আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছেলেকে ফিরে পেতে...



'আমার পুলারে আইনা দাও, আমার টাহা লাগবো না। আমার নাড়ি ছেঁড়া ধনরে আইনা দাও। ' শিবচর-মাদারীপুর সড়কের যাদুয়ারচর নামক স্থানে বিমর্ষ এক মায়ের এ আর্তনাদ। সাংবাদিক পরিচয় জানতেই বিলাপ বেড়ে যায় তাঁর। বলেন, 'ছবি পেপারে দাও, টিভিতে দাও।

হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) দেখলে আমার পুলারে ঠিকই আইনা দিবো। ' বলেই অঝোরে কাঁদতে থাকেন মালয়েশিয়ার জেলে থাকা ইউনুছ মিয়ার মা ফরিদা বেগম। প্রায় দুই বছর আগে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে আদম ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়া পাড়ি জমান উপজেলার বহেরাতলা ইউনিয়নের যাদুয়ারচর এলাকার এমাজউদ্দিন তাইয়ানির বড় ছেলে ইউনুছ মিয়া। ফ্যাক্টরিতে কাজ দেওয়ার কথা থাকলেও ইউনুছসহ আরো প্রায় ২৫ জনকে নিয়ে রাখা হয় মালয়েশিয়ার পাহাড়ে। খেয়ে না খেয়ে তাঁদের দিন কাটে।

প্রায় এক বছর পর ২০০৯ সালের শুরুতে এ খবর পেয়ে পরিবারটির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। পরে আবার অসহায় পরিবারটিকে ৬০ হাজার টাকা দিতে হয় আদম ব্যবসায়ীকে, যাতে মালয়েশিয়ায় ইউনুছ কারখানায় কাজ পান, পাহাড়ে দিনরাত কাটাতে না হয়। এবার এ জন্য খোয়াতে হয় গবাদিপশু। কিন্তু কয়েক মাস কাজ করার পরই অবৈধভাবে বসবাসের অপরাধে প্রায় চার মাস আগে গ্রেপ্তার হন ইউনুছ মিয়া। এদিকে লাখ টাকার সুদ টানতে অসহায় পরিবারটি প্রায় পথে নেমেছে।

তবু মায়ের মন ছেলের জন্য কান্না করে। তাই তো শিবচর-মাদারীপুরের আঞ্চলিক সড়কটিতে দাঁড়িয়ে ছেলের ছবি নিয়ে পথচারীদের কাছে ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আকুতি করছেন। ইউনুছের বাবা বৃদ্ধ এমাজউদ্দিন তাইয়ানি বলেন, 'আদম ব্যবসায়ী নুরুল ইসলামের পাল্লায় পড়ে কাচিকাটার আরেক যুবকসহ অনেক ছেলেই গলাকাটা ভিসায় গিয়ে এখন মালয়েশিয়ার জেলে। আমার টাকা লাগবো না, আমি আমার ছেলেরে ফেরত চাই আর ওর বিচার চাই। ' এলাকার আলমগীর মাদবর ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, 'আদম ব্যবসায়ী নুরুল বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয়ে ইউনুছকে মালয়েশিয়া নিয়েছিল।

ছেলেকে ফেরত পাওয়ার আশায় এখন ওর মা রাস্তায় রাস্তায় ছবি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ' অভিযুক্ত আদম ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম দ্বিতীয়বার টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, 'ইউনুছসহ দুজনকে সরকারের জনশক্তি দপ্তরের কাগজ দিয়েই পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ওরা মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর বিমানবন্দর থেকে পালিয়ে যাওয়ায় সমস্যা হয়েছে। আমি মালয়েশিয়া গিয়ে ওকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেছি, তবে জেলের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইউনুছ ছাড়া পাবে না। ' শিবচর থানার ওসি আ. জলিল বলেন, 'এ ব্যাপারে আমার কাছে এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি।

অভিযোগ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। '

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।