আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শাহবাগে তো অনেক দিনই গিয়েছি, তো আমি কি?

শাহবাগে গত ৬ই ফেব্রুয়ারী থেকে যখনই সময় পেয়েছি গিয়েছি ... একাত্ততা, সহমত পোষণ করা সবই করেছি। আমি তো জীবনেও কোনও দলের ডাকা মিটিং মিছিল সমাবেশে জীবনেও যাই নাই। এবং আমি ঐখানে গিয়ে দেখি শুধু আমি না এমন অনেকেই শাহবাগে গিয়েছেন যাদের অনেকেই কোনও রাজনৈতিক সভা সমাবেশে কখনও যায় নি। আমার কিছু বন্ধু বলেছিল যে শাহবাগে যাস কেন? ঐখানে গিয়া তোর লাভ কি? আমি তাদের জবাবে একটা লেখা লিখেছিলাম। (Click This Link) শাহবাগে অনেকেই গিয়েছেন যাদের প্রোফাইলে ঢুকলে দেখা যায় রাজনীতি কে তারা ঘৃণা করেন।

কিন্তু প্রানের দাবীতে তো আর ঘরে বসে থাকা যায় না। ১৫-২০ দিনের মত গেছি সেখানে। অফিস শেষে যখনই সময় পেয়েছি গেছি শাহবাগে। কেউ তো আমাকে ফোন দিয়ে নিয়ে যায়নি। ২০ ই ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাত ১০ টা থেকে সারা রাত অবস্থান করি শাহবাগে যার সৌজন্যে ২১শে ফেব্রুয়ারীর প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারের বেদীতে ফুল দিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই শহীদ ভাষা সৈনিকদের।

এই ফাকে জানিয়ে রাখি যে ঐরাত জেগেই কাটিয়ে দিয়েছি শহীদ মিনার – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় – শাহবাগ এলাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে আদায় করি সেই রাত্রীশেষে ফজরের নামাজ। উল্লেখ্য যতদিনই গেছি শাহবাগে মাগরিবের নামায ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে গেছি এবং ১ম / ২য় রাকাত প্রায়শই মিস করেছি। কারন একে তো মাগরিবের আযান শেষে নামাজ খুব তাড়াতাড়ি শুরু হয়। এবং কেন্দ্রীয় মসজিদে একসাথে এত মানুষের ওজু করার ব্যবস্থা নাই যেকারণে প্রায়শই প্রথম ১/২ রাকাত মিস করেছি।

আমার প্রশ্ন এত মানুষ কারা যারা মাগরিবের নামায পড়তে এসেছেন। অনেকেই বলবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কি মানুষের অভাব আছে সেখানকার লোকজনই। আমি বলব তারা তো আছেনই তবে শাহবাগে যারা এসেছেন তাদেরও অনেকে এসেছেন মাগরিবের নামায আদায় করতে। আপনি হয়তো বলবেন সবাই তো আর আসে নি। আমি বলব সবাই কি ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন।

একটু মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করুন তো শুক্রবার জুম্মার নামাজে যত লোক হয় তার কতভাগ অন্যদিন কোনও ওয়াক্তে হয়। একটা পরিসংখ্যান দিচ্ছি সহজেই বুঝতে পারবেন। আমাদের বাসাবো এলাকায় হযরত বেলাল (রাঃ) জামে মসজিদ। মসজিদটি তিন তলা। মসজিদের প্রতি ফ্লোরে ৮টি কাতার রয়েছে এবং প্রতি কাতারে কমবেশী ৭৫ জন দাড়াতে পারেন।

এছাড়াও বারান্দা এবং ছাদে ১ কাতার হয়। হিসাব মতে প্রতি জুম্মার দিন মানুষ হয় = ৩x৮x৭৫= ১৮০০ এবং বারান্দা এবং ছাদে মিলে যদি আরও ২০০ জন হয় তাহলে মোট নামাজী সংখ্যা জুম্মার দিন = ১৮০০+ ২০০ = ২০০০ জন। (কমবেশী) এখন আসুন অন্যদিনে মসজিদে উপস্থিত মুসল্লীদের হিসাব দেখি। ধরি সোমবারঃ ফজরের নামজে = ১ কাতার = ৭৫ জন (কমবেশী) যোহরের নামাজে = ২ কাতার = ২x৭৫ = ১৫০ জন (কমবেশী) আসরের নামজে = ২.৫ কাতার = ২.৫x৭৫ = ১৮৮ জন (কমবেশী) মাগরিবের নামাজে = ৫ কাতার = ৫x৭৫ = ৩৭৫ জন (কমবেশী) এশার নামাযে = ৪ কাতার = ৪x৭৫ = ৩০০ জন (কমবেশী) তাহলে একদিনে গড়ে মসজিদে উপস্থিত হচ্ছেন = ২১৮ জন (কমবেশী) যা জুম্মার দিনের প্রায় ১১%। এই যে বাকী ৮৯% অন্যদিনের ওয়াক্তগুলোতে আসছেন না উনারা কি নাস্তিক হয়েগেছেন।

