আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিংশ শতাব্দীর একটি অমনোনীত প্রেমের গল্প

সাইফ শাহজাহান ইভ আমার, জানি এ চিঠি তোমার মনের মতোটি হবে না, যেমনটি তোমার কাম্য ছিল কিংবা তোমার খণ্ড খণ্ড চিঠির প্রতি-চিঠিও এটি নয়। জানি তুমি এ চিঠির অনেক কিছুই বুঝবে না; তবুও চিঠিটা লিখছি, কারণ না-লিখে উপায় নেই। মানুষের এ রকম অনেক কিছু আছেÑ থাকেÑ যা না-করে উপায় থাকে নাÑ এই মুহূর্তে এ চিঠিটা ঠিক সে-রকম। আর তাৎক্ষণিকভাবেই সব কিছুকে বুঝে ওঠা যায় না, হƒদয়ঙ্গম বা উপলব্ধি করা যায় না, তাই এ চিঠি পড়ে সব কিছু তোমাকে বুঝতেই হবে এমন কোনও কথা নেই; কিংবা আমিই যে সব কিছু বুঝে-শুনে লিখছি এমনও নয়। এই মুহূর্তে আমি যে-মানসিক আবেগÑ অনুভূতি নিয়ে এই চিঠিটা লিখছি সেই আবেগÑ অনুভূতি তোমাকে স্পর্শ করে না-জাগালে এ চিঠির কিছুই তোমারই কেবল নয়Ñ কারো পক্ষেই অনুধাবন করা সম্ভব নয়।

অতএব মনোযোগ সহকারে চিঠিটা পড়বে আশা করি। মনে রাখবে, এ চিঠির জš§ তোমার সেই শর্তযুক্ত আবদারের কারণে নয়Ñ যে, তোমাকে একটি চিঠি লিখতে হবে বা চিঠি লিখতে পারি নাÑ বা লিখি না, এ রকম কোনও ব্যাপার থেকে তো নয় মোটেই। তোমাকে আজকে এ চিঠি লেখার কারণÑ তোমাকে যেভাবে তৈরি করতে চাই, যে কথাগুলো জানাতে চাইÑ সেগুলো বলা। ভেবেছিলাম কোথাও একদিন বেড়াতে নিয়ে গিয়ে বলবো কিন্তু আমারই সময়ের অভাব, পারিপার্শ্বিকতা বা উদ্যোগের অভাবে তা হয়ে উঠতে পারেনি বলেই এ চিঠিতে তা ব্যক্ত করছি। গত শীত থেকে এই শীতÑ প্রায় এক বছর ঘুরে এল শীত পরিক্রমায়, একটি বছর পেরিয়ে এসে আজ তুমি এবং আমি নিঃসন্দেহেই অন্যদের কাছে একটা জিজ্ঞাসা বা কৌতূহল।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার যেটা সেটা তুমিও জানো, তা হচ্ছে; আমরা নিজেরাও আমাদের নিজেদের কাছে একটা প্রশ্ন হয়েই আছিÑ তাই নয় কি? এই চিঠিটা হচ্ছে সেই প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধানÑ মীমাংসায় পৌছুবার পথ। অবশ্য প্রথম দিকে তুমি যেটুকু এগিয়েছিলে আমি ততটুকু এগুলে এই চিঠির জš§ই হয়তো হতো না। অনেকদিন আগেই তোমার বলার সাথে সাথে একটা মিষ্টি প্রেমের চিঠি লিখতে পারতাম তোমার কাছে কিন্তু তা হয়নি দেখতেই পাচ্ছো। আবার শেষ দিকে আমি যেটুকু এগিয়েছি তাতে তোমার একটু প্রশ্রয় পেলেও এ চিঠির জš§ হতো না। আমার মনে হয় আমরা দু’জনই দু’ জনকে ধরতে চেয়েছি কিন্তু এককভাবে যার যার মত করে-- ফলে কোনটাই মেলেনি।

