আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাটি

অন্ধকার দেয়ালে তোমার আলো জন্ম দেয় মিথ্যে ছায়াকে..... হারবাড়ি কটেজটা আজ যেনো আরো নিস্পন্দ। আকাশে আধ খানা চাঁদ যেন চারদিকের নিঃশব্দতার দিকে তাকিয়ে হাসছে। কটেজের চার পাশে শ’ খানেক সুপারী গাছ। বাড়ির পেছনে বিশাল বাগান। সেই বাগানের কিছু অংশে জঙ্গলের ছড়া ছড়ি।

আজ এই রাতে বাড়িটি যেন আরো একা,নিস্তব্ধ। কাঠবিড়ালির হুটপুটি আর শেয়ালের হুক্কাহুয়া পরিবেশটাকে আরো রহস্যময় করে তুলেছে। মাটি কাটার খট খট শব্দে ঘুম ভাঙ্গল অর্বার। আজ দ্বিতীয় দিনের মত এই অবস্থা। জাহিদের সাথে এই কটেজে উঠেছেই মাত্র ৩ দিন হল।

জাহিদ ব্যস্ত ব্যাবসায়ী। বিয়ের পর থেকে অর্বা কে সময় দিতে পারে নি খুব একটা। এবার বেশ বড় একটা ছুটি নিয়ে দুজনে বেরিয়ে পড়েছে। প্রথমে কক্সবাজার,তার পর রাঙ্গামাটি হয়ে নিরিবিলিতে কয়েকদিন কাটাবার জন্য উঠেছে এই হারবাড়ি কটেজটায়। জাহিদদের নিজেদের কেনা এই কটেজ।

অনেক পুরোনো আর বেশ নিরিবিলি। অর্বার কাছে একটু বেশিই নিরিবিলি লাগছে। প্রথম দিন রাতেও এরকম হয়েছিল। রাত ২ টার দিকে হঠাত ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল অর্বার। মাটি কাটার শব্দে।

পাশে জাহিদকে না দেখে ভীত হয়ে পরে সে। কিন্তু পেছনের জানালা দিয়ে উকি মেরে আরো অবাক হয়। বাগানের কোনায় পাচিলের কাছে কোদাল দিয়ে মাটি খুড়ে চলেছে জাহিদ। টর্চের আলোয় ওর অবয়বটা দেখা যাচ্ছে। একছুটে পেছন বাগানে চলে আসে অর্বা।

চাদের আবছা আলো আর সোদা মাটির গন্ধে অদ্ভূত এক অনূভুতি। খুড়েই চলছিল জাহিদ। অর্বার কথায় যেন হুশ হল। ‘কি করছ তুমি? পাগল হলে নাকি?’ ‘কেন কি হয়েছে?’ উল্টো প্রশ্ন করে জাহিদ। ‘এত রাতে মাটি খুড়ছ! তোমার মাথার কি কোনো ঠিক আছে??’ ‘না, হঠাত মনে পড়ল ছোট বেলায় খেলার ছলে অনেক মজার মজার জিনিস লুকিয়ে রাখতাম এই বাগানটায়।

সেরকমই একটা কিছু খুজছিলাম। ’ জাহিদের কথায় অবাক হয় অর্বা। কিন্তু কথা না বাড়িয়ে জাহিদকে নিয়ে চলে। আজও মাটি খুড়ে চলেছে জাহিদ। রাত প্রায় তিনটা।

কিন্তু ওর কোনো হুশ নেই। আজ যেন সে আরো বুনো। কিন্তু নির্দিষ্ট লক্ষ্যে অটল। সুন্দর একটা চারকোনা বাক্সের মত গর্ত করে ফেলেছে সে। ৩ ফুট গভীর তো হবেই।

কোদালের আঘাতে মাটি থেকে যেন সোদা গন্ধ তীব্র থেকে আরো তীব্র হচ্ছে। অন্ধকার এই রাতে ভেজা মাটি যেন চিরতরে সব গ্রাস করে নেবে... । লুকিয়ে থাকা কেচো গুলো কিসের অপেক্ষায় যেন ছুটো ছুটি শুরু করে দিয়েছে। হঠাত মাটি খোড়া বন্ধ করে দিল জাহিদ। সাধনায় সিদ্ধি পাওয়ার মত এক অর্বাচীন হাসির রেখা ফুটে উঠেছে জাহিদের মুখে।

আনন্দে বিকট শব্দে হাসতে শুরু করল। অনেক সহ্য করেছে অর্বা। এবার হাসির শব্দ শুনে ছুটে পেছন বাগানে চলে এল সে। ‘কি করছ এসব। এত পাগলামীর মানে কী???’-ভয় জড়িত কন্ঠে চেচিয়ে বলে অর্বা।

‘শ শ শ....। আস্তে। মা ঘুমাচ্ছেন। ’ জ্বল জ্বল চোখে বলে জাহিদ। ‘মানে কি এসবের?’ ‘হ্যা, এখানেই মা একা ঘুমাচ্ছেন অনেক দিন হল।

’গর্তের দিকে ইংগিত করে বলে জাহিদ। ‘আমার বয়স যখন ৬, তখন বাবা-মায়ের সাথে এই কটেজে এসেছিলাম। ’-ঘোর লাগা কন্ঠে বলে জাহিদ। ‘আমার মা –কে খুন করেছিল আমার বাবা। আমি নিজের চোখে দেখেছি।

কিছু বলতে পারি নি। খুন করে এই জায়গাটাতে মাটি চাপা দিয়েছিল বাবা। ’ ‘আমি বাবা কে কথা দিয়েছিলাম, এই কথা কাউকে বলবনা। আর মা কে বলেছিলাম ওর জন্য কাউকে নিয়ে আসব। ’ ‘তাওতো প্রায় ২৫ বছর হয়ে গেলো।

মা তো অনেকদিন ধরেই একা পড়ে আছে। আজ তোমাকে এনেছি। তুমি এখন থেকে ওর সাথে থাকবে। মা প্রতিদিনই বলে,ওর খুব একা লাগছে। ’ ‘কি বলতে চাও তুমি....’- অস্ফূট আর্তনাদ করে উঠল অর্বা।

ওকে বেশি কিছু বলার সুযোগ দিলো না জাহিদ। হাতের কোদালটা দিয়ে অর্বার মাথায় আঘাত করল। আজ সে বাবা মা এর যোগ্য সন্তান। বাবার মত হতে পেরেছে। মায়ের একাকীত্বও দূর করছে।

গর্তটার মাঝখানে পড়ে আছে অর্বার নিথর দেহ। চাদের আলোয় ফর্সা মুখটায় কালচে রক্তের রেখা ফুটে উঠেছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে জাহিদ কবিতা আওড়াতে লাগল- ঘুমায়ে রয়েছ তুমি ক্লান্ত হয়ে, তাই আজ এই জ্যোৎস্নায় কাহারে জানাই আমার এ বিস্ময়— বিস্ময়ের ঠাঁই নক্ষত্রে থেকে এল;— তুমি জেগে নাই... ঠিক তার বাবার মত!!  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।