উত্তর না। মসজিদে যত লোক নামাজ পড়েন তার অন্ততঃ দ্বিগুন লোক বাসায় নামাজ পড়েন / জামাতে না পড়ে একা একা নামাজ আদায় করেন সেক্ষেত্রে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায়কারী মোট নামাজীর সংখ্যা প্রায় ৩৩% (কমবেশী)। আর যারা পড়ছেন না মানে প্রায় ৬৭% এরা সবাই কি নাস্তিক। উত্তর অবশ্যই না। নাস্তিকতা মানে কি আল্লাহর অস্তিত্বকে যারা বিশ্বাস করেন না।

কিন্তু যেই লোকগুলো নামাজ পড়ছেন না তারা যে আল্লাহর অস্তিত্বকে বিশ্বাস করেন না তাতো বলতে পারছি না। এতে কোনও দ্বিমত নেই যে, আলসেমির জন্য বা ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ে অভ্যস্ত নয় বলে তারা নামাজ পড়েন না। তাহলে কি বোঝা গেল? যে সাধারনত ৫ ওয়াক্ত নামাজী তো আর সবাই না। সুতরাং আপনি এটাও আশা করতে পারেন না যে শাহবাগের সবাই নামাজের ওয়াক্তের সময় হলে নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে ছুটাছুটি করবে। শাহবাগে যারা যান সবাই নাস্তিক।

আমিও তো গেছি। আমার সম্পর্কে আপনাদের কিছু তথ্য দিচ্ছি। বিচার করার দায়িত্ব আপনাদের। ১। পবিত্র কোরআন শরীফ শিক্ষা ও খতমঃ খুব ছোট কালে যতদূর মনে পড়ে ক্লাস টুতে থাকতেই হুজুরের কাছে পবিত্র কোরআন শিক্ষা নিয়েছি এবং আল্লাহর রহমতে হুজুরের কাছে ২ বার সম্পূর্ণ কোরআন শরীফ খতম দিয়েছি।

এরপর বিভিন্ন সময় আরো ৩ বার সহ জীবনে মোট ৫বার খতম দিয়েছি। হ্যা এটা বলতে পারেন যে নিয়মিত কোরআন আদায় না করে আমি গুনাহ করছি। হাদিস শরীফে আছে, “একজন ব্যাক্তি বেশী গুনাহকারী যিনি কোরআন তেলওয়াত করতে জেনেও তা করেনা”। ২। নামাজ শিক্ষা এবং নামাজ আদায়ঃ যদিও নামাজ শিক্ষা নেওয়া উচিত ৭ বছর বয়স থাকতেই।

আমার নামাজ শিক্ষা নিতে নিতে দশ বছর লেগে গিয়েছে। যদিও নামাজে নিয়মিত ছিলাম না। তবে আব্বা মারা যাবার পর থেকে বুয়েট ভর্তি হবার আগ পর্যন্ত প্রায় ৪ বছর নামাজ পড়ার চেস্টা করেছি নিয়মিত। এখনো মনে আছে এইচ.এস.সি. পরীক্ষার রাত গুলোতে সারা রাত জেগে পড়াশুনা করার পর ফজরের নামাজ আদায় করার জন্য মসজিদে চলে গিয়েছি। এরপর অবশ্য পাংখা গজিয়ে যাবার কারনে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নিয়মিত নামাজ আদায় করা হয়নি।

কিন্তু চাকুরী জীবনে এসে গত ৩ বছর থেকে আবার শুরু করি নামাজ এবং আল্লাহর কাছে তওবা করেছি জীবনে যত নামাজ ক্বাযা করেছি তার জন্য ক্ষমা চেয়েছি এবং ইন-শা-আল্লাহ সেইদিন থেকে আজ অবধি কোনো নামাজ বাদ দেই নাই ... হয়তো ক্বাযা হয়েছি কিন্তু আদায় করে নিয়েছি। ইন-শা-আল্লাহ ভবিষ্যতেও আর কোনও ওয়াক্ত নামায বাদ যাবে না। ৩। রোযা রাখাঃ খুব ছোট থাকতে ক্লাস টু/ থ্রি থাকতে রোযা রেখেছি রোজার মাসে ৪/৫ টা। প্রথম রোজা, ১০ নম্বর রোজা, ১৫ তম রোজা, সাতাইশের রোজা এবং শেষদিনের রোজা।

