আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্ম ও নৈতিকতা

প্রবাসী এই বিষয়ে অনেক বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে ছিল। পড়াশুনাও যে করি নি তাও নয়। আজ এক ব্লগারের পোস্টে মন্তব্য করতে গিয়ে আমার ক্ষুদ্র চিন্তা ভাবনা গুলো বেরিয়ে এলো। তাই মন্তব্য না করে এলাম তা প্রকাশ করতে। ধর্ম কি নৈতিকতার জন্য অপরিহার্য্য? ধর্মের প্রয়োজনিয়তা বলতে গিয়ে দু একজন লিখেছেন ধর্ম না থাকলে মানুষ মানুষকে ছিড়ে খেয়ে ফেলত।

কতটা যুক্তিযুক্ত?ধর্ম প্রবর্তনের আগেও মানুষের নৈতিক ব্যবহার ছিল। উদাহরনস্বরুপ বলা যায় ব্যাবিলনিয়ান যুগে হাম্মুরাব্বীর "বিধান মালা। মানুষ কি ধর্ম না থাকলেই অনৈতিক? যারা মনে করেন নৈতিকতার জন্য ধর্ম অপরিহার্য্য তাদের ধারনা ঐ রকমই। প্রাকৃতিক নিয়মেই মানুষ পশু নয়। হিংস্র পশু যেমন বাঘ শিকার দেখলেই ছুটে যায় মানুষ কিন্তু সেই রকম নয়।

মানুষের মধ্যে পশুর মত গুনাবলী যে নেই তা নয়, কিন্তু তা কোন অবস্থাতেই তা মানবিক গুনাবলীর চেয়ে বেশী নয়। মানব সভ্যতার ক্রম বিকাশ সাক্ষ্য দেয় মানুষ তার মানবিক গুনাবলীর কারনেই সভ্য, ধর্মীয় পুরস্কার বা শাস্তির বিধানের কারনে নয়। আমি অন্তত নিজেকে মানুষ হিসেবেই ভাবি এবং কখনোই ভাবি না আমি পশু এবং ধর্মীয় নিয়ম নীতি আমাকে সভ্যভাবে চলতে শিখিয়েছে। আমি মানুষ এবং আমার গুনাবলী মানবিক গুনাবলী। যারা নিজেকে অপরাধী বা পশু মনে করেন তাদের জন্য ধর্ম কি করছে তা তারাই ভাল বলতে পারবেন।

তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম মানুষ পশু কিন্তু ধর্মই তাকে নিয়ম নীতি মেনে চলতে শিক্ষা দেয়, এই যুক্তি ও অমুলক। রাস্ট্র ব্যাবস্থা্‌, রাস্ট্রের আইন ,প্রসাশন এ গুলোর অবদানেই মানুষ নিয়ম নীতি মেনে চলে। কোন ধর্মীয় অনুশাসনের চেয়ে এগুলো অনেক বেশী কার্যকর। ধর্মের ভুমিকা যতই বলা হোক, যতই ধর্মগুরু যেমন পুরোহিত বা যাজক ধর্মবানী শোনান না কেন অপরাধী কিন্তু রাস্ট্রীয় শাস্তির বিধান না থাকলে অপরাধ করে যাবেই। আর ধর্মই যদি একমাত্র বিধান হয় তাহলে রাস্ট্র বা রাস্ট্রের আইন ইত্যাদির পরিবর্তে বেশী হত উপাসনালয় এবং ধর্ম যাজক।

মধ্যযুগীয় ইউরোপে গীর্জা যে ভুমিকা পালন করতো তা আজ প্রমানিত ভূল। ইহকালে ধর্মের বা ধর্মগুরুদের শাস্তিবিধানের কোন ক্ষমতা নেই। অনৈতিক কাজ করলে মন্দিরের পুরোহিত বা মসজিদের ইমাম খারাপ বলবেন এর চেয়ে জেল হাজত খাটার ভয় অপরাধীর অনেক বেশী। আর পরকাল? পরকালের অনন্ত নরকবাসের চেয়ে ইহকালের ভাবনাই সবার বেশী। এগুলোই বাস্তব।

আগে ইহকাল পরকাল পরে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্ম চারী কামাল তার ন্যায্য পাওনা আমার কাছ থেকে ঘুষের টাকা পকেটে নিয়ে চললেন নামাজ পড়তে। এই কামাল যখন আমার ঘুষের টাকা থেকে মসজিদে টাকা দেবে শুক্রবারে জুম্মার নামাজের পরে মসজিদের ইমাম তার মঙ্গলের জন্য বিশেষ মোনাজাতের ব্যাবস্থা করবেন। বলবেন ধর্মে এই রকম বলা নেই তার নামাজ হবে না ইত্যাদি। ধর্মে হয়তো ভাল ভালো কথা বলা আছে ,বা কি আছে তা বিশ্বাসীরাই ভাল বলতে পারবেন।

আমার প্রশ্ন হল বাস্তবে যা হয় তা না দেখে কিতাবে কি আছে তাই আমাকে দেখতে হবে? আর কিতাব যদি একমাত্র ভরসা হয় তাহলে আর জগত পৃথিবী কেন? কিতাব ধ্যান জ্ঞান করে কাটালেই হয়। নাকি আমরা মুখে বলব কিতাব আর করব সব দুই নম্বরের কাজ? বাস্তবে যা দেখি না তাকে যতবড় বিশেষনে বিশেষিত করা হোক না কেন তা কতটা গুরুত্ব বহন করে? ধর্মযাজক এবং গীর্জার উদাহরন দিলাম ভুল বলতে গিয়ে। কারন একটা ভরসা আমার আছে যে এই জন্য আমাকে ধর্মদ্রোহীতার কারনে শিরোচ্ছেদের হুমকির মুখোমুখি হতে হবে না। তাদের ধর্ম ভুল এবং ইসলামই একমাত্র সত্যি ধর্ম(যাকির নায়েক), আমি ইসলাম সম্পর্কে কিছুই জানি না বা যেটুকু বই পড়ে জেনেছি তা যদি বলি তাহলে আমাকে ধর্মদ্রোহী আখ্যা দিয়ে শিরোচ্ছেদের ফতোয়া দেওয়া হবে । সুতরাং মাফ চাই ।

আর কেও যদি গালি হুমকি বা শাস্তি দেওয়ার প্রতিজ্ঞা না করে আলোচনা করতে চান স্বাগতম। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.