আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিশন টিকেট!!!!!!

সচরাচর কোথও গেলে বাস এ যাওয়া হয়। ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাব। রাস্তা ঘাট এর অবস্হা খুব -ই খারাপ। তাই প্লান করলাম এইবার ট্রেন এ বাড়ি যাব। যদি ও জানতাম যে এই সময় ট্রেন এর টিকেট সোনার হরিন।

অগ্রিম টিকেট ছেড়েছে রেলওয়ে। রাত ২টা ৩০মিনিট এ সেহরি খেয়ে কমলাপুর ষ্টেশন এর দিকে রওয়ানা দিলাম। পোঁছে দেখলাম আমাদের মত অনেকেই আগে থেকে ষ্টেশন এ বসে আছে। যে যতটুকু পারে কাউন্টারের কাছে অবস্হান নিয়েছে। কে্উ কেউ এসেছে নাকি বিকাল ৪টায়।

দেখুন লিখাটা লিখতে বসে ও শান্তি নেই। ইলেকট্রিসিটি গেল এই সকাল ৭টা বাজে। সাথে মশার জালাটন। আর কি কিছু ভালো লাগে? যাই হোক মূল কথা্য় ফিরে আসি। গিয়ে দেখলাম কেউ বসে আছে কাউন্টার এর উপর কেউ বা নিচে।

মোট কোথা যে যেভাবে পেরেছে অবস্হান নিয়েছে। আমাদের জায়গা হল প্রায় ১০০জন এর পেছনে। আমরা ৪ বন্ধু গিয়েছিলাম সেদিন। সময় কাটানোর জন্য সাথে করে কার্ড নিয়ে গিয়েছিলাম। বসে কিছুক্ষন কার্ড খেলে টাইম পাস্ করলাম।

একেক কাউন্টারে একেক ক্লাস এর টিকেট দিবে শুনলাম। তাই আমরা দাড়ালাম ৫নাম্বার কাউন্টার এ যেখানে কিনা টিকেট দিবে ফার্স্ট ক্লাস এর। এটা ওদের কাউন্টারে লিখায় ছিল। সময় যেন কাটছিল না কোনভাবেই। প্রতিক্ষার প্রহর শেষের দিকে।

ঘড়ির কাঁটা ৮টা পার হল। ততক্ষনে মানুষে ভরপুর স্টেশন। ৮টা ৩০মিনিটে রেলওয়ে থেকে একটা ঘোষনা দিল এই বলে- সকল এসি ট্রেনের টিকেট দেয়া হবে ২নাম্বার কাউন্টার থেকে। শুনেতো সবার মাথায় বাজ পরার মত অবস্হা। সারারাত এক লাইনে দাঁড়ায় থেকে এখন অন্য লাইনে গিয়ে দাঁড়ানোর মানে হচ্ছে তীরে এসে তরী ডুবার মত কাহিনী।

এর পর শুরু হল হুলস্হল অবস্হা। কিছু ছেলে পেলে একত্রিত হয়ে এদিক ওদিক ছুটো ছুটি শুরু করল। ষ্টেশনে সিনিওর ব্যক্তি যিনি ছিলেন তার কাছে গিয়ে জানানো হল তিনি কোন কিছু করতে পারলেন না। বললেন ম্যানাজারকে জানাতে। এই দিকে ম্যানাজার এখন এসে পৌঁছেনি।

অগ্যতা সকলে মিলে রেলওয়ের আইন শৃংখলা বাহিনীর কাছে গিয়ে জানাল। ওরা বলল এ্ই লাইনে চলতি ট্রেন এর টিকেট বিক্রি হবে। অথচ অনুসন্ধানে খবর নেয়ার সময় ওরা বলেছিল ৫নাম্বার কাউন্টার থেকেই টিকেট দেয়া হবে। হায় কপাল!এর পর সকলে মিলে গেলাম র‌্যাব এর কাছে। ওরা তখন উঠে গিয়ে খুজে এল ম্যানাজারকে কিন্তূ পেলনা।

কি আর করা। সকলে মিলে ঠিক করলো টিকেট নিয়ে তবেই সবাই ফিরবে। মিডিয়ার লোকজন ছিল তখন। তাদের সব কিছু জানান হল। যদি এদের দিয়ে কিছু হয়!ওরা ভিডিও ফুটেজ নিল।

