আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বপ্ন চূড়া-১--- তারেক মাহমুদ

পর্ব---২স্বপ্ন চূড়া-২--- তারেক মাহমুদ পর্ব---৩ স্বপ্ন চূড়া-৩--- তারেক মাহমুদ পর্ব---৪ স্বপ্ন চূড়া-৪--- তারেক মাহমুদ পর্ব---৫ স্বপ্ন চূড়া-৫--- তারেক মাহমুদ অনেক দিন ধরেই পাহাড়ে যাওয়ার স্বপ্ন লালন করছি মনের ভেতর। স্বপ্নটা কোন ভাবেই আর পূরন করতে পারছিলাম না। যখন কোন পত্রিকায় কিংবা কোন ব্লগে বান্দরবান নিয়ে কোন লেখা পেতাম খুব মনযোগ দিয়ে পড়তাম আর ভাবতাম ‘কবে যাব পাহাড়ে? আহারে… আহারে…’। ব্লগে একদিন সৌম্য ভাইয়ের এক পোস্ট পড়ে জানতে পারলাম তারা বান্দরবান যাচ্ছে । তাকে জানালাম আমিও যেতে চাই তাদের সাথে….. “ আমি ও আমার কাজিন মেহেদী বান্দরবানে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম।

বাসের টিকেট সৌম্য ভাই করে ফেলেছেন। হাতে সময় বেশি নেই। তাই এর মাঝেই সৌম্য ভায়ের সাথে আমি ছোট একটি মিটিং করে নিলাম কেনাকাটা সম্পর্কে। পাহাড়ে আমাদের কি কি দরকার হতে পারে যা পাহাড়ে পাওয়া যাবেনা আমাদের ঢাকা থেকেই কিনে নিয়ে যেতে হবে। কেনাকাটার মাঝে ছিল শুকনো খাবার যেমন লজেন্স, চাটনি, খেঁজুর, নুডুলস ।

আর মশা তাড়ানোর জন্য নিলাম ওডমস। সবকিছু ঠিকঠাক করে ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখ রাত ১০ টায় আমি আর মেহেদী উপস্থিত হলাম বাস কাউন্টারে। এখনও কেউ আসেনি। আমি সৌম্য ভাইকে ফোন দিলাম, সে বলল ‘আমি পথেই আছি, কিছুক্ষনের মাঝেই চলে আসব’। আমাদের এই গ্রুপের সদশ্য সংখ্যা হচ্ছে মাত্র দশ জন।

এই দশ জনের মাঝে আমার পরিচয় হয়েছে মাত্র চার জনের সৌম্য ভাই, মনা ভাই, ইস্তীয়াক ও জাকারিয়া আর যাদের সাথে আমার কোন আলাপ বা পরিচয় নেই তারা হচ্ছে বকর ভাই, শরিফ, শামিম ভাই (ত্রিভুজ) ও রাকিব ভাই। এদের সাথে আমার আগে দেখা বা আলাপ হয়নি। শুধু মাত্র শামিম ভাইয়ের সাথে ব্লগে দুই-একবার কমেন্টস্ চালাচালি হয়েছিল। আমাদের এই গ্রুপে মনা ভাই প্রায় গত ছয় সাত বছর ধরে পাহাড়ে ট্রেকিং করছেন। ইস্তীয়াক, শরিফ ভাই এবং সৌম্য ভাই এর আগে দুবার বান্দরবানে ট্রেকিং করেছে।

আর এই চারজন বাদে আমরা সবাই পাহাড়ে এবার নতুন। জানিনা আমাদের সামনে কি এ্যাডভেঞ্চার অপেক্ষ করছে। আমাকে বলা হয়েছিল বাস ছাড়বে রাত সাড়ে ১১ টায়। সময় আছে দেখে আমি ও মেহেদী বাস কাউন্টারের অপর পাশে এক রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম। এর মাঝেই সৌম্য ভাই বাস কাউন্টারে এসে আমাকে ফোন করে জানতে চাইল আমরা কোথায় আছি ? আমি জানিয়ে দিলাম আমরা বাস কাউন্টারের সামনে এক রেস্টুরেন্টে হালকা নাস্তা খাচ্ছি।

খাবার শেষ করে কাউন্টারে ফিরে এলাম। এসে দেখি সৌম্য ভাই, ইস্তি, জাকারিয়া ও নতুন একজন কাউন্টারের সামনে দাঁড়ীয়ে আছে। আমাদের দেখে তারা এগিয়ে এল। সৌম্য ভাই পরিচয় করিয়ে দিল নতুন ছেলেটির সাথে; ও হচ্ছে শরিফ। আমি আমার কাজিনকে তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম।