দু’জনার দ্বন্দ্ব বিকাশের ক্ষেত্রে একাÍ হয়নি, আর তা হয়নি বলেই এই চিঠিটা লেখা। এখন কথা হচ্ছে আমরা এই দুই দ্বন্দ্বের একাÍার মধ্য দিয়ে ক্রমবিকাশ চাই কি-নাÑ আমরা উপরোক্ত ক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে একধাপ উত্তীর্ণ হতে চাই কি-না? যদি চাই, তাহলে গত এক বছর পরিপার্শ্বের কাছে আমরা যে জিজ্ঞাসা সেটার উত্তর হলো। আর না চাইলে সব কিছুর সমাপ্তি ঘটানো দরকারÑ কেননা পরিপার্শ্বের কাছে হেঁয়ালী, ধাঁধা করার অধিকার আমাদের কারোরই নেই। গত এক বছরে ইচ্ছে করলেই স্পর্শে-গন্ধে-রক্তে-মাংসে আমরা কাছাকাছি হতে পারতাম তা তুমি নিশ্চয়ই স্বীকার করবে। যে-কোনও পুরুষের কাছেই সেটা খুব সহজÑ আমি এই সহজ কাজটাই এক দিকে যেমন করতে পারিনি, অন্যদিকে তেমন করিনিÑ তা তুমিও জানো।

আবার পুরুষ হিসেবে আমি আর দশটা পুরুষ থেকে আলাদা নই নিশ্চয়ইÑ অন্তত, প্রবণতা এই জৈবিক চাহিদার ক্ষেত্রে এবং নারী হিসেবে তুমিও তাই-ইÑ এটা নির্মম এবং সত্যি। তাসত্ত্বেও গত এক বছর ইচ্ছেয়ই বলো আর অনিচ্ছায়ই বলো আমরা নিজেরা নিজেদের কাছে প্রশ্নরূপে থেকে, অন্যদের কাছে কৌতূহল হয়ে থেকেÑ আমার বিশ্বাস পবিত্রতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। আর গতানুগতিকভাবে আমাদের চারপাশের দেবদাস মার্কা (ক্ষমা কোরো, তোমার যেআবেগ অনুভূতি দিয়ে তুমি তাকে সমর্থন করো তার প্রতি পূর্ণ আস্থাসহ আমি শুধু নামটি ব্যবহার করছি প্রচলিত ইমেজকে বোঝাবার জন্য) সস্তা কোনও কাহিনী বা ঘটনার চরিত্র বনে যাইনি দু’জনে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমরা যদি একে অপরের ওপর আস্থাশীল হই, একে অন্যকে বোঝার চেষ্টা করি তবে সস্তা অমন কোনও কিছু হবেও না। এই চিঠি লেখার অন্যতম কারণ বোধ করি এটাই যে, আমি তোমার মধ্যে সিরিয়াসনেস চাইÑ চাওয়ার অর্থ হলো, আমার নিজের মধ্যেও তা আসুক বা আসতে তুমি সাহায্য করো।

জানি না কেন? হতে পারে শৈশব থেকে মা-কে না-জানার কারণেÑ আমি কোমল নম্র নই হয়তো, ন্যাকামো সহ্য হয় না আমার তাই তোমার সাথে কথায় কোনও ন্যাকামী থাকে নাÑ এটাই স্বাভাবিকÑ সে ন্যাকামী আমার দ্বারা হয়ও না; আমি চাই তুমিও এ ন্যাকামী মুক্ত হও। তোমাকে আমি কঠোর বাস্তবের মুখোমুুখি চাই। তোমাকে ঘিরে আমার কোনও মোহগ্রস্ততা নেই, আশা করি ব্যাপারটা তীব্রভাবে উপলব্ধি করবে। ঠিক তেমনই আমাকে ঘিরে তোমার কোনও মোহগ্রস্ততা থাক তা আমি চাই না। জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কোনও মোহ, কোনও প্ররোচনা, কোনও উপদেশ থেকে গ্রহণ করার মতো ভুল আর নেইÑ এ আমি অভিজ্ঞতা থেকেই সত্যি জানি।

