আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছেলেকে লেখা মায়ের প্রেমপত্র

পারবে আমায় বলতে কোথায় ঐ দূর আকাশের শেষ কিংবা আমায় এনে দিতে নতুন সোনার বাংলাদেশ তুষার কান্তি কর :মা। এক অক্ষরের একটা নাম। কিন্তু কী গভীর মায়ের মমতা। কী বিস্তৃত মায়ের সোহাগের আঁচল। সন্তানের জন্য কী ব্যাকুলতাই না মায়ের।

মা মা মা। আরো জোরে ডেকে দেখুন, বুকের ভেতরকার সব কষ্ট যেনো এক নিমেষেই করপুর হয়ে যায়। মা তো মাই। সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা কি উদাহরন দিয়ে বুঝানো যায়? না যায় না। সেটা বাহুল্যতা।

তাও আজ এমন এক মায়ের এমন এক অনন্য ভালবাসার কথা বলবো যা এই পৃথিবীর আর কোথাও রয়েছে কিনা খুঁজে দেখার ব্যাপার। চিনের অধিবাসীনি সিয়ে মোমেইর একজন মা। বয়স ৫৩ বছর। স্বামীকে হারিয়েছেন অনেক আগে। বাড়ির পাশে ছোট একটা দোকান খুলেছেন।

যা কিছু রোজগার করেন সেটা খুব আহামরি না হলেও তা দিয়েই তারা শান্তিতে ও আনন্দে জীবনযাপন করে দিন কাটান। কিন্ত সুখ বেশিদিন থাকলো না। ১৯৯৯ সালের শরত্কালে এক ঘটনা তাদের সব সুখ কেড়ে নিল। তার বড় ছেলে মা সিছেংয়ের একটানা ভীষণ জ্বর হয়। ডাক্তার পরীক্ষা করে জানায় যে সে ইউরেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

নিমেষেই চুর্নবিচুর্ন হয়ে যায় সব। মা ব্যাকুল হয়ে পড়েন। ছেলের জন্য পৃথিবীর একপাশটা আলাদা করে ফেলেন। কিন্ত ইউরেমিয়া রোগটি চিকিত্সা করার জন্যে যে খরচ লাগবে তা সিয়ে মোমেইর পরিবারের জন্যে এক অকল্পনীয় অংক। কিন্ত মা যে কিনো বাঁধাই মানতে রাজি নন।

ছেলেকে বাঁচানোর জন্যে তিনি বাড়িঘর বন্ধক দেন এবং পরিবারের সব দামী জিনিস বিক্রি করেন। যখন তিনি ছেলেকে বাঁচানোর আপ্রান চেষ্টা চালাচ্ছিলেন তখন তিনি একদিন উপলব্ধি করেন,ছেলে স্বেচ্ছায় প্রান ত্যাগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। মা তার অশ্রু আর ব্যাকুলতা দিয়ে কোনোভাবেই ছেলের সিদ্ধান্তের সামান্যতম পরিবর্তন করতে পারলেন না। এই অবস্থায় ছেলে একদিন মাকে বলল,মা আমি আর বাঁচতে চাই না,যদি আমি তোমাদের জন্য বাঁচি,তাহলে আমি শুধু তোমাদের বোঝা হয়ে থাকবো। আমার আর কোনো আশা থাকবে না।

মাকে আক্ষেপ করে ছেলে বললো,আমি মরে গেলেও এ জীবনে আমার সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার হল আমি কখনো প্রেমালাপ করিনি। ছেলের শেষ কথাই মায়ের শেষ আশা হয়ে উঠলো। মা ছেলের কথা শুনে বুঝলেন,ছেলের মনের এই কথাই তার জীবিত থাকার শেষ অবলম্বন। এ সময়ে যদি ছেলের পছন্দনীয় এক মেয়ে উপস্থিত হয় তাহলে তার ছেলে বেঁচে থাকার আশা খুঁজে পাবে। তখন মার মনে ভেসে আসে এক মেয়ের সুন্দর চেহারা -ছেলের উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের সহপাঠিনী লিন সিয়াওচিয়ে।

