আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোনালী দিনের আহ্বান

blog_id: 85969 বেশ এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে। আকাশ পরিষ্কার। বাতাসে বৃষ্টির ছোয়া আর সোদা মাটির গন্ধ। শোভা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। দো-তলার এই বারান্দায় দাঁড়ালে অনেক দূর পর্যন্ত চোখ চলে যায়।

বড় রাস্তার পাশে স্কুল। ¯কুলের মাঠ ছুয়ে দিগন্তে মিশেছে রংধনুর রং-এর ছটা। শোভার আজ বেশ ভাল লাগছে। বুক ভরে সে ঘ্রান নেয়। বৃষ্টির ঘ্রান।

বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসে সে। রহিমের মা চা দিয়ে যায়। চা-এ চুমুক দেয় শোভা। বাসায় প্রাণী বলতে তারা তিনজন। মিসেস জামিলা বেগম, শোভা আর টুকু সোনা।

শোভার বাবা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। দেশ স্বাধীনের পর শোভার মা জামিলা বেগম পান শহীদ পরিবার হিসেবে এই বাড়িটি আর প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতার চাকুরী। জামিলা বেগম এখন অবসর নিয়েছেন। বই পড়ে আর ইবাদত বন্দেগী করেই উনি বেশির ভাগ সময় কাটান।

একমাত্র মেয়ে শোভার বিয়েও দিয়েছিলেন অবস্থাপন্ন ঘরে। কিন্তু বিয়েটা টেকেনি। যৌতুকের অনৈতিক দাবী মেনে নিতে পারেনি শোভা। তাই ছোট টুকুকে বুকে নিয়ে উঠেছিল মায়ের সংসারে। এর তিন মাস পরে একটা খাম হাতে পায় শোভা।

ডিভোর্স লেটার। এর মধ্যে স্কুলের চাকুরীটা হয়ে যায় ওর। চলে যাচ্ছিল দিন। স্কুলের চাকুরী আর টুকু সোনাকে নিয়ে। এর মধ্যেই কোথা থেকে যেন কি হয়ে গেলো! সেই দিনটার কথা বেশ মনে পড়ছে শোভার।

স্কুলে যাচ্ছে সে। চায়ের দোকানটার সামনে প্রতিদিনের মতো আড্ডা মারছে সেই ছেলেগুলো। আর স্কুলগামী মেয়েদের উত্যক্ত করছে। হঠাৎ সুরভী নামের এক ছাত্রী দৌঁড়ে এসে শোভাকে জড়িয়ে ধরে। ‘আপা আমাকে বাঁচান’।

ঘুরে দাঁড়ায় শোভা। পেছনে তাকে আঁকড়ে ধরে নিজেকে আড়াল করার বৃথা চেষ্টা করছে মেয়েটি। ছেলেগুলি খিল খিল করে হাসছে। একজন সম্ভবতঃ এই গ্রুপের নেতা একহাতে গোলাপ আর অন্য হাতে একটা ছোরা। সম্ভবতঃ ফুল অথবা ছোরা যেকোন একটি নেবার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে সে।

মাথায় রক্ত চড়ে যায় শোভার। কোনো কিছু ভেবে উঠার আগে সজোরে চড় কসে সে ছেলেটির গালে। তারপর অনুভব করে পেটে তপ্ত আগুনের খোঁচা আর মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণার। জ্ঞান হারানোর আগে শোভা অনুভব করে সুরভী তার মাথা কোলে নিয়ে সাহায্যের জন্য চিৎকার করছে কিন্তু রাস্তাটা বড়-ই নির্জন হয়ে পড়েছে। এরপর সাতদিন হাসপাতালের বেডে।

তারপর বাসায়। এরমধ্যে অনেকে দেখতে এসেছে ওকে। কেউ কেউ বলেছে, “কি দরকার ছিলো বাপু এসবের মধ্যে জড়ানোর। ওখানে কি আর লোকজন ছিলো না?” শোভা শুনেছে আর হেসেছে। তার মুক্তিযোদ্ধা বাবার রক্ত তো তার শরীরেও বইছে।

হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ। কে এলো এ সময়? দরজা খুলে ভিতরে ঢুকল সুরভী। হাতে রজনীগন্ধার তোড়া। সাথে স্কুলের আরো ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক আর ক্লাবের ছেলেরা। আগামীকাল স্কুলে ইভটিজিং-এর উপর সভা আর মানব-বন্ধন হবে।

শোভকে সেখানে উপস্থিত থাকার কথা জানতেই এসেছে তারা। মনের মধ্যে এক অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে শোভার। গোঁধুলীর সূর্যটা টুপ করে ডুবে গেলো আগামী দিনের সোনালী সম্ভাবনা নিয়ে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।