আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রেমিক, প্রেমিকা ও তৃতীয় পক্ষ!

জীবনের জন্যই এই সব কথামালা রমজান মাসে দুপুর বেলায় ঘরে ফেরার তাড়া থাকেনা। আড্ডা, ঘুরাফেরার অতিরিক্ত সময় মেলে। অতিরিক্ত সময়ে অবকাশের (শিশু বিনোদন পার্ক) পাশে হাটছিলাম আমি আর আমার বন্ধু কাম অভিভাবক বাপ্পি দা। উল্লেখ্য উনার বাসা ঠিক অবকাশের পাশেই। হঠাৎ খেয়াল করলাম, এই রমজান কিংবা দুপুরের প্রখর রৌদ্র তাপেও কপোত কপোতীদের রোমান্স থেমে নেই।

অবকাশের বসার জায়গা প্রতিটি ব্লক! বেরসিক আমরা দুইজন এই গরমে প্রেম করার কি আনন্দ থাকতে পারে ভেবে হয়রান হয়ে বাসায় ফিরছিলাম। হঠাৎ খেয়াল করলাম, এক তরুনী বসা। পাশে দাঁড়ানো তরুন। আমরা তাদের অতিক্রম করার আগেই এক মটরসাইকেলে দুই তরুনের আগমন লক্ষ্য করলাম। একজনের হাতে এক গোছা ফুল।

না ভিলেনের আগমনী নয়। ‘রেড ফ্লাওয়ার আনিস নাই কেন? তোদের আক্কেল হলোনা। প্রথম বার তো রেড ফ্লাওয়ার দিতে হয়, এটা ও জানিসনা’ এই বাক্য শুনে আশ্বস্ত হলাম দুই তরুন এখানে অবস্থান করা তরুনকে সাহায্য করতে এসেছে। এর পর সাদা ফুল পেয়ে তরুনী গাল ফুলিয়ে বাসার পথ ধরেছিল নাকি তরুণের হাত ধরে অবকাশের ভিতর গিয়েছিল তা আর জানা হয়নি। উপরের ঘটনা আলোচনার কারণ হলো, প্রেমের ক্ষেত্রে ওই দুই বন্ধুর মতো বন্ধু কিংবা তৃতীয় পক্ষের সহায়তা।

বাপ্পি দা বললো, ‘হেল্পার (সাহায্য কারী) ছাড়া প্রেম হয়না মনে হচ্ছে’। আমিও তার কথাকে খানিকটা সমর্থন দিলাম। এই সমর্থনের পিছনে কয়েকটি প্রেমে নিজের সাহায্যের অবদানই মুখ্য। এমন কয়েকটি বিষয়ই আজ তুলে ধরিঃ # সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময়কার ঘটনা। প্রেম শব্দটা বড্ড কানে আসে।

এ ওর পিছে ঘুরে। কে কার সাথে লুকিয়ে প্রেম করে। কার খাতায় প্লাস দিয়ে দুই নামের প্রথম অক্ষর দেয়া। প্রেমময় সময়ের সূচনা আর কি! জন্ম দশ বছর পর হলেই অবশ্য সপ্তম শ্রেণীতে না, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় শ্রেণীতেই বুঝার সৌভাগ্য হতো। যাই হোক মূল ঘটনায় আসি।

আমাদের ক্লাশমেট আরফান। ব্যাচমেটদের মধ্যে বড় সড় গড়ন। শরীরের সাথে মিল রাখতেই কিনা প্রেমের দৌড়ে সে সর্বাগ্রে থাকলো। আমরা শুনতে থাকলাম, আরফান প্রেম করে, কিন্তু মেয়েটা কে জানতাম না। একদিন টিফিন পিরিয়ডে আরফান বেশ করে খাতির দেয়া শুরু করলো।

আমার হাতের লেখা সুন্দর, কিভাবে সুন্দর হলো? এইসব হাবিজাবি! মূল কাহিনী জানা গেলো খানিক পর । আরফান তার পকেট থেকে ভাজ করা এক কাগজ বের করলো। তার প্রেমিকার উদ্দেশ্যে লেখা চিঠি। আমার লেখা যেহেতু তার কাছে সুন্দর মনে হয়েছে তাই আমাকেই কপি করে দিতে হবে এই চিঠিটি। কি আর করা! লিখতে শুরু করলাম, ‘’প্রিয় X, ............’’।

