আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিষাক্ত আচার!!!

,,,কুয়াশার আড়ালে লুকানো ঘটনা কুয়াশার চাদরে জড়ানো সকালের মোহনীয় রূপের মত নিস্পাপ, নিস্কলঙ্ক, নির্মোহ নয়,,, ক্লাশ নাইন-টেন এ গোল্ডেন জি.পি.এ. পাবার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা সম্ভবত বাংলায় এ+ পাওয়া। অন্তত আমার জন্য ব্যাপারটা সেরকম ই ছিল। তাই পুরো বই টোটস্থ করার চেষ্টার অন্ত ছিল না। এখনও কিছু জিনিস হুবুহু মনে পড়ে। সমাস আমি খুব ভাল পারতাম।

যেমনঃ ন আচার= অনাচার। – এটা নঞ তৎপুরুষ সমাস। কিন্তু বিচার এর সমাস কি হবে সেটা বইতে ছিল না। ‘বিচার’ এর সমাস “বিশেষ আচার” হওয়া উচিত। এটা হবে নিপাতনে সিদ্ধ তৎপুরুষ সমাস।

বিচার ব্যাপারটা আসলে আমাদের সমাজে ‘বিশেষ’ কিছু একটা হয়ে গেছে। ভি.আই.পি. না হলে এই জিনিস্টা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। কিন্তু সাধারণ পাবলিক এই ব্যাপারটা এখনও বুঝে উঠতে পারে নাই। অমুকের লাশ কাটাতারে কেন?- বিচার চাই। অমুকের ক্রসফায়ার হল কেন?- বিচার চাই।

অমুকের পায়ে গুলি কেন?- বিচার চাই। বিচার বিচার করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ফেলি। কিন্তু বিচার কই? ভাই, মাথাটা একটু খাটান। সুস্থির হয়ে বসে চোখ বন্ধ করে একটু ভেবে বলুন তো’ ক’টা বিচার পেয়েছেন এ পর্যন্ত? বিচার চাইবার লিস্ট করতে করতে গন্ডায় গন্ডায় কলমের কালি শেষ হবে। আর বিচার পাবার লিস্টের প্রথম পাতায় ১.- এরপর আর কিছু নাই।

তাই শুধু শুধু চেচিয়ে লাভ কি? আপনার জমি দখল করেছে এলাকার এম.পি.’র ভাগ্নে। আপনি যাবেন থানায় ডায়েরী করতে। আপনার অভিযোগ তারা কানে তুলবে না। মামলা এজাহারভুক্ত করতে নিদেনপক্ষে দশ হাজার টাকা চা-বিস্কুট খেতে দিতে হবে। পুলিশ আসবে ভেরীফিকেশনে- দেখবে জায়গা আপনার- বলবে আপনিই দখলকারী।

পুলিশের এই সত্যি(!) রিপোট মিথ্যা করতে আপনার যাবে কমপক্ষে ৫০ হাজার। মামলা যাবে কো্র্টে। আপনি ধরবেন বড় উকিল। উকিলের সাথে আপনি বাপ-দাদার ভিটে রক্ষায় আবেগীয় পরামর্শ করবেন আর শব্দ গুনে টাকা দিবেন। মামলা চলবে আদালতে- মামলা আসলে চলবে না, মামলা ঘুরবে।

বছরের পর বছর ঘুরবে। আপনি কন্যা সন্তানের জনক হলে সেই মেয়ে বিয়ে দেবার পর আপনার নাতি-নাতনীরাও দেখবে মামলা ঘুরছে। এমনিভাবে ঘুরতে ঘুরতে আপনার কালো চুল সাদা হবে আর ফর্সা রঙ তামাটে হবে। কিন্তু আপনি বিচার পাবেন না। পাবেন না আপনার জায়গা।

আপনার জায়গায় দশতলা এপার্টমেন্ট হবে। আর তার মালিক হবে এম.পি.’র সেই ভাগ্নে। এমনি এক পঙ্গু সমাজের অথর্ব সিস্টেমের মধ্যে আমরা বেচে আছি। এই সমাজে প্রধানমন্ত্রী রাস্তা পার হবেন বলে এ্যাম্বুলেন্সের মৃত্যুপথযাত্রী রোগী ঠায় দাঁড়িয়ে সম্মান জানায়। এম.পি. সাহেবের বিলাসবহুল এপার্টমেন্ট তুলতে বস্তির জায়গা দখল হয়।

মন্ত্রীর দামী গাড়ী কিনতে শুল্ক ছাড়ের আইন হয়। কাজেই আসুন বোবা হই। চোখ অন্ধ করে ফেলি। কান কেটে ফেলি। আমি দেখব না আর কোন ফেলানীর লাশ- কারণ আমি অন্ধ।

আমি শুনব না আর কোন লিমনের আর্তনাদ- কারণ আমি কালা। আমি চাইব না আর কোন হত্যাকান্ডের বিচার- কারণ আমি বোবা। আপনি হয়তো এখনো বোবা নন। আপনি হয়তো আরো কিছুদিন বিচার বিচার করে চেচাবেন। আপনার কর্কশ কন্ঠের তীব্রতায় বিরক্ত হয়ে একদিন হয়তোবা বিচার পাবেন।

কিন্তু সেই বিচার হবে “বিষ মাখানো বিশেষ আচার” বিচার চাইবার অপরাধে বিষাক্ত আচার খাইয়ে আপনার মৃত্যু নিশ্চিত করা হবে। কারণ এটাই যে সিস্টেম, এটা একটা ইনফিনিটি লুপ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.