আমার লেখায় কেউ কষ্ট পেলে,নিজ গুনে ক্ষমা করে দিয়েন :) "তুমি এই স্কুলে ভর্তি হতে না পারলে আমাদের আর ঢাকা থাকা হবে না। "
ছয় বছর বয়সে আমার আম্মু আমাকে গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার আগে এই কথাটা বলে। তখন ঢাকা থাকার মানেটা কি আমি নিশ্চয়ই বুঝি নাই, কিন্তু একটা জিনিস বুঝতাম, আমি যদি পারি তাহলে আমার আম্মু খুব খুশি হবে, কারন এ জন্য আমার আম্মু অনেক কষ্ট করেছিল। জানিনা কি ভাবে কি হল। আমি ভর্তি পরীক্ষায় চাঞ্চ পেয়ে গেলাম।
সবাই খুশি, আর আমিও খুশি কারন এই উপলক্ষে আমাকে একটা লাল রঙের বাইসাইকেল কিনে দেয়া হল। সেই সাইকেলটা এখনও আছে! আমি শুধু শুরু করে দিয়ে গেলাম, এরপর আমার একমাত্র ছোটভাই আর আমার এক চাচাতো ভাইও ভর্তি হয়। দেখা যাক ভবিষ্যৎ বংশধররা কেউ হাল ধরতে পারে কিনা...
স্কুলের প্রথমদিনের কথা তেমন কিছু মনে নাই। শুধু মনে আছে ক্লাস ক্যাপ্টেনের কথা, কারন তার আগেই ক্যাপ্টেন ব্যাপারটার প্রতি একটা আগ্রহ ছিল। ক্যাপ্টেন ঠিক করা হল জনি নামের আমাদের এক বন্ধুকে, কারন তার বাবা আমাদের স্কুলের স্যার(ফারুক স্যার)।
তখন মনে হল আমার বাবা কেন স্কুলের স্যার হল না!
স্কুলের কথা ভাবলে প্রথমেই মনে আসে সেই বিশাল মাঠের কথা। এত বড় মাঠ এই যান্ত্রিক ঢাকার খুব কম স্কুলেই আছে। এই মাঠে খেলেতেই খেলতেই আমার বেড়ে ওঠা। আমরা ফুটবল খেলতাম বেশি। আমি বেশিরভাগ সময় রক্ষনভাগে খেলতাম, কারন ফাউল জিনিসটা খুব সুন্দর ভাবে করে আমি গোল বাঁচাতে পারতাম, আর ফাউল করলেই বা কি? সবাই মিলে এক সুরে চেঁচাতাম, কিসের ফাউল! তবে এখানে খেলেও মাঝে মাঝে দুয়েকটা দর্শনীয় গোলও করেছিলাম।
আমি স্কুলে যেতাম মনে হয় খেলার জন্যই।
এরপরেই আসে স্কুল পালানোর কথা। আমরা স্কুলে যেতাম খেলতে। ক্লাস শুরুর আগে এক দফা, টিফিন টাইমে আর এক দফা। এরপর তো ক্লাস! খেলা তো শেষ, তাই অনেকেই দল বেঁধে পালাতাম টিফিন রুমের পিছন দিয়ে, আরও কত জায়গা দিয়ে! অথবা ঢাকা কলেজ বা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ এর মাঠে গিয়ে আবারো খেলা।
আর কাছেই আছে নিউমার্কেট! ঘুরে ঘুরে মেয়ে দেখা! আহা কি দিন ছিল!
ক্লাস এইটে টিফিন টাইমের ঘণ্টা পরার সাথে সাথে স্কুল ড্রেসটা খুলে মাত্র আমি গেঞ্জি আর হাফ প্যান্ট পরে বের হব ক্লাস থেকে, তখনি জিনের বাদশা(হাজী স্যার) আমাকে ক্যাঁক করে ধরে নিয়ে গেল টিচার্স রুমে। উনি নাকি আমার বাসায় কমপ্লেন করবে! খুব ভয় পেলাম কারন বাসায় কোনদিন কেউ নালিশ করে নাই। যাই হোক কমপ্লেন আর করল না। তবে তখন স্কুলে ব্ল্যাকলিস্ট নামক এক জিনিস চালু হইছে। আমার নাম নাকি ব্ল্যাকলিস্টে উঠে গেছে! কি আর করা, আমি ব্ল্যাকলিস্টেড হয়ে গেলাম।
আর মহাউৎসাহে শুরু করলাম দুষ্টামি। আগে ক্লাসে স্যারদের জ্বালাতাম না। এখন এই কাজটাও শুরু করলাম, তার মানে এই না যে বেয়াদবি করতাম। এই শিক্ষা কোনদিন পাইনি।
এরপর একটা মার খাওয়ার কথা মনে আছে।
ক্লাস নাইনে পড়ি, ক্লাস টেনের ভাইয়ারা তাদের শেষদিন উপলক্ষে রঙ নিয়ে খেলছে। আমার আর লিওনের মাথায় আসলো আমরাও রঙ নিয়ে খেলব। লিওন রঙ কিনে আনল। আমি সাথে জুটিয়ে নিলাম আমার জিগরি দোস্ত আতিককে। তিন জনে মিলে শুরু করলাম।
কিছুক্ষণের মধ্যেই কতিপয় সুবোধ বালকের মাধ্যমে স্যাররা জানল, ক্লাস নাইনের ছেলেরাও রঙ খেলছে। আর যায় কোথায়! সালাম স্যার আর রাজু মাস্তানের(রাজ্জাক স্যার) আবির্ভাব হল। মার খেলাম, কঠিন মার! তারপর টিচার্সরুমের সামনে নিলডাউন! ছোট ক্লাসের পোলাপান দেখল, ক্লাস নাইনের দুই ভাই টিচার্সরুমের সামনে নিলডাউন হয়ে আছে। অতি মহার্ঘ দৃশ্য। আমাদের দেখার জন্য কিছুক্ষণ পরপর পোলাপান আসে।
আরও কত টুকরো টুকরো স্মৃতি। আমি এখান থেকে আমার জীবনের সেরা বন্ধুদের পেয়েছি। যখনই এই যান্ত্রিক স্বার্থপর জীবনে অতিষ্ঠ হয়ে তাদের মাঝে ফিরে যাই,আমি যেন জীবন ফিরে পাই।
আজ এই মহান প্রতিষ্ঠানের ৫০ তম জন্মদিন! আমি এই ৫০ বছরের ইতিহাসের একটা অংশ!!!
যখনই ভেঙ্গে পড়ি, তখনই আমি আমার স্কুল জীবনের কথা ভাবি। জানি না কোথা থেকে যেন একটা আলো এসে সব অন্ধকার দূর হয়ে যায়।
এই আলোয় আলোকিত হয়ে এগিয়ে যাচ্ছি...
"আলো আরও আলো
আজ আমরাই ছড়াবো
আলোয় আলোকিত চারিদিক
সবই তোমারি জন্য..."
অর্থহীনের গাওয়া থিমসং... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।