আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বাধীনতার পর ২৫ জন খুনি আসামীর রাষ্ট্রপতির ক্ষমা: আওয়ামী লীগের এই আমলেই ক্ষমা ফাঁসির ২১ আসামি।

মোঃ রেজাউল কবির বাংলাদেশে এই পর্যন্ত— মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত যে ২৫ আসামি রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়েছেন, তার ২১ জনকেই দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের বর্তমান আমলে। স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পাওয়া ফাঁসির আসামির সংখ্যা ছিল মাত্র চারজন। নবম সংসদের পঞ্চদশ অধিবেশনের প্রথম দিন বুধবার লিখিত এক প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর এই তথ্য জানান। আওয়ামী লীগের গত চার বছরের শাসনামলে ২০০৯ সালে একজন, ২০১০ সালে ১৮ জন এবং ২০১১ সালে দুজন ফাঁসির আসামি রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পান। আদালতের রায়ে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিতদের ওই দন্ড মওকুফ করে সাজা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে নামিয়ে আনার অধিকার সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির থাকলেও তার প্রয়োগ নিয়ে অনেক সময়ই সমালোচনা উঠেছে।

আওয়ামী লীগের এই আমলে ক্ষমা পাওয়া ২১ জনের মধ্যে রয়েছে লক্ষীপুরের চাঞ্চ্যকর এডভোকেট নূরুল ইসলাম হত্যা মামলায় ফাঁসির দন্ড পাওয়া এইচ এম বিপ্লব। লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেতা আবু তাহেরের ছেলে এ এইচ এম বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ডাদেশ মওকুফ করেছেন রাষ্ট্রপতি। লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আইনজীবী নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার রায়ে ২০০৩ সালে আদালত বিপ্লবের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। আরও দুটি হত্যা মামলায় বিপ্লবের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। তিনি লক্ষ্মীপুর জেলা কারাগারে আটক আছেন।

দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় পলাতক থেকে বিপ্লব গত ২০১১ সালের ৪ এপ্রিল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর তাঁর বাবা আবু তাহের ছেলে বিপ্লবের প্রাণভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান বিপ্লবের সাজা মওকুফ করেন। গত ২০১১ সালের ১৪ জুলাই এই সাজা মওকুফের আদেশ কার্যকর হয়। আবার আলোচনায় লক্ষ্মীপুরের তাহের।

তাহেরের ছেলে বিপ্লব। এই সেই তাহের, যে তার বিরুদ্ধে লিখলে সাংবাদিকদের হাত-পা কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। এ কথা বলেছিলেন প্রকাশ্য জনসভায়। তার আগেই যদিও হাত-পা কাটার কাজটি তার ছেলে বিপ্লব সম্পন্ন করেছিল। বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামকে অপহরণ করে হত্যার মধ্য দিয়ে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে লক্ষ্মীপুর শহরের বাসা থেকে নুরুল ইসলামকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। এটি তখন দেশজুড়ে আলোচিত ঘটনা ছিল। তখন সেখানকার পৌর চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহেরও সন্ত্রাসের ‘গডফাদার’ হিসেবে ব্যাপক আলোচনায় ছিলেন। তখন আবু তাহের ও তাঁর ছেলেদের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনীর নানা অপরাধমূলক তৎপরতার কারণে লক্ষ্মীপুর ‘সন্ত্রাসের জনপদ’ নামে ব্যাপক পরিচিতি পায়। ১৯৭২-২০১১ সাল পর্যন্ত— কতজন ফাঁসির আসামি রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়েছে’- নোয়াখালীর স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ফজলুল আজিমের এই প্রশ্নে মন্ত্রী আরো জানান, আওয়ামী লীগের এই আমলের আগে ২০০৮ সালে একজন, ২০০৫ সালে দুই জন এবং ১৯৮৭ সালে একজন রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়েছিলেন।

স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত— মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত কোনো আসামিকে ক্ষমা করা হয়নি। সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময়ে এই ক্ষমার চর্চা শুরু হয়। আওয়ামী লীগ নেতা ময়েজউদ্দিন আহমেদ হত্যামামলার মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত এক আসামিকে ১৯৮৭ সালে ক্ষমা করা হয়। গাজীপুরের নেতা ময়েজউদ্দিনের মেয়ে মেহের আফরোজ চুমকি বর্তমানে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য। ময়েজ হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্তরা ছিলেন জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মী।

বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে ২০০৫ সালে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পান মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ফাঁসির এক আসামিকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করেন। ১৬ কোটি জনগণ আশা করে রাষ্ট্রপতি তার ক্ষমতা সঠিকভাবে প্রয়োগ করবেন। যদি এ ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে ‘সঠিক' বিবেচনা না করা হয়, তা হলে অন্যান্য খুনি বা বড়মাপের আসামিরা ক্ষমতা প্রয়োগের চেষ্টা করবে। রাজনৈতিক পরিচয়ের অপরাধীরা ক্ষমতা প্রয়োগ করে এভাবে ক্ষমা পাওয়ার পথ অনুসরণ করবে।

যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন এই প্রতিযোগিতা অব্যাহত থাকলে তার পরিণাম কখনও শুভ হবে না। রাজনৈতিক সরকার বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি রাষ্ট্রপতির প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থানের মর্যাদা রক্ষায় সচেতন না হয়ে দলীয় রাজনৈতিক ক্যাডারদের পক্ষে কোন সিদ্ধান্ত নেবার অনাকাঙ্ক্ষিত আবেদন করে, তাহলে আমাদের মতো দুর্বল গণতান্ত্রিক দেশের রাষ্ট্রপতিদের প্রাতিষ্ঠানিক দৃঢ়তা ও বিবেকের দায় শোধ করা দুরূহ হতেই পারে। তবে রাষ্ট্রপতির প্রতিষ্ঠানের কাছে নাগরিকদের এমন প্রত্যাশাই থাকবে যে, দোষীরা যেন শাস্তি পায় এবং নির্দোষরা যেন মুক্তি পায়। আইনের শাসন ও রাষ্ট্রপতির প্রতিষ্ঠান যেন দলীয় প্রভাবে দুর্বল ও কলঙ্কিত না হয়, জনগণ সেটাই দেখতে চায়।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.