আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছিনতাই

প্রবাসী ঢাকাতে থেকে রাত বিরেতে ঘোরাফেরা করতে হয় অথচ ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন নি এমন লোকের সংখ্যা কম। আমার ব্যাক্তিগত জীবনে এ রকম কয়েকটা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছিল। অভিজ্ঞতা গুলো সবাইকে জানাতে চাইছি এই কারনেই যে মজা পাবেন পাঠকেরা। আপাততঃ ৫ টা ছিনতাইয়ের ঘটনা মনে করতে পারি। সময়ের স্বল্পতার কারনে সবগুলো এখনই হয়ত বলতে পারবো না তবে ভবিষ্যতে বাদ বাকি গুলো বলার আশা রাখি।

প্রথম ছিনতাইঃ- না এটা ছিনতাই ছিলো না , ছিনতাই কারী দের হাত থেকে বেচে যাওয়ার ঘটনা। বেচে গিয়েছিলাম কারন হয়ত তখনকার দিনের ছিনতাইকারীরা আজকার মত আধুনিক হয়ে ওঠে নি। আর তখন আমার বয়স ও ছিলো অল্প। কিছুটা বেপরোয়া ভাব ছিল সেই ১৯৮৫ সালে । ছাত্র মানুষ , বিয়ে সাদী করিনি ।

সরকারী চাকুরী থেকে যে বেতন পেতাম তা দিয়ে চলে যেত ভালমত , কারন থাকা ছিল ফ্রি। “ Bachelor lives like a king” নিজেকে ছোট খাট রাজাই মনে করতাম, চোখে তখন “হ্যান করেঙ্গা ত্যান করেঙ্গা” ইত্যাদি স্বপ্ন। স্নাতোকোত্তর গবেষনা ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান বা আই,পি, জ্‌ এম আর এ পড়ি। থাকতাম A ব্লকের হোস্টেল এ। অর্থাৎ যাদুঘরের উলটো দিকেই পি,জি হাসপাতালের যে বিল্ডিং, ওটাতে।

হোস্টেলের জানলা খুললেই চোখে পড়ত যাদুঘরের দালান। সেদিন এম, বি, বি এস ক্লাসের বন্ধু বাসুদেব দাস এল রাত ১০ টার দিকে হোস্টেল এ। ও তখন বাসা নিয়েছে নাখাল পাড়ায়। নতুন বিয়ে করেছে । আমি বললাম “ চল তোর বৌকে দেখে আসি” সানন্দে রাজী হয়ে গেল বাসুদেব।

বেরোতে বেরোতে বাজল রাত ১১ টার মত। রাত ১২ টা থেকে কারফিঊ। এরশাদের মার্শাল ল' চলছে। পিজি হাসপাতাল থেকে নাখাল পাড়া খুব বেশী দূরও নয়। একটা রিকশা নিয়ে দুই বন্ধু রওয়ানা দিলাম নাখালপাড়ার উদ্দেশ্যে।

তখন ভি আই পি রাস্তা দিয়ে রিকশা চলত আর ট্যাক্সি ছিল না সে সময়। দুটো বিড়ি ধরিয়ে সুখটান দিতে দিতে দুই বন্ধু পুরান দিনের গল্প, বন্ধুবান্ধবদের গল্প করতে করতে খোশ মেজাজে চলেছি। খেতাম তখনকার দিনের দামী 555 Cigarette কিন্তু বলতাম বিড়ি। ১৫/ ২০ মিনিটে পৌছে গেলাম “ড্রাম ফাক্টরীর গলিতে” গলিতে ঢুকে কিছু দূর গেলেই বাসুদেবের বাসা। তখন আজকার প্রধানমন্ত্রীর কার্য্যালয় ছিল “প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের কার্য্যালয়” তার প্রাচীরের পাশ দিয়ে চলেছি রিকশা করে ।

ডান দিকে বাসুদেব আর বাম দিকে আমি বসে। ফাকা রাস্তা রিকশা বেশ জোরেই চলছে। ২/৩০০ গজ যাওয়ার পর দেখি কিছুটা অন্ধকার মত যায়গায় একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে একেবারে রাস্তার উপর, গাছের তলায় একটা বেবী ট্যাক্সি। রিকশা চালক ঘন্টা বাজিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলেও লোকটা সরল না। রিকশা ওয়ালা তখন ডাইনে কেটে বেরিয়ে যেতে চাইল।