কিন্তু মেয়েটি বাইরে কাজ করতে গেছে,যোগাযোগের ঠিকানা নেই। ছেলেকে বাঁচানোর জন্যে মা লিন সিয়াওচিয়ের নামে ছেলেকে চিঠি লেখার এক অসাধারন সিদ্ধান্ত নেন। ছেলেকে ফিরে পেতে ব্যাকুল এক মা ওই মেয়ে সেজে লিখতে শুরু করলেন প্রেমপত্র। লিন সিয়াওচিয়ের নামে প্রথম চিঠিতে মা লিখেছেন,”তোমার খবর পেয়ে আমি খুশী হয়েছি,কিন্তু তুমি অসুস্থ হয়েছ শুনে আমিtu.jpg খুব চিন্তিত,আমার মা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কারণে আমি এখন তোমাকে দেখতে যেতে পারছি না,যেদিন মা সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বের হবেন তখন আমি তোমাকে দেখতে যাব। ”চিঠি লিখে মা নিজের বাসার ঠিকানায় তা পোষ্ট করে দিলো।

কিছুদিন দিন পর ছেলে লিন সিয়াওচিয়ের প্রথম চিঠি পেলো,চিঠি পেয়ে ছেলে বিস্মিত হয়,কে তাকে চিঠি লিখতে পারে?চিঠি পড়ে ছেলে জানল এটা তার সহপাঠিনীর লেখা চিঠি,ছেলে বারবার চিঠিটা পড়ে। ছেলের মনটা অনেক ভাল হয় এবং মাকে বলে,আমি সহযোগিতা করব,আমি চিকিত্সা গ্রহন করব। ছেলে বেঁচে থাকার আশা খুঁজে পেলো। সিয়াওচিয়ের চিঠির উত্তর দেয় ছেলে। চিঠি পোষ্ট করতে মাকেই দেয় ছেলেটি।

মা ছেলের জন্যে চিঠি পাঠানোর ভান করেন এবং ভাবতে শুরু করেন দ্বিতীয় চিঠিতে কি লিখবেন। মা ভাবলেন,এক সহজ মেয়ে নিজের পছন্দসই লোক গুরুতর রোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা শুনে চিন্তিত হওয়া তার প্রথম প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত। তাই দ্বিতীয় চিঠিতে মা লিখেছেন,তোমার রোগের জন্য আমি এত চিন্তিত যে ভাষায় প্রকাশ করতে অক্ষম। যদি আমার মার অসুখ না হত তাহলে আমি এখুনি তোমার বাসায় যেতাম। তোমার এই রোগ চিকিত্সা করা যায়,এ দৃঢসংকল্প তোমার থাকতে হবে।

যেদিন আমার মা হাসপাতাল থেকে ফিরবেন,আমি সেদিন তোমাকে দেখতে যাব। । মেয়েটি চিঠিতে লিখেছে,তোমার কথা আমার সবসময় মনে পড়ে। রান্নার সময়ে আমি তোমাকে ভাবি,আমি কল্পনা করি তোমার সবচেয়ে পছন্দের তরকারি কি?এখন তুমি কী করছ এটাও আমি জানি। পরিকল্পনা অনুযায়ী ছেলে নিয়মিতভাবে চিঠি বিনিময় করতে থাকে মেয়েটির সঙ্গে।

মায়ের চিঠিতে ছেলে যেনো সত্যিকারের প্রেমের অনুভূতি পেলো। ছেলে পুনরায় জীবনের আশা দেখতে পায় মায়ের চিঠিতে। কিছুদিন পর হঠাত অপারেশনের ক’দিন আগে ছেলের মেজাজের পরিবর্তন হয়,আগের মতো খুশী নয়,মাঝেমাঝে একা স্তব্ধ হয়ে ঘরে বসে এবং যেনো মনেমনে কি সিদ্ধাচত নিচ্ছে। মা আবার চিন্তিত হয়ে পড়লেন। মা কারণটা জানতে পারলেন সিয়াওচিকে পাঠানো ছেলের চিঠিতে।