কথা বলল জনগন এর সাথে। এর পর ম্যানাজার এর সাথে কথা বলার জন্য ওনার রুম এ গেলেন। কিন্তূ যথারিতী পাওয়া গেলনা। জনগন এর পর রেলওয়ে কর্মকর্তাদের উপর চড়াও হল। এর কিছুক্ষন পর ওরা বলল টিকেট দিবে।

সবাই শান্ত হল। আমরা দাঁড়িয়ে ছিলাম ৯০ জনের পর। টিকেট দেয়া শুরু হবার ৩৫-৪০মিনিট এর মধ্য ঘোষনা দিল চট্টগ্রাম এর সকল এসি টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে। কিন্তূ লাইনে যারা ছিল প্রথম দিকে ওদের ৩/৪জনে হয়তো টিকেট পেয়েছিল। বাকিরা সবাই আমরা তীর্থের কাকের মত হা করে লাইনে দাঁড়ায় ছিলাম।

ভাগ্য কিছুটা সহায় ছিল আমাদের এক বন্ধু এই সব অবস্হা দেখে কোন এক সময় ২নাম্বার কাউন্টারে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আমাদের লাইনে আর কেউ টিকেট পেলনা। অগ্যতা আমি আবার গিয়ে সে্ই ২নাম্বার লাইনে গিয়ে দাঁড়ালাম যদি নন এসি কোন টিকেট পাই!আমার সামনে তখন ও বিশাল লম্বা লাইন। পাওয়ার আশা নেই। হঠাৎ যেন আমবশ্যয় পূর্ণীমার দেখা পেলাম।

এক লোক এসে বলল তার কাছে ৪টা টিকেট আছে সে বিক্রি করবে। আমি তাকে বললাম নেব। কিন্তূ হায়! ৪টার মধ্য ২টা হাফ টিকেট। পায়ের ব্যাথায় আমাদের সবার অবস্হা খারাপ। টিকেট দরকার ৮টা পেয়েছি ৪টা।

আর ও ৪টা কোথায় পাব?এর কিছুক্ষন পর আর একটা ছেলে এসে বলল সে ৪টা টিকেট পেয়েছে। ২টা সে কিনবে বাকী ২টা আমি নিলে সে দালাল থেকে টিকেট নিবে। আমি রাজি হলাম। বললাম কত করে টিকেট এর দাম? দাম শুনে আক্কেল গুড়ুম অবস্হা। প্রতি টিকেট ১০০০/- করে।

বললাম ভাই ৫০০/- করে হলে নেব। রাজি হলনা। ইচ্ছে করছিল গিয়ে রেলওয়ের ও্ই লোক গুলোর ও্ই জায়গায় কষে লাথ্থি মারি যাদের জন্য আজ এত গুলো মানুষের করুণ অবস্হা। রাখে আল্লাহ মারে কে! হঠাৎ এর ই মধ্য আর একটা ছেলে এসে সবাইকে বলছে সে টিকেট বিক্রি করবে। শুনেই কোন দিকে না তাকিয়ে ঐ ছেলেটাকে টেনে এক পাশে এনে বললাম ভাই টিকেট এর দাম কত? বলল ৪টা টিকেট এর দাম ৬০০/- মনে হল খনি পেলাম।

দেরি না করে সব বন্ধুদের লাইন থেকে বের করে আনলাম। তখন বেলা প্রায় ১২টা ৩০মিনিটের বেশি। অবশেষে টিকেট মিশন শেষ করে বাসায় ফিরে শান্তির ঘুম দিলাম। টিকেট তো আমরা পেলাম কিন্তূ বাকিরা!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!কোথায় গেল এতো টিকেট? টিকেট এর জন্য এত মানুষ এর পর ও রেলওয়েতে খালি লস্- ই হয়। বি: দ্র: যে কোন মূল্য রেলওয়েতে চাকরির ব্যবস্হা কর বন্ধুরা! না হয় ওদের ই ছেলে কিংবা মেয়েদের বিবাহ কর।

তাহলে হয়ত টিকেট পাবে তবে ফ্রী-তে নয় কিন্তূ। বদলাবে কি কিছু!! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।