আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নতুন সম্প্রচার আইন ও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া।।

তুমি জেনেছিলে মানুষে মানুষে হাত ছুঁয়ে বলে বন্ধু; তুমি জেনেছিলে মানুষে মানুষে মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়, হাসি বিনিময় করে চলে যায় উত্তরে দক্ষিণে; তুমি যেই এসে দাঁড়ালে - কেউ চিনলো না, কেউ দেখলো না; সবাই সবার অচেনা। এই নোটটিকে একটি সংকলন বলতে পারেন। এই নোটটি শুধুমাত্রই একটি তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া যা আমার ভালোলাগার মানুষগুলোর সাথে শেয়ার করতে আমি উদগ্রীব। এই নোটটিতে উল্লিখিত বিষয়বস্তুর প্রতিটি পয়েন্ট একটি একটি সুদীর্ঘ নোটের সারস্বরূপ। তবে তার আগে আসুন আমরা ঘুরে আসি দুটো লিঙ্কে : উন্মোচন ডেইলি স্টার কিছু অংশ নিচে উল্লেখ করা হল :: "সম্প্রচার আইন, ২০১১" এর চৌদ্দটি ধারা - ১. কোনো টেলিভিশন চ্যানেল বা সম্প্রচার মাধ্যম সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে প্রচার চালাতে পারবে না।

২. বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ায় এমন কোনো টক শো প্রচার করা যাবে না। ৩. জাতীয় আদর্শ বা জাতীয় নেতাদের সমালোচনা করা যাবে না। ৪. কোনো অনুষ্ঠানে জাতির জনকের সমালোচনা করা যাবে না। ৫. কোনো অনুষ্ঠানে কোনো ব্যক্তির সমালোচনা করা যাবে না। ৬. জাতীয় আদর্শ ও লক্ষ্যের সমালোচনা করা যাবে না।

৭. সামরিক বা সরকারী কোনো তথ্য ফাস করা যাবে না। ৮. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়, এমন কোনো তথ্য প্রচার করা যাবে না। ৯. বন্ধুপ্রতিম কোনো রাষ্ট্রের সমালোচনা করা যাবে না। ১০. নারী পাচার, পতিতাবৃত্তি, ধর্ষণ ইত্যাদি বিষয়ে অনুষ্ঠান বা ইত্যাদি বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করা যাবে না। ১১. চুমুর দৃশ্য প্রচার করা যাবে না।

১২. বিদ্রোহ বা প্রতিবাদের কোনো খবর বা অনুষ্ঠান প্রচার করা যাবে না। ১৩. অপরাধীদের কর্মকাণ্ড নিয়ে কোনো অনুষ্ঠান প্রচার করা যাবে না। ১৪. রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ, সরকারী প্রেস নোটস, বিজ্ঞপ্তি এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানগুলো প্রচার করতে বেসরকারী সম্প্রচার মাধ্যমগুলো বাধ্য থাকবে। এর পাশাপাশি আরও একটি পয়েন্ট আছে- হিন্দু,বৌদ্ধ,খ্রিষ্টান সহ সংখ্যালঘু(!) জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় কোন প্রচারণামূলক অনুষ্টান (ক্রিসমাস,বৌদ্ধ পূর্ণিমা,পূজা ইত্যাদি নিয়ে অনুষ্টান ) প্রচারের আগে তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগবে! এবার পাঠকদের একটি প্রশ্ন করি। আমরা কোন দোজখে বাস করছি বলতে পারেন??? ১ --- গণমাধ্যমে রাজনৈতিক প্রচারণা নিষিদ্ধ।

অবাক কাণ্ড! 'আওয়ামী সামরিক পেটিবুর্জোয়া মুসলিম জাতীয়তাবাদী লীগ'- শোষণের এই কান্ডারীরা শোষণ করেই চলবে আর বিকল্প উত্থান থেমে থাকবে? এতোটা ছেলেমানুষি চিন্তার কোন মানে হয় না। আইন পাশ করে প্রচারণা নিষিদ্ধ করুন ঠিক আছে- কিন্তু ভুলে যাবেন না laws are made to be broken. ২ --- বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ায় এমন টক শো বন্ধ। বিভ্রান্তিকর তথ্য বলতে আমাদের সরকারব্যবস্থা কি বোঝায়? আদতে বিভ্রান্তিকর তথ্য বলতে এরূপ হতে পারে- যে তথ্য জাতীয় স্বার্থ, সাধারণের স্বার্থ পরিপন্থী। কিন্তু আমাদের সঙেরা সঙ(!)সদে সঙপনা করবে, তেলগ্যাস বিদেশীদের কাছে মাজদা-সুজুকির বিনিময়ে বেঁচবে অথবা বলে চলবে- গরিবদের উচ্চশিক্ষার দরকার নাই! আর এর বিরোধিতা করলেই সেটা হবে 'বিভ্রান্তিকর তথ্য' !!! যাহাই করুন না কেন দালালরা- বিভ্রান্তি ছড়াবোই। ।

