আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাপানে ভূমিকম্পের নেপথ্যে

বাঙালিত্ব

জাপানে প্রায়শই ভূমিকম্প হয়। শুক্রবার ১১ মার্চ তারিখে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্প এবং এরপর দেশটির উত্তর-পূর্ব উপকূলে আছড়ে পড়া সুনামি দেশটিকে এক ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে । রিখটার স্কেলে ৮ দশমিক ৯ মাত্রার এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল রাজধানী টোকিও থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে, সমুদ্রের ৩২ কিলোমিটার গভীরে। সেই ভূমিকম্পের প্রভাবে ৩০ থেকে ৩৩ ফুট উচ্চতার ঢেউ আছড়ে পড়েছে উপকূলে। এই দুর্যোগের পর আবার পারমাণবিক কেন্দ্রে বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটেছে।

জাপানে এখন ছড়িয়ে পড়ছে তেজস্ক্রিয়তা। এই শক্তিশালী ভূমিকম্প এবং সুনামির কারণ হিসেবে গবেষকরা অনেক তত্ত্বই দাঁড় করিয়েছেন। কোনো কোনো গবেষকদের মতে, চাঁদ পৃথিবীর নিকটতম অবস্থানে রয়েছে বলেই এই দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করেছে সংবাদমাধ্যম লাইভসায়েন্স । জাপানের অবস্থানই ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে জাপান বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার ভেতরে অবস্থিত।

এই জায়গাটি প্যাসিফিক রিং অফ ফায়ার নামে পরিচিত, প্রশান্ত মহাসাগরের এই জায়গাটির নীচে শিলার প্লেটগুলো একটি অপরটির উপরে উঠে আছে। টোকিও থেকে ২৩১ মাইল উত্তরপূর্বে এবং সেন্ডই থেকে ৮০ মাইল দূরে সমুদ্রের নিচে ১৫.২ গভীরে এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি। এখানে রয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের নীচের প্যাসিফিক প্লেট। এটি পশ্চিম দিক হতে সরে এসে জাপানের পূর্ব উপকূলের নিচে চাপ সৃষ্টি করছে। বছরে এই প্লেটটি গড়ে ৩.৫ ইঞ্চি সরে আসছে।

কিন্তু ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন-মেডিসনের ভূ-পদার্থবিদ কিথ সভার ডরুপের মতে, প্লেটটি অবিরাম সরে আসে না। প্লেটগুলো একে ওপরের সঙ্গে লেগে থাকার কারণে এদের স্বাভাবিক চলন কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থাকে। কিন্তু চাপ বাড়তে থাকে। তাই এক পর্যায়ে যখন প্লেটটি চাপ সহ্য করতে না পেরে বেশ খানিকটা সরে যায় তখনি ভূমিকম্পের মত ঘটনা ঘটে। বিশ্বের অন্যান্য ভূমিকম্পের তুলনায় এর অবস্থান রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিলো ৮.৯।

আমেরিকার ভূতাত্ত্বিক সার্ভে অনুসারে জাপানের ইতিহাসে এটাই সবচাইতে বড় ধরনের ভূমিকম্প এবং বিশ শতকের পর সারা বিশ্বে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পগুলোর মধ্যে পঞ্চম বৃহত্তম। সাগরতলে ভূমিকম্প থেকেই সুনামির জন্ম। ভূমিকম্পের কারণে সমুদ্রের পানি আলোড়িত হয়ে এর গতি ও উচ্চতা বাড়ে। এই গতির কারণে একে একে বড় ধরনের ঢেউয়ের জন্ম হতে থাকে। একেই বলা হয় সুনামি।

সাধারণ ঝড়ে তৈরি ঢেউয়ের তুলনায় সুনামির ঢেউ হয় অনেক বড়ো ও বিধ্বংসী ক্ষমতাসম্পন্ন। সুনামির ফলে সৃষ্ট ঢেউ জাপানের পূর্ব উপকূল ছাড়িয়ে উত্তর আমেরিকাসহ পশ্চিমের উপকূলের দিকে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ঠিক একই জায়গাতে ১৯৩৩ ও ১৮৯৬ সালেও বড় ধরনের সুনামি আঘাত এনেছিল ছিলো বলে জানিয়েছেন অরিগন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হ্যারি ইয়ে। তার মতে সুনামির ঢেউগুলো খানিকটা আলাদা ধরনের, এর সঙ্গে সাইক্লোন বা জোয়ারের লম্বা স্রোতের কোনো মিল নেই। ধারণা করা হয় এই ধরনের ঢেউ ৩০ ফুটের চাইতে উঁচু হয়।

ভূমিকম্পের প্রকৃতি সুনামির কারণ গবেষকদের মতে, ভূমিকম্পের সময় সুনামির কারণ হতে পারে ভূমিকম্পের শক্তি, ঝাঁকির দিক এবং সাগর তলের গঠন। গবেষকরা জানিয়েছেন, ৮.৯ মাত্রার ভূমিকম্প সুনামি তৈরির জন্য যথেষ্ট। এর আগে ২০১০ সালে ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পই সুনামি তৈরি করেছিলো যা ইন্দোনেশিয়ায় আঘাত হানে। আমেরিকা জিওলজিক্যাল সার্ভের বিশেষজ্ঞ ডন ব্ল্যাকমেন এর মতে, ৭.৫ বা ৭ মাত্রার নিচের ভূমিকম্প হতে সুনামি তৈরি হতে পারে না। ভূমিকম্পের কারণে সমুদ্রতল উপরের দিকে কাঁপলে স্রোতের সৃষ্টি হয়।

আর সাগর তলের গঠনের উপর নির্ভর করে স্রোত কত উঁচু হবে আর কত দূরে যেতে পারবে। জাপানের ভূমিকম্পের প্রভাব অক্ষরেখায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ জানিয়েছে, শুক্রবারের ভূমিকম্পে জাপান প্রায় আট ফুট সরে গেছে। এদিকে ইতালির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব জিওফিজিক্স অ্যান্ড ভলকানোলজি-এর গবেষকরা জানিয়েছেন,ভূমিকম্পে পৃথিবীর অক্ষরেখা সরেছে প্রায় ১০ ইঞ্চি। এটি ১৪০ বছরের মধ্যে জাপানে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। এতে দেশটিতে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

পৃথিবীর অক্ষরেখা সরে যাওয়ায় কয়েক শতক পর একদিনের দৈর্ঘ্য এক সেকেন্ড কমতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর ভূতত্ত¡বিদ্যার অধ্যাপক অ্যান্ড্রু মিয়াল। উল্লেখ্য, পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরু সংযোগকারী কল্পিত সরলরেখাটিকে বলা হয় পৃথিবীর অক্ষরেখা। অ্যান্ড্রু মিয়াল জানিয়েছেন, ‘দিনের দৈর্ঘ্যে খুব সামান্যই প্রভাব ফেলবে এটা। আর পৃথিবীর অক্ষরেখা যতখানি সরলে ঋতুচক্রে প্রভাব পড়তে পারে এ পরিবর্তন তেমন নয়। ’ বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকম/সুমন/মিন্টু/এইচবি/এইচআর/মার্চ১৩/১১



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।