আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাচ্চার মন জয় করা

বাচ্চার মন আমরা কে-এ না জয় করতে পারি। একটা শিশুবাচ্চার মন ভুলানো খুবি সহজ। এইতো, একটা শিশুকে যদি বলি, "তুমি বাইরে যাবে?" অমনি রাজী হয়ে যাবে সে। তারপর কোলে তুলে নিয়ে যাবো দোকানে। চিপ্‌সের একটা প্যাকেট, দুটি চকলেট দিলেই বাচ্চাটি আমার ভক্ত।

ব্যাস্। ঠিক তাই। ১০০জনে আমরা ৯০জনই হয়তো নিজেদের বা আত্নীয়ের বাচ্চাদের মন জয় করার জন্য এমন ধরনের কিছু করি। হয়তো এই অভ্যেসটা চলে এসেছে আমাদের বাপ্‌-দাদাদের ১৪ গুষ্টির আমল থেকে। কিংবা পৃথিবীজুড়ে হয়তো এভাবেই শিশুর মন ভুলানো হয়।

আর তাই আমরা মনে করি বাচ্চাদের আনন্দ দেবার জন্য অন্যতম উত্তম কাজ তার হাতে চকলেট ধরিয়ে দেয়া। এই যুগে আরো যে সকল কাজগুলি উত্তম তালিকায় যুক্ত হয়েছে, তা এমন: - চকলেট/চিপ্‌সের প্যাকেট কিনে দেয়া। - Fast Food দোকানে নিয়ে কিছু খাইয়ে দেয়া। অথবা জুস-ফুসের বোতল ধরিয়ে দেয়া। - CD/DVD চালিয়ে দিয়ে বাচ্চাকে বসিয়ে দেয়া।

- Electronic Game বাচ্চার হাতে ধরিয়ে দেয়া। - সামান্য কিছু টাকা বাচ্চার হাতে ধরিয়ে দেয়া যেন সে তার পছন্দ মতো কিছু করে নিতে পারে। - ইত্যাদি আমি বলতে চাইছিনা যে শিশুরা উপরোক্ত কাজগুলিতে আনন্দ পায়না। তারা আসলেই অনেক আনন্দ পায় এবং উপরোক্ত পদ্ধতির আনন্দের ঘোর বিরুদ্ধেও আমি নই। তারপরও বলবো, বন্ধ করুন এই সব।

যারা বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাতে পারেনা, দিতে পারেনা একটু কোয়ালিটি সময় তারাই খুব সহজেই পয়সা দিয়ে বাচ্চার মন জয় করতে চায় ইত্যাদি নানা ধরনের সহজ কিন্তু ভয়ংকর পদ্ধতীতে। আর বারবার এই কাজ গুলি করে একটা শিশুকেও এই শিক্ষাই দেই যে এগুলিই অন্যতম আনন্দের উপাদান। আর তাই আমাদের শিশুরাও চকলেট চিপ্‌স্‌ পেলেই যেন বিশ্ব পেয়ে গেলো হাতের মুঠোয়। এভাবে শিশু হতে যখন কিশোর হয়, হাতের মুঠোয় পায় গেমস্‌। যখন আরো একটু বড়, হাতের মুঠোয় পায় iPhone/cell phone বা x-box. আরো একটু বড় হয়ে চেয়ে বসে এমন কিছু যখন মা-বাবারা সেটা আর afford করতে পারেন না।

ইতোমধ্যেই কেউ কেউ হয়তো ধরেই নিয়েছেন আমি বলবো, বাচ্চাকে চকলেট চিপ্‌স্‌ না দিয়ে বই কিনে দিন। না ভাই অতো বেরসিক আমি নই। কারন যে বয়সের বাচ্চারা চকলেট চিপ্‌সেই গলে যায় তারা অতো সহজে বই পেয়ে গলবেনা। তবে কি করা উচিত? quality time বলতেই বা আমি কি বোঝাতে চেয়েছি? আমাকে কেউ ভুল বুঝবেন না। শিশুদেরকে আমরা যেভাবে আদর করি বা ওদের মন জয় করার জন্য যা যা করি সেগুলির ঘোর বিরুদ্ধে আমি নই।

কিন্তু কেন বারবার শুধু সেগুলিই করা হয়, এটাই আমার চিন্তাভাবনা। কি করা উচিত বলে আমি মনে করি? বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাতে হবে। মানসম্পন্ন সময় (quality time) দিয়ে সময় কাটাতে হবে। যেমন: (অ) ? ওদের সাথে ওদের খেলায় যোগ দেয়া। ওদের মুখে ওদের ঘটনা শোনা।

