আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিডনির বিনিময়ে আইপ্যাড!

কিন্ত যে সাধেনি কভু জন্মভূমি হীত স্বজাতির সেবা যেবা করেনি কিঞ্চিত, জানাও সে নরাধম জানাও সত্বর অতীব ঘৃনীত সেই পাষন্ড বর্বর প্রবাদ আছে ‘প্রয়োজন আইন মানে না’। প্রয়োজনে মানুষ তাই কতকিছুই না বিসর্জন দেয়! বাড়ি, গাড়ি এমনকি অনেক ক্ষেত্রে ঋণ শোধের প্রয়োজনে বা অন্য কোনও কারণে অনন্যোপায় হয়ে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও বিক্রি করে দেয় কেউ কেউ। আর জুয়ায় হেরে মান রক্ষায় মহাভারতের আলোচিত চরিত্র যুধিষ্ঠির তো নিজ স্ত্রী দ্রৌপদীকেও বিসর্জন (বন্ধক) দিয়েছিলেন। কিন্তু একটি অত্যাধুনিক এবং অনেক ক্ষেত্রেই বিলাসী ইলেক্ট্রনিক পণ্য আইপ্যাডের মালিক হওয়ার লোভ কখনোই সেই গুরুতর প্রয়োজনের পর্যায়ে পড়েনা যার জন্য শরীর থেকে একটি কিডনি বিক্রি করে দেবেন আপনি! তবে চীনের ১৭ বছর বয়সী বালক ঝেঙ্ এমনি এক অপরিনামদর্শী কাণ্ড ঘটিয়ে সবার আক্কেল গুড়ুম করে দিয়েছে। সম্প্রতি বাজারে আসা নতুন মডেলের আইপ্যাড-২ কেনার জন্য সে তার একটি কিডনিই বিক্রি করে দিয়েছে।

আর এ বাবদ সে পেয়েছে মাত্র ২০০ পাউন্ড যা দিয়ে বাজারে আসা ওই নতুন মডেলের আইপ্যাড-২ এর একটি সেট কিনতে পেরেছে। প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, ঝেঙ্ অনলাইনে একটি চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনের অফারে সাড়া দিয়ে কিডনি বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিৎ করে। চীনের গোয়াংডং প্রদেশের স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল সেন্ঝেন্ টিভিকে দেওয়া স্বাক্ষাৎকারে সে বলে, ‘আমি একটি নতুন আইপড-২ কিনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার কাছে এটা কেনার মত টাকা ছিল না। পরে অনলাইনের একটি বিজ্ঞাপনে চোখ পড়ে।

এর সাহায্যে একজন বিজ্ঞাপন এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে একটি কিডনির বিনিময়ে আমাকে একটি আইপড-২ কেনার জন্য টাকা দিতে রাজি হয়। ’ ওই এজেন্টের সঙ্গে সমঝোতার পর ঝেঙ্কে হুনান প্রদেশের সেন্ঝু’র একটি স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং সেখানে তার কিডনি অপসারণ করে নেওয়া হয়। এদিকে, সার্জারির পর বেশ কিছু শারীরিক জটিলতা নিয়ে চুপিসারে বাড়ি ফিরলেও শেষ অবধি গর্ভধারিনী মায়ের কাছে কিছুই লুকাতে পারেনি সে। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ঝেঙ এর মা লিও বলেন- ‘বাড়ি ফেরার পর ছেলের চোখমুখ দেখেই বুঝেছিলাম কিছু একটা অঘটন ঘটেছে। কারণ, সঙ্গে নতুন ল্যাপটপ এবং একটি নতুন মডেলের অ্যাপল আইপ্যাড থাকলেও তাকে খুবই অবসন্ন আর ফ্যাকাশে দেখাচ্ছিল।

এত টাকা কোথায় পেয়েছে জানতে চাইলে প্রথমে না বলতে চাইলেও শেষমেষ সে সত্যি ঘটনাটাই বলেছে। ’ ঝেঙ্ এর মা ঘটনা সম্পর্কে সেনঝু পুলিশকে অভিযোগ করলেও কিডনি ক্রেতা সেই বিজ্ঞাপন এজেন্ট বা তার সঙ্গীদের কোনও হদিস বের করা যায়নি। ইতোমধ্যে অনলাইনের সেই বিজ্ঞাপন আর তার ঠিকানাও লাপাত্তা। এদিকে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালও এখন ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করছে। তারা বলছে- এ ধরনের ঘটনার কথা তাদের হাসপাতালের রেকর্ডেই নেই।

এ কোনো মহৎ উদ্দেশ্য বা কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া ছাড়া কিডনির বদলে আইপ্যাড কিনে নিজের কী ক্ষতি করেছে হঠকারী চীনা বালক ঝেঙ্ নিজে তা না বুঝলেও তার মা ঠিকই বুঝেছেন ছেলের ক্ষতিটা! সুতরাং অল্পবয়েসি অনলাইন ব্যবহারকারীদের উদ্দেশ্যে বলছি- থিংক, বিফোর ইঙ্ক! পাদটীকা: চীনে বালকের ওই উদ্ভট কাণ্ডকে ঘিরে এখন একই সঙ্গে চীনের তরুণ প্রজণ্মের অন্তঃসারহীন আভিজাত্যের মোহাজচ্ছন্নতা আর দেশটির শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বইছে। হংকংয়ের ফিনিক্স টিভির ওয়েবসাইটে একজন চীনা নাগরিক মন্তব্য করেন- যে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রথম উদ্দেশ্য হচ্ছে নৈতিকতার বিস্তার ঘটানো- এখানে সেই ব্যবস্থাটা মার খেয়েছে। তিনি আরও বলেন- ওই বালকের নালায়েকি এ কাণ্ড আজকালকার ছেলে-ছোকড়াদের অন্তঃসারশূন্য ভোগ-বিলাসবাদিতারই পরিচায়ক। ভোগ্যপণ্যের জন্য কিডনি বিক্রি করে ফেলা! কী অকিঞ্চিৎকর কাণ্ড! অপরজন মন্তব্য করেন- এটা অনস্বীকার্য যে হালের চীনা টিনএজারদের নৈতিক অবক্ষয় ঘটছে। এটা এমন একটা বিষয় যা নিয়ে আমাদের সবার ভাবনা-চিন্তা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

উল্লেখ্য, অ্যাপলের উৎপাদিত আইফোন ও আইপ্যাড চীনে চাহিদার তুঙ্গে রয়েছে। তরুণ চীনারা এ পণ্য দু’টিকে সামাজিক মর্যাদা ও আভিজাত্যের প্রতীক মনে করে। গত মাসেই বেইজিংয়ে অ্যাপলের শোরুমগুলোতে সদ্য বাজারে ছাড়া আইপ্যাড-২ ও হোয়াইট আইফোন-৪ এর জন্য অপেক্ষমান ক্রেতারা সিরিজ মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। তাই একটু সাহস করে বলাই যায়- আইপ্যাড আর আইফোনের জন্য অবস্থা যেখানে এরকম- সেখানে বালক ঝেঙ্ এর এহেন কর্ম খুব একটা অস্বাভাবিক কিছু কি! দীর্ঘ সংযম আর বিধি-নিষেধের শৃংখল ভেঙ্গে হঠাৎ পাওয়া বিলাসিতা আর চাকচিক্যের জোয়ারে এমনই হয় হয়তো! এখানে দেখুন ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।