আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি আরবি লিখতে, পড়তে পারি কিন্তু এই ভাষায় কথা বলতে পারি না।

এই তো সেইদিন দিয়ুর সাথে দেখা , সে এস এস সি পরীক্ষা দিল কেবল। রাস্তায় পেয়ে বললাম ,’দিয়ু মনি ক্যামন আছ?’ দিদি তুমি বাইরে দিয়ু বল না তো , এম্নিতেই মন ভাল নাই! ক্যান ক্যান? আরেহ ধুর! ইস্লামিয়াত এক্সামে জটিল বাশ খাব! হ্যা? অইটা তো আমিও খাইতে গেছিলাম, cheer up দিয়া , কিছু হবে না। তুই ঠিক A+ পাবি । ছাতার কিছু হবে না! আচ্ছা বলো তো , এই যে পিচ্চি কাল থেকে আরবি পড়ছি , কি লাভ? না এই ভাষা বুঝি , না এইটা কোঁথাও কাজে লাগে। দিদি দশ বছর ,তুমিও ত পড়ছ, কি মনে আছে কিছু? এখন দিব্য ও পড়ে হুজুরের কাছে আরবি, বেচারা ক্লাস টুয়ের বাবুটা বড়ই কষ্ট পায়, কি লাভ না বুঝে কোরান খতম দেয়ায়? খামাখা এত্তগুলা আয়াত সুরা না পড়াইয়া যদি ভাষা টা শিখাইত তাও একটা কথা ছিল।

আমি পুরাই গোল্লায় পড়তেছি। বলত মানুষ কেন না বুঝে পড়ে? না বুঝলে আমি অই জিনি্ষগুলা লাইফ এ implement করব কেমনে? শুধু তাই না, পড়লেই বুঝি আমি বেহেশ্তে যাব , আল্লাহ খুব খুশি হবেন কারন আমি এত পরেও কিছুই অনুধাবন করি নাই। থাম থাম! এক দমে এত্ত কথা ক্যামনে বললি তুই? দিদি বাসায় চল, আমি আরবি ভাষা শিখে ছাড়ব, এই জিনিসের জন্য আমার জীবনের কয়েক হাজার ঘন্টা নষ্ট হইছে। ----------------------------------------------------------------------------------------------- দিয়ুর কথা ফেলে দেয়া যায় না। আমি নিজে যখন এই বিষয়ে চিন্তা করলাম তখন ব্যাপারটা স্পষ্ট হল।

আমার স্কুলে এক হুজুর স্যার ছিলেন, ঢাকা শহরের সনামধন্য এই স্কুলে ইসলাম ধর্ম স্যার এসে খালি বলতেন, ‘ তোমরা এই অধ্যায়ের এই প্রশ্নটা লিখ, প্রতি সপ্তাহে একটা করে আরবি quotation শিখবা, তাহলে পরীক্ষায় লিখতে পারবা। আমাদের সকল পরাশোনার মূল লক্ষ পরীক্ষায় ভাল করা , ভাল নম্বর পাওয়া। এইটায়ও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। এতেই স্যারের দিনের দায়িত্ব খতম হত এবং বাকি ক্লাসের সময় তিনি ঘুমাতেন আর ক্লাস বাজারের রূপ ধারন করত। ছোটবেলায় মা ,বাবা দশ বছরের আগেই কোরান খতম দেয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলেন, কারন , যত বেশি আরবি পড়া হবে তত সওয়াব, পাড়া প্রতিবেশীদের বলা যাবে আমার বাচ্চা n বার কোরান শারিফ খতম দিয়েছে।

সুরআ সমূহের ছন্দ সর্গীয় , নামাজের সময় পরতে ভাল লাগে , ভয় লাগলে আয়তুল কুরসি পড়ি আমরা। আমার এতে কোন সমস্যা নাই। আমি খালি বিলাপ করতেছি কেন যে কেও মনে করল না , এই ভাষাটা শেখা ঊচিত। আমার এই কথায় কেও খুশি হবে না। এক দিক দিয়ে বাংলাদেশের অতি প্রিয় সংস্কৃতি কর্মীগন বলবেন , এই গেল বাংলা ভাষা গেল।

আবার ছেলেমেয়েরা বাচ্চাকাল থেকে না বুঝে আরবি পড়ে , কিছুই শেখে না, এতা শুনলে অতি ধার্মীকরা বলবেন , আমি কোন কাফের আসছি কোথা থেকে। তাই আমি দুই দিক দিয়েই পরিষ্কার! একবার ভারতের এক সংস্কৃতি উৎসবে গেলাম, দিল্লির স্ক্লুল ছাত্ররা সবাই হয় ফ্রেঞ্চ না হয় জার্মান ভাষা থার্ড ভাষা হিসেবে জানে। আমাদের দেশে মাদ্রাসা বোর্ডে পড়া ছেলেমেয়েরাও সারা জীবন আরবি পড়ে এই ভাষায় অনরগল কথা বলতে পারে না। যেখানে ৮০% ছেলেমেয়ে জাতীয় পাঠ্যক্রম অনুযায়ী প্রথম শ্রেনী থেকেই ধর্ম পড়ে একদম দশম শ্রেনী পর্যন্ত তারাই বা কি দোষ করল? আমার মূল চিন্তা ইসলাম ধর্ম শিক্ষা নিয়ে। অনেকটা জোর করে পড়ান হয়।

বাবা, মা , পরিবার সেইরকম ধার্মীক না হলেও এইটার প্রতি জোর দেয়া হয়। এটা ভুল না, সমাজে টিকে থাকতে এটা দরকার তবে আমি যদি এই ভাষাই না বুঝি, তাহলে আমি সত্যি সত্যি সেইটা অন্তস্হ করব কেমনে?নামাজ সবচেতে ভাল ধ্যান তাই না? ধ্যানের কথা আমি অন্য ভাষায় বলি , আমার খুব ধ্যান হয়! আমার এক চীনা বন্ধু মুসলিম , একদম নামাজ ,রোজা করে । তার কাছে শুনলাম, চীনারা নিজেদের ভাষায় সুরা পড়ে এবং নামাজ কায়েম করে, সে নিজেও তাই করে। আমাদের সমস্যা কোথায় তাহলে? শিক্ষাব্যাবস্থায় নাকি সমাজে? এখন তৃতীয় ভাষা শেখার ধুম পরে গেছে , মানুষ ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ করে ফরাসী বা জারমান ভাষা শেখে। অধিকাংশ শিক্ষীত মানুষের জীবনের দশ বছর কত আরবি পড়ল , কত পরিক্ষায় পাশ করার জন্য আয়াত শিখল, কতবার কোরান খতম দিল, ভাষাটা তখন শিখলে আজকে আমাদের একটা তৃতীয় ভাষা জানা থাকত।

নিজের ভাষায় পরলে ইসলামের নিয়ম গুলাও মনে গেথে যেত। Ethics , norms শিখতে হবে তাই তো? কন ধর্ম মিথ্যা বলতে বলে, খুন, চুরি, ডাকাতি করতে বলে? কোন discipline এসব বলে না। জীবনে একটা নিয়ম অনুস্বরণ করা খুবি প্রয়োজন, হয় নিজের ভাষায় নাইলে সেই ভাষা শিখে তারপরে। তাহলে ঈসলামের অতুলনীয় কথাগুলি মানুষেওর মনে লেগে থাকত আর সঠিক পথে চলত। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।