(আ) ? ওদের নিয়ে বাইরে খেলা করা। যেমন, দৌঁড়াদৌড়ি, ফুটবল, দড়ি লাফানো, ইত্যাদি আরো কিছু। (ই) ? ওদের উপযোগী গল্পের বই নিয়ে ওদের ঢং-এ নড়ে চড়ে অভিনয় করে গল্প শোনানো। বা ওদের নিয়ে গান-বাজনা, ছড়া, অভিনয় ইত্যাদি করা। (ঈ) ? রং তুলি নিয়ে ওদের সাথে কাজ করা।

রঙিন কাগজ বা বিভিন্ন টুকিটাকি দিয়ে creative কাজ করা (এটা বাচ্চারা প্রচুর পছন্দ করে ও ওদের চিন্তার প্রচুর বিকাশ হয়। ) (উ) যে কাজগুলি খুব কম করা হয়, এমন কিছু কাজ করার আয়োজন করা। যেমন, গাছ লাগানো, কাদা দিয়ে কিছু বানানো, ওদেরকে নিয়ে কাপড়চোপড় ধোয়া, ঘরবাড়ি পরিষ্কার করা ইত্যাদি ধরনের কাজ। (ঊ) ওদেরকে নিয়ে ভ্রমণ করা। ভ্রমনে অনেক বাস্তব অভিজ্ঞতা হয় এবং বিভিন্ন পরিস্থিত মানিয়ে নেবার মন-মানষীকতা গড়ে ওঠে।

(উপরের প্রশ্নবোধক চিহ্নগুলিকে 'নিয়মিত' শব্দ দিয়ে পড়ুন। ) আমি কিছু ধারনা দিলাম মাত্র। আশা করি আপনারা অনেকেই আরো অনেক কিছু করেন আপনাদের শিশুদের সাথে। কেউ কেউ হয়তো বলছেন, "শিবলী ভাই, এই কাজগুলির মতো কাজতো আমরা বাচ্চাদের সাথে করিই। অযথা কেন দোষ দিচ্ছেন যে অধিকাংশ parents-রা চকলেট-চিপস্‌ আর electronic games বা cd/dvd দিয়েই কাজ সারে।

" সত্যিই যদি আপনি আপনার বাচ্চাকে quality time দিয়ে থাকেন, তবে আপনি ও আপনার সন্তান ও দেশটা সত্যিই lucky. সম্ভবত আপনি সেই ১০জনের মাঝে একজন যিনি আমার এই লেখা পড়ছেন। কিন্তু আমি কথা বলছি বাকি ৯০জনকে নিয়ে। আসুন বাকি ৯০জনের মাঝ থেকে ১জনের জীবন নিয়ে খুব সংক্ষেপে কথা সারি। ঐ মা-বাবার নিজ বাড়ি আছে ঢাকা শহরে। যেখান থেকে ভালো ভাড়া আসে।

আরো জমি-জমা অবশ্যই আছে। শেয়ার বাজারে ভালোই investment আছে। ছোটখাটো আরো investment আছে যেন সংসারের ঘটতি আরো একটু কাটে। ভবিষ্যত নিয়ে তাদের অনেক চিন্তা ভাবনা এবং সুনিপুন decision নিয়ে থাকেন তারা। কোন প্রকল্পের জমি ভালো বা কোন developer এর apartment ভালো এগুলির খোঁজখবর নিয়ে থাকতেন তারা।

কিন্তু একমাত্র সন্তান নিয়েই তাদের দুশ্চিন্তা এখন। তাদের জীবন পদ্ধতি দেখে আজ হতে প্রায় ৮ বছর আগেই আমি দুশ্চিন্তা করতাম। প্রায় ৬ বছর আগেই প্রসংগ তুলেছিলাম শিশুটির ভবিষ্যত নিয়ে। প্রায় ৩-৪ বছর আগে আবার বিপদ সংকেত দিয়েছিলাম সচেতন হবার জন্য। আর মাঝে মাঝে meeting sitting দিয়েছিলাম তাদের সন্তানের বিভিন্ন বিষয়ে।

ক্রমে ক্রমে তারাও দুশ্চিন্তায় পড়ছেন এখন। ভালো দিক এটা যে তারা realize করেছেন, তারা তাদের সন্তানকে সঠিক guide দেন নাই। তারা স্বীকার করেছেন যে, জন্মের পর থেকেই হয়তো সামান্য একটু খেয়াল করলে আজ এই পরিস্থিতি হতোনা। (এই সন্তানটি কিভাবে বড় হয়েছে সেই বিষয়ে জানতে আগ্রহী হলে এখানে ক্লীক করে ২য় পাতা পড়ুন। ) যে সন্তানটির কথা আমি বললাম, হয়তো তাকে কড়া নজরে রেখে এই মা-বাবা সচেতনতা প্রকাশ করবে বা ভবিষ্যতে একই ভুল করবে না।

