আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভূমিকম্পের দেবতা, ঘুম যে আসে না!

সুমন রহমানের ফেসবুক নোট থেকে শেয়ার করা কারো অজানা নয় যে, অচিরেই বাংলাদেশে একটা বড়মাত্রার ভূমিকম্প হবে বলে ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন। এর পক্ষে ঐতিহাসিক যুক্তি হল, প্রতি একশ বছরে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় একটা বড় রকমের ভূমিকম্প হতে দেখা গেছে। ভূতাত্ত্বিক যুক্তিটি হচ্ছে, টাঙাইল অঞ্চলে ভূ-অভ্যন্তরে একটা ফাটল ক্রমে বড় হচ্ছে। শুনলে শরীর হিম হয়ে যায়। কী মহা দক্ষযজ্ঞ চলছে ভূমির ভেতরে? ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের যে জীবন, তাদের প্রতিদিনের সুখদুঃখ আর ভবিষ্যত সাজানোর যেসব স্বপ্ন, তার অনেক নিচে, বিজ্ঞান যেখানে পৌঁছায় না, যুক্তি যেখানে নাচার, ধর্ম যেখানে অবলা, ঈশ্বর যেখানে নিয়তির হাতে বন্দী, সেখানে চলছে এক সভ্যতার বিরূদ্ধে বিশাল রণপ্রস্তুতি।

জানান দেয়ার জন্য মাঝে মাঝে ছোট ছোট স্কেলে ভূমি নড়ে ওঠে। রিখটারে তার মাত্রা বেশি হয় না, কিন্তু তাতেই বিজ্ঞান বিব্রত। এক বিজ্ঞান বলে, ছোট ছোট ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস, অন্য বিজ্ঞান বলে ছোট ছোট ভূমিকম্প ভাল, তাতে বড় ভূমিকম্পের পেসিফিকেশন হয়ে যায়। এই পরস্পরবিরোধী বিবৃতির মাঝে বরাভয় খোঁজার জায়গাটা কোথায়? ঘুম আসে না তাই গুগল খুলে বসি। দেখি সিচুয়ানের লোকদের রক্তমাখা চেহারা, ভেঙে পড়া দালানগুলোর ছবি।

সিচুয়ান ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা, নিয়মিত ভূমিকম্প হয়েছে এখানে বহুবছর। ছবি দেখে যতদূর বোঝা যায়, ঢাকার মত ঘনবসতি সে নয়। সেখানে ভূমিকম্পের পর গোটা চীনের যাবতীয় রিসোর্স একত্র করেও অর্ধেক রেসকিউ করা সম্ভব হয় নাই। শুনে শরীর হিম হয়ে আসে। ঢাকার কথা ভাবি।

সাভারের পলাশবাড়িতে গার্মেন্টস ভবন ধ্বসে পড়ার ঘটনা। মাত্র একটা ভবন ধ্বসে গেল, হপ্তাব্যাপী তোড়জোড় করে কিছু লোককে জীবিত এবং মৃত বের করে উদ্ধার অভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণা করতে হল। এক ভূমি বিশেষজ্ঞকে বলতে শুনেছি ঢাকায় নাকি ভূমিকম্প হলে ভূমিধ্বস হবে। অর্থাৎ দালানকোঠা মাটি গিলে খাবে। নরম নদীভরাট ভূমির ওপর অবিবেচকের মত গজিয়ে উঠেছে শহর, ফলে তাকে মাশুল দিতে হবে এভাবেই।

টিভির পর্দায় হাসি-হাসি বিশেষজ্ঞ, অবলীলায় বলেন, সিচুয়াল-স্কেলে নয় বরং একটা মাঝারি মাত্রার ভূকম্পনই ঢাকা শহরকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার জন্য যথেষ্ট। আর সেরকম কিছু হলে ঢাকাকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা ছাড়া কিইবা করতে পারে সরকার। একটা ভবন থেকে যেখানে রেসকিউ সম্ভব হয় না, সেখানে একটা শহরের রেসকিউ! এসব ভাবি আর দেখি বস্তিগুলো, নদীভরাট করে বানানো আবাসিক প্রকল্পগুলো, যেনতেনভাবে উপরের দিকে উঠতে থাকা বহুতল ভবনগুলো। ভিসুভিয়াস ফুঁসে উঠবার আগের পম্পেই-এর চেহারা খুঁজি মনে মনে। পা টলমল করে ওঠে, রেলিং ধরে ফুটপাতে বসে পড়ার আগে চোখে ভেসে ওঠে প্রিয়জনদের ক্রন্দন আর আহাজারিসমেত লন্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে প্রিয় শহরটি।

কিন্তু বাস্তবে তেমন কিছুই ঘটে না। ছোট ছোট ভূকম্পনের পর শহরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। আমার অপ্রতিরোধ্য উদ্বেগের ওপর হেসে দেয় বন্ধুরা। বলে, এর চে ইমিডিয়েট অনেক কিছু আছে ভাবার। রিকশাঅলা মজিবর বলে, ভাই পেটেভাতেরই হিসাব মিলে না, ভূমিকম্পের হিসাব লমু কেমনে? কিন্তু হিসাব কে দেয়? হাসে ভূমিকম্পের দেবতা।

গুগল করতে করতে সিচুয়ান এর একটা ছবিতে চোখ আটকে যায়। ভূমিকম্পের দুদিন আগে তোলা একটি ছবি। শ'য়ে শ'য়ে ব্যাঙ এসে হাইওয়ের উপর আশ্রয় নিয়েছে। এই ঘটনাকে পাত্তা দেয় নি কেউ। দুদিন পর যখন সিচুয়ান লন্ডভন্ড হল, তখন নতুন করে ভাবনা শুরু হয়েছে এ নিয়ে।

এক পত্রিকা লিখেছে, নিউ আর্থকোয়েক এলার্ম! কিন্তু নতুন তো নয়, আবহমানকাল ধরেই লোকমানস এভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস পেয়ে আসছে। বিজ্ঞান যখন আরো নিশ্চিত পূর্বাভাসের পথ করে দিতে লাগল, তখন আমরা ঐ সব লোকায়ত জ্ঞানকে আর মনে রাখার প্রয়োজন বোধ করি নি। কিন্তু আজ, আসন্ন ভূকম্পনের মুখে, বিশেষজ্ঞরা যখন নিজেদের পরস্পরবিরোধিতা নিয়ে ব্যাপৃত, তখন আমার কাছে এই ছবিখানা যেন উজ্জ্বল উদ্ধার হয়ে আসে। আমি ক্রমে ক্রমে ভূ-অভ্যন্তরের প্রাণিদের জীবনাচরণের দিকে আরো বেশি বেশি মনোযোগী হবো, ভাবি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।