৩ --- এই পয়েন্টা সবথেকে মজার খোরাক। জাতীয় নেতারা কি মানুষ নন? নাকি আল্লাহ-ঈশ্বর-god? যদি মানুষই হন তো তাহলে তারা সমালোচনার ঊর্ধ্বে কেন? একজন মানুষ দেশের জন্য অনেক কিছুই করতে পারেন, তিনি শ্রদ্ধেয়ও হতে পারেন, হতেপারেন ঘৃণিতও। তার অবদান অস্বীকার করার যেমন উপায় নেই, ঠিক তেমনি তার কুকাজগুলোও সমালোচনার উর্ধ্বে নয়। মোদ্দা কথা, রক্তমাংসের একজন মানুষ সমালোচনার যোগ্য। বর্তমান গণতান্ত্রিক(!) দলগুলো যদি সেটা মেনে নিতে না পারেন তাহলে এটা এদের ব্যর্থতা।

আর যদি জাতীয় নেতারা এলিয়েন বা ভগবান হন তাহলে তাদের মঙ্গলে পাঠাইয়া দেন! ৪ ও ৫ --- তিন নম্বর দিয়ে ঠেকা দিছে বাকি সামরিক সাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদী পেটিবুর্জোয়া দলগুলোরে আর এই পয়েন্ট দুইটা দিয়া যথাক্রমে নিজেদের ও ইউনুস টাইপ সুশীলদের খুঁটি তৈয়ার করছে বোধ হয় !!! ৬ --- জাতীয় আদর্শ ও লক্ষ্যের সমালোচনা করা যাবে না। সংবিধানে বুলিসর্বস্ব জাতীয় আদর্শের বিপরীতে সরকার যখন সাধারণের স্বার্থবিরোধী রাষ্ট্র পরিচালনা করে, তখন তার আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা সময়ের দাবী, জনগণের দাবী। একটি রাষ্ট্রকে যখন ব্যবসায়ী আর গোঁড়ামির রাষ্ট্রে পরিণত করার পাঁয়তাড়া করা হয় তখন তার সমালোচনাই শুধু না, আমরা লাঠি হাতে ঘর ছাড়তে প্রস্তুত। ৭ --- সামরিক বা সরকারি তথ্য ফাঁস করা যাবে না !!! একবার চিন্তা করুন সরকারব্যবস্থা কতটা শঙ্কিত এখন? ফাঁস করার মতো হাজারো কারচুপির তথ্য সামলাতে এখন শেষমেশ আইন প্রণয়ণ। নিজেদের দুর্নীতির পাহাড় দেইখ্খ্যা হয়তো নিজেরাই টাসকি খাইছে।

৮ --- আইন ও শৃঙ্খলা- এই বিষয়দুটো কি আমাদের দেশে exist করে? এটা ভাববার বিষয়। ভেবে শুনে দেখে পরে পোস্ট দিতে হবে! কিন্তু কথা হল, কানসাট, ফুলবাড়ীতে সাধারণের উপর, জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় আন্দোলনকারীদের উপর বর্বর পুলিশি অত্যাচার, লিমনের মতো হত্যাকাণ্ড, সরকারি সন্ত্রাসীদের তত্ত্বাবধায়নে একের পর এক ক্রসফায়ার- এগুলোর সমালোচনা ও বিশ্লেষণ যদি অবনমিত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একটু হলেও উন্নত করে, তাহলে সমালোচনা ও বিশ্লেষণ হোক। ঠেকাবে কে? ৯ --- বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র কে ??? ভারত মার্কিন দখলদারিত্বকে কিভাবে বন্ধু বলা যায়? ওহ হো! ভুলেই গেছিলাম, বুর্জোয়া শাষকগোষ্ঠী আর সাম্রাজ্যবাদী থাবার গাঁটবাধাকে তো বন্ধুত্বই বলা চলে! কিন্তু সাধারণের শোষণের সাথে সাধারণের স্বার্থবিরোধী এই বন্ধুত্বের আপোষ কখনোই হবে না। ১০ --- এই সরকার নারীনীতি প্রণয়ণ করে যে প্রহসন করেছে তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ। নারী ও শিশু পাচার, ধর্ষণ, ইভটিজিং এসবের তদন্তমূলক প্রতিবেদন সাধারণের সম্মুখে আনতে সরকার ভয় পাচ্ছে কেন ??? তাহলে কি ধরে নিবো এর পিছনে সরকারি মদদ অনেকটাই বিদ্যমান, নাকি পুরোটাই? অবশ্য পরিমল জয়ধরেরা সরকারের ছত্রছায়াতে থাকেন তার প্রমাণ তারা আগেই দিয়েছেন।