তাদের সাথে আমরা কুশল বিনিময় করলাম । এর মাঝেই জানতে পারলাম আমাদের বাস রাত বারটায়। এর পর একে একে শামিম ভাই ও বকর ভাই চলে এলেন। সৌম্য ভাই এদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল । সৌম্য ভাই জানালেন রাকিব ভাই আমাদের বাসের টিকেট না পেয়ে রাত সাড়ে দশটার বাসে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে চলে গেছেন।

মনা ভাই আমাদের গ্রুপ লিডার আর উনি আমাদের দু’দিন আগেই রাতুল ভাইয়ের সাথে এক ট্রিপে থানচি চলে গেছেন। তিনি আমাদের সাথে আগামীকাল সকালে বলীপাড়া বাজারে মিট করবেন। আমরা বলীপাড়া বাজার থেকে ট্রেকিং করে কেওকারাডং এর উদ্দেশ্য রওনা দেব । মাঝখানে আমরা প্রথম রাতে থাকবো চ্যামা খাল নামে আদিবাসীদের এক পাড়ায় এবং দ্বিতীয় রাত বগালেকে এবং এর পরদিন আমরা চলে যাব স্বপ্নের চূড়া কেওকারাডং জয় করার জন্য। বাস আসতে দেরি করছে।

আমরা বাস কাউন্টারের ভিতরে গিয়ে একটা জমপেশ আড্ডা দিলাম। এভাবেই সময় পার হতে হতে আমাদের বাস এলো রাত বারটা বিশ মিনিটে। আমরা বাসের লাগেজ বক্সে আমাদের ব্যাগ-প্যাক রেখে টোকেন নিয়ে বাসের সিটে গিয়ে বসলাম। বাস ছাড়ল সাড়ে বারটায়। আমরা বাসে আবার আড্ডায় মেতে উঠলাম… কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি মনে নেই।

মাঝ রাতে বাস যখন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের এক রেস্টুরেন্টে থামল তখন আমাদের পেট ক্ষুধায় চুঁ চুঁ করছিল। যে যার মত নিন্ম চাপ কমিয়ে নিলাম। এরপর আমরা এখানে পরোটা-শবজী খেলাম। বাস আবার চলতে শুরু করল । ভোর সাড়ে পাঁচটায় আমরা চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে নেমে গেলাম।

সৌম্য ভাই রাকিব ভাইকে ফোন দিলেন, সে জানাল তার বাস মাঝ পথে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাই তার আসতে একটু দেরি হচ্ছে। বকর ভাই, মেহেদী ও শামিম ভাই নামাজ পড়ার জন্য চলে গেল । আমরা রাকিব ভাইয়ের জন্য অপেক্ষাই রইলাম । এর মাঝে সৌম্য ভাই চট্টগ্রামের বেশ কটা স্পটের কথা বললেন।

তার প্রিয় একটি স্পট হচ্ছে জিইসি মোড়ের এসি টয়লেট । ওনি যে কবার এখানে এসেছেন সে কবার ওখানে বসে …করেছেন ও একটু ঘুমিয়ে নিয়েছেন । দুঃখের বিষয় হচ্ছে এসি টয়লেট টি আজ আর নেই, সিটি করপোরেশন তা ভেঙ্গে ফেলে। আমাদের দলের নামাজীরা নামাজ পরে চলে এলো । এর কিছু পরে রাকিব ভাইয়ের ফোন তিনি চলে এসেছেন।

সৌম্য ভাই তার ব্যাগ থেকে গ্রুপের জন্য যে শুকনো খাবার এনেছেন তা আমাদের সকলের ব্যাগে ভরে দিলেন। আমার ব্যাগ প্যাক ছিল অনেক ভারি আর এবার আমার ব্যাগের সাইজ ও ওজন ছোট খাট একটা চালের বস্তার মতো হয়ে গেল। বুঝতে আর দেরি হল না পাহাড়ে ট্রেকিং এর সময় আমার খবর আছে। আমরা সবাই একসাথে লোকাল বাসে করে জিইসি মোড় থেকে বহদ্দার হাটের বাস টার্মিনালে এসে নামলাম। নেমে দেখি এটা জিয়া কমপ্লেক্স এর পাশে।

আমি এর আগে একবার এখানে এসেছিলাম, কিন্তু জানা ছিলনা এখান থেকেই বান্দরবানের বাস ছাড়ে ! এখানে আধঘন্টা পর পর বান্দরবানের উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। এখানে আমরা প্রথম বাসটি মিস করলাম। পরের বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। এর মাঝে বাস চলে এল। সুরুভি নামের বাসের টিকেট কেটে আমরা বাসের আসনে গিয়ে বসলাম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.