আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পর্দার আড়ালে চলছে হেফাজতকে বাগে আনতে আওয়ামীলীগের দৌড়ঝাঁপ !!!

শুদ্ধ হোক তোমার মন,ইতিবাচক হোক তোমার দৃষ্টিভঙ্গি,প্রকাশ হোক তোমার কর্মে,চেতনায় ও মননে । ৫০ আসনসহ লোভনীয় বহু অফার : মামলা তুলে নেয়া ও ক্ষতিপূরণ দানের প্রস্তাব : কথা না শুনলে ভবিষ্যতে দেখে নেয়ার হুমকি হেফাজতকে নিয়ে সরকার ইদানীং খুব নাক সিটকালেও হেফাজত যে তাদের ‘হাতে না পাওয়া টক আঙ্গুর’ সে কথা ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, হেফাজত দেশে সন্ত্রাস করছে। সরকারের পক্ষ থেকে হেফাজতকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে দেশ-বিদেশে প্রচারণাও চালানো হচ্ছে। মহাজোটের এক শীর্ষ নেতা এ বলে মন্তব্য করেছেন যে, সরকারের এক চামচা মন্ত্রী হেফাজতকে রাজধানীতে ডেকে এনেছিলেন।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে শীর্ষস্থানীয় আলেম-উলামা, পীর-মাশায়েখের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের কর্মসূচিতে হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফীসহ প্রায় সকল শীর্ষনেতার সাথেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণভবনে একাধিকবার বৈঠক ও মতবিনিময় করেছেন। সম্প্রতি আল্লামা শফীর কথিত একটি ভিডিওর কিছু বক্তব্য নিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সংসদে তার তীব্র সমালোচনা করেন। এর আগে গণভবনের এক অনুষ্ঠানেও প্রধানমন্ত্রী আল্লামা শফী সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেন। হেফাজত নেতৃবৃন্দ এসব মন্তব্যকে অশোভন ও কুরুচিপূর্ণ আখ্যায়িত করে সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়েছেন। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেতাকে আল্লামা আহমদ শফীর সঙ্গ ত্যাগ করার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।

হেফাজতের সমর্থন নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের উত্থান হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। সরকারি উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী এ প্রচারণাও চালানো হচ্ছে যে, হেফাজত একটি মৌলবাদী সংগঠন, যারা তালিবানী রাষ্ট্র কায়েম করতে চায়। তাছাড়া, ৫ মে শাপলা চত্বরে সরকার পরিচালিত নৃশংসতাকে যুক্তিযুক্ত প্রমাণ করার প্রয়াসও সরকারি বহিঃপ্রচার কার্যক্রমের লক্ষণীয় দিক। যদিও হেফাজতের মাদরাসা শিক্ষিত আলেম-ওলামা, মুফতি, ইমাম, পীর-মাশায়েখ ও ধর্মপ্রাণ তৌহিদী জনতা একান্ত নিরীহ নাগরিক, যারা কেবল ধর্মীয় দাবি-দাওয়া নিয়ে অরাজনৈতিক ঈমানী আন্দোলনের ব্যানারে রাজধানীতে সমবেত হয়েছিলেন। শাপলা চত্বরেই তাদের সমবেত হওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছিল।

বায়তুল মোকাররম ও পল্টন এলাকার অনুমোদন চেয়েও তারা সেটা পাননি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন সে এলাকাটিতেই সংঘটিত হয় নজিরবিহীন তা-ব। যেখানে হেফাজত লাখ লাখ লোকের সমাবেশ করে সেখানে কিছুই হয়নি। যেখানে হেফাজতকে সমাবেশের অনুমতি না দিয়ে এলাকাটি ফাঁকা রাখা হয়েছে সেখানেই দিনব্যাপী হেফাজতের নেতাকর্মীদের পৈশাচিক উপায়ে হত্যাসহ নানাবিধ তা-ব সংঘটিত হয়েছে। বর্তমানে অতীতে দেশে সংঘটিত সকল ধরনের জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলার ছবি সংযুক্ত করে হেফাজতের তা-ব বলে দেশে-বিদেশে ছড়ানো হচ্ছে।