তাই আমি চাই : লক্ষ্মীটি, তুমি তোমার মতো, সম্পূর্ণ নিজের মতো করে সঠিক এবং একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি বেছে নাও। লক্ষ্মীটি, আমি জানি এবং নির্মম সত্যি এটি যে, যৌবনে প্রবণতা নিয়ে চলার শুরু (আমি নিজেও প্রবণতাকে অস্বীকার করিনা কিন্তু প্রবণতার দাসে পরিণত হই না। ) মানুষ হিসেবে প্রবণতাকে অম্বীকার করা যাবে না কিন্তু প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মাত্রায় প্রবণতা আক্রান্ত হলে আমরা আর মানুষ বলে নিজেদের দাবি করতে পারি কি?) তাই আমি চাই না তুমি প্রবণতা চালিত হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নাও। লক্ষ্মীটি তুমি যদি আমার দিকে যথার্থই ধাবিত হও তবে তোমাকে আবারও গভীরভাবে ভেবে দেখতে বলবো, এমন কাউকে কি আসলে ভালোবাসা যায়Ñ যে শেকড়-বাকড়হীন! তুমি নিশ্চয়ই ভালোভাবেই জানো আমার সম্পর্কে অনেক কিছুই। পিতা-মাতা-ভাই-বোন এবং সর্বোপরি কপর্দকহীন এই আমাকে ভালোবাসার অর্থ দুর্ভাগ্যকে আজীবনের সাথী করাÑ তা আশা করি জানো।

যদি জেনে শুনেও, স্বেচ্ছায়, ভাবােেবগে তাড়িত না হয়ে তুমি এই দুর্ভাগ্যকে বরণ করতে চাও তাহলে অবশ্য আলাদা কথা। আমি চাই তুমি কোনও মোহান্ধতা ছাড়া, কারও কোনও রকম প্ররোচনা ছাড়া (আমরা কি পরিপার্শ্বের কাছ থেকে সম্পূর্ণরূপে প্ররোচিত এবং উপদেশে এ পথে আসিনি? মিথ্যা দিয়ে আড়াল করা যাবে না এ সত্যকে। কিন্তু সত্যিকার ভালোবাসার জন্য এটা কোনওক্রমেই থাকা উচিত নয়। ) কারো উপদেশ ছাড়াÑ গভীরভাবে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেবে। ক’দিন আগে একটা গল্পে কৃষ্ণাঙ্গদের একটা গানের কলি পড়েছি সেটা এ রকম : “আমি বন্দী হয়ে আছি আমার ভেতর, আমাকে মুক্ত করো, কুমারী হে তোমার ভেতর।

” লক্ষ্মীটি এই চিঠির মধ্যে আমি আমার যে-কথাগুলো তোমাকে বলা প্রয়োজন, বলতে চাই তা বললাম। এই চিঠির ভেতর আমি আমাকে মুক্ত করলাম; আশা করি আমাকে তুমি সঠিকভাবে উপলব্ধির চেষ্টা করবে। মনে রেখো: একজন শরীর সর্বস্ব মেয়েমানুষের চেয়ে, একজন প্রবণতা আক্রান্ত নারীর চেয়ে একজন বন্ধু আমার কাছে অনেক বড়, ব্যাপক, বিশাল এবং সত্য। আমি তাকে রক্তে-মাংসে-স্পর্শে-গন্ধে দলিত-মথিত-আদর করতে পারবো নাÑ যে আমার মর্মের সহচর নয়; যে আমাকে মর্মে ধারণ করবে না, যে আমার বন্ধু নয়Ñ তার ঠোঁটে আমি চুমু দিতে পারবো না কোনওদিনই, এতে ভুল নেই। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.