আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাদা খাতা

আমি ই মোহাম্মদ আসিফ ২০০২ সালটা আমার জীবনে এসেছিল অদ্ভূত এক সময় হয়ে | আমি তখন অষ্টম শ্রেনীর বালক, কৈশোরের সিড়িতে দাড়িয়ে | একদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি আব্বু অফিসে যান নি, বিছানায় শুয়ে আছেন | তার শরীর ভালো নেই | হাতে তেমন জোর পাচ্ছেন না | শেভ করতে গিয়ে দুবার গাল কেটেছেন | আমাকে একটা চিঠির খাম দিয়ে বললেন পোস্ট করে দিয়ে আসতে | মেঝো কাকাকে লেখা চিঠি | চিঠি পোস্ট করে দিয়েএসে দেখি আব্বু শুয়ে আছেন তখনো, কথা তেমন বলছেন না | আম্মা রান্না বান্নায় ব্যস্ত | আমার ক্লাস বারোটায় | খেয়ে দেয়ে স্কুল এ গেলাম | ফিরে দেখি আব্বুকে হসপিটাল এ নেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে | মেঝো মামা আছেন মূল দায়িত্বে | সিড়ি দিয়ে খুব সাবধানে ধীরে ধীরে আব্বুকে নিয়ে নেমে গেলেন তারা | যাবার আগে আম্মা আমাকে বলে গেলেন যতদিন তারা না ফিরবেন আমি যেন স্কুল এ না যাই, বাসাতেই যেন থাকি | বড় বোন কে সব দায়িত্ব দিয়ে গেলেন মা | আব্বু ব্রেন স্ট্রোক করেছেন | দীর্ঘ দুই মাস হসপিটাল এ ছিলেন, সাথে আমার মেঝো বোন, মা , আমার চাচাতো ভাই দীপা | বাসা থেকে খাবার নেয়ার দায়িত্ব পালন করতো আমার বড় বোন, দুলাভাই , বড় মামী আর আমার ভাইয়েরা | মাঝে মাঝে তাদের সাথে আমিও যেতাম | তখন আব্বু অধিকাংশ মানুষকেই চিনতে পারতেন না | কিন্তু আমাকে চিনতে পারলেন | আমাকে দেখে তার দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো , কান্নার গোঙানির বদলে অদ্ভুত শব্দ বের হতো মুখ দিয়ে ,কারণ তিনি তখন কথা বলতে পারতেন না | কেবিন এর সবাই তখন কাঁদলো , কাঁদলাম আমি নিজেও | আম্মা কান্না শেষ করে আমাকে নানা কিছু খেতে দিচ্ছিলেন, আমি কিছুই খেলাম না | আমার নিজেকে দুরের কোনো মানুষ মনে হচ্ছিল, যেন কোথাও বেড়াতে এসেছি | পরিচিত সবার আচরণ এমন লাগছিল যেন আমি কোনো নতুন অতিথি | আমার মনে হচ্ছিল আমি সবার অচেনা কেউ | আমার সপ্তম শ্রেণীতে বৃত্তি পাবার কথা জানানো হলো আব্বুকে | শুনে আব্বু আবারো কাদলেন | আব্বু স্ট্রোক করার কদিন পরেই বৃত্তির ফলাফল বেরিয়েছিল | আমার পড়াশোনার প্রায় পুরোটাই এতদিন ধরে আব্বুর অধীনে চলে এসেছিল আব্বুর অধীনে , আব্বু অসুস্থ হওয়ায় কান্ডারী বিহীন জাহাজের মত তাই সবাই আমাকে নিয়ে চিন্তিত | কারণ আমি ভালো ছাত্র, ক্লাসের ফার্স্ট বয় , দিকনির্দেশনায় আব্বু ছিলেন এতদিন | ফার্স্ট বয়ের তখন পড়াশোনা নিয়ে মাথাব্যথা নেই | স্কুলে যেতে হচ্ছে না বলে সে বই খাতা থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে দিন কাঁটাতে লাগলো | ফার্স্ট বয়ের এক বান্ধবী থাকে তখন টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে, পড়ে ভারতেশ্বরী হোমসে | কিছুদিন আগে চিঠির উত্তর এসেছে টাঙ্গাইল থেকে, সে তখন চিঠি নিয়ে ব্যস্ত | আর গল্পের বইয়ের প্রচন্ড ক্ষুধায় তখন সে আত্মহারা | যা হাতের কাছে পাওয়া যাচ্ছে তাই পঠিত হচ্ছে | স্কুলে না যাবার অভ্যাসটি আমি অর্জন করি ওই ক্লাস এইট এর সময়টিতেই | হাতে তখন একান্ত অবসর | কিন্তু এই অবসরে একসময় ভাটা পড়লো,দেখতে দেখতে ফাইনাল পরীক্ষা চলে এলো | উদাস মনটাকে কোনমতে ক্লাসের বইযে টেনে নিয়ে শতভাগ নিরানন্দের মাঝে পরীক্ষার সময়টা পার করলাম | অষ্টম শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণী তে উঠলামক্লাসে প্রথম হয়ে | বৃত্তি পরীক্ষাও দিয়েছিলাম ,সংগত কারণেই বৃত্তি পেলাম না | [ আর লিখতে মন চাইছে না , প্রারম্ভিক কথার এখানেই সমাপ্তি | বাকি কথা আরেকদিন লিখবো ]

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.