আমার নয়। জনৈক Asaad Shafin নামে এক ভাইয়ের লেখা এবং একটি সত্যি ঘটনা যা সবাইকে জানানোর জন্য আমার এই উদ্যোগ। সাড়ে সাত হাজারের ভেলরি, আড়াই লাখের শফি সামি, আর দুই পয়সার আমরা....)  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.