১২ --- বিদ্রোহ বা প্রতিবাদের কোন খবর প্রকাশযোগ্য না !!! অর্থাৎ রাষ্ট্র নির্বিঘ্নে শোষণের প্লাটফর্ম চাচ্ছে !!! বামরাজনীতির স্রোত, সাধারণের সচেতনতা আর বিদ্রোহের দাবানলে পুঁজিবাদী স্বার্থরক্ষাকারীদের হাঁটু কাঁপছে। শুধু কাঁপলে হবে না, ভেঙে গুড়িয়ে অত:পর স্বস্তি। । ১৩ ---আবারো তদন্তমূলক প্রতিবেদনে নিষেধাজ্ঞা। এরা অপরাধীর আড়ালে বোয়াল মাছদের আড়াল করতেই বেশি আগ্রহী।

। ব্যবসায়ী আর অপরাধীর রাষ্ট্রব্যবস্থায় আমজনতা শোষিত না হয়ে যাবে কই ??? ১৪ --- জাতীয় স্বার্থ, বিদ্রোহ আর সাধারণের খবর প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর এই পয়েন্ট প্রমাণ করে, সরকার তার স্তুতি শুনতে চায়। দেবতাদের স্তুতি করে যেমন খুশি রাখতে হয় ঠিক সেভাবে জন্মদিন, মৃত্যুদিন, এবং নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সংবাদ প্রচার করতে তেনারা বড়ই আগ্রহী। আর সর্বশেষ পয়েন্ট আবারো চোখে আঙুল দিয়ে প্রমাণ করলো, এটি একটি সাম্প্রদায়িক দেশ। এই পয়েন্ট রেখে দেয়ার মোদ্দা কথা হল, ধর্মান্ধ মৌলবাদী দলগুলোকে হাতে রাখা।

মানুষের সেন্টিমেন্ট ধর্মকে ব্যবহার করে আবারো মানুষকে বিচ্ছিন্ন করা, একাংশের মধ্যে ধর্মাভিমান গড়ে তুলে বৈষম্য ও নির্যাতনের পথ সুপ্রশস্ত করা। । সাম্প্রদায়িকতার বীজ :: তথাকথিত অসাম্প্রদায়িকতার লেবাশ ও আমাদের মৌনতা। এতগুলো কথা হয়তো useless. কিন্তু প্রকাশ না করেও পারছিলাম না। হয়তোবা এই সম্প্রচার আইনের আওতায় এই নোট ban হবার যোগ্য! আপনারা যে কমেন্ট করবেন, পরবর্তীতে যে পোস্ট করবেন সেগুলোও।

এই না হলে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নগ্ন ফ্যাসিবাদী রূপ। এখন থেকে একজন ব্যক্তির কর্মকাণ্ডের সমালোচনাও আইনের কোটায় পড়বে! ধর্ষণ, পতিতাবৃত্তি, নারীপাচার, অপরাধীদের নিয়ে কোন প্রতিবেদন flash করা যাবে না! কেন? সরকারদলীয় বিরোধীদলীয় স্বার্থই তাহলে কি এর সাথে জড়িত?! দেখা যাক, মুক্তিকামী দলের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী সেন্টিমেন্টের অবস্থান কোথায় গিয়ে ঠেকে?! বোধহয় এই ইস্যুতে আওয়ামী সামরিক পেটিবুর্জোয়াধীন মুসলিম জাতীয়তাবাদী লীগ (আসাপেমুজালী) পিঠে পিঠ রেখে জনতার বিরুদ্ধে লড়বে। পরিশেষে এতটুকুই বলবো, সাধারণের প্রতিবাদের ঠেলায় বুর্জোয়ারা যত তাদের মুখোশ খুলতে বাধ্য হবে, ততই বিজয় সাধারণের সন্নিকটে এসে কড়া নাড়বে। এত মেঘের মাঝেও তাই সূর্যের আবছায়া দেখতে পাচ্ছি। আপনারা পাচ্ছেন না ?! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.