আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুলিশি নির্যাতনে অজ্ঞান আইনজীবী এমইউ আহমেদের মৃত্যু : পরিকল্পিত হত্যার জন্য দায়ীদের শাস্তি দাবি

আমি সবসময় সত্যকে ভালবাসি পুলিশি নির্যাতনে অজ্ঞান হয়ে টানা ১৬ দিন হাসপাতালে অচেতন থাকার পর সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী, সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমইউ আহমেদকে শেষ পর্যন্ত আর বাঁচানো গেল না। পুলিশি নির্যাতনের পর চিকিত্সকদের সর্বোচ্চ চেষ্টাও ব্যর্থ হলো। নির্মম মৃত্যুর শিকার হলেন তিনি। গতকাল বেলা ১টা ১০ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সুপিমকোর্ট ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য আইনজীবী এবং পেশাজীবীরা ছুটে যান স্কয়ার হাসপাতালে।

ক্ষোভে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে স্কয়ার হাসপাতাল অঙ্গন। বিক্ষুব্ধ আইনজীবী ও পেশাজীবীরা হাসপাতালের সামনের রাস্তায় বিক্ষোভ করেন এবং অবস্থান নেন। তারা এই মৃত্যুকে পুলিশের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে দায়ীদের বিচার দাবি করে স্লোগান দেন। এ সময় পুলিশ পরিবেষ্টিত হয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম স্কয়ার হাসপাতালে গেলে আইনজীবীরা তাকে ধাওয়া দেয় এবং এমইউ আহমেদের হত্যাকারী বলে স্লোগান দেন। এদিকে রাত ১০টায় নিহত এমইউ আহমেদের স্ত্রী সেলিনা আহমেদ রাজধানীর রমনা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করতে যান।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আসামি করে মামলার এজাহার দেয়া হয়। রমনা থানা পুলিশ এজাহার গ্রহণ করে রাখলেও মামলা নথিভুক্ত করেন। এ সময় সেলিনা হোসেনের সঙ্গে ছিলেন সুপ্রিমকোর্ট বার সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াসহ ১০০ জন আইনজীবী। অ্যাডভোকেট এম ইউ আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে আজ বিএনপি প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি এবং আগামী সোমবার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম দেশব্যাপী আদালত বর্জন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এমইউ আহমেদের লাশ আজ বেলা ১১টায় সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে এবং পরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেয়া হবে।

সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি জানান, আজ বেলা ১১টায় সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে প্রথম নামাজে জানাজা হবে এবং তার প্রতি পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানো হবে। এরপর আইনজীবীদের বিক্ষোভ মিছিল সুপ্রিমকোর্ট থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব পর্যন্ত যাবে। গত ১০ আগস্ট রাত ২টার পর এমইউ আহমেদের সেগুনবাগিচার বাসায় হানা দেয় সাদা পোশাকধারী ডিবি পুলিশ। সঙ্গে কয়েকজন পোশাকধারী পুলিশও ছিল। তার স্ত্রী সেলিনা আহমেদের মতে, বাসায় ঢুকেই পুলিশ পুরো ঘর তছনছ করে।

ঘরে সাজানো আসবাবপত্র এখানে সেখানে ফেলতে থাকে। তখন তাদের বাসায় এক ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। পুলিশ অকথ্য ভাষায় তাদের গালাগাল করে। তিনি আরও জানান, এমইউ আহমেদকে গ্রেফতারের সময় বাসায় তছনছ কেন করা হচ্ছে বলা হলে পুলিশ তাকে উদ্দেশ করে বলে, এতদিন ওকালতির আয় খেয়েছিস। এখন বুঝবি ওকালতির আয়ের মজা কেমন লাগে।

এসব কথা বলতে বলতে ধরে নিয়ে যায় তার সুস্থ স্বামী এম ইউ আহমেদকে। ধরে নেয়ার সময়ই পুলিশ কিল ঘুষি মারতে থাকে তার স্বামীকে। কিল ঘুষি দিতে দিতেই ছয়তলার বাসা থেকে নিচে নামিয়ে আনা হয় তাকে। নেয়া হয় ডিবি অফিসে। ডিবি অফিসে নিয়ে এমইউ আহমেদের বিভিন্ন অঙ্গে ইলেকট্রিক শক দেয় পুলিশ।

স্ত্রী সেলিনা আহমেদ জানান, তার শরীরে ইলেকট্রিক শকের দাগ ছিল। অমানবিক নির্যাতনের একপর্যায়ে এমইউ আহমেদ মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। চার ঘণ্টার বেশি সময় ডিবি অফিসে রাখার পর তাকে প্রথমে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ১১ আগস্ট ভোর সাড়ে ৪টায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তাররা অবস্থা খারাপ দেখে তাকে গ্রহণ করেননি। তখন পুলিশ তাকে নিয়ে যায় ঢাকার শেরেবাংলানগরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে।

পুলিশি হেফাজতে সেখানে অজ্ঞান অবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয়। ডিবি পুলিশ এরপর তার স্ত্রীকে খবর দিয়ে হাসপাতালে নেয়। পুলিশ অসুস্থ অজ্ঞান অবস্থায় এমইউ আহমেদকে তার স্ত্রীর জিম্মায় তুলে দিয়ে সাদা কাগজে লিখিয়ে নিতে চাইলে তিনি রাজি হননি। এ অবস্থায় সিসিইউতে তার চিকিত্সা চলতে থাকে। প্রথমে ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন ৭২ ঘণ্টা গভীর পর্যবেক্ষণে রাখার পর বলা যাবে তার পরিস্থিতি সম্পর্কে।

গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেও অবস্থার কোনো উন্নতি না হলে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের ডাক্তাররা অপারগতা প্রকাশ করেন। হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে পুলিশ হেফাজতেই তার চিকিত্সা চলছিল। সেখানে ডাক্তাররা অপারগতা প্রকাশের পর পুলিশ তার পরিবারকে অনুরোধ জানায় উন্নত চিকিত্সার জন্য অন্য কোথায়ও নিয়ে যেতে। এতে পরিবারের অভিপ্রায় অনুযায়ী তাকে পুলিশ স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করে। স্কয়ার হাসপাতালেও অসুস্থ এমইউ আহমেদ সার্বক্ষণিক পুলিশের নজরদারিতে ছিলেন।

সাদা পোশাকধারী ডিবি পুলিশ সারাক্ষণ হাসপাতালে অবস্থান করতেন। মৃত্যুর পর এমইউ আহমেদের স্ত্রী সেলিনা আহমেদ বলেন, পুলিশের নির্যাতনে তাদের হেফাজতে তার স্বামীর এই মৃত্যু পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তিনি এই হত্যার সঙ্গে জড়িত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, হাইকোর্ট আগাম জামিন দিলে আজ তার স্বামীর এই করুণ পরিণতি হতো না। হাইকোর্টে ন্যায় বিচার না পাওয়ার ঘটনাকে তিনি দুঃখজনক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তার স্বামী সুপ্রিমকোর্টের একজন আইনজীবী।

তিনি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলও ছিলেন। কিন্তু সে আদালতের আইনজীবী হয়েও তিনি বিচার পাননি। এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর হতে পারে না। বিস্তারিত  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.