আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানবকল্যাণে মান্নান

মান্নান নামে এক বন্ধু, বড় ভাইটাইপ লোক আছে আমাদের এলাকায়। মানবকল্যাণের জন্য নিবেদিত এক প্রাণ। তার মানবকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডে এখন আমার প্রতিদিন সকালে মোবাইল বন্ধ করে রাখতে হয়। কারণ রাত করে ঘুমানো আমার প্রতিদিন ঘুম ভাঙে মান্নান ভাইয়ের সেবামূলক এসএমএসে। এসএমএসের ধরন এরকম- ডিয়ার ফ্রেন্ড আজ বিশ্ব অমুক দিবস।

এই দিনে আমরা আসুন এই এই করি। বিশ্বকে আগামী প্রজন্মের জন্য বসবাসের উপযোগী করে দেই। মান্নান ভাইয়ের এই টাইপের এসএমএস পেতে পেতে আগামী প্রজন্ম তো দূরে, এই প্রজন্মের আমাদেরই বসবাসের অনুপোযুক্ত হয়ে উঠছে পৃথিবী। এখনও মোবাইলে তার গোটা দশেক বিভিন্ন দিবসমূলক এসএমএসের জ্যাম হয়ে আছে। আমি প্রায়ই তার সঙ্গে দেখা হলে বলি ভাই, আমার জন্য বরাদ্দকৃত এসএমএসের টাকাটা নগদ দিয়ে দেন।

কারণ দিবসগুলো একটু পর পত্রিকাতেই দেখা যায়। অথবা একই এসএমএস দিনের কোন না কোন সময় মোবাইল কোম্পানিই আমাদের পাঠায়। তাই টাকা অপচয় করে কি লাভ? মাসের হিসাব করে টাকাগুলো দিয়ে দিলে কিছু আয়ের সংস্থান হতে পারে। এর চেয়ে ভালোভাবে মানবকল্যাণ আর কী ভাবে হবে? মান্নান ভাই এখনও এ ব্যাপরে কোন কিছু স্পষ্ট করে জানাননি। দেখি কী হয়? ২. মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখলে মান্নান ভাইয়ের মন প্রায়ই কেঁদে ওঠে।

তার চেয়ে বেশি কেঁদে ওঠে তিনি এখনও বড় নেতা হতে পারেননি সেই দুঃখে। তিনি বহু চেষ্টা করে এই জায়গাটায় অনেক পিছিয়ে আছেন। এজন্য তিনি চেষ্টাও কম করেননি। বিভিন্ন আমলে তিনি বিরোধী দলের হয়ে হরতালে অংশ নিতে গেছেন। তার কাছে মনে হয়েছে হরতালে তিনি গ্রেফতার হয়েছেন, পুলিশ তাকে ধরেছে- এমন কোন ছবি সংবলিত পোস্টার যদি তিনি এলাকায় ছেড়ে দিতে পারেন তাহলে হয়তো একটা গতি হতে পারে।

এজন্য তিনি কয়েকবার অল্পের জন্য সফল হওয়াটা মিস করে গেছেন। একবার তিনি ধরা পড়তে গিয়েও পরেননি। আরেকবার তাকে ধরেও মিনিট দুয়েকের মধ্যে ছেড়ে দিয়েছে। তবে সবচেয়ে মর্মান্তিক ছিল শেষবারেরটা। তিনি তার পাশে লোকও রেডি করে রেখেছিলেন পুলিশ ধরা মাত্রই ছবি তুলতে পারে এমন।

ওইদিন প্রায় ষোলকলা পূর্ণ হতে হতে তেরো কলাতে এসে ঠেকে গেল। তিনিও বেশভাবে ছিলেন। পুলিশও তাকে ধরেছিল। কিন্তু ঘটনা ঘটল অন্য জায়গায়। পুলিশ তাকে ধরার সেকেন্ড তিরিশেক আগে ওই ফটোগ্রাফারের ‘ইয়ে’ ধরে যায়।

ফলে মান্নান ভাইকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় তার পাশে অনেকে থাকলেও একজন ফটোগ্রাফার ছিল না। যে হতাশার কথা বলতে গিয়ে মান্নান ভাই এভাবে বলেন, বিয়ে করলে আপনার ভাবিও যদি ওই দুঃসময়ে না থাকতো তবে এত কষ্ট পেতাম না। ফটোগ্রাফার না থাকায় যা পেয়েছি। মানব কল্যাণের নিমিত্তে মান্নান ভাই সেসময় রাগে-দুঃখে হতাশায় রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে নিজের বাড়িতেই নির্বাসন নিয়ে নেন। ৩. মান্নান ভাইয়ের এখন কর্মকাণ্ডের হিসাব তুলে ধরা যাবে না।

কারেণ তিনি তার মানবকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড বিভিন্ন স্পটে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছেন। এলাকাজুড়ে কোথাও ঝুলছে তার সৌজন্যে দেয়া লোকাল ট্রেনের সময়সূচি, লোডশেডিংয়ের সিডিউল আরও কত কী? তবে এবার একটি মহতী উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি এলাকায় নিজ খরচে তিনি গণবিবাহের আয়োজন করবেন। উল্লেখ্য, সেটা একটু পিছিয়েছে কারণ, তার হাতে টাকা-পয়সা এলে আগে নিজের বিষয়টা শেষ করে নেবেন। অথবা একসঙ্গে বেশি টাকা এসে গেলে অনেকের সঙ্গেই তিনিও সেই কাতারে শামিল হয়ে যাবেন বলে তার কল্যাণ প্রত্যাশী মানুষের কাছ থেকে গোপন সূত্রে জানা গেছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।