আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মদপানের ৭০০০ আবেদন, তালিকায় মন্ত্রী এমপি ও সচিব

প্রতিদিন যা পড়ি পত্রিকার পাতায়, ভাললাগা-মণ্দলাগা সবই শেয়ার করি সবার সাথে। আমি অসুস্থ। দিনে দু’বেলা মদ খেতে হবে। এ জন্য চাই অনুমতি। এভাবেই মদ খাওয়ার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে আবেদন করেছেন দেশের ২ মন্ত্রী, ৫ এমপি, ১৬ সচিব-যুগ্ম সচিব, বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদ, ২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কয়েকজন সাবেক এবং বর্তমান পুলিশ কর্মকর্তা।

এ তালিকায় আরও আছেন সাবেক জোট সরকারের সময়ের ৪ মন্ত্রীও। আবেদনের সঙ্গে তারা জমা দিয়েছেন ডাক্তারের সার্টিফিকেট। কারণ বাংলাদেশী মুসলিম নাগরিকের মদ খাওয়ার লাইসেন্স পাওয়ার একমাত্র শর্ত ডাক্তারি সার্টিফিকেট। গত ৩০শে জুন ছিল মদ খাওয়ার লাইসেন্সের জন্য আবেদন নেয়ার শেষ দিন। ১লা জুলাই থেকে শুরু হয়েছে লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়া।

সরজমিন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে গিয়ে জানা যায় নির্দিষ্ট সময়ে আবেদন জমা পড়েছে ৭ সহস্রাধিক। এর মধ্যে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ রয়েছে। রয়েছেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও ব্যবসায়ীও। সবচেয়ে আলোচিত হলো ১৬ সচিবের আবেদন। এর মধ্যে রয়েছেন ৮ জন পূর্ণ সচিব, বাকিরা যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা।

এছাড়া, শতাধিক পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন আবেদনকারীদের তালিকায়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে দু’ধরনের লাইসেন্স দেয়া হয়। একটি হচ্ছে বিদেশী মদ পানের জন্য। এ জন্য নির্ধারিত সরকারি ফি ২ হাজার টাকা। অন্যটি দেশীয় মদ পানের।

এর সরকারি ফি ৮০ টাকা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ঢাকায় মদ পানের লাইসেন্সধারী ছিলেন ১৩ হাজার ৩ শ’ ২২ জন। এর মধ্যে ৭ হাজার ২০ জন ছিলেন বিদেশী মদ পানের লাইসেন্সধারী। আর ৬ হাজার ৩ শ’ ২ জন ছিলেন দেশীয় মদ পানের লাইসেন্সধারী। ২০১০-১১ অর্থবছরে মদপানের লাইসেন্সধারীর সংখ্যা কিছুটা কমে।

এ অর্থবছরে মোট সংখ্যা ছিল ১৩০০৬। এর মধ্যে দেশীয় মদপানের লাইসেন্সধারীর সংখ্যা ছিল ৬০০৫ জন এবং বিদেশী মদ পানের লাইসেন্সধারীর সংখ্যা ছিল ৭০০১ জন। চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরে বিদেশী মদ পানের লাইসেন্সের জন্য এ পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার আবেদন পড়েছে। এছাড়া, দেশীয় মদ পানের জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার । মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ বছর আবেদনের সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ- এবারই প্রথম ছবিসহ আবেদন করতে হচ্ছে।

লাইসেন্সেও এবার ছবি সংযুক্ত করে দেয়া হবে। তাই পরিচয় প্রকাশ পাওয়ার ভয়ে অনেকেই এবার আবেদন করেন নি। এছাড়া, এবার যারা আবেদন করেছেন তাদের অনেকেই ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করেছেন। আবেদনপত্রের পেশার ঘরে অনেকেই প্রকৃত পেশা না লিখে লিখেছেন চাকরি, ব্যবসা ইত্যাদি। তবে যারা সমাজে পরিচিত মুখ তারা নিজেদের আড়াল করতে পারেন নি।

আবার অনেক উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা সরকারি ফি জমা না দিয়েই লাইসেন্স করে দেয়ার জন্য প্রভাব খাটিয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে বিপত্তিতে পড়তে হয়েছে কর্মকর্তাদের। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধভাবে মদ পান করার চেয়ে বৈধভাবে মদ পানের জন্য আবেদন করার বিষয়টি ইতিবাচক। কর্মকর্তারা বলেন, প্রতি রাতে ঢাকার বারগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। তাদের ৯০ শতাংশ লাইসেন্সধারী নয়।

কিন্তু বারগুলোতে অভিযান চালিয়ে দেখা গেছে সেখানে সমাজের সব পর্যায়ের মানুষ মদ খেতে আসে। অভিযান চালানোর সময় এমন সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দেখা গেছে যাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে আসতে হয়েছে অভিযান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। তাই বারগুলোতে অবৈধভাবে মদ পান চলে এটি জেনেও সেখানে অভিযান চালাতে সাহস পান না মাদকের কর্মকর্তারা। এতে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আবার নানান অপরাধীরাও রাতভর নেশা করার নিরাপদ আশ্রয় পেয়ে যাচ্ছে।

ঢাকার রাস্তায় মদ্যপ অপরাধীরা নাগরিকদের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। কর্মকর্তারা বলছেন, এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় হচ্ছে বৈধ লাইসেন্স গ্রহণ করা। এটা হলে একদিকে সরকার যেমন রাজস্ব পাবে অন্যদিকে অবৈধ মদপানকারীদেরও গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মাত্র ১ বছর মেয়াদে বৈধভাবে মদ পানের লাইসেন্স দেয়। দেশের মধ্যে ইসলাম ধর্ম ব্যতীত অন্য ধর্মাবলম্বীরা ডাক্তারি সার্টিফিকেট ছাড়াই মদ পানের লাইসেন্স গ্রহণ করতে পারেন।

এছাড়া, বিদেশী নাগরিক ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীরা বিনা অনুমতিতে যে কোন স্থানে বসে মদ পান করতে পারেন। মানবজমিন ২২/০৭/১১ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।