আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশ :গণতন্ত্র উত্তরণের উপায়, গণতন্ত্র না গনধর্ষন

কি বলব বাংলাদেশে দীর্ঘকাল যাবৎ লোকে খুব সহজে বিনা প্রস্তুতিতে গণতন্ত্র আশা করে আসছে এবং বার বার সে আশা ব্যর্থ হচ্ছে। ব্যর্থতার পরেও লোকে আশা ত্যাগ করছে না এবং একইভাবে আবার আশায় বুক বাঁধছে। ভোটাভুটির মহোৎসবে যোগদান করতে লোকের উৎসাহ- উদ্দীপনায় কোনো ঘাটতি দেখা যায় না। নির্বাচিত সরকার মানেই গণতান্ত্রিক নয়, বহু দিন ধরে চলে আসছে এ বিতর্ক। গণতন্ত্র বলতে আমরা পশ্চিমা ধাঁচের যে গণতন্ত্রকে বুঝি, তার মূল কথা হলো নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন।

এর আরো দু’টি মৌলিক বৈশিষ্ট্যের একটি হলো পরমতসহিষ্ণুতা; অপরটি ব্যক্তির মৌলিক মানবাধিকার। পরমতসহিষ্ণুতার অর্থই হলো বৈরী মতামতকে সম্মান জানানো বা সহ্য করে নেয়া। বহুমতের বিকাশ গণতান্ত্রিক সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এই মত বা আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে রাজনৈতিক দল। মতের পার্থক্যের কারণে রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের মধ্যে প্রতিযোগিতা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে।

কিন্তু কোনো দলের মত অন্য দলের মতকে নির্মূল করতে চাইতে পারে না। যদি কোনো দল তার একক মতামতকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করে অন্য সব মতের বিলুপ্তি ঘটাতে চায়, তখন সেই দেশ সর্বাত্মকবাদিতা বা একনায়কতন্ত্রের দিকে এগোতে থাকে। একনায়কতান্ত্রিক সরকার রাজতন্ত্র, সামরিকতন্ত্র, সাম্যবাদী দলতন্ত্র প্রভৃতির মাধ্যমে যেমন প্রতিষ্ঠিত হয় তেমনিভাবে নির্বাচনের মাধ্যমেও একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচিত হওয়ার পর সরকার ভিন্ন মতকে দমনের জন্য রাষ্ট্রশক্তি প্রয়োগ করে ক্ষমতাসীন দলের বারবার নির্বাচিত হওয়ার পথকে অবারিত করতে চায়। এ ধরনের ইতিহাস বিশ্বে বহু দেশে রয়েছে।

এর সর্বাধিক আলোচিত উদাহরণ হলো জার্মানির হিটলার ও তার নাৎসি দল। এই দল নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের রায় নিয়ে ক্ষমতায় বসে একপর্যায়ে অন্য সব দল নিষিদ্ধ করে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে সরকারি দলের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। আর সরকারি দলকে পরিণত করে হিটলারের ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছা বাস্তবায়নের হাতিয়ারে। গণতন্ত্রের অপর বৈশিষ্ট্য ব্যক্তির মানবাধিকারের বিষয়টি পরমতসহিষ্ণুতা বা বহুমত লালনের সাথে সম্পর্কিত। একজন বিখ্যাত মার্কিন চিন্তানায়ক বলেছিলেন, ‘আমি আপনি যা যা বলেছেন তার কোনোটার সাথেই একমত নই।

কিন্তু আপনার এই যে মতপ্রকাশ করার অধিকার তার জন্য আমি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সংগ্রাম করে যাবো। ’ গণতান্ত্রিক সংগ্রামের পথ ধরে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে। ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হলেও এ সংগ্রামের প্রয়োজন হয়েছিল জনগণের রায়কে পাকিস্তানের তদানীন্তন শাসকগোষ্ঠী মেনে না নেয়ার কারণে। স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে রাজনীতির গতিপথে একাধিকবার বাঁক পরিবর্তন ঘটেছে। ১৯৭২ সালের সংবিধান বৈশিষ্ট্যগত অনেকটাই গণতান্ত্রিক হলেও এতে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে গণতন্ত্রের চর্চাকে সীমিত করে দেয়া হয়।

পরে সংবিধানে তিনটি সংশোধনীতে বেরুবাড়ি হস্তান্তরসহ অন্যান্য বিষয়ের সাথে জরুরি অবস্থা জারির বিধানাবলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের পুরো গণতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যকে পাল্টে দেয়া হয়। বহুদলীয় ব্যবস্থাকে পাল্টে দিয়ে একদলীয় বাকশাল, বহু সংবাদপত্রের পরিবর্তে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত কয়েকটি সংবাদপত্র, সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের অরাজনৈতিক বৈশিষ্ট্যের অবসান ঘটিয়ে জাতীয় দলের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করা হয় এ সময়। এ ক্ষেত্রে জার্মানির সাথে বেশ খানিকটা মিল খুঁজে পাওয়া যায় বাংলাদেশের। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি দল বা সরকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে একদলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয় ১৯৭৫ সালে।

তাঁরা অন্তর্ঘাত সৃষ্টি করবেন, হরতাল-অরাজকতা সৃষ্টি করবেন, অর্থবিত্ত ঢেলে মিডিয়ার মাধ্যমে অপপ্রচার চালাবেন, অপরাজনীতিতে ফিন্যান্স করবেন, নির্লোভ-নির্ভীক রাজনীতিকদের হেনস্তা করবেন, এমনকি হত্যা করতেও দ্বিধা করবেন না। শহরে এক ধরনের মেরুদণ্ডহীন সুশীল সমাজ রয়েছে, তাদের বশে রাখবেন। গোলটেবিলে তালগোল পাকাবেন, বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবেন। গণতন্ত্রের পথ যেমন কুসামাস্তীর্ণ নয়, তেমনি কল্যাণতন্ত্রে উত্তরণও কণ্টকাকীর্ণ। ধনতন্ত্র থেকে কল্যাণতন্ত্রে উত্তরণ গণতন্ত্রের মাধ্যমেই সম্ভব।

তবে শুধু গণতান্ত্রিক পথে নিশ্চিত নয়। এর জন্য প্রয়োজন দৃঢ়চিত্ত, নির্লোভ রাজনৈতিক নেতা-কর্মী তথা রাজনৈতিক দল। সেই সঙ্গে প্রয়োজন সদা সচেতন শিক্ষিত স্বাবলম্বী অতন্দ্র প্রহরী, অর্থাৎ নাগরিক সমাজ। জনগণই রাষ্ট্রের মালিক_সাংবিধানিক এই ধারণাটির উপলব্ধি ঘটাতে হবে প্রত্যেক নাগরিকের হৃদয়ে। তাহলেই ধীরে ধীরে বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে একটি গণতান্ত্রিক কল্যাণ রাষ্ট্র।

এ কারণেই সম্ভবত জোর দিয়ে বলা হয় নির্বাচিত সরকার মানেই গণতান্ত্রিক সরকার নয়। নির্বাচিত হওয়ার পর গণতান্ত্রিক আচরণ ও মানসিকতার পরিচয় রাখলেই সেই নির্বাচিত সরকারকে গণতান্ত্রিক বলা অধিকতর সঙ্গত হয়। আজ বিষয়টি নতুনভাবে তাৎপর্যময় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের জন্য। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.