নিজের রোগ চিকিত্সার জন্যে বিরাট খরচ হবে,লিন সিয়াওচিয়ের মতো শ্রেষ্ঠ মেয়ে যদি নিজের সংগে প্রেম করে তাহলে সে বেশী দুঃখ-কষ্ট ভোগ করবে,কথাটা ভেবে ছেলে চিঠিতে নরমভাবে সিয়াওচিয়ের প্রেম প্রত্যাখ্যান করে এবং পরে আর চিঠি না লেখার কথা ব্যক্ত করে। ছেলের হতাশা মাকে অসুবিধার অবস্থায় ফেলে। মা ভাবে কি করবো এখন?অনেক ভেবে তিনি সিয়াওচিয়ের নামে ছেলেকে আরো একটা চিঠি লিখলেন। চিঠিতে মা লিখলেন,”সিছেং,রোগের কারণে তুমি আমার কাছ থেকে বিদায় নেয়া বেছে নিয়েছো, আমি বুঝতে পারি বটে,কিন্তু এটা আমাকে কত দুঃখ দেবে তুমি জানো?তুমি জানো না,এটা আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে দেবে এবং আমার জীবনে অন্ধকার ডেকে আনবে। তুমি আশ্চর্য হতে পারো,কারণ তুমি বুঝতে পার না যতই কষ্ট আর অসুবিধা থাকনা কেন তোমার পাশে থাকলেই কেবল আমি সুখী হতে পারি।

চিঠিটা পড়ে ছেলের মেজাজ ভাল হল এবং অপারেশনের প্রস্তুতির অপেক্ষায় রইল। মা স্বস্তিবোধ করলেন। কিন্তু কিছুদিন পর ছেলের সন্দেহ হল। মার শেষ চিঠিতে ছেলে টের পেলো চিঠিগুলো লিন সিয়াওচিয়ের লেখা হতে পারে না। কারণ কাছের লোক না হলে তার বিস্তারিত অবস্থা সিয়াওচিয়ে কিভাবে জানতে পারে?এ মিথ্যার আঘাত সিছেং সহ্য করতে পারলো না বলে সে চিঠিগুলো টুকরো টুকরো করে ছিড়ে দিল।

সেই রাতে মা ও ছেলে কারোই ভাল ঘুম হয়নি। দ্বিতীয় দিন সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠে ছেলে মাকে বলল,”মা, আমাকে ক্ষমা করো,আমি ভুল বুঝেছি,আমি জানি,আমার জন্যেই তুমি এসব করেছো। এখন তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারো,আমি আর বোকামি করব না,আমি ভালভাবে চিকিত্সা গ্রহন করব। আমি স্রেফ তোমার জন্যই বাঁচতে চাই। ” মা ছেলের অপারেশনের ব্যাবস্থা করলেন।

ছেলের অপারেশন অত্যন্ত সফল হয়েছে। কিস্তু ছেলে জানে,তার শারিরিক অবস্থার কারণে সে সম্ভবত কোনো চাকরি পাবে না। সে এক হোকো তিয়েন রেস্তরাঁ খোলার পরিকল্পনা নিয়েছে এবং হোকো তৈরির কৌশল শিখতে শুরু করেছে। মা ও ছেলের এ গল্প সংবাদমাধ্যমে কল্যানে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গেসঙ্গে অজস্র চিঠি মা ও ছেলের কাছে আসতে শুরু করে,এর মধ্যে লিউছিন নামে এক মেয়ের চিঠি আসলো,চিঠিতে লিউছিন ছেলে সিছিংয়ের কাছে তার ভালবাসার কথা ব্যক্ত করে।

এখন ছেলে সিছিং তাকে পছন্দসই সুন্দরী মেয়ে-বন্ধুহিসেবে পেয়েছে এবং শিগ্গিরই তার হোকো তিয়েন রেস্তরাঁ খোলা হবে। এখন সে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মানুষ। আর মা তার সন্তানকে ফিরে পেয়ে যেনো গোটা পৃথিবীকে হাতে পেয়েছেন । ( কৃতজ্ঞতায় : Hello Today )  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।