অথচ হেফাজতের সূচনালগ্ন থেকে আজও পর্যন্ত এ সংগঠনটির সাথে সরকারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মতামত ব্যক্ত করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনৈক রাজনৈতিক নেতা ইনকিলাবকে বলেন, ৫ মে শাপলা চত্বরে সম্মিলিত বাহিনীর নৃশংসতা শুরুর পূর্ব মুহূর্তেও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আল্লামা শফীর সাথে মন্ত্রী ও নেতারা যোগাযোগ করেন। তাদের দেয়া শর্ত মেনে না নেয়ার ফলেই রাতের শেষ প্রহরে বাতি নিভিয়ে নিরীহ নিষ্পাপ আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতার উপর নির্মম অত্যাচার চালানো হয়। যারা প্রায় সবাই ক্লান্ত ক্ষুধার্ত ও ঘুমন্ত ছিলেন। এর আগে ৪ এপ্রিল সারাদিন এবং গভীর রাত পর্যন্তও হেফাজত কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা যোগাযোগ রক্ষা করে চলে, এমনকি মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে সরকারের প্রস্তাব মেনে নেয়ার শেষ সময়সীমাও বেঁধে দেয়া হয়।

হাটহাজারি থেকে একাধিক সূত্র জানায়, হেফাজতের সাথে সমঝোতার সব চেষ্টাই করেছিল সরকার। মহাজোটে শামিল করে নিয়ে ৫০টি আসনে জিতিয়ে আনার অফারও দেয়া হয় হেফাজত নেতাদের। অরাজনৈতিক এ দ্বীনি সংগঠনকে ক্ষমতার ভাগ দিয়ে হলেও সরকার চেয়েছিল জনমত সপক্ষে ধরে রাখতে। সরকারের এসব প্রস্তাব মেনে না নেয়ার ফলেই নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে। হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী জানান, নানা সময়ে সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা আল্লামা শফীর কাছে ছুটে এসেছেন।

তারা ৫০টি আসন দিতে চেয়েছেন। ১৩ দফার অনেকগুলো দাবিও মেনে নিতে সম্মত হয়েছেন। কিন্তু এখন আমাদের সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে। আল্লামা শফীর কথা আগে এত ভাল লাগতো আর হঠাৎ করেই তার কথাবার্তা এখন ‘জঘন্য’, ‘নোংরা’ ও ‘অশালীন’ হয়ে গেল। সরকারের এ দ্বিমুখী আচরণ দেখে সারাদেশের হেফাজত নেতাকর্মীরা হতভম্ব।

সরকারের দ্বৈত ভূমিকায় বিস্মিত আল্লামা শফীও। হেফাজত আমিরের প্রেস সেক্রেটারি মাওলানা মুনির আহমদ বলেন, একটি ভিডিও টেপ নিয়ে সরকার গত ক’দিন যে আচরণটি করল, এর কোন নজির কোথাও পাওয়া যাবে কী? ডিজিটাল কারসাজি ও জালিয়াতি করে একজন বর্ষীয়ান আলেমকে অকথ্য ভাষায় আক্রমণ করার মাধ্যমে সরকার কী পাবে? সরকার আল্লামা শফীকে তার প্রতিপক্ষ মনে করছে কেন? হেফাজত তো কোন রাজনৈতিক দল নয়, হেফাজত তো নির্বাচনও করবে না। নেতা-মন্ত্রীরা তো হেফাজতের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। ৫ মে তারা কী মনে করে হেফাজতকে নির্মমভাবে দমন করলেন। এরপরও তাদের মন ভরল না।

