আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুলিশের নির্যাতনে গুরুতর আহত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এমইউ আহমদ।

পৃথিবীর কাছে তুমি হয়তো কিছুই নও, কিন্তু কারও কাছে তুমিই তার পৃথিবী" তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অথবা অন্য যে কোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করে উন্নত চিকিত্সা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ‘এমইউ আহমদকে গ্রেফতারের জন্য তার বাসায় যেসব পুলিশ সদস্য অংশ নিয়েছিল তাদের নাম প্রকাশ করার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না’ মর্মে কারণ দর্শানোর জন্য স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, ডিসি-ডিবি ও শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া এমইউ আহমদের চিকিত্সাসংক্রান্ত সব মেডিকেল রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতি আদালত রুল জারি করেন। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দেয়ার জন্য তাদের সবার প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একটি রিট আবেদনের ওপর শুনানি শেষে বিচারপতি ফরিদ আহমদ ও বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল এ আদেশ দেন।

এদিকে এমইউ আহমদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে গতকাল সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন কর্মসূচিতে সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন ঘোষণা করেছেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন আন্দোলন সুপ্রিমকোর্ট থেকেই শুরু হবে। তিনি বলেন, পুলিশের নির্যাতনে আইনজীবী এমইউ আহমদের জীবন আজ সঙ্কটাপন্ন। এতেই প্রমাণ হয় সরকার কতটা ফ্যাসিবাদী হলে একজন আইনজীবীকে এভাবে নির্যাতন করা যায়। অন্যদিকে, অ্যাডভোকেট এমইউ আহমদের ওপর পুলিশের বর্বর নির্যাতনের ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও নির্যাতনের কারণে দীর্ঘদিন ধরে অজ্ঞান অবস্থায় থাকায় তার উন্নত চিকিত্সা বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে এ রিট আবেদন করা হয়।

এমইউ আহমদের স্ত্রীর পক্ষে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বাদী হয়ে এ রিট করেন। গতকাল এ রিটের ওপর শুনানি করেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ও ব্যারিস্টার আমিনুল হক। শুনানির সময় রিটকারীর পক্ষে বিপুলসংখ্যক আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। শুনানিতে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, পুলিশের নির্যাতনেই সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য ও সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এখন মৃত্যুশয্যায়। দশদিন ধরে চিকিত্সা চালিয়েও চিকিত্সকরা তার জ্ঞান ফিরিয়ে আনতে পারেননি।

তিনি এখন হাসপাতালের আইসিইউতে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। গত ১০ আগস্ট পুলিশ তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় গ্রেফতার করে। পরে ডিবি অফিসে নিয়ে তার ওপর বর্বর নির্যাতন চালানো হয়। সুপ্রিমকোর্টের একজন আইনজীবীর জীবন যদি এভাবে পুলিশি নির্যাতনে ঝরে যায়, সেক্ষেত্রে দেশের একজন সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা কোথায়? জাতীয় স্বার্থে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত দোষী পুলিশ সদস্যদের শাস্তি হওয়া উচিত। তিনি বলেন, আদালতে আইনজীবীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি কোনো নতুন বিষয় নয়।

কিন্তু গত ২ আগস্ট হাইকোর্টের একটি বেঞ্চে দু’পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে এ ধরনের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক ঘটনা ঘটলেও পুলিশ শুধু বিরোধীপক্ষের আইনজীবীদের নামেই মামলা দায়ের করে। পুলিশ অভিযোগ করেছে, আদালতের ভেতরে অ্যাডভোকেট এমইউ আহমদসহ আইনজীবীরা পুলিশের কাজে বাধা দিয়েছেন। অথচ সবাই জানেন, আদালতের ভেতরে কোনো সময়ই পুলিশ উপস্থিত থাকে না। পুলিশ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে এ মামলা দিয়েছে। পরে ওই মামলায় অ্যাডভোকেট এমইউ আহমদকে গ্রেফতার করে হত্যার উদ্দেশ্যে তার ওপর নির্যাতন চালায়।

আইনজীবীদের শুনানি শেষে আদালত ওই আদেশ দেন। প্রসঙ্গত, গত ২ আগস্ট হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ শুধু বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের বিরুদ্ধে পুলিশি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করে। এ মামলায় পুলিশ সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমইউ আহমদকে তার সেগুনবাগিচার বাসা থেকে গত ১০ আগস্ট গ্রেফতার করে। ডিবি অফিসে নিয়ে তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালায় পুলিশ।

পুলিশের নির্যাতনে অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর চেষ্টা করা হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি নিতে অপারগতা প্রকাশ করে। পরে পুলিশ তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করে। সেখান থেকে তাকে স্কয়ার হাসপাতালে আইসিইউতে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে চিকিত্সা দেয়া হচ্ছে। এখনও তার জ্ঞান ফেরেনি বলে চিকিত্সকরা জানিয়েছেন।

সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের মানববন্ধন : সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এমইউ আহমদের ওপর পুলিশের বর্বর হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত আইনজীবীদের মানববন্ধন কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সমাবেশে সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক সরকারের হাতে দেশের মানুষের জীবন নিরাপদ নয়। সরকারের প্রত্যক্ষ নির্দেশেই পুলিশ সুপ্রিমকোর্ট বারের সদস্য অ্যাডভোকেট এমইউ আহমদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালিয়ে তাকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছে। ব্যর্থ সরকারের পতনে ঈদের পর একদফা আন্দোলনে দল-মত নির্বিশেষে দেশের সব আইনজীবীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি সরকারের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আমাদের সদস্য এমইউ আহমদের কিছু হলে আদালত থেকেই সরকার পতন আন্দোলনের সূচনা করা হবে। পুলিশ দিয়ে জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে আন্দোলন স্তব্ধ করা যাবে না।

আইনজীবীদের নামে মিথ্যা মামলা ও পুলিশের অমানবিক নির্যাতনে গুরুতর আহত এমইউ আহমদের উন্নত চিকিত্সাব্যবস্থার দাবিতে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি এ মানববন্ধন কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে আয়োজিত এ প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রী ও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও অ্যাডভোকেট সাঈদুর রহমান, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, সুপ্রিমকোর্ট বারের কোষাধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, মির্জা আল মাহমুদ, মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, গাজী কামরুল ইসলাম সজল প্রমুখ। প্রসঙ্গত, গত ২ আগস্ট হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ শুধু বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের বিরুদ্ধে পুলিশি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করে। এ মামলায় পুলিশ সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমইউ আহমদকে তার সেগুনবাগিচার বাসা থেকে গত ১০ আগস্ট গ্রেফতার করে।

ডিবি অফিসে নিয়ে তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালায় পুলিশ। পুলিশের নির্যাতনে জ্ঞান হারান তিনি। এখনও তার জ্ঞান ফেরেনি বলে চিকিত্সকরা জানিয়েছেন। অ্যাডভোকেট এমইউ আহমদের ওপর পুলিশের বর্বর নির্যাতনের প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন আরও বলেন, অতীতে অনেক ক্ষমতাশালী সরকারকে দেশ চালাতে দেখেছি। আমরা আইয়ুবের স্বৈরশাসন ও শেখ মুজিবের বাকশালও দেখেছি।

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীদের গায়ে হাত দেয়ার সাহস কোনো স্বৈরশাসকই দেখাতে পারেনি। বর্তমান সরকারের প্রত্যক্ষ ইঙ্গিতে সুপ্রিমকোর্টের একজন আইনজীবীকে পুলিশ ধরে নিয়ে পিটিয়ে মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছে। সরকার মুখে আইনের শাসন ও সুশাসনের কথা বললেও বাস্তবে আইয়ুব-ইয়াহিয়ার চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি বলেন, ইতিহাস সাক্ষী দেয়—সরকারের পায়ের নিচের মাটি যখন সরে যায় তখনই তারা জুলুম-নির্যাতনের পথ বেছে নেয়। বর্তমান সরকারের স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড আমাদের সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।

দেশবাসীর মৌলিক ও মানবাধিকার বলতে কিছুই নেই। সরকার দেশ চালাতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এখন নির্যাতন চালিয়ে মানুষকে দমিয়ে রাখতে চায়। এ অবস্থায় জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য একদফার আন্দোলনে আইনজীবীদেরই এগিয়ে আসতে হবে। ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দেশের মানুষের নাভিশ্বাস। শেয়ারবাজার থেকে ৩৩ লাখ ক্ষুদ্রবিনিয়োগকারীর ৮০ হাজার কোটি টাকা লুট করেছেন সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা। সড়ক ও মহাসড়ক সংস্কারের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ লুটপাট করে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ধসিয়ে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় সরকার মানুষের দৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে বিরোধী দল ও মতের নাগরিকদের নামে মিথ্যা মামলা করে পুলিশকে লেলিয়ে দিয়েছে। জনগণের টাকায় পালিত পুলিশকে জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার না করার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, সরকারের দলীয় নেতাকর্মীদের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিতে দেশের মানুষ অস্থির। এ অবস্থায় সরকারের মন্ত্রীরা বাজারে না যেতে ও কম খেতে পরামর্শ দিয়ে মানুষের সঙ্গে তামাশা করছেন। এদের বিন্দুমাত্র লজ্জা-শরম থাকলে বহু আগেই পদত্যাগ করে জাতিকে মুক্তি দিত। অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগ দাবি করে তিনি বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল পদটি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় পদ। অথচ বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রাষ্ট্রের নয়, আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব করছেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.