তখন ভাবছিলাম, প্রেমে সুন্দর হাতের চিঠির হয়তো দরকার আছে, এখন বুঝি ওই প্রেমিক আরফান কতোটা বলদ ছিলো! আমাদের আরফানকে অবশ্য ক্লাশ এইটের পর আর পাইনি, স্কুল বদল! আর কেউ না বুঝলে ও ক্লাশে একজন প্রেমিক তরুন হারানোর কথা আমার ঠিকই মনে থাকতো!! # এটা ক্লাশ নাইনে পড়ার সময়ের। কম্পিউটার তখন অনেক কঠিন বিষয়। শিখার জন্য এক সেন্টারে ভর্তি হলাম। আমি হলাম সব চাইতে জুনিয়র। তিনজন বড় ভাই আর দুই আপুকে নিয়ে আমাদের বিকেল বেলার ব্যাচ।

সবাই খুব আদর করতো। তবে মামুন ভাই একটু বেশিই। কারণ অবশ্য কিছুদিনের ভেতর জেনেছিলাম। মামুন ভাই ডিগ্রীর ছাত্র। আমাদের ব্যাচে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ুয়া এক আপুনি ছিলো।

তাদের ভেতর বিরাট ভাব! কিন্তু সেন্টারে কিছু বলা সম্ভব না। অন্যরা কিসব ভাবে। মামুন ভাই প্রতিদিন একটা ছোট্ট চিরকুট আমাকে দিতো ওই আপুনিকে দেয়ার জন্য। আর আপুনিও ফিরতি একটা ভাজ করা কাগজ দিতো। মোটকথা আমি হয়ে গেলাম, লাভ পিয়ন।

মামুন ভাই প্রতিদিন কতো চকোলেট, চুইংগাম আমার ব্যাগে দিতো ইয়ত্তা নেই। আর আপুনির কাছ থেকে পেতাম বিভিন্ন আচার। ওইসব আচার অবশ্য ভোগ করতো অন্য সিনিয়র ভাইরা ও আপুটি। এই ব্যাচেই ছিলো মাহমুদ ভাই। তিনি যে কতোভাবে মামুন ভাইদের কাহিনী বের করার চেষ্টা করতেন আমার কাছ থেকে।

আহারে! কই আমার সে সোহাগ মাখা দিন। শুধু আদর আর আদর! # আমার ন্যাংটা কালের বন্ধু আসাদ। দশম শ্রেণী পর্যন্ত একসাথে পড়া। একাদশে এসে সে পড়ালেখা ছেড়ে ভাইদের ব্যবসায় ঢাকায় চলে গেলো। তাদের পরিবারের সবার সাথেই আমার মাখামাখি।

তো , আমাদের আসাদ ও যে প্রেমে পড়েছে আমার জানা ছিলোনা। মেয়ে এলাকার। একদিন ঢাকায় আসাদের সাথে থাকা এক বন্ধু জানালো , আসাদকে দেয়া আমার শার্টটি বেশ সুন্দর! আমি তো টাশকি খাইলাম। আমি আবার কখন শার্ট গিফট করলাম? এতো ভালো বন্ধু কখন হলাম? বন্ধুকে শার্ট গিফট দেই! আসাদকে ফোন দিলাম। জানলাম কাহিনী।

আসাদের প্রেমিকা তাকে শার্ট পাঠিয়েছে কার মারফত। এখন আসাদের ভাই কিংবা পরিবারের কেউ যদি জিজ্ঞেস করে এই গিফট কে দিছে। প্রেমিকার নাম বললে ঝামেলা। তাই দুজনে সিদ্ধান্ত নিলো, আমার নাম ব্যবহার করার। এ ক্ষেত্রে সমস্যা নাই! নিজে না জেনেও পরোক্ষ ভাবে কিন্তু আরেকটা সহযোগিতা করে ফেললাম।

কি বলেন? # এটা প্রেমে পূর্ণতা দেয়ার গল্প। ইন্টারমিডিয়েট লাইফের ফ্রেন্ড। প্রাইভেট ভার্সিটির ছাত্র। দেখা হয়না অনেকদিন। প্রায় তিন বৎসর।

মাঝে মাঝে ফোনে আলাপ। ভালো পোলা বলেই জানি। ভালো পোলা বলতে প্রেম পিরিতের লাইনে নাই। একদিন বিকেলে ঘুমে হাবুডুবু খাচ্ছি। হঠাৎ ফোন বাজতে থাকলো।

বন্ধুটি বাসার সামনে। বাসায় আসতে বললাম, জরুরী কাজ আমাকেই যেতে হবে জানালো। চোখ মুখে পানি দিয়ে গেলাম। এর ভেতর বার বার ফোন। মেজাজ খারাপ হবার যোগার।

গিয়ে দেখি এক সুন্দরী সাথে দাঁড়ানো। কিছু ভাবার আগেই বিনয়ের সহিত সালাম। যদিও সমবয়সী, তবুও নিজেকে হঠাৎ অভিভাবক টাইপ মনে হতে থাকলো। জানলাম, তারা বিয়ে করবে। বললাম, ভালো কথা, ফ্যামিলিকে জানা।