কিন্তু আর ৮৯জন কি করছেন? আমাকে কেউ আরো ভুল বোঝার আগে আরেকটা জিনিষ বলে রাখি। যে ৯০জনের কথা আমি বলছি ঐ ৯০জন মা-বাবার মাঝ থেকে অধিকাংশই তাদের সন্তান নিয়ে খুব সচেতন হয়ে যায় যখন সন্তান বড় হয় বা যখন সন্তান কোন বিপদ-আপদ ঘটায় বা যখন সন্তান বিপথে যাওয়া শুরু করে। তারমানে অধিকাংশ মা-বাবাদের মাঝেই সচেতনতা আছে তবে সেটা সঠিক সময়ে ফুঁটে উঠেনা। সেটা জাগ্রত হয় অনেক পরে। আর আমি মনে করি এটাই একটা বড় সমস্যা আমাদের মা-বাবাদের।

আমার বাচ্চারাও যে অনেক কিছু আবদার করেনা তা নয়। কিন্তু আমি কিছু কিছু আবদার পূরন করতাম না এবং করিনা। ওদের যে আবদারগুলি পূরন করিনা, তার বদলে বিকল্প কিছু করি। যেমন, খেলনা আছে তারপরও আরো খেলনা চাইলো। আমার জন্য খেলনা কিনে দেয়াটা খুবি সহজ কাজ।

কিন্তু আমি নতুন খেলনা না দিয়ে ওদের নিয়ে creative কিছু করি। ওদের সাথে সময় কাটাই। পুরোনো খেলনা দিয়েও যে নতুন আইডিয়ায় খেলা যায়, সেই ধারনা দেই। রং পেন্সিল একটু ছোট হয়ে গেলেই আবার রং পেন্সিল চায়। নতুন রং পেন্সিল বক্স না দিয়ে বরং ওদের রং পেন্সিল দিয়েই নানা কিছু আঁকিয়ে রং করে সময় কাটাই ওদের সাথে।

ওরাও নতুন রং পেন্সিল বক্স পাবার আনন্দের চাইতে মা-বাবার সাথে মজার event করে সময় কাটাতে অধিক আনন্দ পায়। যখনি ওরা বলে বসে এখন কি করবো? অমনি ওদেরকে এমন কিছু আইডিয়া দেই যা করতে ওরা খুব পছন্দ করবে। বা পুরোনো কাজ আবার করতে দেই তবে একটু নতুন ঢং-এ। ওদের সাথে অনেক অনেক কথা বলি, অনেক গল্প করি, অনেক মজা করি। আপনার সন্তানের বয়স যাই হোক, যদি সে আপনার সঙ্গ চায়, তবে তাকে আপনার সঙ্গই দিয়েন।

টাকা পয়সা বা অন্য কিছু দিয়ে আপনার জায়গাটা পূরন করার মতো ভুল কাজটা করবেন না প্লীজ্‌। আমার কোন লেখাই খুব বড় করতে চাইনা এই ভয়ে যে, কেউ আবার লম্বা লেখা দেখা না পড়ুক। আর আমিতো জানিই আমরা মা-বাবারা অনেক অনেক ব্যাস্ত। আর তাই ছোট ছোট লেখা পোষ্ট করে থাকি যেন একটু হলেও সবাই পড়েন। আমি আরো যা বলতে চেয়েছিলাম তা এখন আর বললাম না লেখা লম্বা হয়ে যাবার ভয়ে।

উপরে অ-ঊ পর্যন্ত যা বলেছি সেগুলি নিয়ে ভবিষ্যতে আরো বিস্তারীত লেখার কিংবা পডকাষ্ট বা ভিডিও চিত্র দেবার আশা করছি। যারা এই লেখা পড়লেন কিন্তু মা-বাবা নন, বরং কোন শিশুর আত্নীয়, আপনার প্রতিও অনুরোধ আপনার ভাগ্নে-ভাগ্নীর/ভাতিজা-ভাতিজির মন জয় করার জন্য শুধুই উপহার বা জিনিষ কিনে দিয়ে মন জয় করার প্রবনতা কমিয়ে দিয়ে ওদেরকে একটু সময় দিন। ভালো কথা, আমি একটা সেকশন যুক্ত করেছি যেখানে আপনাদের সন্তানের সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন করতে পারেন। পেজটি পেতে এখানে ক্লীক্‌ করুন। ছবিতে আমি আর আমার দুই মেয়ে।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।