তবে ক্লাস সিক্স অর্থাৎ ১৯৯৬ সাল থেকে গত বছর ২০১২ সাল পর্যন্ত গত ১৭ বছরে ইন-শা-আল্লাহ একটা রোজাও ভাঙ্গি নাই। হয়তো কোনও কোনও বছর ২/১ দিন সাহরী খেতে পারি নাই কিন্তু রোজা তাও রেখেছি। আল্লাহই জানেন তিনিই ক্ববুল করবেন। এছাড়া গত দুই বছর শাওয়াল মাসে ৭ টি করে স্বাক্ষী রোযা রেখেছি। এছাড়া নিয়মিত বা অনিয়মিত ভাবে মহররমের রোজা, শবে-বরাতের রোজা রেখেছি।

৪। খতম তারাবী আদায়ঃ ১৯৯৭ সাল থেকে গত ২০১২ সাল পর্যন্ত গত ১৬ বছরে ১২ বছর খতম তারাবীতে সম্পূর্ন ভাবে আদায় করেছি। মাঝখানে ৪ বছরে ৪/৫ দিনের মিসের কারণে ঐ বছর গুলোতে খতম তারাবী হয় নি। সেই বছর গুলোতেও ২৪/২৫ দিন সম্পূর্ণ ২০ রাকাত হাফিজ সাহেবের পিছনে দাঁড়িয়ে থেকে নামায আদায় করেছি। ৫।

দান খয়রাত / যাকাত / ফেতরাঃ এই অংশগুলো কখনই প্রকাশ করা উচিত নয়। হাদিসে আছে, “আপনি যদি নিজের দানের কথা প্রকাশ করে অন্যকে দান করতে উদ্ভুদ্দ্ব করতে চান তাহলেই কেবল এইগুলো প্রকাশ করা উচিত অন্যথায় যদি প্রকাশ করার মাধ্যামে দাম্ভিকতা প্রকাশ পায় তাহলে প্রকাশ করা উচিত নয়। ” শুধু এইটুকুই বলতে চাই যতদূর আল্লাহ সামর্থ দিয়েছেন চেস্টা করেছি। জানিনা সঠিকভাবে আদায় করতে পেরেছি কিনা। ৬।

তাফসীরূল কোরআনে অংশগ্রহনঃ একবছরের বেশী সময় মসজিদে শনিবার এশার নামাজের পর তাফসীরুল কোরআনে যোগ দিতাম। আমাদের ইমাম একাধারে হাফিজ, মোহাদ্দেস এবং মোফাসসের। খুব সুন্দর করে উনি পবিত্র কোরআনের তাফসির করতে পারেন। পরে অবশ্য আর নিয়মিত যোগ দেওয়া হয় নাই। একটা বাণিজ্যিক কোচিং এ শনিবার দিন ক্লাস নেবার কারণে পরে অনিয়মিত হয়ে পড়ি।

৭। অফিসে যোহরের নামাজের পর হাদিস পঠনঃ ২০১১ সালের শেষদিক থেকে আমরা কয়েকজন মিলে ঠিক করি যে অফিসে জামাতের সহিত নামাজ আদায় করা হবে এবং যোহরের নামাজের শেষে প্রতিদিন একটি হাদিস পড়া হবে এবং ফায়দা পাঠ করে উক্ত হাদিসের তালিম করা হবে। আগে অনেক হাদিস জানতাম না এখন কিছু হলেও জানি যদিও তা একদমই অল্প। আলহামদুলিল্লাহ। অফিসে আমরা কয়েকজন মিলেই কিন্তু জামাতে নামাযে পড়ার জন্য উদ্ভুদ্ধ করি যা এখনো চালু আছে।

এই বিষয়ক একটি লেখা লিখেছিলাম গত বছর। (http://bflsovapoti.blogspot.com/) এখন বলুন আমি তো অনেকদিনই শাহবাগে গিয়েছি। সেখানে কাফির নাস্তিকরা যায়। আমাকে বিচার করুন। আর শেষ বিচার তো আল্লাহর হাতে।

বিচার দিবসের মালিক তিনি। এর বেশী কিছু আর বলার নাই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।