আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন

ওওম শান্তি রাগের ক্ষতিকর প্রভাব মানসিক আমরা যখন রেগে যাই তখন পূবাপর চিন্তা না করেই আমরা বলে ফেলি বা করে ফেলি। এর মাশুল গুণতে হয় পরে অনুশোচনা করে বা সুযোগ হাতছাড়া করে। আবার রাগ চেপে রাখাও ক্ষতিকর। গবেষণায় দেখা গেছে যারা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষোভ জমিয়ে রাখছে তাদের বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, বিষণ্নতা হলো চেপে রাখা ক্ষোভ।

রাগ বা ক্ষোভ আসলে জীবনের আনন্দকেই কেড়ে নেয়। শারীরিক রাগ প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত যাই হোক শরীরের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে দ্বিমত নেই গবেষকদের মধ্যে। রাগের সরাসরি প্রভাবগুলোর মধ্যে রয়েছে * পেশীর টেনশন বাড়ার ফলে মাথা, ঘাড় ও পিঠে ব্যথা * হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্ট * পাকস্থলীতে অ্যাসিডের ক্ষরণ বৃদ্ধি এবং বদহজম, অ্যাসিডিটি ও আলসার * রক্তচাপ বৃদ্ধি এবং স্ট্রোক, এনিগমা এবং এমনকি হার্ট অ্যাটাকও আমরা যখন রেগে যাই আমাদের দেহে কিছু জৈব রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। যেমন, হার্টরেট, ব্লাড প্রেশার এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বেড়ে যায়, ক্যাটাকোলামাইন নিউরোট্রান্সমিটার এবং অ্যাড্রিনালিন ও নর- অ্যাড্রিনালিন হরমোন নি:সরিত হয় যা উত্তেজনা সৃষ্টি করে। দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায় ফলে ঘাম হয় এ তাপমাত্রাকে স্বাভাবিক করার জন্যে।

পেশী সংকুচিত হয় এবং হাত-পায়ে রক্ত চলাচল বেড়ে যায় যেকোনো দৈহিক তৎপরতাকে পরিচালনা করার জন্যে। অর্থাৎ ফ্লাইট অর ফাইট রেসপন্স সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দীর্ঘসময় ধরে যদি এই রেসপন্স চলতে থাকে তাহলে অনেক ধরনের ক্রনিক রোগ হতে পারে। যেমন, ইনসমনিয়া, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, আলসার, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, মৃগী, কোষ্ঠকাঠিন্য, মাইগ্রেন, ব্যাকপেইন, ফুসফুসের অসুখ এমনকি ক্যান্সার। একটি গবেষণায় দেখা গেছে রেগে যাওয়ার প্রবণতা বেশি এমন ব্যক্তিরা তাদেও বয়স ৫৫ বছর হওয়ার আগেই অন্যদের তুলনায় হার্ট অ্যাটাকে বেশি আক্রান্ত হন।

আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে বয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে কোলেস্টেরল, অ্যালকোহল, সিগারেট বা অতিরিক্ত ওজনের চেয়েও হৃদরোগের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক পাওয়া গেছে রেগে যাওয়ার প্রবণতার। এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং আয়ুস্কালের ওপরও রাগের প্রভাব আছে। বদরাগী বা রগচটা মানুষ বলে পরিচিতদের মৃত্যুর হার ৫ গুণ বেশি। পারস্পরিক সম্পর্ক অন্য যেকোনো আবেগের চেয়ে রাগের ফলে সম্পর্কের জটিলতাগুলো বেশি হয়। পরিবারের সদস্য, বন্ধু, আত্মীয়, প্রতিবেশী বা যেকোনো মানুষই একজন রাগীকে এড়িয়ে চলতে চায় এবং পছন্দ করে না।

সাফল্য সাফল্যের অন্তরায় হিসেবে রাগকে মহামানবরা সবসময়ই শনাক্ত করেছেন। ১৩০০ বছর আগেই ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা) রাগান্নিত অবস্থায় চারটি কাজ থেকে বিরত থাকতে উপদেশ দিয়েছেন, 1. সিদ্ধান্ত গ্রহণ 2. শপথ গ্রহণ 3. শাস্তি প্রদান 4. আদেশ প্রদান আধুনিক বিজ্ঞান এখন এ পরামর্শের সার্থকতা খুঁজে পাচ্ছেন। হার্ভার্ড ডিসিশন সায়েন্স ল্যাবরেটরির জেনিফার লারনার দেখেছেন মানুষ যখন রেগে যায় তখন সিদ্ধান্ত নেবার আগে সে খুব বেশি ভাবতে চায় না, বোকাদের মতো চিন্তা করে এবং উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্যে যৌক্তিক কারণ নয়, ব্যক্তিকে দোষারোপ করে। রেগে গেলে মনোযোগ কমে যায় এবং শুধু রাগের বিষয় ছাড়া আর কোনোকিছু মাথায় থাকে না। চিন্তা করুন ২০০৬ বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রায় হিরো হয়ে যাওয়া জিনেদাইন জিদানের কথা যিনি মুহূর্তের উত্তেজনায় মাতারাজ্জির ওপর চড়াও হয়ে পেলেন লাল কার্ড, হারালেন নিজের সুযোগ, দলের সুযোগ।

ভাবুন মাইক টাইসনের কথা যে প্রতিপক্ষ হলিফিল্ডের কান কামড়ে হারিয়েছিলো শিরোপা। আত্মিক রাগের ধ্বংসাত্মক দিক সম্পর্কে সব ধর্মেই সচেতন করা হয়েছে। * মহামতি বুদ্ধ বলেছেন, রণক্ষেত্রে সহস্রযোদ্ধার ওপর বিজয়ীর চেয়ে রাগ-ক্রোধ বিজয়ী বা আত্মজয়ী বীরই বীরশ্রেষ্ঠ। [সহস্‌সবগ্‌গো: ১০৩] * যীশু বলেন, যখন কেউ তোমার সাথে অন্যায় আচরণ করে, তুমি তাদের ক্ষমা করে দাও। সদাপ্রভুও তোমাকে ক্ষমা করবেন।

[মথি: ৬:১৪] * বেদে আছে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত রাগ-ক্রোধ থেকে দূরে থেকো। [সামবেদ: ৩০৭] * মহানবী (সা) বলেন, ক্রদ্ধ হয়ো না। যে ব্যক্তি ক্রোধকে সংবরণ করতে পারে সে-ই প্রকৃত বীর। (বোখারী) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.