অহেতুক হুজুরকে অশালীন ভাষায় দলবল নিয়ে গালমন্দ করলেন। আর কী করতে চান তারা? হেফাজতে ইসলামের নেতারা জানান, গত ৩১ মার্চ সরকারের সাথে হেফাজতের সমঝোতা প্রস্তাব নিয়ে হাটহাজারি মাদরাসায় আল্লামা শফীর দফতরে আসেন ড. হাছান মাহমুদ। তার সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর আওয়ামী লীগের আবদুস সালাম। তারা আল্লামা শফীর শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন এবং সরকারের সঙ্গে দূরত্ব কমানোর প্রস্তাব পেশ করেন। এক ঘণ্টারও অধিক সময়ব্যাপী বৈঠক চলাকালে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘হুজুর আপনার বয়স হয়েছে।

এই বয়সে কেন এত ঝামেলা মাথায় নেবেন। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীও আপনাকে ভাল জানেন। তিনিও চান না, আপনাকে নিয়ে টানাহেঁচড়া হোক। তাই সরকারের সঙ্গে বন্ধু হয়ে কাজ করলে উভয়েরই মঙ্গল। ’ জবাবে আল্লামা শফী বলেছিলেন, ‘আমি এখন যে অবস্থানে আছি সেখান থেকে সরে আসার কোন সুযোগ নেই।

এটা ঈমানের প্রশ্ন। তোমাদের প্রধানমন্ত্রীকে বলে দাও তার সাথে কাজ করতে আমার আপত্তি নেই তবে তিনি যদি আমাদের সব দাবি মেনে নেন। ’ মন্ত্রী হাছান মাহমুদ যাওয়ার দু’দিন আগে সরকারের পক্ষ থেকে আল্লামা শফীর সাথে দেখা করতে হাটহাজারি যান চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবদুল মান্নান ও পুলিশ সুপার হাফিজ আক্তার। হেফাজতের সাথে সরকারের আচরণের প্রতিফলন দেশে সদ্য অনুষ্ঠিত ৫ সিটি নির্বাচনে স্পষ্ট হওয়ার পর থেকেই হেফাজতের প্রতি সরকারের সম্পর্ক নতুন দিকে মোড় নেয়। সমঝোতায় ব্যর্থ হয়ে সরকার বেছে নেয় আহমদ শফীকে বদনাম করার পন্থা।

শুরু হয় আলেম-ওলামা ও মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হেফাজতের সাথে সরকারের প্রতিটি আচরণের মত বর্তমান আচরণও কেবল তার জনসমর্থনই কমাবে। কারণ, মানুষ হেফাজতকে সরকারের প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতালোভী সংগঠন মনে করে না। দাবি মানানো ছাড়া হেফাজতের আর কোন এজেন্ডা নেই। এটি একটি ঈমানী গণআন্দোলন।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের শুরুটাও ছিল খুবই সাদামাটা। দেশের সর্বপ্রাচীন বৃহৎ কওমী মাদরাসা দারুল উলুম হাটহাজারির আলেমরা সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দেয়ার প্রতিবাদে গঠন করেন হেফাজতে ইসলাম। এরপর নারীনীতি ও শিক্ষানীতির ইসলামবিরোধী ভাবধারার প্রতিবাদেও সোচ্চার হয় হেফাজতে ইসলাম। কওমী ধারার আলেমদের ডাকে হেফাজতের শুরুটা ছিল অনেকটাই গতানুগতিক। কিন্তু সারাদেশে নানা কারণে সংক্ষুব্ধ মানুষ এর আহ্বানে সংহত হওয়ার গোয়েন্দা রিপোর্ট হাতে পেয়ে সরকার হেফাজতের বিষয়ে সতর্ক হয় এবং সংগঠনটির উত্থান রুখতে নানা কৌশল অবলম্বন করে।

চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে হেফাজতের প্রথম গণসমাবেশ প- করতে সরকার প্রশাসন, পুলিশসহ রাজনৈতিক ক্যাডারদের এতই নগ্নভাবে কাজে লাগায় যা দেখে হেফাজত নেতাকর্মীরা নিজেদের আন্দোলনের গুরুত্ব ও প্রভাব সম্পর্কে আরো অধিক আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠে। শুরুর দিকে চট্টগ্রামের সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা গোপালগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর নিজ আসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী শেখ আবদুল্লাহ হেফাজত নেতাদের সাথে যোগাযোগের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা হেফাজতকে বাধাগ্রস্ত করতে নানাভাবে চেষ্টা করেন। হেফাজতের অন্যতম নেতা পটিয়া মাদরাসার মুহতামিম মুফতি আবদুল হালিম বোখারী সরকারি চাপেই হেফাজত থেকে দূরে সরে যান। এ সময় আরেক নেতা মাওলানা সুলতান জওকের সাথে পুলিশ কমিশনারের কথোপকথন মোবাইলে রেকর্ড করে তাকেও নিজ অনুসারীদের মাঝে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তাটিই এই রেকর্ড করেন এবং অন্যদের শুনিয়ে হেফাজত ভাঙার চেষ্টা চালান। কিন্তু সংবিধানে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দেয়া নিয়ে যে আন্দোলনের সূচনা, কোন কৌশল চক্রান্ত বাধা বা প্রচেষ্টাতেই তা নস্যাৎ করা সম্ভব হয়নি। আর এটাই ছিল স্বাভাবিক। হাজারো বাধা উপেক্ষা করে যেমন এটি এখনো টিকে আছে এবং দিন দিন জোরদার হচ্ছে। চট্টগ্রামের একটি মহাসমাবেশে যাওয়ার পথে শহরের নাসিরাবাদ এলাকায় পুলিশি বাধা এবং সন্ত্রাসীদের প্রচ- গোলাগুলির মুখেও হেফাজত নেতাকর্মীদের অবিচল অবস্থান তখন সরকার, গোয়েন্দা সংস্থা ও গণমাধ্যমকে হতবাক করে দেয়।

এ পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির দায়ে হেফাজত-প্রধান আল্লামা আহমদ শফীসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু হাটহাজারি মাদরাসার মুহতামিম, কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, বর্ষীয়ান আলেমে দ্বীন, শাইখুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফীকে গ্রেফতার করার প্রতিক্রিয়া যে কত মারাত্মক হতে পারে তা আন্দাজ করতে পেরেই ঢাকা থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম পুলিশকে এ চিন্তা বাদ দিতে বলেন। তখন চট্টগ্রাম পুলিশের বড় কর্তারা হাটহাজারি গিয়েও খালি হাতে ফিরে আসেন। এরপর হেফাজত ও এর আমির আল্লামা আহমদ শফীর পুরো বিষয়টি সামাল দেয়ার দায়িত্ব বিশেষভাবে অর্পণ করা হয় ফটিকছড়ির এমপি, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের উপর। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আস্থাভাজন খ্যাত এই মন্ত্রী দেশের লাখো আলেমের ওস্তাদ ও তৌহিদী জনতার ধর্মীয় আধ্যাত্মিক নেতা আল্লামা শফী সম্পর্কে ভাল করে জানেন এবং একান্ত বৈঠকের সময় তাদের দু’জনেই চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন।

কিন্তু হাছান মাহমুদ হেফাজতের সাথে তার যোগাযোগ ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আল্লামা শফীকে ম্যানেজ করার দূতিয়ালিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হন। এজন্য তার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ও আন্তরিকতাহীন দ্বিমুখীনীতিই দায়ী বলে মনে করেন ঢাকা ও চট্টগ্রামে তার রাজনৈতিক সতীর্থরা। বিশেষ করে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ এ দায়িত্ব পাওয়ার পর শেখ আবদুল্লাহ ঢাকা ও চট্টগ্রামের হেফাজত নেতাদের সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেন। এ সময় হেফাজতকে ভাঙার জন্য আল্লামা শফীকে বাদ দিয়ে বসুন্ধরা মাদরাসার মুফতী আবদুর রহমানকে দৃশ্যপটে নিয়ে আসার চেষ্টাও করা হয়। হেফাজতের সাথে দ্বিমত পোষণকারী সরকার ঘেঁষা দু’একজন আলেমকে দিয়ে কওমী অঙ্গনে নতুন মেরুকরণের চেষ্টাও চলে।

কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। সিলেট, বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহী সিটি নির্বাচনের আগে আগে হেফাজতের কিছু নেতাসহ দেশের শীর্ষ আলেমকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে মিলিত করার উদ্যোগ নেন হাছান মাহমুদ। কিন্তু ৫ মে ট্রাজেডির ফলে বিক্ষুব্ধ আলেমসমাজ ও তৌহিদী জনতার প্রতিবাদের মুখে দেশের কোন আলেমই গণভবনে যেতে রাজি হননি। গাজীপুর সিটি নির্বাচনের আগে হেফাজতের সাথে সমঝোতার আরেকটি চেষ্টা নেন মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীরপ্রতীক। তখন নেতাদের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নেয়াসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দেন তিনি।

কিন্তু আল্লামা শফী তাকেও ঈমানী আন্দোলনের দাবি না মানা পর্যন্ত সরকারের সাথে সমঝোতার কোন সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দেন। এর আগে পরে আল্লামা শফীকে যে কোন ছুঁতোয় গণভবনে আনার বহু চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি তার দাবি না মানা পর্যন্ত কোন আলোচনারই সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি চট্টগ্রাম গিয়ে কয়েকদিন বসে থেকেও হাটহাজারি যাওয়া বা আল্লামা শফীর সাক্ষাত পাওয়ার ক্ষেত্রে সফল হননি। আল্লামা শফী ডিজির অতীত কর্মকা-ে খুবই বিরক্ত।

তিনি এমনকি তার চেহারা দেখতেও নারাজ। এ প্রসঙ্গে কথা হয় হেফাজতের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লমা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীর সাথে। তিনি বলেন, ডিজি সামীম আফজাল আন্দরকিল্লায় বসে হেফাজতের বহিষ্কৃত দুই নেতার সাথে বৈঠক করেছেন বলে সংবাদপত্রে দেখেছি। হাটহাজারিতে তিনি এলে সাধারণ মানুষই তাকে প্রতিহত করতো। ৫ মে রাজধানীতে যারা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে তারা এই ডিজিকে যা খুশি তাই করতে পারতো।

বায়তুল মোকাররম ও পল্টন এলাকার সমস্ত জ্বালাও-পোড়াও আর তা-বের মূল নায়ক নাকি এই ডিজি। হেফাজতের বদনাম করার জন্য এ তা-বের আয়োজন করে এ নিয়ে অপপ্রচার চালানোর কুবুদ্ধি তিনিই নাকি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীও এই ব্যক্তির পরামর্শ গ্রহণ করে আজ এই কঠিন অবস্থার সম্মুখীন। সে তার কর্মদক্ষতা প্রমাণের জন্যই হেফাজতকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব নিয়েছে। সরকারি পদ ও র‌্যাব-পুলিশের প্রহরা না থাকলে তৌহিদী জনতাই তাকে ম্যানেজ করে ফেলবে বলে লোকমুখে শুনতে পাই।

হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা আবু সাদ বলেন, প্রকাশ্য ও গোপনে বহু লোক প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে নানা সময়ে আমাদের কাছে এসেছেন। ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েও লোভ-টোপ, হুমকি ও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় নিয়ে নেত্রীর সাথে সাক্ষাত, ভবিষ্যৎ ক্ষমতার ভাগ, অর্থবিত্ত ইত্যাদি কোনকিছুর প্রতিশ্রুতিই বাদ যায়নি। সময়ে নেতৃবৃন্দ সবই প্রকাশ করবেন। তবে হেফাজতের ঈমানী আন্দোলনকে স্তিমিত করা কারো পক্ষেই সম্ভব হবে না।