বললো না, ফ্যামিলিকে না জানিয়ে। নিজে যখন বুঝাতে যাবো তখনি কানে বাজতে লাগলো, ‘’বন্ধু হিসেবে তুই ই হেল্প করতে পারবি তাই কাউকে না জানিয়ে তোর কাছে আসা’’। এই কথা শুনে ভাবলাম, বিয়ে তো শুভ কাজ । শুভ কাজে হেল্প করি। এবার কাজী অফিস খুজার পালা।

রিক্সা ড্রাইভারের কল্যানে কাজী অফিসে গেলাম। ধান্দাবাজ কাজীর কথায় তো নিজের বিয়ে বিষয়ক ভাবনা শুরু করছিলাম। এবার উকিল এবং স্বাক্ষী সহ বিয়ে সম্পন্নের পালা। পড়লাম বিপদে। স্বাক্ষী একজন পাওয়া গেলেও উকিল হবে কে? ভাব দেখে মনে হচ্ছিলো, কতক্ষনের ভেতর নিজেকে বিয়েহীন বাবা হিসেবে দেখতে হবে।

তাও বন্ধুর বউয়ের। বারবার দোয়া কালাম পড়া শুরু করলাম। হঠাৎ খেয়াল হলো, আমার কোন বন্ধুকে নিই, যে পাত্র পাত্রীর বন্ধু না। অনেক ভেবে চিন্তে আমাদের ব্যাচের সহজ সরল, আমার খুবই ভালো বন্ধু বাকি বিল্লাহকে কিছু না জানিয়ে কাজী অফিস নিলাম। তাকেই বানালাম উকিল বাবা।

নিজে স্বাক্ষী থাকলাম। অনেক ভয়ের পর ও ভালোই লাগছিলো। দুই দিন আগে জানলাম, দুই ফ্যামিলি মেনে নিয়েছে। # অনেক সহযোগিতার গল্প বলা হলো। এবার আসি বিশ্বাস ঘাতকতার! না, বিশ্বাস ঘাতক কিন্তু আমি না।

আমি তো ভালো পোলা। এই কাহিনী ঘটিয়েছিলো আমাদের অনার্স লাইফের বন্ধু রাশেদ! আমাদের রাশেদ অবশ্য সামু ব্লগের রাচেদ ভাই’র মতো লুল প্রকৃতির না। এমনিতে ভালো ছেলে। নম্র, ভদ্র , দেখতে ও সুন্দর। আমাদের এক বন্ধু রায়হান পছন্দ করে ক্লাশের এক সুন্দরী তমাকে।

এই পছন্দ করা, আর মেয়েকে দেখলেই তার কাপুনি চলছিলো মাস ছয়েক। রায়হান কোনভাবেই নিজের অনুভূতিটা প্রকাশ করার সাহস পাচ্ছিলোনা। কি আর করা। প্রেম প্রস্তাব দেয়ার জন্য রাশেদকে অনুরোধ করা হলো। রাশেদ রাজি কিন্তু সময় নিতে লাগলো।

কয়েকদিন পর থেকে রাশেদ আর তমাকেই আমরা পাশাপাশি দেখা শুরু করলাম। একসাথে গল্প করা, একসাথেই টিফিন। প্রথমে জানতাম বন্ধুত্ব। অনেকদিন পর জানলাম, রাশেদ, রায়হানের জন্য প্রস্তাব দিতে গিয়ে নিজের জন্যই বলে ফেললো। বেচারা রায়হান! কষ্ট লুকাবে কোথায়।

রাশেদ আর রায়হানের কথা বলাবলি অনিয়মিত তখন থেকেই। ............ এমনতর আরো কতো গল্প বন্ধুদের, বড়ভাইদের প্রেম কাহিনীতে। তৃতীয় পক্ষ এর মজাটাই এখানে। অন্যদের সিরিয়াস প্রেম বিষয়গুলো নিয়ে মজা করা যায় ইচ্ছেমতো। আর আপনি যদি নিজেও প্রেমে জড়িয়ে থাকেন, অন্যদের প্রেম কাহিনী নিয়ে মজা না করাই মনে হয় ভালো।

এটা ও এক ঘটনা থেকেই বললাম। এমনতর আরো কিছু গল্প বলা যাবে হয়তো অন্য কোনদিন, অলস সময়ে। ততক্ষণ সবাই ভালো থাকুন। প্রেমেতেই থাকুন। প্রেম করুন কিংবা প্রেমে সাহায্য করুন! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.