লোকটা রিকশার হাতল ধরে থামাতে চাইল রিকশাকে । বেশী বেগ থাকায় রিকশা কে থামাতে সময় লাগল কিছুক্ষন। ইতি মধ্যে বেবী ট্যাক্সি থেকে আরো দুজন বেরিয়ে এল। একজন ডান দিকে বসা বাসুদেবের দিকে আর একজন এল আমার দিকে। বাসুদেব ছিল ডান দিকে আর ছিনতাই কারীরা এল বাম দিকে দাঁড়িয়ে থাকা বেবী ট্যাক্সি থেকে।

বাসুদেব আচ করতে পেরেই রিকশা থেকে লাফ দিয়ে পড়ে দিল দৌড়। । একজন ছিনতাই কারী আমার বাম হাতে পরে থাকা ঘড়ি ধরে বলল “ ঘড়ি দে” তখনকার দিনের দামী ঘড়ি”Seiko Automatic” দুই হাজার টাকা দিয়ে মাত্র অল্প কয়েকদিন আগে কিনেছি। আমি একা ধরা খাচ্ছি? সামনের হাতল ধরে থাকা ছিনতাই কারি এগিয়ে আসছে সামনের থেকে। আমি রিকশার উপর বসা।

পায়ে বুট জুতো। সামনে থেকে এগিয়ে আসা ছিনতাই কারীকে দিলাম লাথি আর বাম হাতের ঘড়ি ধরা ছিনতাইকারীকে হাত দিয়ে ধাক্কা দিলাম। দুটোই পোলাপান মানুষ ১৫/২০ বছর হবে বয়স। লাথি খেয়ে সামনের ছিনতাই কারী পড়ে গেল রাস্তায় আর বাম দিকেরটা সরে গেল কিছুটা দূরে অর্থাৎ সামনে ফাকা। আমিও দিলাম লাফ রিকশা থেকে।

ফাকা পেয়েই দৌড়। অলিম্পিকে যে জোরে দৌড়ান দৌড়বিদরা তার থেকে ও বেশী জোরে দৌড়ে পৌছলাম সামরিক আইন প্রশাসকের কার্য্যালয়ের পেছনের ছোট পুলিস ফাড়ীতে। শুনলাম পেছন থেকে এক ছিনতাই কারী চিৎকার করে উঠলো ‘গুলি কর, গুলি কর” ঘটনা গুলো ঘটছে বিদ্যুৎ গতিতে। পুলিস ফাঁড়িতে পৌছে হাফাতে হাফাতে বললাম “ ভাই ঐ যে দেখুন ছিনতাই হচ্ছে একটু দেখুন” পাশের চা ‘এর দোকানে বসে থাকা পুলিস হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করল” কি নিল ছিনতাই কারীরা, ছুরি বা পিস্তল ছিল কিনা ইত্যাদি” কিন্তু তাদের নড়ার কোন লক্ষন দেখা গেল না। বিশ্রাম নিচ্ছি ।

আমাদের পেছনের রিকশা গুলো এল ততক্ষনে। মজার ব্যাপার হল ওরই এক রিকশাতে ছিল ঐ পুলিস ফাড়ির হাবিলদার সাদা পোশাকে । হাবিলদার কাঁদছে। এতক্ষনে পুলিস এগিয়ে এল “কি হল ওস্তাদ ? কাঁদেন কেন? তার ঘড়ি মানি ব্যাগ সব ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। এবার পুলিস দৌড় দিল ছিনতাই স্থলের দিকে, আর ছিনতাইকারীরা ততক্ষনে পগার পার।

। চিন্তা করুন ছিনতাইয়ের জায়গা থেকে মাত্র ১৫/ ২০ ফুট দূরে সীমানা প্রাচীরের উপর মেশিন গান নিয়ে বসে আছে সেনা বাহিনীর লোক । যাই হোক সেদিন প্রান এবং মানি ব্যাগ দুটোই বেচেছিল। এর পরের ছিনতাই গুলোতে মানিব্যাগ বাচেনি কিন্তু জান যে বেচেছে তা তো আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। জান বাচানো ফরজ মনে করে পরের ছিনতাই গুলোতে ছিনতাইকারীদের নির্দেশ পালন করেছি অক্ষরে অক্ষরে।

আমি জানি না ছিনতাই কারীরা ব্লগ পড়ে কিনা বা সেই দিনের ছিনতাইকারী কে ছিল। তবে আমার বোকামীর জন্য আজও অনুতাপ হয়। কি ভুলই না করেছিলাম সেদিন, কোণ পূন্যফলে সেদিন জানটা বেচেছিল। যদি কোন ছিনতাই কারী এই লেখাটা পড়েন তবে নিজগুনে আমাকে সেই লাথি খাওয়া ছিনতাই কারীর তরফ থেকে এবং সমগ্রিকভাবে ছিনতাইকারী সমাজের পক্ষ থেকে ক্ষমা করে দেবেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।