কারণ, এটি মুসলমানদের বিশ্বাস ও আবেগের সাথে জড়িত। হেফাজতের সাথে সমঝোতার ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য বেফাকের অন্যতম সহকারী মহাসচিবকে বার বার চাপ দিয়ে চলেছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজির লোকেরা। তিনি অপারগতা প্রকাশ করলে গত সপ্তাহে একজন সরকারদলীয় এমপি তাকে টেলিফোনে হুমকি দিয়ে বলেন, সমঝোতার সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। আবার ক্ষমতায় গেলে হেফাজতকে দেখিয়ে দেয়া হবে। চট্টগ্রামের চকবাজার মসজিদের মাওলানা রহমতুল্লাহ বলেন, আন্দরকিল্লায় কর্মকর্তাদের সভায় ইফা ডিজি বলেছেন, ঢাকার সব আলেম আমার অফিসে এসে পা ধরে মাফ চাইছে।

আলেম-ওলামাদের শায়েস্তা করার নিয়ম আমার জানা আছে। তাদের ওষুধ লাঠি। প্রধানমন্ত্রীকে বলে লাঠির ব্যবস্থা করছি। হেফাজতকে লাঠি মেরে সাইজ করা হবে। সরকারি নানা প্রস্তাব ও সমঝোতার জন্য বহুবার হাটহাজারি মাদরাসায় গিয়েছেন মহাজোটের টিকিটে জাপা মনোনীত সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

বিএনপি-জামায়াতকে নকআউট করে দিতে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি হেফাজতের জোটবদ্ধ নির্বাচন, ৫০টি আসন বরাদ্দসহ ক্ষমতা ভাগাভাগির বহু প্রস্তাব তার মাধ্যমেও গিয়েছে বলে হেফাজত নেতা আলহাজ লোকমান আহমেদ জানান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি শুধু এতটুকু বলেন যে, আমি হাটহাজারির স্থানীয় সংসদ সদস্য। নানা কারণে হুজুরের কাছে যেতেই পারি। সমঝোতা প্রয়াস ও প্রস্তাবাবলী সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি কৌশলে এসব এড়িয়ে যান। হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, হেফাজতের আন্দোলন কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা কাউকে ক্ষমতা থেকে নামানোর জন্য নয়।

এটি ঈমানী দাবি আদায়ের আন্দোলন। নতুন সরকার আসুক আর বর্তমান সরকারই থাকুক, হেফাজতের আন্দোলনে কোন তারতম্য হবে না। যতদিন ঈমানী দাবি আদায় না হবে ততদিন আমরা আন্দোলন-সংগ্রাম করেই যাবো। যে সরকারই আসুক আমাদের তাতে মাথাব্যথা নেই। যতদিন ইসলাম ও মুসলমান থাকবে ততদিন হেফাজতে ইসলাম থাকবে।

সমঝোতায় না এলে বা কথা না শুনলে দেখে নেয়া হবে এ হুমকির বিষয়ে কী ভাবছেন জানতে চাইলে আল্লামা বাবুনগরী বলেন, নিরীহ নাগরিকদের দেখে নেয়া ক্ষমতাসীনদের কাজ নয়। তাদের কাজ হচ্ছে নাগরিকদের দাবিপূরণ ও সেবা করা। তবে সকল অন্যায় হুমকির মোকাবেলায় আলেম সমাজ ও তৌহিদী-নবীপ্রেমিক জনতার জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহই যথেষ্ট। অতীতের মত তিনি ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের ইসলামপ্রিয় মানুষকে হেফাজত করবেন। মুসলমানের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে হেফাজত করবেন।

দেশ, ধর্ম, মহানবী (সা.) মানবতা ও মূল্যবোধের শত্রুরা নিজেরাই ধ্বংস হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। উৎসঃ ইনকিলাব ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।