আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি সিগারেট কোম্পানির যশোরস্থ বিক্রয়কর্মীদের দুরবস্থা : বেতন ৮, পাচ্ছেন ৩ বা ৪ হাজার টাকা !

দিনরাত পরিশ্রম করে কাক্সিক্ষত বেতন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন একটি টোব্যাকো কোম্পানির যশোরস্থ বিক্রয় প্রতিনিধিরা। তাদের বেতন ৮ হাজার টাকা হলে মাসশেষে অনেকেরই পকেটে আসে তিন থেকে চার হাজার টাকা। গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে ঐ কোম্পানির একজন প্রডাক্ট প্রমোটর হিসেব করে দেখেছেন ঐ মাসে তার বেতন দাঁড়ায় মাত্র আড়াইশ’ টাকা ! অবিশ্বাস্য মনে হলেও অহরহ এ রকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন সেইসব কর্মীরা। চাকরির দুর্মূল্যের বাজারে লেখাপড়ার পাশাপাশি আবুল খায়ের টোব্যাকো কোম্পানির র‌্যালি ও ম্যারিজ সিগারেট এবং স্যালমন ও ফ্লেম বক্স দিয়াশলাই বিক্রির কাজে অংশ নেন রহমান। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রাত ১০টা বা ১১টা পর্যন্ত তাকে কাজ করতে হয়।

কোম্পানি থেকে প্রতিদিন একটি লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে দেয়া হয়। একেক রুটে একেক রকম থাকে সেই লক্ষ্যমাত্রা। কোনদিন তাকে দেয়া হয় ১ হাজার স্টিক সিগারেট। এসব সিগারেট ভোক্তাদের কাছে তেমন একটা চাহিদা না থাকলেও লক্ষ্য তাদের পূরণ করতে হয়। কীভাবে সেই লক্ষ্য পূরণ ? লক্ষ্যপূরণের পেছনে রয়েছে এক করুণ কাহিনী।

প্রায় প্রতিদিনই টার্গেট মিস হয় ট্রেড সেকশনের কর্মী কোম্পানির ভাষায় পিপি (প্রডাক্ট প্রমোটর) রহমানের। তিনি সারাদিন পরিশ্রম করে কোনদিন হয়তো ৭০ বা ৮০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সমর্থ্য হন। কিন্তু এতে কোম্পানি খুশি হয় না। বাকি ৩০ বা ২০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট কর্মীকেই কোম্পানি রেটে মালামাল ক্রয় করে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হয়। রহমান জানান, চাকরি জীবনের ৭/৮ মাসে এভাবে প্রায়ই তাকে দুই-তিন হাজার টাকার সিগারেট বা দিয়াশলাই কিনে কোম্পানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন পিপি বলেন, প্রতিনিয়ত আমাদের এই অমানবিক আচরণের শিকার হতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কষ্টের মধ্যে রয়েছেন এসআর-রা (সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ)। তাদের কোন কোন মাসে বেতনের সম পরিমাণ টাকার মালামাল কিনে টার্গেট পূরণ করতে হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ কোম্পানির যশোরে সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ ও ভ্যানপুলার আছেন ২৪জন, প্রডাক্ট প্রমোটর ও অ্যাসিস্ট্যান্ট মার্কেটিং অফিসার আছেন ৪২ জন। এত কষ্টের মধ্যেও কেন এ কাজের সাথে সম্পৃক্ত আছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে কয়েকজন পিপি জানান, বাড়ি থেকে টাকা-পয়সা পাওয়ার মত অবস্থা নেই।

ভাবি, সামনের মাসে হয়তো পরিস্থিতি একটু ভাল হবে। তাছাড়া তিন-চার হাজার টাকা যা পাই তাতেও কিছু উপকার হয় পরিবারের। তারা সবাই এক বাক্যে বলেন, কখনো সখনো তাদের টার্গেট পূরণ হলেও এখানকার টেরিটরি সেলস অফিসার-টিএসও সেলিম অতিরিক্ত মালামাল বিপণনের নির্দেশ দিয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে তাদের আরো বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এই টিএসও’র কারণেই তাদের কয়েকজন চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলে তারা অভিযোগ করেন।

এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় কোম্পানির আরএসও (রিজিওনাল সেলস অফিসার) সুব্রত বিশ্বাসের সাথে। তিনি বলেন, প্রত্যেক কোম্পানির আলাদা আলাদা পণ্য বিপণনের কৌশল থাকে। এগুলো একেবারেই অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। টার্গেট পূরণের বিষয়ে তিনি বলেন, অনেকেই হান্ড্রেড পার্সেন্ট কাভার করেন। কেউ কেউ পারেন না।

সেক্ষেত্রে কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ীই কর্মকা- পরিচালিত হয়। এসব বিষয়ে বিস্তারিত বলতে তিনি তার অপরাগতা প্রকাশ করেন। # ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.